- গ | ল্প রোব-e-বর্ণ
- নভেম্বর ১২, ২০২৩
হেরো
সামনে তাকিয়েই ও দেখতে পেল সেই দুটি চোখ। যে চোখকে আজ ওর মনে হল শান্ত স্থির পুকুরের মতন। ভরসা করার মতন। মায়ের আলমারির ভেতরটার মতন। চন্দন সাবানের গন্ধে ভরা
আলঙ্করণ – দেব সরকার
সিটদখলের হামলাটা সামলাতে সামলাতে অলকের আজ খেয়াল ছিল না, দিনটা বুধবার। সকালে স্টেশনে গিয়ে প্রথমেই দেখল সব ট্রেন লেটে রান করছে। তারপর তুমুল ভিড়ে ঘষ্টাঘষ্টি করে যাও, বসো ওইটুকু জায়গায় পশ্চাদ্দেশ ঠেকিয়ে !
রুমাদেবীর সাথে দেখা হবার দিন আজ। আহা, ভ্যানিটিব্যাগরূপেণ সংস্থিতা !
চশমার ভেতরে ভাপ জমে যেত যখন মুখোশ পরত অলক। সেই কুড়ি একুশ সালের বিষ বিষ দিনগুলোতে। আজো , অকারণেই, ঠিক সেরকম ভাপ জমে রুমাকে দেখলে তার। এখনই আবার ঘটল এটা ।
চশমা নামিয়ে রুমালে মুছে ফেলতে হল অলককে।
আশনাই জমানো চাউনি তার। তরল আলতার মতন হাসি। রুমা আজও নিজের ফোনে কি একটা দেখে হঠাৎ মুচকি হাসছিল। অথচ এমনিতে তার মুখ আজকাল কাতর থাকে। কিছুদিন যাবত লক্ষ করেছে অলক। রুমার ঝলমলে ব্যাপারটাকে যেন এক ফুঁয়ে নিভিয়ে দিয়েছে কেউ।
তবু, জানালার ধারে হঠাত বসতে পেলে রুমার চোখ যেন সবুজকে শুষে নেয়। যেন কত তেষ্টা তার ভেতরে। সে তালগাছের সারি, জলেডোবা ধানখেতের দিকে তাকিয়ে থাকে। আর অলক দেখে সেই ধানখেতের ছায়া পড়েছে তার ধুপছায়া রং শাড়িতে। তার কচি কলাপাতা আভার ব্লাউজে আর গলার কাছের তেল পিছলানো বাদামি চামড়ায় তারই প্রতিফলন।
রুমার চেহারায় , শরীরের ভেতরে এক পুরনো দেরাজের মত হাতছানি আছে। সেই যে পুরনো কাঠের। ঘর জুড়ে থাকা। ড্রয়ার টানলেই, ভেতরে ন্যাপথলিনের আদুরে গন্ধ, পুরনো রেশম শাড়ির খসখস। কী এক রহস্য। মায়ের ছিল। মায়ের কথা ভাবলেই আবার মন খারাপ। ডিমেনশিয়া হয়ে গেছে মায়ের। বিছানা সম্বল। নোংরা বিছানায় পড়ে থাকে বুড়ি মা। যে একসময় ছিল টিপটপ। মায়ের আয়নার সামনে থেকে চুরি করে কিউটিকিউরা পাউডারের কৌটো নিয়ে মেঝেতে ঢেলে অলক আর তার মাসতুতো বোন খেলত, আইস স্কেটিং! একবারই টিভিতে দেখেছিল স্কেটিং। মনে হয়েছিল পেছল মেঝে থাকলেই করা যায়। তারপর দড়াম পা পেছলানো। মাথা ফেটে দুটো স্টিচ। মা বলেছিল মেয়েদের সাথে তোর খেলা বন্ধ। যত্তসব পুতুল খেলা, চা বানানো খেলা, রান্নাবাটি! আর এইসব ভুলভাল। পা পেছলানো।
শরীরের ভেতরে এক পুরনো দেরাজের মত হাতছানি আছে। সেই যে পুরনো কাঠের। ঘর জুড়ে থাকা। ড্রয়ার টানলেই, ভেতরে ন্যাপথলিনের আদুরে গন্ধ, পুরনো রেশম শাড়ির খসখস। কী এক রহস্য।
মায়ের আলমারিতে রহস্য ছিল। মেয়েদের মধ্যে রহস্য আছে। রুমাকে তাই ভয় করে। রুমাকে দেখলে টান টান লাগে। দেখলেই মন বলে, একে চিনি চিনি। সত্তরভাগ আটপৌরে আর পঁচিশভাগ রহস্য। বাকি ওই পাঁচ পারসেন্ট তো , তরল আলতা, আলতাই!
