Advertisement
  • গ | ল্প রোব-e-বর্ণ
  • মার্চ ১২, ২০২৩

কুসুমীয়

নিপুণ হাতের আলতো টাচে মুখটা মুখোশ হয়ে গেলো। চিবুক পেরিয়ে মধুগন্ধী কফিগন্ধী লেই গ্রীবার নীচে গলার দাগে থমকে গেলো

শাশ্বতী দত্ত রায়
কুসুমীয়

অলঙ্করণ: দেব সরকার

কুয়াশাভর্তি মাথায় জোনাকি উড়ছিলো । তারার ফুলকির মতো আলো, আবার অন্ধকার । যখন চোখ মেলে তাকিয়েছিলো তখন হলদেটে আলো, নিঝুম ঘর, শশশ মেশিনের আওয়াজ ।

“এই তো ! চোখ মেলেছো ! কেমন লাগছে আজকে ?”– প্রশ্নটা শুনতে শুনতে, ‘আজকে’-র ‘জ’-টা কেমন জজজ হয়ে ঘন লালার মতো মাথার ভেতরে জমা হয়েছিলো । তারপর সে আবার ঘুমিয়ে পড়েছিলো । আবার জোনাকি উড়ছিলো মাথায় । মাকড়সাজালের আঠালো ঝিরিঝিরিতে অজস্র আঁকিবুকি সরিয়ে যখন চোখ মেলেছিলো তখন সকাল । একটা ঝলমলে রোদ তার সবুজ চাদরে জানলা বেয়ে লেপ্টে যাচ্ছিলো, আর, সে বুঝেছিলো, এটা একটা চৌখুপ্পি ঘর । নল বেয়ে নামা লাল তরল, হাল্কা বুদবুদ কাটা স্বচ্ছ নলবাহিত জলধারা, সামনে সাদা ফ্রক পরা একটা দিদি– নার্স । সব মনে পড়ে গিয়েছিলো । বাঁ-হাতের কব্জির কাছটায় মোটা পট্টি । আবার ঘুম নেমে এসেছিলো । আঠালো ঘুমে ডুবে যাবার আগে প্রাণপণ চেষ্টায় ভেবেছিলো, এইসব সূঁচ, ব্যান্ডেজলুকোনো সেলাইয়ের দাগে খড়খড়ে খড়ি ওঠা হয়ে গেলো না কি হাতটা ?

কুম ! স্নানে যা ! বেলা তো কম হলো না !

মা-টা না ! ধুর ! বিরক্ত লাগে ! বেলা আবার কী! মোটে তো বারোটা। বেসন ডিম দই-এর ঘন মিশ্রণটা নাড়তে নাড়তে একটু ঘাড় বেঁকিয়ে মায়ের দিকে তাকালো। এইসব সময়ে সে বিশেষ একটা সময়ের অভিনেত্রীদের টিপিক্যাল ঘাড় ঘুরানো, অপাঙ্গে তাকানোর মুদ্রাগুলো ফলো করে।
কফি আছে?

তার এই প্রশ্নে মা একটু থতিয়ে গেলো। মায়ের ভেবড়ে যাবার ভঙ্গিটা খুব মন দিয়ে দেখলো সে। ভীষন ক্যাবলা, গ্রাম্য। শ্যাবি জেশ্চার। সে এভাবে ঘাবড়ায় না। সেকেন্ডের মধ্যে সে নিজের ঘাবড়ানোর ভঙ্গি ভাবার চেষ্টা করলো। একটু টেপা ঠোঁট, সজল মণির ইতিউতি চাউনি– সে এইরকম করে ঘাবড়ায়।

ভাবতে ভাবতেই হাসলো। হাসিটা সুন্দর নয় তার। তাই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সে একটা আধখোলা হাসি রপ্ত করেছে। হাসির সময় চোখটা একটু কুঁচকে রাখে।

এখনো তেমন একটা ভঙ্গি করে মাকে বললো, “কফি আছে কি?”
বারোটা বাজে রে কুম! এখন কি কফি খাবি না কি?

