- ক | বি | তা
- ডিসেম্বর ১৮, ২০২২
গুচ্ছ কবিতা

চিত্র: প্রকাশ কর্মকার
ঝরাপাতার দিন শেষ, কবিতায় আবার বসন্ত
ভাঙন আর নানা রকমের বিপর্যয় অতিক্রম করে, আবার নৃত্যরত হয়ে উঠছে বাংলা কবিতার বহুমাত্রিক উচ্চারণ। পারিপার্শ্বিকের কাঁটা, কবন্ধের নির্বোধ আস্ফালন, সংশয়াচ্ছন্ন বাকচিত্র এবং কক্ষপথের দূষণকে ঠেসে ধরছেন আমাদের সচেতন কবিরা। স্পষ্ট, তীক্ষ্ণ থেকে তীক্ষ্ণতর তাঁদের মার্জিত অঙ্গীকার।
দিন কয়েক আগে, বিচ্ছিন্নতাবোধের অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন তুলে, নেতিবাদের হাহাকার আর আক্ষেপকে গুঁড়িয়ে দিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছিল আরম্ভ। প্রত্যুত্তরে প্রতিষ্ঠিত আর উদীয়মান কবিদের প্রতিষ্পর্ধা আর সূর্যমুখের চেহারা দেখে প্রকাণ্ড বিস্ময় অনুভব করছি। ছবি পরিষ্কার। বিভিন্ন প্রান্তের, বিভিন্ন বয়সের, ভিন্ন ভিন্ন মেজাজের কবিরা, গুচ্ছ গুচ্ছ কবিতা পাঠিয়ে সংঘবদ্ধ প্রয়াসের প্রতিজ্ঞা ঘোষণা করছেন, উচ্চকিত শ্লোগানে নয়,সংহত, গম্ভীর কলরবে। প্রাতিষ্ঠানিকতার বিরুদ্ধে তাঁদের বাচনভঙ্গি, তাঁদের সুপরিকল্পিত অভিমুখ, আশা করি, নতুন প্রত্যাশা নির্মাণ করবে। সমবেত প্রতিদ্বন্দ্বীরা সুদৃঢ় প্রত্যয়ে বলতে চাইছেন, ঝরাপাতার দিন শেষ, কবিতায় আবার বসন্ত।
গ্রিনরুম
নোটা কোন না-এর চিহ্ন নয়, ফোল্ডিং নীরবতা
বাঘের নিস্তব্ধ কুর্নিশ, অঙ্কের শ্রী কেশব চন্দ্র নাগ।
ব্যঙ্গ বিদ্রুপের ঘোরালো স্মরণীয় একটি কালো জগৎ
হাওয়ার বিপক্ষে অনবদ্য ভাঙাচোরা মানুষের কিছু কথা।
রোদ দেওয়া ভবিষ্যতের আকাশের সবুজ এপার-ওপার
তৃষ্ণা সমেত সংবিধানের একটি অবিশ্বাস্য চঞ্চল প্রশ্নপত্র ।
অপেক্ষার আড়ালে রাজনীতির বায়োস্কোপ, ধারালো চোখ
গর্তের নীচে বিশ্রী সংকেত রহস্য, দু’ফোঁটা জমকালো দুঃখ
নির্ভুল গণিত নিঃশ্বাস নিচ্ছে রঙিন বাতাসে অবহেলায় ।
নাগরিক চোখ দেখছে আঙুলের সরু কালো একটি দাগ
নোটা মনের ছিন্ন কথা, বাঁকানো পরিপাটি ভীষণ রাগ ।
ময়ূর নাচে, পেখম তুলে… বসন্ত ওড়ে হাওয়ার আকাশে…
নোটা জানালা খুলে দ্যাখে দিগন্তব্যাপী তার নিরাসক্ত খেলাটি।
বান্ধবী
১
পৃথিবীর সমস্ত মেয়েরাই আজ আমার বান্ধবী। তারা জানে আমি জানি বিপদ ঘটাবে কারা তবে। তাদের চিনি। তারা ফুলের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছে কীট। উড়ন্ত শরীরে আমি ঘুরে বেড়াই দিগ্বিদিক। পারুল বলেছে চলে এসো। চন্দনা ডেকেছে তারো আগে।
২
আমার সমস্ত লজ্জা জানে ওই রঙিন সাবান। সত্যিই তার কাছে খুলে যায় আমার সমস্ত লজ্জাটি। সে দেখে শরীরের গঠন, বাহুদুটি। শূন্য করতল টলমল করে। সাবান পিছলে যায়, খুঁজি বন্ধ চোখে। একলাটি হারায় রহস্যঘন শরীরে। জল পড়ে বৃষ্টির মতন। চৌকশ তুমি কতখানি, সাবান জানে জড়িয়ে ধরা আঙুলের প্রকৃতি।
ছিন্নভিন্ন তুমি
১
শুরু হলো আগুনের কী খেলা। এঘরে কে লেখে অবিশ্বাস্য বিষয়বস্তু। অঙ্ক, সেতো খুব কঠিন। পূর্ণ হয় না এ লেখাটি। সম্পূর্ণ খেলা ফেলে কে পাতা ওল্টায় উত্তরের। মনোমুগ্ধকর একটি ভুল বড়ো হয় ক্রমশ…
২
মৃদু লজ্জা সরু আঙুলে আঙুল জড়িয়ে যায়। বাতাসের ভিতর বাতাস নড়ে, চকিতে নড়ে অন্ধকারের পেখম। এ লেখা তোমাকে লিখতে পারে না, শুধু কাঁপে, কেঁপে ওঠে চূর্ণ মেঘের তলায়।
৩
সাঁঝের নদীর পারের সেই তারাটি মনে আছে? সেতো আজও জ্বলে, স্বতন্ত্র সাদা হাসির রঙে, অদ্ভুত সংকেতে বাতাসে ঝরে পড়ে টুকরো টুকরো আলো। নানা অপার্থিব সংকেতে লাজুক মুখলুকায় ক্ষুধার্ত প্রাণী।
কিসের প্রতীক্ষায় আমি বলে যাই ব্যর্থ জীবনী। ভালো থেকো তুমি। ভীষণ বলরবে মাথা দুলিয়ে কে আজ ডাকছে তোমায় ডাক নামে ?
৪
কর্তব্য কিছুই করিনি। তোমায় বাসিনি ভালো। দু’লাইন লিখলাম তাই কি ? তাতো সবই মিথ্যে কথা। সমস্ত রাখা হয়ে যায় খুব তৎপর। অভিমান জমে বুঝি হিসেবের বাইরে কাঁপছে জীবন।
৫
ছিন্নভিন্ন তুমি। ঈর্ষার কাছে কেন যাও? ওতো দুপুরের নিরুদ্দেশ হাওয়া, শুধু ওড়ে, আর সুখ লুকিয়ে রাগকে বাড়িয়ে দেয় মাথায়।
❤ Support Us