Advertisement
  • এই মুহূর্তে দে । শ
  • ডিসেম্বর ১৯, ২০২৩

আডবাণী-যোশীদের রামমন্দির উদ্বোধনে যোগ না দেওয়ার অনুরোধ!

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
আডবাণী-যোশীদের রামমন্দির উদ্বোধনে যোগ না দেওয়ার অনুরোধ!

আগামী ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় রামমন্দির উদ্বোধন। তবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ না দেওয়ার অনুরোধ জানান হয়েছে প্রবীণ বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আদবানী ও মুরলী মনোহর যোশীকে। রাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্রের সাধারণ সম্পাদক চম্পত এই কথা জানিয়েছেন। চম্পত রাই বলেছেন, “মুরলী মনোহর জোশি ও লালকৃষ্ণ আডবাণী অনুষ্ঠানে থাকতে পারবেন না। তাঁদের স্বাস্থ্য ও বয়সজনিত কারণে। উভয়েই পরিবারের বড় এবং তাঁদের বয়সের কথা ভেবে, না আসতে অনুরোধ করা হয়েছে। যে অনুরোধ তাঁরা উভয়েই গ্রহণ করেছেন।”

চম্পত রাইয়ের এই বক্তব্যের মধ্যে রাজনীতি দেখছেন কেউ কেউ। রাজনৈতিক অভিজ্ঞ মহলের কথায়, নরেন্দ্র মোদি বরাবরই লালকৃষ্ণ আদবানী,  মুরলী মনোহর যোশীকে আড়ালে রেখে ২০১৪ সালের পর থেকে বিজেপি দলকে চালাচ্ছেন। মোদি চান না এল কে আদবানী বা মুরলী মনোহর যোশীরা রামমন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থাকুন। তাই চম্পত রাইকে দিয়ে এই কৌশলী সিদ্ধান্ত নেওয়ানো হয়েছে। বিজেপি প্রতিষ্ঠাতা এবং বাবরি মসজিদস্থলে রামমন্দির তৈরির অন্যতম রূপকার হলেন এল কে আদবানী, মুরলী মনোহর জোশি। বিজেপির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এল কে আদবানী, তাঁকে যদি রামমন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে না আসার অনুরোধ জানান হয়, তাহলে আমসম্মান রক্ষার্থে তিনি সেই আবেদন মেনে নেবেন, সেটাই স্বভাবিক। আর সেই মেনে নেওয়াকে চম্পত রাই “অনুরোধ গ্রহণ করেছেন”, বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

একটু পিছনে যাওয়া যাক। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংসের আগে রথযাত্রা করেছিলেন এল কে আদবানি। বাবরি মসজিদ ধ্বংসে এল কে আদবানী, মুরলী মনোহর যোশীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পঁচিশ বছর পর লালকৃষ্ণ আদবানি , মুরলী মনোহর যোশী , উমা ভারতী -সহ ১২ জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে লখনৌয়ের বিশেষ সিবিআই আদালত৷ বিতর্কিত সৌধ ধ্বংসে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের জন্য চার্জ গঠন হয় তাঁদের বিরুদ্ধে৷ বিজেপির এই তিন প্রধান নেতা ছাড়াও চার্জ গঠন হয়েছিল সাংসদ বিনয় কাটিয়ার , বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেত্রী সাধ্বী ঋতম্ভরা , বিষ্ণু হরি ডালমিয়া , রামজন্মভূমি ট্রাস্টের নেতা মহন্ত নিত্যগোপাল দাস , রাম বিলাস বেদান্তি , বৈকুন্ঠলাল শর্মা প্রেম , চম্পাবট রাই বনসল , ধর্ম দাস ও সতীশ বনসলের বিরুদ্ধে৷ তবে এল কে আদবাণী , মুরলি মনোহর যোশী , উমা ভারতীরা ৫০ হাজার টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে জামিন পেয়েছিলেন৷

মামলার শুরুতেই এল কে আদবানিদের জামিন নিয়ে নেন তাঁদের আইনজীবী৷ তার পর চার্জ গঠনের বিরুদ্ধে সওয়াল করেছিলেন৷ আইনজীবীদের যুক্তি ছিল , আদবানিরা কেউই কোনও চক্রান্ত করেননি৷ তাঁরা রামজন্মভূমি আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন ঠিকই , কিন্ত্ত সৌধ ভাঙার ক্ষেত্রে তাঁদের ভূমিকা ছিল না৷ কিন্তু আদালত তাঁদের আবেদন নাকচ করে ১২৯ বি ধারায় অপরাধমূলক চক্রান্তের অভিযোগে চার্জ গঠনের কথা জানিয়ে দেয়৷ এই ধারাটি ১৫৩ , ১৫৩ এ , ২৯৫ , ২৯৫ এ ও ৫০৫ ধারার সঙ্গে যুক্ত করে দেখতে হবে৷ এতেই স্পষ্ট , আদবানিদের বিরুদ্ধে যে ধারায় বিচার হবে , তা গুরুতর৷ ২০০১ সালে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালত আদবানি ও অন্যদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছিল৷ ২০১০ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্ট সেই সিদ্ধান্তই বহাল রাখে৷ কিন্ত্ত ২০১৭-র মার্চ মাসে সুপ্রিম কোর্ট এই মামলায় সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতকে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের এবং দু’বছরের মধ্যে রায় দেওয়ার নির্দেশ দেয়৷

ইতিমধ্যে রামমন্দির নির্মাণ শুরু হয়ে গিয়েছে, এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়। অযোধ্যার সেই বহুবিতর্কিত স্থলে, ২৮ বছর আগে বাবরি মসজিদ গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় বেকসুর খালাস হয়ে যান লালকৃষ্ণ আডবাণী, মুরলীমনোহর জোশী, উমা ভারতী-সহ সব অভিযুক্ত। লখনউ-এর বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারকের রায়ে বলা হয়, ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বরের ওই ঘটনার পিছনে কোনও ষড়যন্ত্র বা পূর্ব পরিকল্পনা ছিল না। গোটাটাই ‘হঠাৎ ঘটে যাওয়া’ স্বতঃস্ফূর্ত জনরোষের ফল। ঘটনায় মোট অভিযুক্তের সংখ্যা ছিল ৪৯। এর মধ্যে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। বাকি ৩২ জনের সে দিনের ভূমিকায় কোনও অপরাধ খুঁজে পায়নি আদালত। উল্টে ভাঙচুরের ঘটনা এঁরা আটকানোর চেষ্টা করেছিলেন বলেও বলা হয়েছে রায়ে।
এহেন লালকৃষ্ণ আদবানী ও মুরলী মনোহর যোশীকে রামমন্দির উদ্বোধন অনুঠান থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হল। রাজনৈতিক অভিজ্ঞরা বলছেন, ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনের আগে রামমন্দির উবোধনের শুধুমাত্র সুফলটাই ঘরে তুলতে চাইছেন, কোনও বিতর্কিত বিষয় যাতে সামনে আসতে না পারে তাই নরেন্দ্র মোদি রামমন্দির থেকে আলাদা করে দিলেন আদবানী-যোশীদের।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!