Advertisement
  • ব | ই | চ | র্যা রোব-e-বর্ণ
  • জুলাই ২, ২০২৩

উনিশের ইতিহাসকে বিস্তৃত করা দরকার

বরাক উপত্যকায় উনিশে মে দিনে যেমন রচিত হয়েছিল আমাদের আত্মপরিচয়, তেমনি তাঁর শিল্প সাহিত্য সংগীতেও উদ্ভাসিত হোক আমাদের প্রতিবাদ

রণবীর পুরকায়স্থ
উনিশের ইতিহাসকে বিস্তৃত করা দরকার

সুজিৎ চৌধুরী। আমাদের প্রিয়ভাষা সেনানী একুশ বছর আগে দৈনিক ‘আজকাল’ এ লিখেছিলেন, “১৯৬১ সালে বরাক উপত্যকার ভাষা আন্দোলন সেই সময় কলকাতার খবরের কাগজে ব্যাপক প্রচার পেয়েছিল—পশ্চিমবঙ্গে সাড়াও জেগেছিল যথেষ্ট। সাংবাদিক অমিতাভ চৌধুরী বই লিখেছিলেন ‘মুখের ভাষা বুকের রুধির’। পরে ধীরে ধীরে ওই স্মৃতি ম্লান হয়ে আসে, পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কাছে ১৯ মে-র বিশেষ কোনো তাৎপর্য আর রইল না।”
সুজিৎদা পরিস্থিতি আবার খানিকটা পালটে যাওয়ার কথা লিখেছিলেন, সত্যি কি পালটেছে কিছু, পালটালে তো তাকে লিখতে হতো না, ‘১৯ মে শহিদ দিবস যারা পালন করেন তাদের কাছে অবশ্যই গুরুত্ব পায় মাতৃভাষার অধিকার রক্ষার ব্যাপারটা—কারণ বরাক উপত্যকার ভাষা ও সংস্কৃতির উপর চোরাগোপ্তা আক্রমন এখনও চলছে।’
আমাদের বৈতালিক কালিকাপ্রসাদ লিখেছিলেন, ‘…উনিশে মে অসম বা উত্তর-পূর্ব ভারতের বহুভাষিক চরিত্রকে রক্ষা করার লড়াই। একস্বরের সঙ্গে বহু স্বরের বিরোধ।’

বরাক উপত্যকায় শুধু ১৯৬১ র এগারোজন শহিদ নয়, বাহাত্তরে আরও একজন ছিয়াশিতে দুজন, ছিয়ানব্বুইতে বিষ্ণুপ্রিয়া ভাষার আরও এক কিশোরী শহিদ হয়েছেন। এই পঁয়ত্রিশ বছরের সময়কালে মাতৃভাষার অধিকার রক্ষার দাবিতে বারবার শহিদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে শহিদতীর্থ বরাক। সুজিৎদা যেমন বলেছেন বরাক উপতকার বাইরের বাংলা ভাষা ভুবনে তেমন তাৎপর্য ছিল না উনিশে মে-র, যদিও অনেকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে এবং কিছু সংগঠন ইদানীং উনিশে মে-কে ভাষা শহিদ দিবস হিসেবে পালন করছেন। কিন্তু বরাকের অক্লান্ত ভাষা সৈনিকরা এখনও বাংলা ভাষার ঐতিহ্য রক্ষা করে উনিশে মে দিবসে শিলচর রেলওয়ে স্টেশনে বিনা প্ররোচনায় পুলিশের গুলি চালনার প্রতিবাদ চালিয়ে যাচ্ছেন, শিলচর রেলওয়ে স্টেশনকে ‘ভাষা শহিদ স্টেশন’ করার সংগ্রামে এখনও রয়েছেন নিরন্তর। যদিও আমাদের ভাবের ঘরে যে ডাকাতি হয়ে চলেছে, তার বেলা কিছুই হচ্ছে না। মাতৃভাষার অধিকার রক্ষিত হয়নি আসামে, নাকের বদলে নরুন দিয়ে ছেলে ভোলানো প্রক্রিয়ায় বাঙালিকে কোণঠাসা করার ষড়যন্ত্র এখনও চলছে। বিদেশি খেদা এনআরসি-সিএএ-র সঙ্গে এখন বিধানসভার আসন কমিয়ে হীনবল করার লাগাতার প্রক্রিয়া চলছে। এর মধ্যেও উত্তরপূর্বের বাঙালি সংগঠিত হচ্ছে উনিশে মে কে সামনে রেখে।