মায়ের গলায় বিবর্ণ অসহায়তা। কুসুমকে এর বেশি কিছু বলতে মহিলা ভয় পায়। কোন কথার যে কী মানে করবে, কোন কথা কোথায় ধাক্কা দেবে— মেয়েকে তারা তুলো তুলো করে রাখে। সে হিহি করে হাসলো। বাচ্চাদের মতো খুশিয়াল একটা হিহি। ইনোসেন্ট স্মাইল, আসলে মায়ের ভয় পাওয়াটা রেলিশ করছে সে। এটাও রপ্ত করা, এই ভাণভণিতা। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অনেক প্র্যাক্টিসে হাসির রকমফের শেখা।

বাটির হলদেটে লেইটা দেখিয়ে আদুরে গলায় “না রে বাবা, না ! এটাতে মেশাবো” বলেই কোমর দুলিয়ে রান্নাঘরের দিকে হাঁটা দিলো। সে জানে, মা ব্যাপারটা পছন্দ করছে না। ব্যাপারটা মানে, এই রূপটান এবং পরবর্তী দীর্ঘমেয়াদি চানঘর পর্ব। কোমরে একটু ঠমক আনা এই দুলকি চাল আসলে প্রতিবাদ। মায়ের পছন্দ অপছন্দের বিশেষ কেয়ার করছে না সে, বুঝিয়ে দেওয়া।

নিপুণ হাতের আলতো টাচে মুখটা মুখোশ হয়ে গেলো। চিবুক পেরিয়ে মধুগন্ধী কফিগন্ধী লেই গ্রীবার নীচে গলার দাগে থমকে গেলো। সামান্য উঁচু নীচু অথচ মসৃণ চামড়া। ব্যথা নেই, তবু গলায় ব্যথা ব্যথা ভাব— চকিতে লাল নীল বালতি, মুখখোলা কলের ধারাজল পেরিয়ে, ফ্যাকাশে সিলিং-এ চোখ। এখানে কোনো হুক নেই, ফ্যান ঝোলাবার ব্যবস্থা নেই।

আরো এক প্রস্থ লেই মোটা করে গলায় লেপে নিলো সে। দাগ মিলিয়ে যাবে, সময় লাগবে— ভাবতে ভাবতে নরম পুরন্ত স্তন, স্তনবিভাজিকা, পেলব পেট— হাতের ছোঁয়ায় কঠিন বৃন্ত— অপরিসীম মায়ায় মিশ্রণ মাখতে মাখতে আঙ্গুলের প্রান্তদেশে, চ্যাটালো তালুতে নিজেকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দিচ্ছিলো সে। এইসব সময় হাতের তালু, আঙ্গুল সব— সঅব অন্যের হয়ে যায়।

অন্য একটি পরুষ হাত ছুঁয়ে দেয় তার পেট, কোমর, নিতম্বদেশ। নিস্পৃহ আঙ্গুল কখনো নাভিমূল ছোঁয়না। নরম তুন্দ্রাঘাসজমি অস্পৃষ্ট রেখে হাত উরুমুখী। বাথরুমশৈত্যে অবুঝ অভিমানী উরুসন্ধি জেগে ওঠে। সঘন নিঃশ্বাসে আদুর বুক ওঠানামা করে।
কুম!

দরজায় ঘনঘন ধাক্কা।

আর কতক্ষণ সময় নিবি? এরপর কিন্তু ঠান্ডা লেগে যাবে!

উফফ! বিরক্তিতে চোখ কুঁচকাতে গিয়ে বোঝে ফেসপ্যাক-মুখোশ এখন শক্ত। বেশি চোখ মুখ কুঁচকাতে গেলেই রিঙ্কল পড়ার সম্ভাবনা। তাই গলা তুলে, “এই তো মা, হয়ে গেলো”— যতটা নিদাগে নিভাঁজে কথা বলা যায় আর কী !
কিন্তু মা শুনলে তো !

“হয়ে গেলো আবার কী! কখন ঢুকেছিস, অ্যাঁ! ঢুকে থেকে চুপচাপ বসে আছিস, না কি?”

