- ধা | রা | বা | হি | ক রোব-e-বর্ণ
- মে ১২, ২০২৪
মাটি ব্রতের আখ্যান। পর্ব ২৬
ঘরণীর স্থায়ী ঠিকানা। মাটির চিহ্ন। আত্মপরিচয়ের নতুন কিন্তু দৃঢ় অবয়ব। খুলনা থেকে ভাসতে ভাসতে এতদিন ধরে অসম্ভব স্বপ্নসম্ভাবনাকে জল ছিটিয়ে ছিটিয়ে জিইয়ে রেখেছিলেন তিনি। স্বামীকে আদর করে রাজি করাতে চেয়েছেন, কেঁদে সম্মতি আদায়ের চেষ্টা করেছেন...তারপর

অলঙ্করণ: দেব সরকার
।। কাদাকান্ড ।।
যুদ্ধ শেষ, কাঁসর ঘন্টারতি
বন্ধের দিন নয়। হকার্সে সব ঝাঁপই খোলা। তবু সকাল থেকে কেনাবেচা নামমাত্র। দোকানিদেরও যেন ব্যবসায়ে মন নেই। খেদও নেই। যেন ওরা জানতো এমন হতে পারে। হবেই। সকলেই উত্তেজনা সংশয়ে তটস্থ প্রায়। সমস্ত চরগাঙপুরের হৃদয়টাই মনে হয় এখানে ঘনীভূত হয়ে আছে। কিছুর অপেক্ষা করছে ওরা, বড়ো ব্যগ্র তীক্ষ্ণ সেই প্রতীক্ষা।
নাগের দোকানের ট্রানজিস্টার সেটটার ব্যাটারি ফুরিয়ে যাবে না তো? ওর নিজেরও ভয় লাগছে। খবর হয়েছে দুপুরে, মামুলি জ্ঞাতব্য ছাড়া তেমন কিছু ছিল না, তারপর আর নেই। খিদে মেটেনি। খবরের কাগজের হেডলাইনে এমন ভাষাবিন্যাস যে উদবেগ গমকে গতে বৃদ্ধি পায়। দোকানদারেরা বহুবার সংবাদপত্র আবার দেখছে। ঘন্টায় ঘন্টায় কাগজ ছাপাতে পারতো আজ ! রেডিওটাও তেমন! ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের ফুটবল ম্যাচের ছটফটানিও আজ ম্লান।
— আরে হালার হালার পুঙ্গির পুতেরা কি বুঝে, খবুরের ভেলু কতখান?
— আরে একটু সবুরা। আর কয় মিনয়িট। সইন্ধা হইয়া আইলো বইল্যা। সাতটা বাজতই দিল্লি বাংলা খবুর দিবো। সাড়ে সাতটায় ইস্থানীয় সংবাদ। আউশ মিটাইয়া শোনবি।
— মনে লয় …কুনু চিন্তা নাই।
— আমার মনও ওই বাত কইতাছে। আবার চিন্তাও যে হইতাছে। ঠিক করতে পারতাছি না, রে।
— সাধনদা, তুমিই তো সেনাপতি আছিলা। তোমার মন কী কয়?
