Advertisement
  • পা | র্স | পে | ক্টি | ভ রোব-e-বর্ণ
  • জানুয়ারি ২১, ২০২৪

আমার বাবা নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী

বাবার চিঠিগুলো ছিল এক-একটা ছবি। মনে হত, আমরাও বাবার সঙ্গে সেই দেশে ভ্রমণ করছি। এইভাবে বাবার চিঠির মধ্য দিয়ে যে কত দেশ ভ্রমণ করেছি, তার ইয়ত্তা নেই

সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায়
আমার বাবা নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী

চিত্রকর্ম: আলি আকবর

 
আমার বাবা কবি। তাঁর কবিতা নিয়ে কথা বলবেন বিশেষজ্ঞরা। আমি আমার বাবাকে নিয়ে কথা বলব।
২০১৮-তে আমি আমার মা ও বাবাকে হারাই। শোকে আচ্ছন্ন ছিলাম। আজ পাঁচ বছর কেটে গেছে, শোক স্তব্ধ হয়ে মনের মধ্যে ঢুকে গেছে। মা-বাবাকে আর দেখতে পাব না, এটা বিশ্বাস করতেই পাঁচ বছর লেগে গেল।
 
শৈশবের স্মৃতি দিয়েই শুরু করি। আমাদের বাবা যে অন্যরকম, তা মা আমাদের অতি শৈশবেই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। সকাল থেকে অফিস যাবার আগে পর্যন্ত বাবা একটানা টেবিলে বসে লিখে যাচ্ছেন, এই ছবিটা চোখ বুজলেই দেখতে পাই। তারপর খেয়েদেয়ে অফিস যাচ্ছেন, সোজা হেঁটে — এটাও আরেকটা ছবি। বাবা অনেক রাতে বাড়ি ফেরেন, তখন আমি ঘুমে। দিনের বেলা যখনই পারতাম, আমি ও আমার বোন বাবার লেখার টেবিলের তলায় মায়ের বারণ সত্ত্বেও ঢুকে খেলতাম। বাবা যে চেয়ারে বসে লিখতেন, তার পেছনে উঠে দাঁড়িয়েও খেলতাম। বাবা কখনও কিছু বলতেন না। বরং প্রশ্রয়ই দিতেন। আমরা দু’বোনে বাবাকে কত প্রশ্ন করতাম, লেখায় মগ্ন বাবা শুধু হুঁ-হাঁ উত্তর দিতেন।
 

আমার মা পড়াতেন স্কুলে। তাই আমাকে স্কুলে যাওয়ার সময় তৈরি করতেন বাবা। আমি খেতে চাইতাম না বলে বাবা Alice in Wonderland, Charlie and the Chocolate Factory, The Famous Five ইত্যাদির গল্প বলে আমাকে খাওয়াতেন। সে ছিল বাবার আর আমার একান্ত গল্প বলা ও শোনার সময়। তারপর বাবা আমাকে স্কুলবাসে তুলে দিয়ে আসতেন। সেই যে গল্পগুলো শুনতাম, তা আমার শিশুমনের মধ্যে ছবির মতো আঁকা হয়ে থাকত। পরে বইগুলো যখন নিজে পড়ি, তখনও এত সুখ পাইনি। বাবার গল্প বলার ঢঙে চরিত্রগুলো যেন জীবন্ত হয়ে উঠত। Alice হয়ে উঠতো আমার বোন, Charlie হয়ে উঠতো আমার ভাই।
 

বাবা বাজার করতে খুব ভালবাসতেন। ঠাকুমা বলতেন: ‘খোকা বাজার থেকেই রান্না করে আনে’।বাজার করতে গিয়ে বাবা আসলে লোক দেখতেন ̶ তাঁরাই হয়ে উঠতেন বাবার লেখার চরিত্র। কল্পনা ও বাস্তব মিলেমিশে এককার হয়ে যেত। এটাই বোধহয় তাঁর কবিতার জনপ্রিয়তার একটা প্রধান কারণ।

