Advertisement
  • গ | ল্প রোব-e-বর্ণ
  • অক্টোবর ৮, ২০২৩

শেষ রাস্তা

আবদুস সাত্তার বিশ্বাস
শেষ রাস্তা

অলঙ্করণ: দেব সরকার

 
রাহাত আলি একটা দোকান করেছে। মিষ্টির দোকান। বাহারুলের ঘর ভাড়া নিয়ে। ভাড়া মাসে সাড়ে পাঁচশো টাকা। অগ্রিম আশি হাজার। ঘরটা আগে গোফুরের ছিল। সে-ও ভাড়া নিয়েছিল। গামছা-লুঙ্গির ব্যবসা করত। বছর পাঁচেক ব্যবসা করে ঘরটা ছেড়ে দিয়েছে। তারপরই রাহাত ভাড়া নিয়ে মিষ্টির দোকান করেছে। দোকানের জিনিস গুলো সবই পুরনো। নতুন কিনতে অনেক টাকা লেগে যাবে বলে পুরনোই কিনেছে।
 

দু • ই 

রাহাত আলিদের গ্রাম পঞ্চায়েত অফিস সাবাজপুরে।রাহাত একদিন একটা কাজ নিয়ে সেখানে যায়। কিন্তু কাজটা সারতে তার দেরি হয়ে যায়, ফিরতি পথে সে ওখানকার একটা মিষ্টির দোকানে ঢুকে নিমকি, শিঙাড়া ও মিষ্টি খেয়ে খানিক জল খায়। তারপর দোকানদারকে জিজ্ঞেস করে, ‘ভাই, আপনার নাম কী ?’
— জাব্বার আলি। দোকানদার নাম বলে।
 
রাহাত আলি তখন তাকে জিজ্ঞেস করে, ‘আপনার খোঁজে কোনো মিষ্টির দোকানের পুরনো জিনিস বিক্রি আছে ? আলমারি অথবা অন্য কোনও জিনিস ? থাকলে আমি কিনতাম।’
 
দোকানদার জিজ্ঞেস করে, ‘মিষ্টির দোকান করছেন ?’
 
— হ্যাঁ, একটা মিষ্টির দোকান করছি। রাহাত বলে।
 
— কোথায় করছেন ?
 
— আমাদের গ্রামে।
 
— গ্রামের নাম কী?
 
— সারাংপুর।
 
— আপনার নাম ?
 
— রাহাত আলি। রাহাত আলি নিজের নাম বলে।
 
দোকানদার তখন বলে, ‘আপনাদের গ্রামে মাসদুলের একটা মিষ্টির দোকান নেই !’
 
— আছে।
 
— আছে তা-ও করছেন ?
 
— কেন, করলে কী হবে ?
 
— কিছুই হবে না। করে যদি চালাতে না পারেন, তাই বলছি। কারণ, এর আগেও আপনার মতো অনেকে মিষ্টির দোকান করেছিল। কিন্তু কেউই চালাতে পারেনি। আপনি পারবেন ?
 
— দেখি।
 
— হ্যাঁ, করে দেখুন ! বলে পকেট থেকে মোবাইল ফোনটা বের করে, ‘আপনি একটু দাঁড়ান। ঘোষকে এক কল ফোন করে দেখি। তার খোঁজে থাকলে থাকতে পারে। একদিন বলছিল।’ বলে ফোন লাগিয়ে দেয়।
 
ঘোষ ফোনটা রিসিভ করে বলে , ‘কী হল,  বলো।’
 
সে বলে, ‘তোমার খোঁজে… ‘
 
ঘোষ বলে, ‘আছে তো।’
 
— কোথায় ?
 
— মাঝপাড়ায়।
 
— সে তো অনেক দূর।
 
— অনেক দূর আর কত দূর ! এই তো মাঝপাড়া। এসডিও মোড়ের পাশ দিয়ে সোজা রাস্তা। আগে শেখপাড়া তারপরে শম্ভু নগর তারপরে মাঝপাড়া। বাইকে তিরিশ থেকে চল্লিশ মিনিটের পথ। কেউ নেবে নাকি ?
 
— হ্যাঁ, আমাদের পাশের গ্রাম সারাংপুরের এক ভাই এসেছেন। নেবেন বলছেন।
 
— ফোনটা ওনাকে দাও দেখি !
 
রাহাত আলি ফোনটা হাতে নিয়ে কানে ধরে, ‘হ্যাঁ,  বলুন !’
 