মায়ের গজগজানি শুনতে শুনতে তার মোহ-চটকা কেটে যাচ্ছিলো। অজানিতে ডানহাতের বুড়ো আঙ্গুলটা মুখে। এই আঙ্গুল চোষা নিয়ে কত যে অশান্তি ! “এরপর কিন্তু তোর দাঁত উঁচু হয়ে যাবে, কুম ! অত্তো যে রূপের বাই, তখন বুঝবি মজা।” সে সন্ত্রস্তে আঙ্গুলটা ফ্রকের ঘেরে মুছে ফেলতো। ও বাবা ! দাঁত উঁচু হয়ে গেলে কী বিচ্ছিরিই না দেখাবে তাকে !

মধু কফি দই বেসন ডিমের মিশ্রণমাখা আঙ্গুল চুষতে চুষতে আবার চোখ বুজে এলো। আরাম। নির্ভরতা। ক্ষণিকের। তারপরই ডিমের আঁশটে জৈব গন্ধ কেমন নেশা নেশা মায়া। যেন নিজের বুড়ো আঙ্গুল নয়, যেন—
কুম! গায়ে জল ঢাল!

মায়ের গলায় এবার খড়খড়ে ধমক। খুব রাগী ফোঁসফোঁসে হতে গিয়েও যেন পারছে না, এমন খসখসে গলায় মা বললো, “জলের শব্দ শুনছি না কেন ? কুম? এবার কিন্তু দরজা খুলে দেবো।”

সে দরজার দিকে তাকালো। পুরনো বাড়ির কাঠের দরজা। একটু আবজালে এমনিই চেপে বসে। ছিটকিনি বাহুল্যমাত্র।
তবে, ছিটকিনি নেইই। খুলে দেওয়া হয়েছে। ছিটকিনির জায়গাটা রঙহীন। কোনো ছিটকিনিই নেই। সব ঘর বিনা ছিটকিনিতে আধা বেআব্রু। ভাবতে ভাবতে ঝপঝপ জল ঢালছিলো। দ্রুত হাতে গা হাত পা থেকে ভিজে নরম হয়ে যাওয়া ভেষজ আস্তরণ গলিয়ে মিলিয়ে আবারো শক্ত হাতে গায়ে ঘষে নিচ্ছিলো। নিতে গিয়ে নিজের রঙীন নখে আঁচড়ে একটু একটু ব্যথা— আহ্ !

চিৎমুদ্রায় নিজেকে বিছিয়ে দিলো সে। ভীষন চনমনে রক্তঘাম সারা শরীর জুড়ে কলকল্লোল তুলেছে। একঝটকায় স্পোর্টস ব্রা উড়ে গেলো। আয়নার আড়ালে উন্মুক্ত শরীর। পদ্মকাঁটার ঘেরাটোপে উন্মুখ বৃন্ত। নিজের চুচুকে চুমুক দেবার আসনটি এখনো শেখা হয়নি তার, হায় ! তেলপিচ্ছিল নিটোল নরম ত্রিভুজটিকে কম্পাসবিদ্ধ আঙ্গুলরা পিষ্ট করে। আশ্লেষে দশভুজা হয়ে জড়িয়ে ধরে নিজেকেই

ব্যথা ভালো। ধোঁয়া ওঠা গরম ভাতে সটান হাত ডুবিয়ে দিলো। অসাড় হাতে কেমন একটা অদ্ভুত চড়চড়ে অনুভূতি। “ওর’ম ভাবে কেউ ভাত মাখে?” বাবা অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে দেখে সে হাসলো। বাবা তাকে এখনো ছেলেমানুষ ভাবে। একদম ছোট। যেন তিন কি চার তার বয়স। যেন এখনো বাবার কাঁধে চেপে ওভারব্রিজ ক্রস করবে।

বাবার কাঁধের দু’দিকে পা। সাইকেল চালানোর সময় যেমন— প্যাডেল করছে। কেমন একটা মজা। তলপেট শক্ত হয়ে যাচ্ছে। শিরশির আরাম— নাহ্। বাবার কাঁধে চাপার সময় বড্ড ছোট ছিল সে। বড্ডোই।

“ভাতটা ঠিকঠাক মাখ না! ভাতগুলো তো সব সাদা হয়ে আছে!”