 
আমার বাবা খুব বেড়াতে ভালবাসতেন। কলকাতা শহরে একটানা বেশি দিন থাকতে বাবার ভাল লাগত না। প্রতিবছর আমরা বেড়াতে যেতাম। বেশি যেতাম পুরী। সেই যে পুরী আমার মধ্যে ঢুকে গেল, তার থেকে আজও বেরোতে পারিনি। আজও যখন আমার স্বামী জিজ্ঞেস করেন, কোথায় বেড়াতে যাবে? ̶ আমি চোখ বুজে বলে দিই : পুরী। পুরী মানে বাবার কাছে সমুদ্র, শুধুই সমুদ্র। সমুদ্রে চান, সমুদ্রের তীরে বসে মিষ্টি খাওয়া, আর মন ভরে, চোখ ভরে সমুদ্রকে দেখা।
 
বাবার ছোটবেলায় বাবা তাঁর নিজের বাবার অসুস্থতার জন্য অনেকদিন পুরীতে ছিলেন। ‘হারমিটেজ’ বলে চক্রতীর্থের একটি বাড়িতে। পরে পরিণত বয়সে পুরীতে গিয়ে বাবা সেই বাড়িটিকে ভগ্নদশায় খুঁজে পেয়েছিলেন। আজ আর বাড়িটি নেই। এই যে এক জায়গাতেই ফিরে ফিরে যাওয়া, এটার মধ্যে বাবা খুব আনন্দ পেতেন। জীবনের শেষের দিকেও বাবা পুরী খুব উপভোগ করেছিলেন।
 
বাবা বাজার করতেও খুব ভালবাসতেন। আমার ঠাকুমা বলতেন: ‘খোকা বাজার থেকেই রান্না করে আনে’। ছোটবেলায় যখন বাবার সঙ্গে বাজারে গেছি, তখন বাবাকে দেখেছি মাছওয়ালা সব্জিওয়ালাদের সঙ্গে গল্প করতে। বাজার করতে গিয়ে বাবা আসলে লোক দেখতেন ̶ তাঁরাই হয়ে উঠতেন বাবার লেখার চরিত্র। কল্পনা ও বাস্তব মিলেমিশে এককার হয়ে যেত। এটাই বোধহয় বাবার কবিতার জনপ্রিয়তার একটা প্রধান কারণ।
 
১৯৭০-এ বাঙ্গুরে ভীষণ বন্যা হয়। আমি তখন খুব ছোট। জ্বর হয়েছিল আমার। আমাদের বাড়ি তখন ছিল একতলা। জল ঢুকে যায় বাড়ির মধ্যে। আমাদের বাড়ি ছেড়ে আমরা আশ্রয় নিই পাশেরই একটা দোতলা বাড়িতে। বাবা কিন্তু বাড়ি ছেড়ে যাননি এবং লিখেও গেছেন ‘হ্যালো দমদম’-এর মতো কবিতা। একজন মানুষ অসাধারণ হলেই তো এটা পারে। এই কথাটা সেই দিন বালিকা আমি বুঝিনি, ফিরে তাকালে আজ বুঝি।
 
বাবারা আদতে বাংলাদেশের মানুষ। আমার স্মৃতিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ খুব জ্বলন্ত হয়ে আছে। সেই সময় বাবারা এই স্বাধীনতা সংগ্রামে খুবই জড়িয়ে পড়েছিলেন। বাংলাদেশের বহু বুদ্ধিজীবী এই সময় আমাদের বাড়িতে আসতেন। সদ্যপ্রয়াত মাহবুব তালুকদারের কথা এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে পারি। মাহবুব তালুকদার হয়ে উঠেছিলেন আমাদের মাহবুব কাকা। তাঁর কন্যাদ্বয় স্বাতী ও গীতি হয়ে উঠছিল আমাদের খেলার সঙ্গী। অনেক রবিবার বাবার সঙ্গে বিভিন্ন মিটিং-এ গেছি, যেগুলি ছিল এই স্বাধীনতা যুদ্ধ-কেন্দ্রিক।
 