বাঙালেরা ভিন্ন ভাষী, ভিন্ন সংস্কৃতির লোক— নবান্ন করে না, ইতু করে না, আশ্বিনসংক্রান্তিতে ইলিশমাছ কুলোয় করে ছেলের মাথায় চাপিয়ে দেয়, ছেলেটি ঘরের চারদিকে তিনপাক খায়। হাতে ঘুটের ছাই নিয়ে ছোটো ছেলেরা দু পা ফাঁক করে দাঁড়ায়, তারপর পিছনে না তাকিয়ে প্রত্যঙ্গের তলা দিয়ে সেই ছাই কল্পিত শত্রুর মুখে ছুঁড়ে মারে। সেদিন বাচ্চাকে পাটকাঠির বিড়ি খাওয়া সেখায়! ছিঃ। শুধু বাঙাল নয়, ওরা রিফুজি
সাধন চিন্তান্তরে পড়েছে। গত দুমাস অক্লান্ত পরিশ্রম গেছে তার। কুঞ্জদের মতো তার মগজ নেই, অথচ চরগাঙপুরের ইলেকশন করার কাজটা তার ঘাড়েই সর্বতোভাবে ছিল। অবশ্য স্ত্রী ছিল সঙ্গে। সাহস জুগিয়েছে সর্বদা। নিতাইদার কথা, খুড়োমশাইয়ের প্রসঙ্গ তুলেছে বারবার। বলেছিল যে দোকান বন্ধ করা যাবে না। কাজের সময়টা রাত্রি। মেয়েদের মধ্যে রমা এমন গুছিয়েছিল যে সাধনের কষ্ট অনেকখানি লাঘব হয়েছে। অন্তত এটুকু সে বুক ফুলিয়ে বলতেই পারে যে কলোনিতে চারশো মতো ঘর, ভোটার তালিকায় নাম নশো আটচল্লিশ জন, খুব বেশি হলে চারটে ভোট কম হতে পারে, সবটাই কাস্তে ধানের বাক্সে। ওই চারজন জোড়া বলদে টাকা পেয়েছিল। অমানুষী দক্ষতায় সাধনরা ওদেরকে আলাদা করে দিতে পেরেছে, ধমকাতে লাগেনি, ভয় দেখাতে হয়নি। সতীনদা, অনিমেষরা অবাক হয়ে সাধনকে তারিফ করেছে। শুধু চরের ভোট নয়, লাগোয়া গ্রামগুলিতে সাধনদেরই কাজ করতে হয়েছিল। ওখানে কর্মীর অভাব। ওই এলাকার ভোট নিয়ে ওর মনে ধন্দ আছে। ওগুলো চাষিপাড়া, অনেকেরই মাঝারি বা বড়ো জোর আছে, জোতদার জমিদার না হলেও সাধনদের দলকে ওরা ভয় পায়। ক্ষমতা পেলে ওদের জমি জোত দল কেড়ে নেবে। সুতরাং জোড়া বলদ ভালো। ওরা বংশপরম্পরায় খেয়ে পরে বেঁচেবর্তে থাকবে। সত্যিই এরকম ঘটবে কিনা সাধন জানে না। কাজেই ওদের ভয়টা দূর করতে পারেনি। ভোটের ব্যস্ততার মাঝে সতীনদা কুঞ্জ অনিমেষের সঙ্গে কথা বলা যায়নি। এখন ভোট মিটেছে, এবার একদিন কথাটা তুলবে। আরও একটা সমস্যা ছিল। ওই গ্রামগুলোর লোকেরা সকলেই স্থানীয় বাসিন্দা পুরুষানুক্রমে। ওরা ঘটি, ওরা মোহনবাগান। ওদের নাকের ডগায় পড়ে থাকা ঢালু চরভূমিটি বাঙালরা দখল করলো। একেবারেই উপনিবেশ ! বাঙালেরা ভিন্ন ভাষী, ভিন্ন সংস্কৃতির লোক— নবান্ন করে না, ইতু করে না, আশ্বিনসংক্রান্তিতে ইলিশমাছ কুলোয় করে ছেলের মাথায় চাপিয়ে দেয়, ছেলেটি ঘরের চারদিকে তিনপাক খায়। হাতে ঘুটের ছাই নিয়ে ছোটো ছেলেরা দু পা ফাঁক করে দাঁড়ায়, তারপর পিছনে না তাকিয়ে প্রত্যঙ্গের তলা দিয়ে সেই ছাই কল্পিত শত্রুর মুখে ছুঁড়ে মারে। সেদিন বাচ্চাকে পাটকাঠির বিড়ি খাওয়া সেখায়! ছিঃ। শুধু বাঙাল নয়, ওরা রিফুজি। তবে ওই গ্রামগুলিতে কিছু কমজোতী পরিবার আছে, তাদের ঘরের ছেলেপুলেরা লেখাপড়া শিখছে, কলেজেও যায়। অনিমেষ সেখান থেকে কয়েকজন ছাত্রকর্মী সাধনকে দিয়েছিল। ছেলেগুলো ভালো, পরিশ্রমী, উৎসাহে ছটফট করছে। তাই আশা আছে, ওদিককার সব ভোট মার যাবে না। কতটা কাস্তের থলিতে পড়বে সেটা অবশ্য মাপতে পারছেন না। মিথ্যে আশায় যে তার ভরসা নেই।
উত্তর না পেয়ে রেডিও নাগ বিহ্বল হয়ে পড়ে, তার মনে হয় সাধন ভয় পাচ্ছে। ভীতিটা তার দিকেও ধেয়ে আসে যেন, যখন ওদিকে অন্যরা একমুখি বিশ্বাসে তেজীয়ান। শেষে নাগ না বলে পারলো না — সাধনদা, তোমার কি অখন ডর পাইতাছে ? তুমি ডরাইলে আমরায় কোন ঠামে খাড়ামু?