তা ঠিক। ঝোল ভাত মাছে ঠিক মিশ খায়নি। আসলে নখের চারপাশের চামড়ায় ফুটি ফুটি বিদ্ধক্ষত। কম্পাস দিয়ে খুঁচিয়ে দিয়েছে। এমনি। এমনিই। ভালো লাগে তার। নিজেকে ব্যথা দিতে কেমন একটা আরাম। যেন নিজের চামড়া হাড় মেদ মজ্জা টের পাওয়া একটা সুখ। নখের পাশে ছোট্ট ফুটো। একটু চাপ দিলেই কেমন টুপটুপে একটা রক্তের ফোঁটা! কেমন লাল! তার রক্ত! আমার! ভাবতে ভাবতেই কম্পাস দিয়ে তর্জনী মধ্যমার নখের আশপাশ টকটক টকটক করে ফুটো করা। গাঢ় মেরুনিশ রক্তের ফোঁটা— মাঝখানে নখ— কী সুন্দর !

“মেখে ঠিক মতো খা।” মা গলায় এবার গরগরে শাসন। পাল্লা এদিক ওদিক করেও মেয়েকে ঠিক বুঝেই উঠতে পারেনা। লেখাপড়া গান বাজনা নাচ— সবই শিখেছে। অন্তত মাস্টারমশাই দিদিমণির কাছে সপ্তাহে সপ্তাহে গিয়েছে। কিন্তু সবেতেই ফাঁকি। গুণের মধ্যে গুণ শুধু ছেলেদের পাল্লায় পড়া। অবশ্য— ভাবতে গিয়ে মায়ের ঠোঁট দাঁতের ওপর এঁটে বসলো। মেয়ে ছেলেদের পাল্লায় পড়ে না ছেলেরাই তার মেয়ের— যা সাজের ঘটা ! মা হয়েছে বলে তো আর কিছু অন্ধ হয়ে যায়নি— ভাবতে ভাবতে স্বামীকে আরো একটু ভাত দিলেন। বড়ো গাদার মাছটা— খুব সন্তর্পণে স্বামীর পাতে। মেয়ে মোটেই মৎসপ্রিয় নয়। কিন্তু বাবাকে বড়ো মাছের টুকরো দেওয়া হয়েছে, তাকে ছোট— বলা যায় না— যা খামখেয়ালী !

মেয়ের বাবা অবশ্য বলে, অ্যাটেনশন সিকার। সব মনোযোগ ওকেই দিতে হবে। সব। নইলেই দক্ষযজ্ঞ। চেয়ার টেনে মেয়ের উল্টোদিকে খেতে বসে মেয়ের আঙ্গুলে চোখ গেলো। কীভাবে ছালবাকল তুলেছে আঙ্গুলগুলোর ! কিন্তু কিছু বলাও যাবে না। কোন কথা থেকে কোন কথায় চলে যাবে মেয়ে, তারপর হয়তো আবার ফ্যানে কাপড় জড়িয়ে ঝুলেই পড়লো !