মাধ্যমিকে আমার অ্যাডিশনাল পেপার ছিল লজিক। বাবা এটা আমাকে পড়াতেন। তখন দেখেছি কত সহজভাবে বাবা লজিকের মতো একটা বিষয়কেও আমার কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতেন। বাবা বোঝানোর সময় উদাহরণগুলোকে আকর্ষক করে তুলে আমাকে বোঝাতেন: যাতে বিষয়টা আমার ভাল লাগে। বাবা শিক্ষক হলে খুব ভাল হতো — একথা মা প্রায়ই বলতেন। কবিতার ক্লাস বা কী লিখবেন, কেন লিখবেন -এর কথা এই প্রসঙ্গে বলতে পারি। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাবা পরবর্তীকালে যে বক্তৃতাগুলি দিয়েছিলেন, তাতে যে উপচে-পড়া ভিড় হত, সেকথাও এই প্রসঙ্গে স্মর্তব্য।
 
পেশাগতভাবে বাবা সাংবাদিক হলেও আমাদের কিন্তু বাবা সবসময় শিক্ষকতা বৃত্তির সঙ্গে যুক্ত হতে উদ্বুদ্ধ করতেন। বলতেন, অধ্যাপনার মতো একটা বৃত্তি হয় না। আমার বাবা তাঁর বাবাকে অল্পবয়সে হারিয়েছিলেন। আমাদের ঠাকুর্দা ছিলেন অধ্যাপক। বোধহয় নিজের বাবাকে idealise করতে গিয়ে তাঁর বৃত্তিকেও বাবা idealise করে ফেলেছিলেন। এই যে অল্পবয়সে বাবাকে হারানোর বেদনা, তা বাবা আজীবন বহন করেছিলেন। বাবা ঈশ্বরে বিশ্বাস করতেন, কিন্তু পুজোপাঠে নয়। বাবার কাছে কখন যেন ঈশ্বর ও তাঁর বাবা একাকার হয়ে গেছিলেন। একটা father figure-এর অভাব তাঁর মনের মধ্যে ছিল ̶ যেখান থেকে তিনি তাঁর ছেলেমেয়েদের আমৃত্যু আগলে রাখতে চেয়েছিলেন, তাদের মাথার উপর ছাতার মতো হয়েছিলেন। অল্প বয়সে ঠাকুর্দার মৃত্যু বাবার উপর ভীষণভাবে ছাপ ফেলেছিল। হয়তো এই মৃত্যু, এই বেদনা তাঁকে যেমন পরিণত করেছে, তেমনি একাকীও। ঠাকুর্দাকে আমরা কখনও দেখিনি। কিন্তু বাবার কথায়, স্মৃতিতে তিনি ছবি নন, একজন জীবন্ত মানুষ হিসেবেই আমাদের পরিবারে ছিলেন।
বাবা আনন্দমেলা পত্রিকার সম্পাদক হন ১৯৭৫ সালে। এরপর টানা বারো বছর তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন। এই সময় বাবাকে এক অন্যরূপে দেখেছি। সম্পাদক হবার পর বাবার অফিস যাবার সময় একদম পাল্টে গেল। আগে বাবা খেয়েদেয়ে বারোটা নাগাদ অফিস যেতেন। এবার বাবা বাড়ি থেকে বেরোতে শুরু করলেন সকাল সাড়ে আটটায়। আমরা বাবাকে কম সময় পেতে শুরু করলাম।
 

বাবার চিঠিগুলো ছিল এক-একটা ছবি। মনে হত, আমরাও বাবার সঙ্গে সেই দেশে ভ্রমণ করছি। এইভাবে বাবার চিঠির মধ্য দিয়ে যে কত দেশ ভ্রমণ করেছি, তার ইয়ত্তা নেই। বাবা বিদেশ থেকে ফিরে আসতেন আমাদের জন্য অনেক অনেক উপহার নিয়ে, সেগুলির সঙ্গে জড়িয়ে থাকত একটা অন্যদেশের গন্ধ। 

