- পা | র্স | পে | ক্টি | ভ রোব-e-বর্ণ
- মে ২৫, ২০২৫
পথ ভুবনের দিনলিপি। পর্ব ৬

অলঙ্করণ : দেব সরকার
বেশ ক বছর আগে সল্টলেকের বৈশাখী ও ভিআইপির কেষ্টপুর যুক্ত থাকত খেয়া পারাপারের মাধ্যমে৷ তখন কেষ্টপুর খালের এপাশ ও ওপাশ থাকত আঁধার৷ দুপারেই খেয়া থেকে লোক নেমে যে যার মতো চলে যেত৷ ব্যাস তারপর সব চুপচাপ৷
ইদানিং পাকা সেতু তৈরী হওয়ার পর দুধারে প্রচুর দোকান বসেছে৷ মজফ্ফরপুরের লিচু থেকে মোমো, বাদামভাজা, এগ রোল, কুরকুরা৷ কোনো কোনো দোকানে মিটমিটে ডুম আলো কোনটায় আলো ঝকঝকে৷ ভিআইপির দিকে দোকান আরো বেশি৷ পুরোনো বাড়ি ভেঙে হাসপাতাল তৈরী হয়ে গেছে৷ আবার খালের গা ঘেঁষে পুরোনো কয়েকটি চালাঘর এখনো রয়েছে৷ ইট , মাটি, টিন টালি সব কিছু বেহিসেবী হিসেবে সেই ঘরগুলোকে মাটি আর খালের নোংরা জলের সঙ্গে বেঁধে রেখেছে৷ তার মধ্যে কারা জলকে পানি বলে তা অবশ্য খোঁজ রাখিনি৷ মানুষের খোঁজ যে জল পানির বিভাজনে রাখা যায় তাই মানি নে৷ শুধু বলতে পারি পৃথিবীর নিয়মমতো ঘরগুলোয় গরীব মানুষ বাস করে৷ বিকেলে বউগুলো যে যার ঘরের দোরে বসে চুল আঁচড়ায়৷ চিরুনিতে রয়ে যাওয়া চুলের গুচ্ছে থুতু খালের জলে ফেলে দিতে দেখেছি কতদিন৷ একটুখানি গ্রামীণ ভাব এবং অনেকখানি শহুরে ভঙ্গি মিশে খালটিকে ঘিরে এমন একটা গঞ্জের মতো ব্যাপার তৈরী হয়েছে যে চলাচলের সময় খালি সেতুর ওপর হাঁ করে দাঁড়িয়ে থাকি৷
অনেক লোক – তাদের সংসার – বিপণন চিরকাল আমায় খুব টানে ৷ ফলে মায়ের বাড়ি যাওয়ার জন্য যতবার সেতু পার হই ততবার দুপাশের দোকান, বসতি আমার চেনা হয় ৷ প্রতি চেনা আমার চেনা ৷ এমনকি সেতুর সিঁড়ির ধাপে ধাপে বসা বোবা ভিখিরী, মোবাইল কানে গুঁজে বৃদ্ধ ভিখারিণী সব সব আমার কখন যে বন্ধু হয়ে বসেছে তাও খেয়াল করিনি ৷ খেয়াল করলাম তখন, যখন যাতায়াতের সময় তারা আমার কুশল জিজ্ঞেস করে৷কোনোদিন দুটি চারটি পয়সা দি, কোনোদিন গরম বাতাস গলায় ঝাঁঝ এনে দেয়৷ ফিরিয়ে দি তাদের৷ তারা অবশ্য ফেরে না কোথাও৷ এক ঠাঁয় বসেই থাকে৷
ইট , মাটি, টিন টালি সব কিছু বেহিসেবী হিসেবে সেই ঘরগুলোকে মাটি আর খালের নোংরা জলের সঙ্গে বেঁধে রেখেছে৷ তার মধ্যে কারা জলকে পানি বলে তা অবশ্য খোঁজ রাখিনি৷ মানুষের খোঁজ যে জল পানির বিভাজনে রাখা যায় তাই মানি নে৷ শুধু বলতে পারি পৃথিবীর নিয়মমতো ঘরগুলোয় গরীব মানুষ বাস করে৷ বিকেলে বউগুলো যে যার ঘরের দোরে বসে চুল আঁচড়ায়৷ চিরুনিতে রয়ে যাওয়া চুলের গুচ্ছে থুতু খালের জলে ফেলে দিতে দেখেছি কতদিন
আজ দুপুরে যখন মায়ের বাড়ি যাচ্ছি তখন দেখলাম সেতুর একটি সিঁড়িতে এক মা তার ন দশ মাসের বাচ্চাটাকে এমনভাবে শুইয়ে রেখেছে যাতে বাচ্চাটার নরম চুলহীন মাথায় রোদ এসে পড়েছে৷ বাচ্চাটা যতবার মাথাটা সরাচ্ছে ছায়ায় ততবার মা বাচ্চার মাথা রোদে আনছে৷ আর এই প্রচণ্ড গরমে রোদ মাথায় ,বাচ্চা অসহ্য বোধ করছে৷ পয়সা দিয়ে বললাম একটু সরালেই তো বাচ্চাটার মাথায় রোদ পড়বে না৷
একদলা শীতল গলা –
রোদে না থাকলে বাচ্চা কাঁদছে না৷ না কাঁদলে ….৷
নেমে যাচ্ছি তরতর করে৷
কাঁদল না তো বাচ্চাটা !
ঘাড় ঘোরালাম৷
ভিখারিণী আবার বাচ্চাটার মাথাটা গোলাকার রোদে ঢুকিয়ে দিয়েছে ৷ তবে বাচ্চাটা এবার হাসছে৷
আলো তাপ বড়ো বিচিত্র হে৷ কখনো ক্ষেত শুখা হয় কখনো ফসল সুখ আনে৷ যেমন এইমুহূর্তে দেখো–সূর্য আলোর জীব হয়ে নবজাতকের নিঃশব্দ হাসিতে মিলে মিশে যাচ্ছে ! তারও তো নবজন্ম !
মায়ের ভিক্ষের ডাক শোনা যাচ্ছে না এখন৷
♦·♦–♦·♦♦·♦–♦·♦
ক্রমশ..
আগের পর্ব পড়ুন: পথ ভুবনের দিনলিপি । পর্ব ৫
❤ Support Us