Advertisement
  • দে । শ
  • ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২২

দাম্পত্য প্রেমের বিরল নিদর্শন, ১৪ বছর জুড়ে স্বামীর কাঁধে স্ত্রী ।

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
দাম্পত্য প্রেমের বিরল নিদর্শন, ১৪ বছর জুড়ে স্বামীর কাঁধে স্ত্রী ।

স্যোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া সোহেল-রওশনের নজিরবিহীন যাপনের খবর পড়ে অভিভূত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সঙ্গে সঙ্গে নির্দেশে বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে দম্পতির বাড়িতে যান ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী অফিসার আক্তারুজ্জামান। তিনি জানিয়েছেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশ পাওয়ার পর আমি নিজে দম্পতির বাড়িতে গিয়ে কথা বলেছি। ফুল আর তাঁদের মেয়ে স্মরণিকে চকলেট উপহার দিয়েছি । তাঁদের পারিবারিক নানা সমস্যার কথা শুনে সমাধানের আশ্বাস দিয়েছি।

পরিবারটির চাহিদার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, ‘এখানে এসে আমারা তাঁদের আর্থিক কষ্টের কথা জানতে পারলাম। এসব নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠাব। প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন সোহেল-রওশন দম্পতি।

১৪ বছর আগে ভালোবেসে রওশনের হাত ধরেন সোহেল। তাদের এই চলার পথটা মোটেও সহজ ছিল না। কেননা শারিরীক দিক থেকে সুস্থ নন ময়মনসিংহের ত্রিশালের রওশন আক্তার। তাঁর ভালোবাসাকে যথাযোগ্য মর্যাদা দিয়েছেন রাজশাহীর সোহেল। সমস্যা আসবে জেনেও আবদ্ধ হন বিয়ের বন্ধনে।

ত্রিশালের গুজিয়াম টানপাড়া গ্রামে ছোট্ট মাটির ঘর আর একটি টং দোকানই তাঁদের সম্বল এ । ভালোবাসা আর পরস্পর বিশ্বাসই তাঁদের দাম্পত্যের সুখের চাবিকাঠি। জানা গেছে, জন্ম থেকেই দুই পা অবশ রওশনের। পায়ে ভর দিয়ে চলার শক্তি নেই। স্বামীর পিঠে চড়ে চলাচল করতে হয়। এক সন্তানের মা।

৮ ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট সোহেল। ছোটবেলায় হারিয়েছেন বাবা-মাকে। ভাই-বোনের কাছে থেকে পড়াশোনা করেছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে ভালো চাকরি পান । এক পর্যায়ে সচ্ছলতার জীবন ছেড়ে অভাবের সংসার মেনে নিয়েছেন স্ত্রীকে দেখভাল করার জন্য । অভাব অনটন দেখে ভালোবাসা দৌড়ে পালায়, সেখানে প্রেম দিয়ে অভাবকে হটিয়ে দিয়েছেন সোহেল ।

সোহেল বলেছেন, ‘পড়াশোনা শেষ করে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অফিস এক্সিকিউটিভ পদে চাকরি পাই। এক দিন বিকেলে অফিস ছুটির সময় আমার টেবিলের ড্রয়ারে একটি ১০ টাকার নোটে একটি ফোন নম্বর দেখতে পাই। দিন কয়েক পর ওই নম্বরে কল করি । ওই কলের মাধ্যমেই রওশনের সঙ্গে আমার প্রথম আলাপ । আস্তে আস্তে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ি। ২০০৭ সালের ডিসেম্বরে আমরা বিয়ে করি । একজন স্বাভাবিক মেয়ে স্বামীর জন্য যতটুকু করতে পারে তার চেয়েও বেশি কিছু করার চেষ্টা করে রওশন। আমাকে ছাড়া সে কিছুই বোঝে না। আমিও এরকম।

রওশন বলেছেন, ‘আমি প্রতিবন্ধী । আমার পরিবার থেকেও বিয়েতে সম্মতি ছিল না। সবাই বলাবলি করেছে, বিয়ের পর সোহেল আমাকে ছেড়ে চলে যাবে। আমার আত্মবিশ্বাস ছিল, আমি যাকে ভালোবাসব সেও আমাকে ভালোবাসবে। এই বিশ্বাস আজও অক্ষুণ্ণ। মেয়ের জন্মের পর আমাদের আনন্দ আর ভালোবাসা আরও গভীর হয়ে ওঠে। কখনো কোথাও যেতে চাইলে আমি শুধু বলি আর সে তার পিঠে আমাকে তুলে নিয়ে যাওয়া-আসা করে। আমার চাহিদা পূরণের জন্য সে তার সাধ্যমতো চেষ্টা করে।

প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, আমরা প্রথমে সোহেলকে বিশ্বাস করতে পারিনি। কারণ শারিরীকভাবে অক্ষম মেয়েকে বিয়ে করে কিছুদিন পরেই সে ছেড়ে দিয়ে চলে যাবে চলে যাবে। বাস্তবে উল্টো চিত্র দেখা গেল। ১৪ বছর জুড়ে ভালোবাসা দিয়ে রওশনকে জড়িয়ে রেখেছে সোহেল ।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!