— উঁ — সাধন সাড়া দিল, — না,গো, ভয় পাতিছি না। জুড়াবলুদের পুষ্যে গুন্ডেরা লাঠি বুমা নেয়ি আলি, লাঠি ভল্লা আমরাও ধরতি জানি। হতি পারে, আমাগের কলুনিতে পাক দিই গেল, ইনায়ে বিনায়ে চোখির ইশেরায় কথা ছুঁড়ি শাসায়ে গেল— দেখিনেবে রিজাল বেরুলি। এগোলান চমকানি। এতি আর ভয় লাগে না। ভয় লাগিছেল দেশ ছাড়ি আসার আগে। সকলিরি কওয়া আছে, মাথাখান ঠান্ডা রাখে যেন।
— তাইলে?
— মনি হচ্ছে, একখান কাম ভুল করি ফেলাইছি। মাশোল না দিতি হয়!
— কী কাজ? কই সতীনদারা তো তোমারে ধামুক ধুমুক দেয় নাই! উল্টা সুখ্যাত করছে।
সাধন জবাব দিল না। ভাবলো উচিত হবে না। কথাটা কুঞ্জদের কানে গেলে সত্যিই তিরস্কৃত হতে হবে হয়তো। কিন্তু ভাবনাটা মন থেকে সরাতে পারছে না সে। ভাগ্য ভালো, প্রত্যেকের হাতে বা ঘরে রেডিও যন্ত্র নেই। পারদ উঠছে নামছে না। পুরো খবর এসেছে, আসছে, তাতে সাধনের দল ক্ষমতা থেকে অনেকটা দূরে। তবে বেশ কিছু কেন্দ্রে সেখানে সেয়ানে লড়াই চলছে।
স্টেশনে ঢোকার মুখে রেডিওর দোকান— আকাশকন্ঠী। দোকানদার স্থানীয় লোক, বেনেবুদ্ধিতে সুপক্ক। মহালয়ার ভোরে দোকানঘরের সামনে ছোট চোঙ বেঁধে দেন। নানা বয়সের শ্রোতারা বাইরে ভিড় করে বীরেন ভদ্রের চন্ডী শোনে। আজকেও বিকেলে তিনি চোঙ লাগিয়েছেন। লোকের মনোরঞ্জন হবে, দোকানের বিজ্ঞাপনও হবে। চাল ডাল তেলের দাম হুড়হুড় করে বাড়লেও ট্রানজিস্টার রেডিওর দাম কমছে। হকার্সের কয়েকজন ওই দোকানে যাবে ঠিক করছে।
দোকানে দোকানে টিউবলাইট জ্বলেছে, দুধেল সাদায় ছাইরঙা ঘেঁসের রাস্তা চকচক করছে। দুম-ম! দুমম। দুটো ভারি বোমা ফাটলো, রেললাইনের পুবপাড়ে, কিন্তু এখানেও মাটি কেঁপে উঠছে। আবার একটা। ওইরকমই। বাজারের সকলের মুখের রেখাঙ্কন বদলে যায়। অকস্মাৎ ছায়ায় বিষাদ ঘন
দরিয়াদহ আসনে জোর লড়াই চলছে নাকি। শেষ পর্যন্ত কী হবে কে বলতে পারে! নবদ্বীপ লোকসভা কেন্দ্রের ভোট গণনা চলছে, এটুকুই খবর। সাধন বললো, — নাগদা, এই যে আমরা আমাগের মহেল্লাটারে পুরেপুরি পাট্টির কাজে লাগায়ে দেলাম, সকলের চোখি পড়লো। কাস্তে কলোনি বলি আমরা দাগি হয়ি গিলাম। আজ ইতে কুনু বিপদ নাই, সকলে মিলি সিটারে ঠেলি ফেলাবো। কিন্তুক কাল! পরশু! এই চিহ্ন দেয়ি আপদ আসতি পারে। ভুল করলাম, গো।
— আমরায় যে বেবাকে এককাট্টা। ভোল হইবে ক্যান?
