- ক | বি | তা রোব-e-বর্ণ
- জানুয়ারি ২৮, ২০২৪
কবিতার মনোবাসীর খোঁজে। পর্ব ৯
চিত্রকর্ম: মেহতাব মোল্লা
আলাদা পথের মুনশি
কানাইলাল জানা সহজ সরল মানুষ। সহজিয়া তাঁর ভঙ্গি। বর্ষার স্বাভাবিক নদী কিংবা বাউল ফকিরদের কলকল করা স্রোতের মতো, অহেতুক ঝঙ্কার নেই, যাপনের আবহমান রহস্য ছুঁয়ে থাকে তাঁর কবি স্বভাবকে। এখানে তাঁকে রাজকুমার রায় চৌধুরী সহযাত্রী মনে হয়, সরাসরি বলছেন, বলার কায়দা স্বতন্ত্র, কবি সুলভ নয়, কী বলতে চান, তা পরিস্কার, কথার মার প্যাঁচ নেই, সহজ চিন্তা সহজ ভাষায় বলাটাই হয়ে ওঠে তাঁর লক্ষ্য, এ এক কঠিন মুনশিয়ানা; যা রপ্ত করতে হয়তো সময় লেগেছে, হয়তো অনেক ভেবে চিন্তে খুঁজে বের করছেন নিজের রাস্তা; মানব-প্রকৃতির সঙ্গে গভীর দোস্তি, চারপাশের আলো-হাওয়ার সঙ্গে নিবিড় আত্মীয়তাবোধ ছাড়া এ কি সম্ভব ? নাগরিক জটিলতাকে এড়িয়ে কবিতার দেহ আর আত্মায় এরকম কসরত, এরকম আত্মদর্শন সচরাচর নজরে আসে না। কীভাবে বলবেন, এসব ভাবনা বড়ো নয় তাঁর কাছে। কী লিখবেন, এটাই তাঁর আত্ম উন্মোচনের শর্ত পছন্দ। আরম্ভ-র প্রশ্নমালার উত্তর তার কবিতার মতো নিজস্ব ভঙ্গিতে লিখে জানিয়েছেন কানাই। আশা করি, বহুদূর হাঁটবেন, স্তরে স্তরে ভাবিয়ে তুলবেন তাঁর সমবেত প্রতিদ্বন্দ্বী আর কবিদের ভবিষ্যৎকে।
সম্পাদক। ২৮.১.২০২৪
স্বপ্নে কখনো কখনো কবিতা আসে
♦ কবিতার মুহূর্তে কি খুব অস্থির হয়ে ওঠেন ?
কবিতা লেখার মুহূর্তে খুব অস্থির হয়ে উঠি, কোন্ লাইন দিয়ে শুরু করে কোথায় শেষ করবো এই ভেবে। উপমা যুতসই হল কি-না সে চিন্তাও থাকে। মনের মতো উপমা, শব্দ বা লাইন না হলে আরও বেড়ে যায় অস্থিরতা।
♦ ভেবেচিন্তে লেখেন, না স্বতঃস্ফূর্তভাবে ?
সাধারণত স্বত:স্ফূর্তভাবে কবিতা লিখলেও লেখা শুরুর পর ভাবনা চিন্তা কাজ করে। সত্যি কথা বলতে কী, লেখার চাপ না থাকলে অনেক সময় কবিতা আসে না মনে। চাপেই আমি অনেক কবিতা সৃজন করি, কিছু কবিতা নিজের পছন্দ হয় কিছু হয় না।
♦ কখনো কি মনে হয়, কেউ আপনাকে ভেতর থেকে লিখিয়ে নেয়, এমন কোনো মনোবাসী ?
স্বপ্নে কখনো কখনো কবিতা আসে , খুব তাড়াতাড়ি তা লিখে না ফেললে ভুলে যাই। তখন ভাবি আমার মধ্যে একজন মনবাসী আছে তার কাজ লেখার প্রেরণা যোগানো।
♦ একটানা লেখেন, না থেকে থেকে লিখতে হয় ?