রুমার কাজের জায়গাটা সম্ভবত ওই বীরপুরের কোন উৎপটাং নার্সিং হোম। রুমা সেই নার্সিং হোমের রিসেপশন সামলায়। প্রতি সোম বুধ আর শুক্রবার কাজে যায় ফিটফাট হয়ে, শাড়ির ভাঁজ সে অক্ষত রাখতে পারে কোন ম্যাজিকে এত ভিড় ট্রেনে চেপেও কে জানে, সেই ছোট্ট ছোট্ট হলুদ ফুল প্রিন্টের শাড়ি। মোক্ষম রং, যদিও ওই রঙ ওই ছাপের শাড়ি বাকি আরো দশটা মেয়েও পরে নির্ঘাৎ সে নার্সিং হোমে। কিন্তু কারুকে ওরকম লাগে কি?
রুমার হাতে থাকে তার হালকা গোলাপি রঙা অদ্ভুত কায়দার ভ্যানিটি ব্যাগ খানা! আজকাল মেয়েরা বোধহয় ভ্যানিটি ব্যাগ বলেওনা ওগুলোকে। মায়ের আলমারির ব্যাগটিতে রহস্য মাখানো রুমাল থাকত। বাবার মৃত্যুর আগে আগে লেখা একখানা চিঠিও, ভাঁজে ভাঁজে ছিঁড়ে যাওয়া।
চারটে স্টেশন পাক্কা একসাথে যাওয়ার নয়ন-সুখ উপভোগ করে অলক রুমার সাথে। এবং বেশ লম্বা পথটুকু রুমা তার দিকে টুলুস টালুস চাইতে চাইতে যায়। প্রথমত, সে কেন লেডিস কম্পার্টমেন্টে না উঠে জেনেরালে ওঠে তাই বা কে জানে। দ্বিতীয়ত বারে বারেই অলক আর রুমার একই কম্পার্টমেন্টেই সিট পড়ে কেন । তৃতীয় একটা সম্ভাবনার কথা ভেবে গায়ে শির শির অস্বস্তি হয় বটে অলকের। ওই একই কম্পার্টমেন্টে সুতনুও ওঠে। সেই সুতনু, যে রুমার স্টেশনেই নামে। অলকের এক স্টেশন আগে। বিডিও আপিসের কেরানি। কো অর্ডিনেশন করে হেবি কলার তুলে ঘুরে বেড়ায়। দেখতেও অলকের চাইতে কয়েকগুণ সুপুরুষ সে।
নাহ, অলক তা কিছুতেই মানবে না। সুতনুকে বেশি হ্যান্ডসাম ভাবতে তার গায়ের রোঁয়া দাঁড়িয়ে যায়। ঘাড়ের কাছটা রাগে কেমন দপ দপ করে । আয়নার সামনে বার বার দাঁড়িয়ে অলক আবার নিজের চুল পরখ করে। রুমার চোখ দিয়ে দেখার চেষ্টা করে তার কী আছে আর কী নেই। তার কিছুই কি রুমার ভাল লাগার মতন হবে না ? অন্তত তার যে রুমাকে ভাল্লাগে আর সেটা যে সে চোখ দিয়ে প্রকাশ করেই ফেলে প্রতিবার এই কথাটাই তো রুমার বুঝতে পেরে তাকে ভাল লাগা উচিত। সেও কিছু কম চাকরি করেনা। যদিও প্রাইভেট সেক্টরে। কিন্তু তাও, তাদের কম্পানি তো অনেকগুলো ছেলেমেয়েকে দাঁড় করিয়েছে কম্পিউটার কোর্স করিয়ে।
সুতনুর চোয়াল শক্ত। তার কাঁধদুটো ভীষণ উঁচু আর কঠোর। তার শার্ট ঘামে শরীরের সাথে লেপটে থাকে। অলকের ঢিলেঢালা জামা। রুখুশুখু দাড়ি। অলকের চাউনি মেঘলা দুপুরের মতন। চশমার ভেতর দিয়ে চোরা চাহনিটি অলকের। বুকে গিয়ে বেঁধে না কি রুমারও?