— কে নেবে, আপনি ?
 
— হ্যাঁ, আমি।
 
— নতুন দোকান করছেন বুঝি !
 
— হ্যাঁ।
 
— করুন। মিষ্টির দোকান চললে দু-বছরে বড়লোক হয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই, খুব খাটনির কাজ। খাটতে পারলে পয়সা আছে।
 
— খাটনি কোন জিনিসে নেই ? সব জিনিসে খাটনি আছে। খাটনি দেখে আমার ভয় নেই। আপনি শুধু…
 
— ঠিক আছে, আপনি তাহলে কাল আমার সাথে একবার মাঝপাড়া চলুন ! অনেক জিনিস আছে। জিনিস গুলো আপনাকে দেখিয়ে আনি। আপনার পছন্দ হলে দাম দর করে নিয়ে চলে আসব।
 
— কখন যাবেন, চলুন !
 
— কাল বেলা তিনটেয় আপনি জাব্বারের দোকানে চলে আসুন ! ওখানে আমার সাইকেলটা রেখে…
 

তি • ন

কথা মতো কাল বেলা তিনটেয় তারা জাব্বারের দোকান থেকে রওনা দেয়। ঘোষ বাইকের পিছনে চেপে বসে। ভৈরব নদীর ধার ধরে তারা চলে আসতে থাকে। নদীর ধারে শ্বেত শুভ্র কাশবন। আর কিছু দিন বাদে তারা মা দুর্গার আগমনী গান গাইতে শুরু করবে। এখন থেকে তার রিহার্সাল চলছে। চলে আসতে আসতে ঘোষ বলে, ‘বুঝলেন দাদা, রাতে আমি ওখানে ফোন করেছিলাম। দাম কত নেবে জিজ্ঞেস করার জন্য। আর বাড়িতে থাকতে বলার জন্য। দাম পঁয়তাল্লিশ হাজার টাকা চেয়েছে। জিনিস দেখে আপনার যদি পছন্দ হয় পঁয়ত্রিশ হাজারের বেশি দাম উঠবেন না। এটা আপনাকে আমার বলা থাকল। তারপর যা করতে হয় আমি করব।’
 
— তাই হবে, চলুন !                       
 
মাঝপাড়া এসে তারা পৌঁছে যায়। ঘড়ি দেখে বত্রিশ মিনিট সময় লাগে। মাঝপাড়া হাটের কাছে বাড়ি। রাস্তার বাম ধারে হাট আর ডান ধারে কলাপাতা রঙের দোতলা বাড়ি। গোটা বাড়িতে ক্যামেরা লাগানো। অতএব বাড়ির গেটের কাছে বাইক থেকে তাদের নামতে দেখে মালিক বেরিয়ে আসেন। পরনে লুঙ্গি আর হাফ শার্ট। চোখে হালকা ফ্রেমের সোনালি চশমা। এসে জিজ্ঞেস করেন, ‘এসেছ!’
 
— হ্যাঁ, এসেছি।
 

চা • র

একটা মিষ্টির দোকান চালাতে যা যা জিনিস লাগে সব রয়েছে। ডিপ ফ্রিজ থেকে শুরু করে কম্পিউটার কাঁটা, কড়াই, হাতা, খুন্তি সব রয়েছে।  আলমারিটা দেখতে খুব সুন্দর, একদম নতুনের মতো।কাঁঠালি রং। জিনিস গুলো দেখে রাহাত আলির যা মনে হয় তা হল—
 
