- ক | বি | তা রোব-e-বর্ণ
- সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৩
গুচ্ছ কবিতা

রূপার্ট বুনির চিত্রে পোসাইডন আর অ্যাম্ফিট্রাইটি
পৃথিবী জঞ্জাল মুক্ত হোক
কবিতা জ্বর হয়ে দেখা দেয় যৌবনে, উর্ধ্ব যৌবনে ঝড়ের আকার নেয় তার রূপ আর রূপান্তর, নগরমনস্ক অথবা ভাববাদী, গ্রামীণ গৃহস্থালিতে অভ্যস্ত এমন কোনো বাঙালির দেখা পাওয়া দুষ্কর, প্রেম যাঁকে ভাবায় না, আলোড়িত করে না, বরং কবিতার শরীর আর আত্মাও হামেশা ছুঁয়ে থাকে তাঁর আত্মকে। কবিস্বরূপের জ্বর আর ঝড় যখন থমকে যায়, স্তিমিত হতে থাকে, তখনই প্রকৃত কবি ধরায় আসেন, ধরা পড়ে যান; কবিতা নিয়ে ভাবনাচিন্তা, চিন্তাকে ছুঁয়ে তাঁর বসবাস এক ধরনের তৈজসের চেহারা নেয়, যাপনের হাজারো ব্যস্ততাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েই কবি কালপুরষ, ভাবীপুরুষ হতে থাকেন।
বঙ্ববন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক চিকিৎসক জিললুর রহমানের উত্তরণ নিয়ে এরকম বিশ্বাস কি অসত্য, প্রসঙ্গহীন? তাঁর সরল ভঙ্গি আর সহজাত বৈভবের আড়ালে কি নিশ্চুপ হয়ে থাকে যাপনের দর্শন ? শিল্পকৃতির আবশ্যিক শর্ত কি এড়িয়ে যান কবি ? না উন্মাদনার পাঠক্রম নির্মাণ করে তাঁর ভবোদয় ও সংশ্লিষ্ট শৈলী ? আমাদের বিশ্বাস, জীবন আর মৃত্যুর মাঝামাঝি কখনো উদ্বেগ নিয়ে, কখনো নির্বিশেষের উদ্দেশে প্রেম ছড়িয়ে দেয় তাঁর সবিনয় উচ্চারণ, তাঁর আকাঙ্খা আর প্রার্থনা পৃথিবী জঞ্জালমুক্ত হোক। পাশাপাশি দেখতে পান, শ্বাস নেয়, ভূমি কাঁপে, ধ্বংস হয় চন্দ্রমুখ রাজাকার। জিললুর অংশত কবি নন, পূর্ণ পরিপূর্ণ রূপকার আমাদের জীবনের; আমাদের গৃহস্থালি, ইহজাগতিকতা সাজিয়ে দেয় তাঁর কবিসত্তা আর তাঁর স্বপ্নপূরণের অঙ্গীকার। সমাজের ম্রিয়মানতা, ধ্বংস আর ভস্ম, মায়াহীনতা, মশকরার কদর্য রূপকল্প কঠোর হতে বাধ্য করে তাঁকে, স্বাভাবিক গদ্যচয়নে ঝলসে ওঠে তাঁর বয়ন আর বয়ান।
জিললুরের নতুন বিন্যাস আর বইয়ের অপেক্ষায় রইলাম আমরা, তাঁর কবিতার পাঠকেরা।
বাহারউদ্দিন১০/০৮/২০২৩
ভূমিকম্প
তুমি বললে পৃথিবী যে মোষের সিংয়ের ‘পরে বসে
সে মোষ উঠলে নড়ে থরথর কাঁপছে পৃথিবী
আমি বললাম, না, এতো পসিডন
ত্রিশুলে খোঁচালে ভূমি প্রচণ্ড আক্রোশে–ভূমি কাঁপে।
তুমি বললে কিছুই জানি না আমি,
আসলে পৃথিবী এক বিশাল দৈত্যের মতো, যার
গায়ে চড়ে বেড়ায় মানুষ। দৈত্য যখন গা-ঝাড়া
দেয় কিংবা নড়ে ওঠে – ভূমি কাঁপে।
আমি বললাম, না, যখন বিষের তীব্র দাপটে হঠাৎ
অভিশপ্ত দেব লকি নড়েচড়ে ওঠে – ভূমি কাঁপে।
তুমি বললে, ঘোড়ার ডিমটি জানো, পৃথিবী গা-ঝাড়া দেয়
যখন চমকে দেখে রাজাকার এখনও আহার করে শ্বাস নেয়
ভূমি কাঁপে আর ধ্বংস হয় চন্দ্রমুখ রাজাকার–শোক মাসে
পৃথিবী জঞ্জাল মুক্ত হোক তবে এ জাতির শোকের দিবসে