উনিশে মের ইতিহাস রচনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে একটু দেরিতে, পঁচিশ বছর আগে, এখনও সম্পূর্ণ হয়ে ওঠেনি। অধ্যাপক সুবীর কর ১৯৯৯-এ যে কর্মকাণ্ড শুরু করেন, কবি দিলীপ কান্তিলস্কর ২০০২ এ তার একটি সুসংহত পাঠ উপহার দেওয়ার চেষ্টা করেন সাতখণ্ডে। সপ্তকাণ্ড ইতিহাসকে আরও বিস্তৃত করে ২০২১-এ প্রকাশ করেন তথ্য বহুল আকর গ্রন্থ ‘শহিদতীর্থ বরাক’। এবার ২০২৩এর ১৯ শে মে তে প্রকাশ করেছেন ‘১৯ এর কবিতা ও গান বিশ্বসংকলন’। ২০০২এর চটি বইটি এবার সাড়ে পাঁচশ পাতার বিশাল বই হয়ে বিশ্ব বাঙালির ঘরে ঘরে পৌঁছে যাচ্ছে।
এই সংকলনের ভূমিকা শুরু করেছেন দিলীপকান্তি লস্কর বাংলাদেশের কবি সৌহার্দ সিরাজ-এর কবিতা দিয়ে,
‘…বরাকের অশ্রুত চিহ্নগুলো নিয়ে যাও
দেখুক পৃথিবী…’
দিলীপকান্তি অকপটে তার উদ্দেশ্য কথাও জানিয়ে দেন,
‘… আমরা বিশ্ববাসীকে উনিশের কথা জানাতে চাই’। দেশ-বিদেশের তিনশো-র বেশি কবির কবিতা, ৩৫জন গীতিকারের গানের সম্ভারে সাজিয়েছেন অভিনব এই গ্রন্থ। স্বরলিপি সহ শ্যামাপদ ভট্টাচার্যর উনিশে মে-র অবিস্মরণীয় গান, ‘শোনো ডাকে ওই একাদশ শহিদেরা ভাই’-ও সংযোজিত হয়েছে।
মনীশ ঘটকের কবিতায় আছে আগুনঝরা দিনের শপথ,
‘যে ভাষায় মাকে প্রথম ভেবেছি সে ভাষা আমার দেবতা
কথা কইবার অধিকার তাতে নেবই আমরা নেব তা
নেহরু ফকরু চালিহার দল বলে, বুলেট না বাংলা
জান দেব তবু জবান দেব না করুক না যত হামলা’…
আছেন কবি শক্তিপদ ব্রহ্মচারী তার অবিনাশী পংক্তিমালা নিয়ে
‘দশটি ভাই চম্পা আর একটি পারুল বোন
কলজে ছিঁড়ে লিখেছিল …
বাংলা আমার মাতৃভাষা, ঈশান বাংলা মা।’ ।

সৈয়দ হাসমত জালাল লিখেছেন,
‘বাংলা ভাষা খেলা করে আমার মায়ের আদিগন্ত এলোচুলে।’
অনন্য এই সংকলন গ্রন্থটি বাংলার ঘরে ঘরে পৌঁছে যাক, দিলীপকান্তি লস্করের নাম উনিশে মে-র সাহিতকৃতির রূপকার হিসেবে থাকুক আবিশ্বে। তারই প্রজ্জ্বলিত হোমানল থেকে এবার বেরিয়ে আসুক উনিশে মের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস।
এই প্রসঙ্গে আর একজন ভাষা সৈনিকের কথাও উল্লেখ করতে হয়, ‘উনিশে মে’ পত্রিকার সম্পাদক শান্তনু গঙ্গারিডি ২০২২এ ‘উনিশের পদাবলী’ প্রকাশ করে বঙ্গজনের কৃতজ্ঞতা ভাজন হয়েছেন, এবার উনিশে মের গল্প প্রকাশ করেছেন। আপনারা কাজ করুন আমরা সঙ্গে আছি।
বরাক উপত্যকায় উনিশে মে দিনে যেমন রচিত হয়েছিল আমাদের আত্মপরিচয়, তেমনি তাঁর শিল্প সাহিত্য সংগীতেও উদ্ভাসিত হোক আমাদের প্রতিবাদ।

উনিশের কবিতা ও গান(দ্বিতীয় সংস্করণ) বিশ্ব সংকলন ♦ দিলিপকান্তি লস্কর সম্পাদিত
লালনমঞ্চ প্রকাশনী ♦ সাড়ে চারশো টাকা

♦—♦♦—♦♦—♦


  • Tags:

Read by:

❤ Support Us
Advertisement
homepage vertical advertisement mainul hassan publication
Advertisement
homepage vertical advertisement mainul hassan publication
Advertisement
Advertisement
শিবভোলার দেশ শিবখোলা স | ফ | র | না | মা

শিবভোলার দেশ শিবখোলা

শিবখোলা পৌঁছলে শিলিগুড়ির অত কাছের কোন জায়গা বলে মনে হয় না।যেন অন্তবিহীন দূরত্ব পেরিয়ে একান্ত রেহাই পাবার পরিসর মিলে গেছে।

সৌরেনি আর তার সৌন্দর্যের সই টিংলিং চূড়া স | ফ | র | না | মা

সৌরেনি আর তার সৌন্দর্যের সই টিংলিং চূড়া

সৌরেনির উঁচু শিখর থেকে এক দিকে কার্শিয়াং আর উত্তরবঙ্গের সমতল দেখা যায়। অন্য প্রান্তে মাথা তুলে থাকে নেপালের শৈলমালা, বিশেষ করে অন্তুদারার পরিচিত চূড়া দেখা যায়।

মিরিক,পাইনের লিরিকাল সুমেন্দু সফরনামা
error: Content is protected !!