ঘরে যা জিনিস রয়েছে তা পঞ্চাশ হাজারে কিনলেও লস হবে না। শুধু আলমারিটার দামই পঞ্চাশ হাজার টাকা লেগে যাবে ঘরে কিনতে গেলে। ডিপ ফ্রিজেরও দাম ভালো। ত্রিশের কমে দেবে না। বসে কাজ করার জন্য একটা বেঞ্চ র‍য়েছে। তার ভালো দাম। মিস্ত্রি দিয়ে বানাতে চার-পাঁচ হাজার টাকা লেগে যাবে।  আজকাল টাকার দাম আছে নাকি ! জিনিসের দাম। এছাড়া শিঙাড়া আর ডালপুরি রাখার জন্য ছোটো একটা কাঠের আলমারি রয়েছে। এর ভিতর শিঙাড়া আর ডালপুরি রাখলে টপ করে ঠাণ্ডা হয় না। অনেকক্ষণ গরম থাকে। জিনিসটা বড় আলমারির মতোই দেখতে। দাম কম করে হাজার পাঁচেক টাকা হবে। তার কমে কোত্থাও পাওয়া যাবে না। ফাইবারের দুটো টেবিল ও আটটা চেয়ার রয়েছে। মিষ্টি রাখার জন্য চারটে গামলা। ছোটো দুটো, বড়োও দুটো। চারটে হান্ডা রয়েছে। মিষ্টি ছ্যাকার জন্য দুটো ও দুধ ছ্যাকার জন্য একটা মোট তিনটে চালুন রয়েছে। আলমারিতে মিষ্টি সাজিয়ে রাখার জন্য কুড়ি খানা ট্রে রয়েছে। তিনটে হাতা,খুন্তি, বারো খানা চামচ আর প্লেট।একটা খালি গ্যাস সিলিন্ডার ও দুটো ওভেন রয়েছে। লোহার তিনটে কড়াই রয়েছে। শিঙাড়া, লতিকা ও নিমকির ময়দা বেলার জন্য একটা পিঁড়ে ও একটা বেলুন রয়েছে। মশলা পিষাইয়ের জন্য একটা মিক্সচার মেশিন ও একটা হ্যামার দিস্তা রয়েছে। দুটো মগ রয়েছে। একটা প্লাস্টিকের একটা স্টিলের। দুটো ছাঁকনা রয়েছে। একটা রসের একটা তেলের। ছ্যানা ফিটার জন্য একটা বড় পিঁড়ে ও মিষ্টি পাকিয়ে রাখার জন্য স্টিলের দুটো বড় থালা রয়েছে। দুটো ডেকচি, দুটো ঝান্না, দুটো ডাভু একটা তেলের ও একটা রসের ও একটা লাকড়ি রয়েছে। দুধ জ্বাল করার সময় দুধ নাড়ার জন্য। একটা চাকু রয়েছে। শিঙাড়ার পটি কাটার জন্য। একটা বড় লাইটার রয়েছে। এক কথায়, কোনও জিনিস বাদ নেই। নতুন করে কিছুই কিনতে হবে না।
 
জিনিস গুলো দেখা হলে রাহাত আলি জিজ্ঞেস করে, ‘ফ্রিজ ঠিক আছে ?’
 
ভদ্রলোক বলেন, ‘চালিয়ে দেখে নিন !’
 
রাহাত চালিয়ে দেখে।ওই তো গ গ করে চলছে এবং ঠাণ্ডা হচ্ছে। এরপর সে দাম দরে আসে। জিজ্ঞেস করে, ‘দাম কী রকম নিবেন, বলুন ! দামে দরে হয়ে গেলে আজকেই নিয়ে চলে যাবো। টাকা পয়সা নিয়েই এসেছি। আর হ্যাঁ, আপনাদের এখানে লছিমন পাওয়া যায় তো ?’
 
তিনি বলেন, ‘যায়।’
 
‘বেশ, তাহলে দাম বলুন !’
 
‘পঁয়তাল্লিশ হাজার।’ তিনি দাম বলেন।
 
সে যা ভেবেছিল, তার থেকে দাম কম।তবু এক দামে কি কোনো জিনিস বিক্রি হয় ? যেকারণে রাহাত বলে, ‘অত বেশি দাম বললে জিনিস কিনব কী করে ? যাতে কিনতে পারি সেরকম দাম বলুন !’
 
তিনি রাহাত আলিকেই তখন বলতে বলেন, ‘কত টাকা হলে আপনি কিনতে পারবেন ?’
 
রাহাত বলে, ‘পঁয়ত্রিশ হাজার টাকা হলে নিয়ে নেব।’ ঘোষ যেটা বলতে বলেছিল সেটাই বলে।
 
মালিক এবার বলেন, ‘পঁয়ত্রিশ হাজার টাকা খুব কম হয়ে যাচ্ছে না ! অত গুলো জিনিস! আরো একটু উঠুন !’
 
— না, আর ওঠা যাবে না। সেকেন্ড হ্যান্ড মাল হিসেবে দাম ঠিকই বলেছেন। আপনি ওই দামেই দিয়ে দিন !’ ঘোষ বলে।
 
— ওই দামে দিলে যে আমার অনেক লস হবে। অত লসে কি জিনিস দেওয়া যায় ?’
 