টানা লেখা প্রায় হয়না বা লিখতে পারি না। কয়েক ঘন্টা বা কয়েক দিন ভাবার পর হয়তো একটি কবিতা লিখতে পারি।
♦ লেখার আগে কি মনে মনে পংক্তি আওড়ান ?
লেখার আগে পংক্তি আওড়ানো সম্ভব হয় না বরং লিখে বার বার পংক্তি আওড়াই।
♦ অন্তমিল, মধ্যমিল কি কবিতায় ফেরাতে চান ?
অন্তমিল মধ্যমিলের দিন শেষ। মুখের ভাষা অর্থাৎ কথ্য ভাষায় কবিতা লিখতে চাই।
♦ ছন্দের ওলট পালট বা ভাঙচুর কতটা পছন্দ ?
মুক্ত ছন্দে বা টানা গদ্যে লিখি কবিতা তাতে ছন্দ ভেঙে চুরমার হলেও একটা টানটান ভাব স্পর্শের মতো লেগে থাকে সর্বদা।
ভেতরে ভেতরে
আমার ভেতরে যে কালজানি নদী মাথা তোলে তাকে রেখে এসেছি আলিপুরদুয়ারে । মননে শুয়ে ছিল যে ক্ষুধার্ত রাত ঝুনো নারকেলের মতো বেজে ওঠে।তখনো দৃশ্যের পর দৃশ্য কিন্তু ঘুমিয়ে আছে। একটা অস্পষ্ট স্মৃতি কেবল তিরতির করে কেঁপে ওঠে। সরীসৃপের মতো হেঁটে বেড়ায় ক্লান্তি, ফড়িংয়ের মতো উড়ে বেড়ায় অবসাদ। কখনো বা এক বিঘৎ ঘাসজমি খোঁজে একলা চৈতন্য। আততায়ীর ভূমিকায় উতরে যায় ঘেরাটোপ…
মধুর প্রসঙ্গ এনে কথার ওপর কথা চালায় সত্যি মিথ্যে। আঙুলে আঙুল জড়িয়ে পাশাপাশি হেঁটে যায় পৌরুষ ও প্রাবল্য। সম্ভাবনার আলো ফেলতে যাচ্ছে নিঝুম দুপুর ঠিক তখনই গ্রীষ্মকে কাপালিক বলে খ্যাপায় ধূসর আয়না। কীর্তন গাইবে বলে শীতঘুম ভেঙে ওঠে ক্ষুধার্ত শীত, ভাঙা পাঁজর রাঙা হৃদয় ছলাৎ করে ওঠে ঢেউয়ে ঢেউয়ে, দুলে ওঠে গানের বৈভব…
পাঁচটি পাখি পুষেছিলাম
অনেকদিন পর আবার পাখি পোষার ইচ্ছে হল। তা-ও একসঙ্গে পাঁচটি। ছানা অবস্থায়। আগে যতবার পুষেছি স্বাভাবিক খাবার দিয়েছি। বড়ো হয়েছে। উড়তেও শিখেছিল কিছুটা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাঁচেনি একটাও। কেড়ে নিয়েছিল শৈশবের সুখ…
তাই এবার ওদের খাদ্যতালিকা অন্যরকম। যেমন প্রথমটির খাঁচায় দেওয়া হল উইপোকার মতো করুণা। দ্বিতীয়টিতে কীটপতঙ্গের মতো দু:খ। তৃতীয়টায় কালো বিছের মতো লোভ। চতুর্থটিতে টুকরো মাংসের মতো হিংসে এবং শেষটিতে বীজধানের মতো ইচ্ছে। এইসব উগ্র প্রোটিনযুক্ত খাবার খেয়ে বড়োও হল দ্রুত কিন্তু বদলে গেল পাখিদের ডাক ! আর তার থেকেও বদলে গেলাম শুধু নয়, অতি করুণ দশা হল নিজের। কারণ লোভ হিংসে ইচ্ছে ইত্যাদির মতো পাঁচ পাঁচটি দোষগুণ আমার শরীর থেকে নি:শেষিত। কেবল সুখ নিয়ে কে বাঁচে ?
♦—♦—♦♦—♦—♦♦—♦—♦
❤ Support Us