♦২♦
রুমা তো জানত, মা বেশিদূর পড়াশুনো করে উঠতে পারেনি। ফাইভ অব্দি পড়েছিল মা। কিন্তু দুলে দুলে কিশলয়ের কবিতাগুলো মুখস্ত বলত , বড় ভালবাসত মা ওই কবিতাগুলোকে। এক যে ছিল গাছ , সন্ধে হলেই হাত পা তুলে জুড়ত ভূতের নাচ…মা রুমাকে সবকটা কবিতা বার বার বলত। কোলের মধ্যে শুইয়ে দোল দিয়ে ঘুম পাড়াতে পাড়াতে বলত। ভোতনমোহন আর রামসুখ তেওয়ারির কবিতা। তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ের কবিতা।
মা বলেছিল, ক্লাস সেভেনে আমার বিয়ে দিয়ে দিয়েছিল বাবা। তোকে কিন্তু চাকরি করতেই হবে। আগে চাকরি তারপর বিয়ের কথা।
বাবাও মায়ের কথা শুনে চলে এসব ব্যাপারে। কখনো রা কাড়েনা। বাবার মাঝারি সরকারি চাকরি। মধ্যে বুকের অসুখের জন্য প্রচুর অ্যাবসেন্ট । উইদাউট পে বসে গেল কিছুদিন। সেই জন্যেই হয়ত, বাবাও রুমার বি এ ক্লাস অব্দি পড়ানোতে না করে নি। মেয়ে একটা চাকরি জোটাতে বাবাও নিশ্চিন্ত হয়েছিল।
রোজ এই ট্রেনের জার্নিটুকু বেশ ভাল লাগে রুমার। আকাশ দেখে, গাছ দেখে। তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে। মায়ের মুখে শোনা অশোকবিজয় রাহার কবিতা… এক যে ছিল গাছ।
রুমা কবিতার ছন্দ শোনে কান পেতে। ট্রেন চলে ছন্দে ছন্দে। কখনো তা আসছে বছর আবার হবে। কখনো তা, ধিন্তাধিনা ধিন্তাধিনা।
বাংলা বা ইংরেজি নিয়ে পড়ুক, মা চাইত। রুমা পড়ল ভূগোল নিয়ে। রেজাল্ট খারাপ করেনি। কিন্তু নাহ। লেখাপড়া তার আগে কাজেই লাগল না। ভারতের আর পৃথিবীর ম্যাপ ফ্রি হ্যান্ডে দিব্যি এঁকে দিতে পারত রুমা। কিন্ত তা তার বাকি জীবনে কোন কাজেই লাগল না।
মায়ের ইচ্ছে ছিল রুমা ইশকুলের দিদিমণি হবে। মা ক্লাস ফাইভ অব্দি পড়ার বিদ্যে নিয়ে নিজের হিসেবের খাতা লিখত। নিজের ছোট ছোট ডায়েরির মত খাতা কিনে আনত। পেনসিল দিয়ে মনের কথা লিখত। পেনসিলে কেন লেখে মা? ভয় পায় কলমে লিখতে? যদি বেশি জোরে কথা বলা হয়ে যায়? মেয়েদের তো বেশি জোরে কথা বলতে নেই।
রেজাল্ট বেরুবার পর অমিতকাকু ভাগলবা হল। বাড়িতে তালা দিনের পর দিন। দরজার গোড়ায় নালীঘাস গজালো। বাড়ির পাশের টিনের শেডে সাইকেল আর সাইকেল বাঁধার চেনে জং।
রুমার অবশ্য খুব কলমের শখ। মাধ্যমিক পাশ করে ভাল জেল কলম উপহার দিয়েছিল জেঠু। ঠাম্মার ভয়ে মা পেনসিলের ওপরে উঠতে পারেনি, সেই ঠাম্মাই, কলমটা নেড়েচেড়ে দেখেছিল লোভির মত। রুমাকে বলেছিল , লিখে দেখা তো। তোর হাতের লেখা খুব ভাল।
বাবা, ঠাম্মা, জেঠু, মা। সবাই ভুল করে বসল। অমিতকাকুকে ধরে বারো লাখ টাকা দিল ধারকর্জ করে। চাকরিটা কিন্তু রুমার হল না। এস এস সিতে বসাই সার হল। অমিতকাকু নাকি আগে দু একজনের চাকরি করিয়ে দিয়েছে। বলেছিল রোল নম্বর লাগবে শুধুই। মিনিস্টার নয়, তার চেয়েও শক্তিশালী কানেকশন আছে চেনা। মিনিস্টারের পি এর প্রেমিকা। অমিতকাকুর শালী।
যারা যারা ওদের এলাকায় অমিতকাকুকে গলার চেন, হাতের রুলি, এমনকি লোহা থেকেও সোনা খুলে নিয়ে টাকা জোগাড় করে দিয়েছিল, তারা এখন বলছে, অমিতকাকুর বউটা নাকি কার সাথে ভাগলবা হয়েছে বলে, শালীর সঙ্গেও সম্পর্কটা কেচিয়ে গেছে। তাই এবার কিসসু হল না।