ঘোষ তার পাল্টা জবাবে বলে, ‘লস তো হবেই। যে কোনও জিনিসই তাই। কিনে বেচতে গেলেই লস হবে। সে আপনি যখনই বেচুন। এখন বেচুন অথবা দশ বছর পরে বেচুন। নতুন বাইক কিনে আপনি বেচতে যান হাতে নাতে আপনার দশ হাজার টাকা লস হয়ে যাবে। আর এ তো হল অন্য জিনিস। ভাংড়ি মাল। এসব জিনিসের টপ করে কোন খরিদদার পাওয়া যায় না। যারা নতুন দোকান করে কেবল তারাই খোঁজ করে। যাইহোক, আর ধরাধরি না করে জিনিস গুলো দিয়ে দিন ! তা-ও আপনার টাকাটা আলগা হবে। কোনও পাকা মাল কিনে বাঁধাই করে রাখতে পারবেন। না হলে পড়ে থেকে থেকে মরচে পড়ে নষ্ট হয়ে যাবে। তখন সবটাই লস যাবে। আপনি এবার কী করবেন ভেবে দেখুন ! দেখে আমাদের তাড়াতাড়ি জানান। আমরা আবার চলে যাবো। দূরের রাস্তা।’
 
তিনি আর কী ভাববেন ! ওই দামেই দিয়ে দেন।
 

পাঁ • চ

এরপর রাহাত ধেয়ানদার খুঁজতে বের হয়। ধেয়ানদার গেলেই দোকান চালু করে দেবে। খুঁজতে খুঁজতে ভগীরথপুর ঘোষ পাড়ায় একটা ধেয়ানদার পেয়ে যায়। নদীর ভাঙন ধারে তার বাড়ি। তবে ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা নেই। কয়েক মাস হল নদী বাঁধানো শেষ হয়েছে। নাম তার সৌমেন ঘোষ। দেখতে ছেলেমানুষ লাগলেও বউ, বাচ্চা তার সব আছে। রাহাত তাকে নিয়ে দোকান চালু করে। তার হাতের কাজ ভালো। দোকানে উন্নতমানের সব রকমের মাল হয় দেখে কাস্টমারের ভিড় উপচে পড়ে। তা দেখে মাসদুলের হিংসে হয়।  রাহাতের দোকানের কাস্টমার টানার জন্য মাইকে প্রচার করে মিষ্টির সেল ছাড়ে। শুধু মিষ্টির নয়, সব মালের। যে মিষ্টি এতদিন সে তিন টাকা পিস করে বেচে এসেছে সেই মিষ্টি আড়াই টাকা পিস করে বেচে। অর্থাৎ দশ টাকায় চারটে মিষ্টি। নিমকি, শিঙাড়া, লতিকা, খাজা এগুলো দশ টাকায় তিনটে। যা সে এতদিন পাঁচ টাকা পিস করে বেচে এসেছে। আর দই ? আশি টাকা কিলো। যা একশো কুড়ি টাকা কিলো করে এতদিন বেচে এসেছে। তবু মানুষ রাহাতের দোকানেই ভিড় করে। এই দোকানের মাল যেমন ,ভালো তেমনই তার সুন্দর ব্যবহার। মাসদুলের মতো সে গোঁয়ার বা একরোখা নয়। তা ছাড়া রাহাত আলি শিক্ষিত। ওর মতো মূর্খ নয়। ফলে দিন দিন তার দোকানে কাস্টমারের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতেই থাকে। আর মাসদুল ওদিকে বসে বসে মাছি খেদায়। না, এটা তার ভালো লাগে না। সে তখন চুপি চুপি ধেয়ানদারের বাড়ি গিয়ে বিশ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে আসে। ব্যস, তারপর সে আর রাহাত আলির দোকানে কাজে আসেনা। রাহাত আলি ফোন করলে ফোন পর্যন্ত ধরে না। বাড়ি গেলে তার স্ত্রী বলে, ‘বাড়িতে ঝামেলা করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছে। কোথায় গেছে কেউ বলতে পারবে না। কোনও যোগাযোগ নেই। ফোন করে না।’
 