থমথমে মুখে ডাল ভাত মাছ একসঙ্গে মেখে তাড়াহুড়ো করে অল্প একটু খেয়েই উঠে পড়লো মা। কারণ আচমকাই মেয়ে আধা খেয়ে উঠে গিয়েছে। কোনো সৌজন্য সহবতের ধারই ধারেনা। এখনই তাকে পাঁচ-সাতরকম ফল নৈবেদ্য সাজিয়ে দিতে হবে। চামড়ার চেকনাই স্বাস্থ্যের জেল্লার ব্যাপারে কুসুম মাত্রাতিরিক্ত সচেতন। প্রথম দিকে এসব হাসাহাসি বকাবকির স্টেজে ছিল। কিন্তু এখন— টেবিল থেকে থালা বাসন গুছিয়ে ঘুপচি রান্নাঘরটায় ঢুকতে গিয়ে মা টাল খেলো। আসলে বেশি ভাবতে গেলেই একটা ধুকপুকে ভয়— দরজা খোল, কুম! কুসুম! চৈত্রের খাঁ খাঁ দুপুরে অদ্ভুত ‘ধুপ’ শব্দে দৌড়ে দরজার কাছে। দু’বার তিনবার চারবার নাম ধরে ডাক। তারপরেই দৈত্যের শক্তি দিয়ে দরজায় ধাক্কা দিয়ে নিজেই প্রায় উড়ে পড়েছিলো। কারণ আসলে আশ্চর্যজনকভাবে দরজা খোলাই ছিল। আরো অবাক ব্যাপার, মাকে দেখেই মেয়ে তখন টুলটা সদ্য সরিয়ে দিয়েছে— মা আপ্রাণ শক্তিতে ঝুলন্ত মেয়েকে তুলে ধরে চিৎকার করেছিলো—

তারপর কারা এলো, কারা হসপিটালে নিয়ে গেলো— মা তো নিজেই আধো অচেতন। ঘোর ট্রমাচ্ছন্নতা।
নিজেকে সামলে বেসিনে বাসন ভিজিয়ে আনমনে গলায় হাত বুলালো মা। নিলাজ মেয়ে বটে ! গলায় অমন মোটা ফুলে ওঠা নীল দাগ, ঢাকা
দেওয়া- টেওয়ার কোনো বালাই নেই। দিব্যি গলা-বুক দেখানো, থাই দেখানো জামা পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে ! মাঝখান থেকে তারা স্বামী-স্ত্রী পাড়া প্রতিবেশী আত্মীয়-স্বজনের কাছে কৈফিয়ত দিতে দিতে ক্লান্ত।

ভাবনার আবডালে সন্ধে ঘনায়। ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপে কুয়াশা জড়িয়ে গেছে। মধ্যবিত্তের সান্ধ্য চা-বিলাস নয়, নেহাতই খেতে হয় বলে খাওয়া।
“মা ! আমার দুধ বোর্ণভিটা!”

ছায়াময়ীর দিকে ত্রস্তে তাকালো। পর্দার আড়ালে মোজা পরা পা দেখা যাচ্ছে। হরেকরকম লোশন টোনার ক্রিমের সুরভী সস্তার চা পাতার গন্ধ ছাপিয়ে যাচ্ছে।

“এতো বেলায় খেয়ে এখনই আবার বোর্ণভিটা খাবি !” বিস্ময় আর প্রশ্নের মাঝামাঝি একটা অভিব্যক্তি। সে অবশ্য পাত্তাই দিলো না। কিংবা পাত্তা দিলো। একটা আধো হাসি চাঁদ হয়ে তার ঠোঁটে। মা বাবার ভয় উদ্বেগ ব্যাকুল চিন্তার মুদ্রা টুদ্রা তাকে মজা দেয়। মরার হাজার ফিকির ট্রাই করতে করতে সে হেজে গেছে। হ্যাঁ, জাস্ট হেজে গেছে। বিরক্ত। আসলে মরতে চায়ও না। ওই মরণ আসছে, তার শরীরী ব্যথাটা, দমবন্ধ শ্বাস আটকানো মুহূর্তটা, ঝরঝর ব্লেডচেরা কলকল রক্তের উচ্ছ্বাসটা সে এনজয় করে। মানে করতো।