রেজাল্ট বেরুবার পর অমিতকাকু ভাগলবা হল। বাড়িতে তালা দিনের পর দিন। দরজার গোড়ায় নালীঘাস গজালো।বাড়ির পাশের টিনের শেডে সাইকেল আর সাইকেল বাঁধার চেনে জং।
এদিকে রুমার মাথা বাড়ির সবার কাছে চিরতরে হেঁট হয়ে গেল। ঠাম্মা জেঠুকে মুখ দেখানো যায়না আর। হেরে গেছে ওরা বাড়ি শুদ্ধ সব্বাই। পাড়াশুদ্ধ লোক যেন জেনে গেছে অমিতের ভরসায় রুমা পরীক্ষা দিয়েছিল। হেরো! হেরো! সারাক্ষণ যেন বলছে এই পৃথিবী তার দিকে চেয়ে চেয়ে।
বাবা মার আদরের মেয়ে রুমার এখন ভাত গিলতেও তেতো লাগে। বুকে যেন সারাক্ষণ কী একটা ভারি পাথর। ব্যথা ব্যথা। কাজের জায়গায় কেউ কেউ জেনেছিল স্কুল সার্ভিসে রুমা বসেছে। তাদের উৎসুক চোখগুলোর ঔৎসুক্য নিভে গিয়েছিল দ্রুত। রুমা জানে, টাকা দিয়ে চাকরিটা পেলেও যে সে খুব ভাল থাকত তা নয়। তবু, ওই আর কি। সরকারি চাকরি তো। ভূগোল দিদিমণি হলে বোর্ডে চক দিয়ে সে এক টানে ভারতের ম্যাপ এঁকে দিত। বাচ্চারা হাঁ করে দেখত।
♦৩♦
জেনারেল কম্পার্টমেন্টের ভিড় দেখে যে কারুর পিলে চমকে যাবে। আজ স্টেশনে রুমাকে এক ঝলক দেখল তারপরই খেয়াল করল অলক, হবি তো হ, ভিড় দেখে রুমা বোধ করি আজ লেডিস কম্পার্টমেন্টের দিকেই হাঁটা দিয়েছে!
তার ইচ্ছে হল ডাক দেয় রুমাকে। ইচ্ছে হল, ডেকে বলে, তোমার জন্য সিট রেখেছি রুমা। কিন্তু গলা বুজে এল। কিছুতেই বলা হল না। বার বার নিজেকে বলতে লাগল অলক, হেরো, হেরো একটা আমি। আমাকে কেন পাত্তা দেবে ওই তরল আলতার মত মেয়ে?
কিন্তু শেষ অবধি রুমা উঠতে পারেনি মনে হয় লেডিসে। বড্ড ভিড়। সর্বত্র ভিড়। তবু রুমা পাগলের মত এদিক ওদিক দেখে হঠাৎ এদিকে এল। তবে বুঝি অলককে দেখতে পেয়েই? এই কম্পার্টমেন্টেরই পাদানিতে পা রাখল। তারপর পেছনের উচক্কা ভিড়ের গোঁত্তায়, এলোমেলো ঢেউয়ে, ঘাম মাখা বুড়োবাচ্চামাঝারিবয়সী পুরুষদের হুড়োহুড়ির চাপে এক মুহূর্তে সিধে সেঁধিয়ে গেল ভেতরদিকটায়।
একটা ছোঁড়া হেবি চেঁচাচ্ছিল। পেছনের দিকে এগিয়ে চলুন, পেছনের দিকে এগিয়ে চলুন। মশকরার ঢঙে বলছিল। মজা করছিল কথাটার অর্থ যেন চারিদিকে ছড়িয়ে, চারিয়ে দিতে দিতে। হাঙরের মত ভিড়। কদাকার কিছু হাত। রুমার সর্ব অংগ শিউরে উঠলেও সে প্রতি অংগের ভেতরের স্নায়ুকে অসাড় করে রাখছিল, কারণ কাজের জায়গায় তো যেতেই হবে, না? কাজ তো করতেই হবে। নইলে খাবে কি।
কত মানুষ এইভাবে বছরের পর বছর কাজের জায়গায় শুধু যায় আর আসে। বেড়াতে যায় না, ভাল করে খায় না পর্যন্ত। টিফিন কৌটোতে আলুভাজা পরোটা ভরে নিয়ে যায়। স্যাঁতসেঁতে আলু, খরখরে পরোটা। স্টেশন চত্বরে গরম জিলিপি ভাজা হচ্ছে দেখলে দাঁড়ায় মুহূর্তেক। কিন্তু সময় নেই ভেবে, বা টাকা নষ্ট হবে ভেবে, পালায় সে জায়গা থেকে দ্রুতপদে।
রুমা টের পেল ঘাড়ের কাছে গরম নিঃশ্বাস ফেলছে কেউ। অসহ্য লাগল সেই সস্তা একটা বডি স্প্রের গন্ধ। ফগ চল রহা হ্যায়। ফগের গন্ধ এখন পুরুষের রোমকূপ নির্গত অনাহত কস্তুরীগন্ধের সমার্থক। মেয়েদের টানে? টানে না?
