Advertisement
  • কে | রি | য়া | র-ক্যা | ম্পা | স ধা | রা | বা | হি | ক রোব-e-বর্ণ
  • সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৩

ধারাবাহিক আত্মকথা : আমাদের বিদ্যানিকেতন

জাকির হোছেন্
ধারাবাহিক আত্মকথা : আমাদের বিদ্যানিকেতন


আমিত্বহীনতার বৃত্তান্ত

 
কতিপয় ভাগ্যবান কীভাবে সীমাবদ্ধ ? সামাজিক দায়িত্ব পালনে তাদের ব্যর্থতার হেতু কী ? কেন গ্রামাঞ্চলে, দুর্যোগ উপদ্রুত চরাঞলের কষিজীবী জনপদ অবহেলা আর প্রায় স্থায়ী হয়ে-ওঠা বঞ্চণার শিকার; শিক্ষা থেকে, সামাজিক উন্নয়ন থেকে এখনো অনেকানেক দূরে তাদের অবস্থান, এসব করুণ চালচিত্র সৃজনদীল মহৎ লেখকের মতো সাদাপাতায়, কালো চিহ্নে এঁকে শোনালেন নৈব্যক্তিক শিক্ষাব্রতী। সমাজের নির্বাচিত প্রতিনিধিদেরও প্রসঙ্গত বিলকুল ছাড় দেন নি। দার্ঢ্য ভঙ্গিতে, সংযত ভাষায় বললেন তাঁদের বিস্মৃতির বিস্তৃত বৃত্তান্ত। পাশাপাশি, সমাজকর্মী লেখকের সজল শব্দধ্বনিতে বেজে উঠল দ্বিধাহীন চিত্তের কর্মময় আকুতি।
 
দারিদ্র্য, অশিক্ষা ও রুচিহীনতা জগদ্দল পাথর হয়ে আছে। এই অনতিক্রমণীয় ব্যাধিকে রোখার দায় শুধু সরকারের? না তাকে কবরস্থ করতে হলে জরুরি ব্যক্তিপ্রতিভার সাংগঠনিক উন্মোচন, প্রয়োজন স্বপ্নজাত কর্মসূচির প্রবল উপস্থিতি।
 

সম্পাদক
২৪.০৯.২০২৩

 
 

• পর্ব-১৩ •

তাসখন্দ আর মস্কো সফরে স্বপ্নের আরেক সাফল্য শুরু। তখনই কিছুটা বুঝতে পারি, আমাদের অবিকশিত সমাজের অনগ্রসরতার, ক্রমান্বয়ে পেছন দিকে হেঁটে-যাওয়ার প্রকৃত কারণ কী? দারিদ্র, অশিক্ষা, রুচিহীনতা? সংগঠনিক উদ্যোগের অনতিক্রমনীয় ব্যর্থতা না ব্যক্তি প্রতিভার স্বপ্নজারিত কর্মসূচির অনুপস্থিতি? কম বেশি সবটাই কারণ।
 
