- ব | ই | চ | র্যা রোব-e-বর্ণ
- মে ২৬, ২০২৪
নারীর নাড়ির উদযাপন

পঞ্চ মহাভূত।তার এই যে উপাদানটি, এই যে ‘মাটি’ ,তাকে স্পর্শ করা যায়।জলকেও তো স্পর্শ করা যায়।বটেই।যায়, জলকে ছোঁয়া যায়, সে যে প্রবহমান। বেশ অস্থির তার কণিকারা।মাটি স্থির।মাটির কণিকারা ঠেসাঠেসি করে থাকে।মাটি তাই দৃঢ়।ধারণ ক্ষমতা তার বেশি।তাই তো পাদপ থেকে প্রাণী, সকলেই মাটি আঁকড়ে বাঁচতে চায়।পাদপ তার শেকড় প্রোথিত করে মাটির ভেতর।মানুষ তার আবহমানতা ছেড়ে যায় মাটিতে।মাটি ধরে রাখে মানুষের চিরকালীন বিশ্বাস, মাটি বহন করে তাদের বিশ্বাসের ধারাকে।অঞ্চল ভেদে সে বিশ্বাস হয়তো ভিন্ন, তবু সে বিশ্বাসকে ভিত্তি করে গড়ে ওঠে লোককথা।বিশ্বাসের কথাই ধরি, যে কোনো মাধ্যমকে উপজীব্য করে প্রদেয় হয় অর্চনা, অঞ্জলি আর ধারণা। সে ধারণায় নির্ভর করে দেশ, কাল ভেদে পূজিত হন লৌকিক দেব-দেবী।তাঁদের নিয়েই জরুরি সংকলন করেছেন রিমি দে।কবি ও সম্পাদক রিমির কথায়, ‘এই সংকলন নারীর নাড়ির এক উদযাপন।’
শুধু নারী? কেন এই লিঙ্গ ভেদ? রিমি জানিয়েছেন,’পুরাকাল থেকে আমরা দেখে এসেছি পূজার্চনায় এয়োরা অপরিহার্য।ঘন্টাধ্বনি এবং শঙ্খধ্বনি
থেকে শুরু করে উলুধ্বনি অবধি নারীকেই প্রয়োজন। ‘ প্রতীকী আদলে পঁয়ত্রিশ মহিলা কবির সত্তরটি কবিতা বিশেষভাবে সংগত হয়েছে এই সংকলনে।
অঞ্চল ভেদে সে বিশ্বাস হয়তো ভিন্ন, বিশ্বাসকে ভিত্তি করে গড়ে ওঠে লোককথা।আর যে কোনো মাধ্যমকে উপজীব্য করে প্রদেয় হয় অর্চনা, অঞ্জলি আর ধারণা। সে ধারণায় নির্ভর করে দেশ, কাল ভেদে পূজিত হন লৌকিক দেব-দেবী।তাঁদের নিয়েই জরুরি সংকলন করেছেন রিমি দে
লৌকিক বিশ্বাস থেকে উৎসারিত লৌকিক দেবদেবী নির্ভর কবিতায় ধান্যের সাধভক্ষণ থেকে বুড়াবিবির প্রতি প্রার্থনা ।আছে ঘেঁটুপুজোর আবেদন।কানহাই, জোড়াম,কালিমুহি, মাখাল ঠাকুর, নাটাইচণ্ডী, বনবিবি, তিস্তাবুড়ি ছাড়িয়ে চলে যায় ভিন রাজ্যের হাত্তিমারাম্মা, মারিয়াম্মা, বাটমঙ্গলা, পুঅজিউন্তি আ, লাবাসা, বিষ্ণোইদের কথা…কথকতা ঘিরে দেবদেবীরা হয়ে উঠেছেন আত্মীয়, একান্ত স্বজন।এঁদের কাছেই মানুষ সাহায্যের আশা খোঁজে বিপদের দিনে।তা বিপদে ‘তারণে’ দেবী পাচামামা অথবা দেবী মামাকোচা কিংবা দেবী হাথোর কেমন অক্লেশে হয়ে ওঠেন বড়ামচণ্ডী, হুদুমদ্যাও, জলাইশোরী, ঘাঘরাসিনি।
দেবতা বা দেবী রূপে প্রকৃতিকে পুজো করে মানব সমাজ।তাই তো করমপুজো, বাথৌ, মাইহানা।তাই তো উঠে এসেছে ধান্যলক্ষ্মী, টুসু,সিনি দেবীর কথা।নাটাই চণ্ডী থেকে স্বর্গবাউড়ি, আসানবিবি থেকে দেবী অলক্ষ্মী, কাঠুয়া ঠাকুর থেকে বড়া খাঁ গাজী, পঞ্চানন থেকে সোনামুখী, সুকুরচুনী রায়, ঘিসিং এবং বড়ো সম্প্রদায়ের লৌকিক দেবদেবীরা সটান দাঁড়িয়ে শুনিয়ে যান আদ্যকথা ও উপকথা।এসব কথা ছন্দ বোনে, ঢিমে তালে অথবা দ্রুত বা মধ্য লয়ে এগোয়। আলোচনায় চলে আসেন মাসাই সম্প্রদায়ের মানুষ।আমাদের সঙ্গে তাঁদের ও তাঁদের রীতিনীতির পরিচয় করিয়ে দেন রিমি।কি অবলীলায় ধরা দেয়…
‘অসুখ শুধুই মুষড়ে থাকা গান
ম্যাজিক এলেই মধুর পাখি দান’
সত্যিই তো ‘সংস্কারের ভেতর বেঁচে আছে আদিজীবন।’
এসব গল্প উপগল্প এবং মহিলাদের ৭০ কবিতা সযন্তে দুই মলাটের মাঝে ধরে রেখেছে ‘হাওয়াকল’ প্রকাশনা।যে বইয়ের মলাট জুড়ে মাটির সুবাস,হাতে নিলে যার চন্দন গন্ধ ভেসে যায় মরুতে মরুতে,যা তেজোদীপ্ত হয়ে ব্যোমে ব্যোমে বার্তা ছড়ায় ম্যাজিক…ম্যাজিক…অসামান্য যাদুকরী উপশম !
‘মাটি’— নারী কবিতায় লোকদেবতা
সংকলক: রিমি দে ♦ প্রচ্ছদ: বিতান চক্রবর্তী♦ প্রকাশক: হাওয়াকল । ₹৩০০/-
❤ Support Us