এই মুহূর্তে রুমার চড়াক করে রাগ চড়ে গেল। ঘুরে দাঁড়ানোর আগে ও ভাবল, এইটা সেই এলেবেলেটা। যারা হেরো, চোরাপথে হাশিল করতে চায় প্রেম, পিরিত!!! হেরোই তো ! নইলে কথা কয়না, আলাপ করতে আসেনা, সৎ সাহস নেই তার সামনে দাঁড়িয়ে বন্ধুত্ব করার? শুধু রোজ কেমন আড়াল ধরা চাউনি দেয় চশমার ফাঁকে। আজ সুযোগ পেয়ে অসভ্যতা করতে এসেছে।
থাপ্পড় উঠিয়ে দেখল, আরে না ! এ তো অন্য ছোকরা। বিডিও আপিসের সেই গুন্ডামতন ছেলেটা। পেটে কনুই দিয়ে এক খোঁচা দিয়ে সরিয়ে দিতেই, সুতনু ছিরকুটে দাঁত বের করে হেসে দিল। মানে ?
আজ প্রথম হেরে যাওয়াটাকেই জিতে যাওয়া মনে হল রুমার। আর ওই হেরো লোকটাকে ভীষণ ভাল লেগে গেল। এক টানে ভারতের ম্যাপ আঁকার মত , মনে মনে রুমা ওই লোকটার মুখের একটা আদল নিজের মনের পটে এঁকে নিল
রুমা বুঝল, গায়ের স্পর্শটা অব্দি সে ভুল মানে করেছে। তার ঝাঁঝিয়ে ওঠা কনুইএর গুঁতো ওর কাছে মিষ্টিমধুর প্রেমের পরশ টাইপের কিছু মানে হয়েছে !!! ওই হাসিটার আর কীই বা মানে হয়। অথচ, অথচ, রুমা কিনা, উফফফ ভাবতেও কান মাথা ঝাঁঝাঁ করে রুমার । এই সুতনুকে তার বেশ ভাল লাগতে শুরু করেছিল।
এবার ভিড় ডিঙিয়ে এক ধাক্কায় অনেকটা দূরে নিজেকে স্থাপনা দিল রুমা। একেবারে ভিড়ের শেষ প্রান্তে ঢুকে ই এম ইউ কোচের শেষের হলুদ সবুজ দেওয়ালে নিজেকে সাঁটিয়ে দিল।
আর তারপর সামনে তাকিয়েই ও দেখতে পেল সেই দুটি চোখ। যে চোখকে আজ ওর মনে হল শান্ত স্থির পুকুরের মতন। ভরসা করার মতন। মায়ের আলমারির ভেতরটার মতন। চন্দন সাবানের গন্ধে ভরা।
আর তখনই রুমার চোখ পড়ে গেল সামনের একজনের হাতে ধরা কাগজটার দিকে। টাকা দিয়ে চাকরি যারা পেয়েছিল ইশকুলে, তাদের সবার চাকরি চলে গেছে। ফাঁকা খাতা জমা দিয়েছিল তারা।
নাহ, অমিতকাকু ফাঁকা খাতা জমা দেবার কথাও বলেনি রুমাকে। আর চাকরিটাও হয়নি।
আজ প্রথম হেরে যাওয়াটাকেই জিতে যাওয়া মনে হল রুমার। আর ওই হেরো লোকটাকে ভীষণ ভাল লেগে গেল। এক টানে ভারতের ম্যাপ আঁকার মত , মনে মনে রুমা ওই লোকটার মুখের একটা আদল নিজের মনের পটে এঁকে নিল। বাড়ি গিয়ে কাগজে আঁকবে। পেনসিল দিয়ে।
না না, পেন দিয়ে আঁকবে। রেখাগুলো যেন মুছে না যায়… সহজে হালকা আবছা মলিন হতে দেবেনা সে অলকের মুখের আদল।
♦–♦♦–♦♦–♦
❤ Support Us