— সেই জন্যিই তো রায়চৌধুরিদের হাত দিয়ি টাকা আসবে। ইবারের টাকাটা জলে গেল। ভোটের রিজাল বেরানের পর পাহারা থাকবেনে না। বড়ো বেশি হলি ধমক ধামক দিয়ি মিটি যাবে। টাকা কিন্তু আসতি থাকবে, নাগদা। গপুনে গপুনে। টাকার লোভ বড়ো লোভ। আমাদের যে টাকা নাই।
— সতীনদাদারা কইছিলেন ক্যাল্লা বানাইতে লাগবো। দুর্ভ্যাগ্য। তুমি আমু সকলে মিল্যা সেটাই তো বানাইলাম!
— ও কিল্লের চূড়ে আকাশখানরে কাটি মাথা তুলিছে। সবাই দেখতে পাতিছে কিল্লের রঙ, গোম্বজ, খিলেন, কিল্লেতে কারা কারা থাকে। নিতাইদার কথা মনি পড়ে। তিনিও কিল্লে বানানোর কথাই কতেন। অদ্দিরিশ্য কিল্লে। রসদ ভরা, সইনো সামন্তে ভরা। শত্তুর যেন বুঝতি না পায়। আমরা সব খুলি দেলাম, নাগদা।
কথায় কথায় রাত নামছে। দোকানে দোকানে টিউবলাইট জ্বলেছে, দুধেল সাদায় ছাইরঙা ঘেঁসের রাস্তা চকচক করছে। দুম-ম! দুমম। দুটো ভারি বোমা ফাটলো, হয়তো রেললাইনের পুবপাড়ে, কিন্তু এখানেও মাটি কেঁপে উঠছে। আবার একটা। ওইরকমই। বাজারের সকলের মুখের রেখাঙ্কন বদলে যায়। অকস্মাৎ ছায়ায় বিষাদ ঘন। বোধহয় খবর পেয়ে গেছে রায়চৌধুরি শিবির। মৃত্যুর নিথরতা.নেমে এলো হকার্সে।
বেয়াড়া তর্কটা বেঁধে যায়। লাগালো পলান, দর্জি চক্কোত্তির পাশের দোকানি। অল্প বয়স, কাঁচা বুদ্ধি, রাগে কাঁপছে, ভীষণ জঙ্গি, এখন বিদ্বেষ মন্দ্রগম — ফাটা, শালা, ফাটাইয়া ল। একমাঘে শীত যাইবো! ইলেকশোন আবার আইবো। তখন দেখুমনে, তগো পুন্দে কত বুমাবারুদ সিয়াইছস। ওইখানে আছোলা বাঁশ ঢুকাইয়া একলগে সব বুম দোমাদুম ফাটাইয়া দিমু। কাউন্টিন ওপিসথন লুক আইয়া কইছে তো! এইখানে আয় ফাটাইতে! ঝাপের লাঠি দিয়া তর মাথাখানরে বুম বানামু, আয়,শালা!
এ ক্রোধে না জাগলো হাসি, না প্রবোধ। পাল্টা তর্ক জোড়ে ওরই মিতে, তারও ডাকনাম পলান, — উলটখানও তো হইতে পারে।
— কী উলট?
— অরা খবুর পাইছে, ডোবতাছে। তাই ফাটাইয়া ফুত্তির তাকত দেখাইব বইল্যা যেগুলান মজুদ করছিল, অহন গদ্দভের নাহান সেগুলি ফাটাইয়া কান্দে।
— এ যুক্তিও ফেলা যায় না। তর্কে তর্কে সময় যায়। এ ঠিক, আর একটু পরেই ফয়সালা হয়ে যাবে।
চিৎকার ওঠে — ওই, নাগ, সাতটা বাইজ্যা গেল! রেডিওর কানটারে মুচড় দে।
আকাশবানী…।
দিল্লি থেকে বিশেষ নির্বাচনী সংবাদ ওদের জন্য কোনও খবরই দেয় না।
শেষ হলে স্থানীয় সংবাদ শুরু হয় — পড়ছি…।
— তর নাম শুনানের দরকার নাই, ক ।
সংবাদপাঠক লোকটার ভারী গলা, মিষ্টি স্বর, পড়ে যাচ্ছে…।
— আমাগোটা কয় না কেন, হারামজাদায়?