 
বাবা যে কী নিষ্ঠার সঙ্গে, ভালবাসার সঙ্গে সম্পাদনার এই দায়িত্ব পালন করেছেন, তা অনেক লেখকই জানেন। যাঁরা সাধারণত বড়দের জন্য লিখতেন, তাঁদের দিয়ে ছোটদের জন্য লিখিয়েছেন; টিনটিনের মতো কমিকস্ট্রিপের বাংলা অনুবাদ করিয়েছেন; বাংলা বানানের উপর লেখা ছাপিয়েছেন, ইত্যাদি। বাবার এই সফল সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের ফলেই আনন্দমেলা হয়ে দাঁড়ায় ছোটদের ভালবাসার একনম্বর পত্রিকা। তাঁর এই সম্পাদকের দায়িত্ব পালন কিন্তু তাঁর কবিসত্তাকে বিঘ্নিত করতে পারেনি।
 
বাবা বহুবার বিদেশ গেছেন। বাবা বিদেশ গেলে বাড়িটা ফাঁকা হয়ে যেত। আমরা অপেক্ষা করতাম, কবে বাবার চিঠি আসবে তার জন্য। বাবা নিয়মিত মাকে চিঠি লিখতেন। আমাদেরও মাঝেমাঝেই। সব চিঠিতে সেই দেশের বর্ণনা থাকত। বাবার চিঠিগুলো ছিল এক-একটা ছবি। মনে হত, আমরাও বাবার সঙ্গে সেই দেশে ভ্রমণ করছি। এইভাবে বাবার চিঠির মধ্য দিয়ে যে কত দেশ ভ্রমণ করেছি, তার ইয়ত্তা নেই। বাবা বিদেশ থেকে ফিরে আসতেন আমাদের জন্য অনেক অনেক উপহার নিয়ে, সেগুলির সঙ্গে জড়িয়ে থাকত একটা অন্যদেশের গন্ধ। আমার কাছে আজও এগুলি সম্পদের মতো রাখা আছে।
 
আমাদের ছিল একটি সুখী পরিবার। মা-বাবার মধ্যে একটা আশ্চর্য ভালবাসার সম্পর্ক ছিল। আপাতদৃষ্টিতে দুজনের মধ্যে অনেক বৈপরীত্য ছিল। মা ছিলেন বিপ্লবী। স্বাধীনতা সংগ্রামে সক্রিয় অংশ নিয়ে মাত্র ষোলো বছর বয়সে জেলে যান। জেল থেকে আইএ পরীক্ষা দেন। বিয়ের আগে পর্যন্ত সক্রিয় রাজনীতিতে ছিলেন। মা ঈশ্বরে বিশ্বাসী ছিলেন না। বিয়ের পর এবং বিশেষত সন্তান হওয়ার পর মা আস্তে আস্তে রাজনীতি থেকে সরে আসেন। মা স্বভাবে অন্তর্মুখী হলেও মার একটা আলাদা মধুর ব্যক্তিত্ব ছিল। মা বই পড়তে খুব ভালবাসতেন। দেখতেও যেমন ছিলেন সুন্দরী, তেমনি মার অন্তঃকরণও ছিল মালিন্যহীন, নির্মল।
 
বাবা কিন্তু ঈশ্বরে বিশ্বাসী ছিলেন। সরাসরি রাজনীতিতে বাবা কখনই আসেননি, পারিপার্শ্বিক ঘটনাবলি বাবাকে নিশ্চয়ই ভাবাত, তার প্রতিফলন ঘটত কবিতাতেই। ‘শহিদ রামেশ্বর’ থেকে শেষের দিন পর্যন্ত সমাজ এবং সামাজিক ঘটনাবলী বাবাকে নাড়া দিয়ে গেছে। বহির্মুখী বলব না, কিন্তু বাবা মানুষের সঙ্গে মিশতে খুব ভালবাসতেন – সব ধরনের মানুষ। বাড়ির ড্রাইভার থেকে মাছওয়ালা থেকে লেখক-বন্ধু – বাবার মেশার পরিধি ছিল বহুদূর বিস্তৃত।
বাবা ও মাকে নিয়ে একটা ঘটনার কথা এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করব। মা-বাবার বিবাহ বার্ষিকী ২২শে নভেম্বর আর আমার বোনের বিয়ের তারিখ ২৩শে নভেম্বর। আমার বোনের যে বছর বিয়ে হয়, তার আগের দিন হঠাৎ বিকেলবেলা মা-বাবাকে বাড়ির কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। আমরা সবাই তো খুবই চিন্তিত। হঠাৎ সন্ধ্যার মুখে দুজনেই লজ্জিত মুখে ফিরে এলেন আর মায়ের হাতে একটা শাড়ির প্যাকেট। সবাই বুঝলাম যে, বিবাহ বার্ষিকীতে বাবা মাকে মায়ের পছন্দমতো একটি শাড়ি কিনে দিতে চেয়েছিলেন। তাঁদের এই পারস্পরিক প্রেম জীবনের শেষদিন পর্যন্ত টিকে ছিল।
 
