Advertisement
  • এই মুহূর্তে দে । শ
  • নভেম্বর ৫, ২০২৫

অসমে পদ্ম শিবিরে তীব্র ভাঙন ! অসম জাতীয় পরিষদে যোগ দিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজেন গোহাঁই

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
অসমে পদ্ম শিবিরে তীব্র ভাঙন ! অসম জাতীয় পরিষদে যোগ দিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজেন গোহাঁই

অসম বিজেপির অন্দরের দীর্ঘদিনের অস্বস্তি অবশেষে বিস্ফোরিত হলো প্রকাশ্যে। ৩ দশকের সঙ্গ ত্যাগ করে বিজেপির প্রাক্তন কেন্দ্রীয় রেল প্রতিমন্ত্রী রাজেন গোহাঁই আনুষ্ঠানিকভাবে দল ছাড়লেন এবং যোগ দিলেন লুরিনজ্যোতি গগৈ নেতৃত্বাধীন অসম জাতীয় পরিষদে। পরিষদ বর্তমানে কংগ্রেস-নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’-র সহযোগী। গোহাঁই-এর এমন পদক্ষেপে শুধু যে বিজেপি ব্যাপক ধাক্কা খেল তা নয়, বরং আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যের রাজনীতিতে এক নতুন সমীকরণ তৈরি হলো।

দলত্যাগী রাজেন গোহাঁই-এর অভিযোগ তীব্র, ‘অসমের মানুষকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে বিজেপি। বহিরাগতদের বসতি স্থাপনের অনুমতি দিয়ে ভূমিপুত্রদের স্বার্থে ছুরি মারা হচ্ছে। ধর্মীয় মেরুকরণ ঘটিয়ে হিমন্ত-সহ বিজেপি নেতারা অসমিয়া সমাজকে ভাগ করতে চাইছেন।’ গত ৯ অক্টোবর তিনি বিজেপির সমস্ত সাংগঠনিক দায়িত্ব থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন। পদত্যাগপত্রে স্পষ্ট লিখেছিলেন, ‘দলে প্রবীণ ও ত্যাগী নেতাদের জন্য এখন অপ্রীতিকর ও অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে।’ তিনি আরো অভিযোগ তুলেছেন, ‘ধর্মীয় মেরুকরণ করে অসমিয়া সমাজকে ভাগ করছে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা ও তাঁর সহযোগীরা।’ তাঁর ইস্তফার দিনই ডিব্রুগড়ে বিজেপির একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক চলছিল, যা দলীয় অসন্তোষকে আরো প্রকাশ্যে নিয়ে আসে।

১৯৯১ সালে বিজেপিতে যোগ দেওয়া রাজেন ছিলেন দলের রাজ্য সভাপতি এবং টানা ৪ বার নগাঁও লোকসভা আসনের সাংসদ। ২০১৬ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত তিনি মোদি সরকারের প্রথম মেয়াদে রেল প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলান। কিন্তু ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি তাঁকে টিকিট না দিয়ে নগাঁও আসনে সুরেশ বরাককে প্রার্থী করে, যিনি পরাজিত হন কংগ্রেসের কাছে। ঘনিষ্ট মহল সূত্র বলছে, সে ক্ষোভও নাকি পুষে রেখেছেন গোহাঁই। নতুন দলে যোগ দিয়ে এককালের দিল্লি ঘনিষ্ট প্রাক্তন মন্ত্রী বললেন, ‘অসমকে দিল্লির হাতে তুলে দেওয়া আর সম্ভব নয়। এই মাটি, এই মানুষ— ওদের ব্যথা দিল্লির চৌহদ্দি থেকে বোঝা যায় না।’ উল্লেখ্য, অসম জাতীয় পরিষদের জন্ম ২০১৯ সালের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বিরোধী আন্দোলন থেকে। সে সময় আসুর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন লুরিনজ্যোতি গগৈ। এটি অসমের দুটি ছাত্র সংগঠন, অল অসম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন এবং অসম জাতীয়তাবাদী যুব ছাত্র পরিষদ-এর একীভূতকরণের মাধ্যমে গঠিত হয়েছিল। সিএএ-র বিরোধিতাই দলটির রাজনীতির মূল ভিত্তি, শুরু থেকেই বাংলাদেশ থেকে আগত উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার বিরোধিতা করে আসছে দলটি। বিজেপির শরিক অসম গণ পরিষদের প্রাক্তন প্রভাবশালী নেতা জগদীশ ভূঁইয়াও অসম জাতীয় পরিষদে যোগ দিয়েছিলেন। এবার সেই দলে এলেন রাজেন গোহাঁই।

২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সমর্থনে ডিব্রুগড়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন লুরিনজ্যোতি গগৈ, যদিও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি প্রার্থী সর্বানন্দ সোনোয়ালের কাছে পরাজিত হন। সেই লুরিনজ্যোতির চোখে আজ এক আলোকরেখা। তিনি বলেছেন, ‘রাজেনদার মতো অভিজ্ঞ নেতা আমাদের পাশে থাকলে অসমের স্বার্থরক্ষার লড়াই আরো শক্ত হবে।’ রাজেনও জানিয়েছেন, তিনি এবার আঞ্চলিক রাজনীতির মাধ্যমে ‘অসমবাসীর আত্মমর্যাদা ও অধিকার পুনর্দাবি’ করতে চান। সূত্রের খবর, আগামী বিধানসভা নির্বাচনে নগাঁও আসন থেকে জাতীয় পরিষদের প্রার্থী হিসেবে তাঁকে দেখা যেতে পারে। পুরনো ‘বন্ধু’-কে হারিয়ে বিজেপির পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেছেন, ‘রাজেন গোহাঁই-এর অবদান অসমে বিজেপির ভিত্তি গঠনে অমূল্য। আমরা তাঁর অবদানকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি।’ কিন্তু রাজনীতির মঞ্চে এই সৌজন্যবাক্যও ঢেকে রাখতে পারছে না ভিতরের কম্পন। রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ শইকিয়া মন্তব্য করেন, ‘ব্যক্তিগত ক্ষোভ বা অভিমান কখনও দলের সামষ্টিক লক্ষ্যকে ছাপিয়ে যাওয়া উচিত নয়।’

বিশ্লেষকদের মতে, রাজেন গোহাঁই -এর এই দলত্যাগ ও নতুন দলে যোগদান অসমে বিজেপির ভিত নাড়িয়ে দিয়েছে। এটি শুধু এক প্রবীণ নেতার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নয়, বরং রাজ্য বিজেপির পুরনো নেতৃত্বের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ক্ষোভ ও হতাশার প্রতিফলন। এবং সেই অস্বস্তি আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির বিরুদ্ধে যে নতুন রাজনীতির অঙ্ক কষছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!