— চোক্রান্ত করছে মনে লয়
— এইমাত্র খবর পাওয়া গেল দরিয়াদহ বিধানসভা কেন্দ্রে সতীন্দ্রনাথ সেন তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে একহাজার সাতশো চল্লিশ ভোটে পরাজিত করেছেন…।
সুপ্ত আগ্নেয়গিরি তখন জেগে উঠেছে। সাধনকে জড়িয়ে ধরেছে সকলে।
— ছাড়ো, ছাড়ো, মরি যাবো যে !
উল্লাসে কলরবে উত্তাল হকার্স কর্নার। ঝপাঝপ ঝাঁপ পড়তে লাগলো দোকানের। এখন বাড়ি ফেরার তাড়া।
— নাগ, খাইয়া দাইয়া রেডিওটারে লইয়া চক্কোত্তির ঘরের পাশের খালি মাঠটায় চইল্যা আবি, কিন্তু। নিতাইদার খবুর আসে নাই।
— আইব। আমরা হারামজাদার জিতমুই।
খেতে বসেছিল সাধন। দুমাসে আসা হয়নি, আজ হেমশশী পাশে এসে বসেছেন, সাধনের পিঠে আদরের হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন, — পেট ভরে খা। ধীরি ধীরি খা। বেষম লাগবে। দোমাস তোরা দুইজন কী খাইছিস, তোরাই জানিস। রুগা হয়ি গেছে শরীর। — গোপাল ঠাকুমারই কোলে ঘুমিয়ে পড়েছে। — বউমা, তুমিও বসি পড়ো, আমি দেখি।
— তুমার পুলায় আগে খাইয়া লউক!
— আজ আর নেয়ম মানতি লাগবে না। বসি যাও।
— বসি। তুমার পুলার জ্বালায় দুইমাস খাওনদাওন লাটে ওঠছিল।
— দেখো, খুড়েমা, খাটুনি করিছে ও নিজে। আমারে দোষ দেচ্ছে!
— পাগল! দোষ দেচ্ছে নাকি? পেশংসা করতিছে।
— গুপাল খাইছে?
— ও আমার পেসাদ খাইছে।
— আমার রান্ধন তুমার নাতির পছন্দ হয় না। তুমার মতো ভাত দলা দলা কইরা মাইখ্যা দিতে পারি না। — রমা হাসলো।
— সাধনদা, — বাইরে জোরে ডাক আসে। এঁটো হাতে রমা উঠে গেল সেদিকে, — নিতাইদার খবর আইছে, বউদি।
রমার বুকটা ছ্যাঁত করে ওঠে, তবু বললো, — কী খবর?
— ছক্কা, বউদি, ছক্কা। সেলিম দোরানি ছক্কা মারছে।— দূতটি হাত ছড়িয়ে পাক খায়, তারপর বোঁ আওয়াজে এরোপ্লেনের মতো উড়ে যায়, আরও কয়েকজনকে খবর সরবরাহের দায়িত্ব নিয়েছে সে।
রমা ঘরে ঢুকতেই সাধন জানালো যে সে শুনতে পেয়েছে — আজ ঘোমাতে লাগবে। নেতাইদারে মনে আছে তো, খুড়েমা? সেই যে…। — হেমশশী মাথায় সায় দিয়েছেন — জানো, খুড়েমা, আমরা এই কলুনির বেটাবেটিরা জেতোলাম। আমরা দিল্লির পাল্লামেন্টে যাতিছি। আমাগের হয়ি নিতাইদা যাবেন। সতীনদা যাবেন কলকিতায়। আমরাই শাসন করবো আমাগের দেশ। রাজার শাসন না, পেজার শাসন। জানো, খুড়েমা, আজ আমার মনি হচ্ছে, আমি মুক্তেকান্দির কেও না, আমি এই চরগাঙপুরির মানুষ, এই আমাগের দেশ, আমাগের মাটি।
হেমশশী এখনও হাত বুলাচ্ছিলেন, বললেন — তিনি আজ থাকলি বেটা বেটার বউয়ির জন্যি অহুংকারে ভরি য্যাতেন রে। হয়তো সঙোসকিরিতে কিছু কতেন। আমি বুঝতেম না।
অনেকদিন পর যেন পূর্বাশ্রম ফিরে এলো হেমশশীর। কাঁদলেন।
♦—♦♦—♦♦—♦♦—♦
ক্রমশ…
আগের পর্ব পড়ুন: পর্ব ২৫
❤ Support Us