আমার মায়ের অসুস্থতার জন্য জীবনের শেষের দিকে বাবা কিছুদিন আমাদের কাছে ছিলেন। মা তখন প্রচন্ড অসুস্থ। মা সদ্য হাসপাতাল থেকে ফিরেছেন। বাড়ি একটা মিনি হাসপাতাল। ডাক্তার, নার্স, ওষুধ, অক্সিজেন, বাইপ্যাপ মেসিন সহ বাড়ির পরিবেশটাই অন্যরকম। মা মুখে খেতে পারেন না। তার জন্য রাইলস্ টিউব লাগানো। মাকে নিয়ে আমরা সবাই ব্যস্ত। বাবা দিনের বেশিরভাগ সময়টাই মায়ের ঘরে কাটান; শুধু রাতে ঘুমের ওষুধ খেয়ে অন্য ঘরে শুতে যান। মা যে আর বেশি দিন আমাদের মধ্যে থাকবেন না, তা আমাদের সবাইয়ের মতো বাবাও নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছিলেন। কিন্তু মুখে কখনওই তা প্রকাশ করতেন না। মার বিছানার পাশে বসে মাকে সাহস দিতেন, মার শীর্ণ হাতে হাত বুলিয়ে দিতেন। পুরোনো দিনের কথা বললে মা খুব খুশি হতেন। বাবা মার কাছে থাকলেই মার মুখে হাসি ফুটত, সেই হাসি আমরা চোখ ভরে দেখতাম। মা আস্তে আস্তে ভাল হয়ে উঠছিলেন। বাবা এই সময় আমাকে বলেন যে, তাঁকে একটা লেখার টেবিলের ব্যবস্থা করে দিতে। এই সময় দেখেছি বাবা আবার লেখা শুরু করলেন। এই সময়ে লেখা কবিতাগুলি বাবার কবিতাসমগ্র ৬ এ আছে। বাবা কবিতাসমগ্র ৬ দেখে গেছেন। বলেছিলেন এটাই শেষ খন্ড।
 
জীবনের শেষ বেলাতেও পড়ার প্রতি বাবার গভীর আগ্রহ ছিল। আমাকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি থেকে বই এনে দিতে বলতেন। বই পেলে বাবার মুখে খুশির আলো ফুটে উঠতে দেখেছি। এগুলো সবই সম্পদ হিসেবে বুকের মধ্যে রেখে দিয়েছি।
 
বাবা মা-কে খুব শ্রদ্ধাও করতেন। এই পারস্পরিক শ্রদ্ধা আর ভালবাসাই ছিল ওঁদের মধ্যের বন্ধন। এই বন্ধন এতোটাই দৃঢ় ছিল যে, মা চলে যাওয়ার এগারো মাস পর বাবা চলে যান। মার চলে যাওয়ার শূন্যতাকে বাবা সহ্য করতে পারেন নি। মা চলে যাওয়ার পর বাবার শরীর যেন ভূমিকম্পের মতো ভেঙে পড়তে শুরু করল। আমাদের ভালবাসা, চিকিৎসকের সুচিকিৎসা – কিছুতেই বাবা সাড়া দিলেন না। মার সঙ্গে অনন্তমিলনের আকাঙ্ক্ষাতেই বাবা ২৫শে ডিসেম্বর, ২০১৮ আমাদের ছেড়ে চলে যান।
 

♦–♦–♦–♦

লেখক : কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতপূর্ব উপাচার্য। বিরল প্রতিভার বিদ্যাদাতা আর সহমর্মিতাময় প্রশাসক।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!