মৃত্যুও একটা শরীরী আবেগ। খেলা। শরীর ছুঁই ছুঁই খেলা। থানাটোস। উপভোগ্য আমেজ।

এখন খেলা বদলে গিয়েছে। থানাটোস টু ইরোস। বুড়ো আঙ্গুলটা চুকচুক চুষতে চুষতে নিজের ঘরে ঢুকে দরজা ভেজিয়ে দিলো সে। এখন হাজার স্কিপিং করবে। তারপর ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজ, তারপরই দুধ বোর্ণভিটার নরম গরম আরাম। চাইই। স্কিপি়ং মুঠোয় নিয়ে আয়নার দিকে তাকালো। ছোট্ট ছোট্ট বিভোর লাফ। শীত সন্ধ্যাতেও চুঁইয়ে পড়ছে ঘাম। ফোঁটা ফোঁটা নোনতা চুমু বুকের খাঁজ ভাঁজ দিয়ে নেমে যাচ্ছে। চিৎমুদ্রায় নিজেকে বিছিয়ে দিলো সে। ভীষন চনমনে রক্তঘাম সারা শরীর জুড়ে কলকল্লোল তুলেছে। একঝটকায় স্পোর্টস ব্রা উড়ে গেলো। আয়নার আড়ালে উন্মুক্ত শরীর। পদ্মকাঁটার ঘেরাটোপে উন্মুখ বৃন্ত। নিজের চুচুকে চুমুক দেবার আসনটি এখনো শেখা হয়নি তার, হায় ! তেলপিচ্ছিল নিটোল নরম ত্রিভুজটিকে কম্পাসবিদ্ধ আঙ্গুলরা পিষ্ট করে। আশ্লেষে দশভুজা হয়ে জড়িয়ে ধরে নিজেকেই।

মুখে আঙ্গুল দেওয়া আঙ্গুলেরা সান্দ্র ঠোঁট বিবর খুঁজে নিচ্ছে দ্রুত। সঘন কৃষ্ণ অরণ্যের কিছু নীচে মেঘলা ভৃগুতটে নির্জন খেলা করছে আঙ্গুল। ব্যথা লাগছে। কঠিন ধারালো নখ বিদ্যুৎব্যথায় খুঁড়ে দিচ্ছে গোপন গহ্বর।

তারপর, শাঁখ বেজে ওঠে। গলিত তরলিত আঠালো কুসুম ভাঙার গহীন নিভৃত সুখ মেখে অহঙ্কারী উরু এখন ক্লান্ত, শিথিল। আলো নেভা ঘর দেখে মা একটু ইতস্তত করে। ইতস্তত, কারণ, দুধ বোর্ণভিটার মিষ্টি তিতকুটে গন্ধ পেরিয়ে রহস্য রমণগন্ধ মায়ের অভিজ্ঞ নাকে ধাক্কা দিচ্ছে। অভিজ্ঞ বলেই ভীরুভীরু অবুঝ পায়ে দরজা খুলে ঘরে ঢুকে ভিজে ভিজে শ্যাওলা মাদকতায় আদুর উপুর মেয়েকে দেখে। শঙ্খভাঙা নির্লজ্জকুহকিনী কুসুমক্লেদমাখা আঙ্গুল চুষছে বিভোর। আশৈশবের অভ্যাস। শরীরী মুদ্রাদোষ।

♦♦♦♦♦—♦♦♦♦♦ ♦♦♦♦♦—♦♦♦♦♦


  • Tags:

Read by: 143 views

❤ Support Us
Advertisement
homepage vertical advertisement mainul hassan publication
Advertisement
homepage billboard publication
Advertisement
Advertisement
শিবভোলার দেশ শিবখোলা স | ফ | র | না | মা

শিবভোলার দেশ শিবখোলা

শিবখোলা পৌঁছলে শিলিগুড়ির অত কাছের কোন জায়গা বলে মনে হয় না।যেন অন্তবিহীন দূরত্ব পেরিয়ে একান্ত রেহাই পাবার পরিসর মিলে গেছে।

সৌরেনি আর তার সৌন্দর্যের সই টিংলিং চূড়া স | ফ | র | না | মা

সৌরেনি আর তার সৌন্দর্যের সই টিংলিং চূড়া

সৌরেনির উঁচু শিখর থেকে এক দিকে কার্শিয়াং আর উত্তরবঙ্গের সমতল দেখা যায়। অন্য প্রান্তে মাথা তুলে থাকে নেপালের শৈলমালা, বিশেষ করে অন্তুদারার পরিচিত চূড়া দেখা যায়।

মিরিক,পাইনের লিরিকাল সুমেন্দু সফরনামা
error: Content is protected !!