ছ • য়

রাহাত অমনি বনাৎ করে ওখান থেকে ঘুরে সোজা ডোমকলের দিকে পা বাড়ায়। ডোমকল মহকুমা শহর। ওখানে অনেক ধেয়ানদার আছে। যদি কাউকে পাওয়া যায়। রানা, ঝান্টু, কাশিম, সুরজ এদের কাউকে। ধেয়ানদার না পেলে দোকান চালানো খুবই কঠিন হয়ে পড়বে। মাল করবে কে? সে তো আর ধেয়ানদার নয়। ধেয়ানদার হওয়া খুব কঠিন। না হলে এত দিন ধরে সে দেখছে তা-ও আজ পর্যন্ত শিঙাড়া মোড়ানো শিখতে পারেনি। তাহলে সে অন্যান্য মাল করবে কীভাবে ? অন্যান্য মাল করা তো আরও কঠিন। সুতরাং যেভাবেই হোক একটা ধেয়ানদার তাকে খুঁজে পেতেই হবে। পয়সা বেশি লাগলেও দিবে। সৌমেন ঘোষকে সে ডেইলি সাড়ে পাঁচশো টাকা করে দিত। এবার যদি আরও বেশি লাগে তো বেশি দেবে। তা বলে দোকান তো আর তুলে দেওয়া যায় না। দোকানের অনেক মাল শর্ট হয়ে গেছে। যা আছে কোনও রকম ভাবে আজকের দিনটা চলতে পারে। কাল থেকে মাল বানাতেই হবে। না হলে কাস্টমার ঘুরবে। দোকান থেকে কাস্টমার ঘোরাটাই খারাপ। ওতে ব্যবসার ক্ষতি হয়… ভাবতে ভাবতে রাহাত আলি বাইক চালায়। জুলেখার কথা মনে পড়ে। জুলেখা তার স্ত্রী। সুন্দরী। তার টলটলে গাল। টিকালো নাক। কোঁকড়া মাথার চুল। আর গায়ের রং দুধে-আলতা। এমন নারী তাদের পাড়ায় আর দুটি নেই। শুধু পাড়ায় কেন, গ্রামেও আছে কি না সন্দেহ। জুলেখা একটা আলাদা ধরনের মেয়ে। অন্য মেয়ের মতো সে পাড়া বেড়ায় না। এগুলো তার চরম অপছন্দ।খাবারের দোকান বন্ধ করতে হয় না তাই সে জুলেখাকে দোকানে বসে রেখে এসেছে। দোকানে এখন জুলেখা একাই আছে। রাস্তার ধারে দোকান। কত মানুষ তাকে দেখবে। কত রকম কথা জিজ্ঞেস করবে। সবার দৃষ্টি তো আর এক নয়। কারও কারও কামুক দৃষ্টিও আছে। নানান অছিলায় তারা ! আসলে তার কপালটাই খারাপ। না হলে চাকরি হয় না ? চাকরির পরীক্ষায় বসে বসে অনেকে পাশ করতেই পারে না। আর সে দু’বার পাশ করেও চাকরি হয়নি। প্যানেল থেকে নাম বাদ পড়ে গেছে। আবার হতো। যদি টাকা দিতে পারত। আজকাল তো দেশে এসবই চলছে। এর জন্য রাহাত আলির নিজের গালে নিজেরই ঠাস ঠাস করে চড় মারতে ইচ্ছে করে। কেন অতদূর লেখাপড়া করেছিস বলে, কেন তোর ভাইদের মতো লেখাপড়া না করে কেরালা চলে যাসনি বলে। কেরালায় খেটে তারা আজ কী ভালো আছে দ্যাখ ! ভালো খাচ্ছে, ভালো পরছে, ভালো বাড়ি করছে। আর তুই? শালা একটা কবুতরের খাঁচায় বাস করিস, ভেতরে ছেঁড়া গেঞ্জি আর ছেঁড়া জাঙ্গিয়া পরে ঘুরিস। এটা কি জীবন ? বেঁচে থাকা ? এর জন্যই তো তোর ভাইয়েরা তোর সঙ্গে সম্পর্ক রাখেনি। সম্পর্ক রাখলে তুই যদি টাকা ধার চাস এবং নিয়ে দিতে না পারিস ! এসব ভাবতে ভাবতেই রাহাত আলি মাথা ঘুরে রোডের ওপর পড়ে যায়।ওখানেই তার দৌড় খতম।রাস্তা শেষ।
 

♦—♦♦—♦♦—♦


  • Tags:
❤ Support Us
Advertisement
2024 Lakshman Seth
Advertisement
2024 Debasish
Advertisement
error: Content is protected !!