চিত্র: লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি। শিরনাম: হেড অফ মেডুসা। সৌজন্য: ইউকিপিডিয়া
ওপার
ওপারে শুনেছি অনেক আঁধার–শোনা সংবাদে
কান দিতে নেই; একথা জেনেই উদ্বিগ্নতা।
ওপারে শ্যামল ঘন অরণ্য–বিছা কিলবিল শত সর্পের
যত হিসহিস খাড়া রোমকূপ।
ওপারে গিয়েছে পরিচিত জন–কেউ ফিরে আর
আসেনি এপারে; তাই কল্পনা নিজ মহিমায় করে বিস্তার।
এপারে আলোক রশ্মি উজালা – বিজ্ঞান আর
প্রমাণের মেলা; এপার কঠোর বাস্তবতার।
এপারে আসে না ওপারের স্বর – মাটি ভেদ করে
ওপারে যাবার যত অপেক্ষা সারাটা জীবন।
কেউ বুড়ো হয় কেউ বা জোয়ান– কেউ খায় নুন
কেউ গুমখুন; জীবনের ধন সব ম্রিয়মান শুধু ছারখার।
ধুম করে গুম চোখ থেকে ঘুম– রাত বাড়ে গাঢ়
নিশুতি নিঝুম; নিশিদিন ঘোর দয়ামায়াহীন ঘোর সংসার।

চিত্র: জুদিত ন্যাগি এল। শিরোনাম: ক্রসিং দ্য রিভার অব চেঞ্জেস
বয়স বিষয়ক
বয়স বলে কিচ্ছুকে মানবো না
এখনও সেই উনিশ বিশেই আছি
দিকদিগন্তে মেলে ধরি ডানা
জীবনটাকে দেখছি যেন মাছি !
হৃদয় তবে দুঃখে ভীষণ দীর্ণ
বয়স ষাটের কার্নিশে আজ ভিড়ছে
মন পবনের তৃষ্ণা তবু দৃপ্ত
যেন আজও বিশ পঁচিশের মিনশে
ইচ্ছেতে আজ জুড়লো বুঝি ডানা
যেন ইটি’র সাইকেলে দুই চক্র
উড়ে বেড়ায় মন মানে না মানা
পথটা যতোই বন্ধুর হোক বক্র
তখন যেমন আজও ভীষণ ঘুরছি
ঝোঁপের আড়ে কচু বনেই স্বর্গ
মনের মতো প্রেমের টানেই গড়ছি
কোত্থাও নেই তেমন ছ্যুৎমার্গ
তোমার বয়স আঠারো কি উনিশ
আমার নয় তো দু’চার বছর বেশি
কালের গর্ভে কতো কিছুই হাপিশ
এক লাথিতে জাল ছিঁড়ে দেয় মেসি
বয়স বাড়ে শরীরে আর চশমায়
রক্তে কিছু বেড়েছে শর্করা
তাই বলে আজ স্বর্গ খোঁজার দরগায়
কড়া নেড়ে করবো না মশকরা

চিত্র: স্যার জন এভারেট মেলাইস। শিরোনাম: ওফেলিয়া
গোধূলি
সূর্য ডোবার আগে কিছু গাড়িচালক
অনেক অনেক গতির অধিকারী হয়ে ওঠে
তাদের রক্তকণাগুলো লাফাতে থাকে চাপিলা মাছের মতো
মরিয়া হয়ে ছোটে ইফতার ধরার জন্য।
কিন্তু কি সৌভাগ্য !
তাদের কেউ কেউ জানাজা পর্যন্ত পৌঁছে যায়।
তারা অজু করার আগেই
গোসলের প্রস্তুতি সেরে ফেলে।

চিত্র: ফ্রান্সিস্কো গোয়া।১৮২৩
কালোরাত
মধ্য যামে শীতকাঁটা উঠেছে শরীরে, যেন
ঝুলন্ত বটের ঝুরি আঁকড়ে ধরে নাচে ভূত,
কী অদ্ভুত গা ছমছম রাত – ভয়ে ভিজেছে শরীর –
আমাদের চতুষ্পার্শে ঘোরে প্রেত – নিহত আত্মারা।
মামদো ভূতের পাশে পেত্নী তার সাজায় সংসার
আর রাঁধে মানুষের হাড়ের সুরুয়া আর পায়া
চকচকে টাকের চাঁদি আকাশে জ্বলজ্বল
চাঁদের ভেতর থেকে নিরন্তর বমি ঝরছে গলগল
সেই কালোরাত ফিরে আসে বছর বছর
অতৃপ্ত আত্মার ভূত গুলিবিদ্ধ মগজের খোলে
♦–♦♦–♦♦–♦♦–♦
❤ Support Us