যা সত্য তা অকপটে বলা দরকার। আমাদের সামাজিক নেতৃত্বে, আমাদের ক্ষীণকায় শিক্ষিত অংশ, আমাদের আত্মনিষ্ঠ বৃহৎ-অবৃহত নিজের কথা যতটা ভেবেছে, সমাজকে নিয়ে তার ভাবনা ততটাই -সীমাবদ্ধ। তার একাংশ রাজনীতি করেেছন, সংখ্যা হীনমন্যতাকে কাজে লাগিয়ে নেতা সেজেছেন, নেতৃত্বের ছড়ি ঘুরিয়েছেন, সমূহ সমাজকে দারিদ্র থেকে, বঞ্চনা থেকে, উৎপীড়ন থেকে, বাঁচানোর সেরকম প্রমাণ দেখাতে পারেননি। গরিব কৃষক, নিরন্ন কৃষিজীবী ভাঙনের কবলে পড়ে, অশিক্ষা আর কুশিক্ষার যাতাকলে যুগযুগ ধরেই প্রতারিত, প্রবঞ্চিত। মুক্তির পথ কেউ তাদের দেখায়নি। আশ্বাস দিয়েছে, লোক দেখানো অঙ্গীকার করেছে, সমাবেশে, চৌরাস্তায় আর ময়দানে, কিন্তু জনগণের ইচ্ছায় নদী পেরনোর প্রায় সঙ্গে সঙ্গে সব প্রতিজ্ঞা আর প্রতিশ্রুতির লাশের জানাজা শেষে, লাশকে কবরস্থ করেই কদাচিৎ নেতৃত্ব তাদের অঙ্গীকার পূর্ণ করেছে। এর নাম রাজনীতি? জনকল্যাণ? গণনির্বাচিত প্রতিনিধি অথবা সমাজের, পরিবারের অর্থে শিক্ষিত শ্রেণীও গরিবকে মুখ দেখায় না। নামকে ওয়াস্তে জননেতৃত্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়েছে, অর্থের স্কুলে মুষ্ঠিমেয়কে চাকরি দিয়েছে, উৎকোচ নিয়েছে, তারপরেই তারা পগার পার। শিক্ষার হার বাড়েনি। দারিদ্র্য কমেনি, জনসংখ্যার মত ক্রমাগত বেড়েছে তা, এ বৃদ্ধিকে রোখেনি, রোখার চেষ্টা করেনি। নির্বাচিত প্রতিনিধির এটাই কি লোকসেবার নমুনা। ব্যতিক্রম কোথায়? আছে, কিন্তু বড্ড কম, বড্ড সীমিত, বড়ো বেশি আত্মসংযুক্ত। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পরেও রাশিয়া কিংবা উজবেকিস্তানে গণমুখী, কল্যাণমুখী ভেঙে পড়েনি। পূর্বতন ইউ এস এস আর-এর আগের সমাজব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে বটে, পুঁজিবাদ প্রবেশ করেছে, কিন্তু জনকল্যাণের সুমতি একেবারে হারিয়ে যায়নি। ওই সফরেই আমি বোঝার চেষ্টা করি, সমাজের রুগ্নদেহকে সুস্থ করতে হলে আরো বেশি আত্মত্যাগ, আরো বেশি পরিশ্রম, আরো বেশি সংহত এবং যৌথ চেষ্টা দরকার। ব্যক্তিউদ্যোগে নির্মিত প্রতিষ্ঠানের কারিগরকেও কেবল মুনাফার কথা নয়, সমাজের সমূহ অগ্রহতি নিয়ে ভাবত হবে। সরকার করে দেবে, জনতার রাজস্বের টাকায় প্রতিষ্ঠান গড়বে, আমরা গড়িয়ে গড়িয়ে হাঁটাব,চুপিসারে লুঠ করব, এরকম হলে সমাজের অগ্রগতি অসম্ভব। সমাজে থাকতে হলে, সমাজকে নিজেই এগোতে হবে। জঙ্গলের পাখি, কিংবা বন্যপ্রাণীদেরও যৌথ-প্রচেষ্টার, ঐক্যের অভাব নেই।প্রকৃতির সেরা সৃষ্টি মানুষের কেন থাকবে ? অর্থ সংগ্রহ এনই-এফের একমাত্র লক্ষ্য নয়। এই লক্ষ্যের সঙ্গে বহু গন্তব্য, বহু মুখ, বুহু চর, বহু জনপদ জড়িয়ে আছে। সকলের সঙ্গে, পাশে  যথাসম্ভব দাঁড়াতে চাই আমরা।
 

এটা আমাদের চমক নয়। এখানে কর্মের সঙ্গে মর্মের, সামাজিক বেদনার সংযোগ, সমাজের সমূহ ক্লেশের সম্পর্ক অনাবৃত, অনিবার্য। এই পথ ছুঁয়েই এন ই- এফ মানুষ গড়ার কারিগরিতে ব্যস্ত। মানুষ হতে চাই, অন্য কেও নিষ্ঠা আর মানব প্রকৃতির প্রকৃত ধর্মের সড়ক ধরে, হাঁটিয়ে নিয়ে যেতে আগ্রহ আমাদের অফুরন্ত। এক্ষেত্রে আমরা আমিষ ও নিরামিষ যোদ্ধা ! রক্তখোর নই। নই মানুষরূপী নরখাদক।
 
একথা বলাব কারণ, সামাজিক মঙ্গলবোধে আমরা প্রাণিত। কারণ দুই, নিঃসঙ্গ নই, নই একলা পথের রসিক। আমাদের সঙ্গ তার প্রয়াসের সরিক এবং বহুমাত্রিকতার বিনম্র ভারকেন্দ্র।  কারণ তিন, অসমের সর্ববৃহৎ শিক্ষাগোষ্ঠী হলেও বৃহতের অহঙ্কার আমাদের স্পর্শ করে না। কারণ, সবকটা শিক্ষা নিকেতন মিলে আমাদের পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার। শিক্ষক ও  শিক্ষাকর্মী আড়াই শো-র বেশি। কারণ চার, বেতন নিয়মিত এবং নিয়ম মাফিক। কারণ পাঁচ, লেখাপড়ার খরচ অপেক্ষাকৃত কম, শৃঙ্খলাবোধ অপরিহার্য, গুণগত শিক্ষাদানে উন্নত, নির্বিশেষের ভাবাদর্শে উদ্বুদ্ধ। কারণ ছয়, প্রতিটি শিক্ষা নিকেতনের নিজস্ব ক্যাম্পাসে ফুল  ফোটে, হাসি ফোটে। যান্ত্রিকতা নিষিদ্ধ। কারণ সাত, সরকারি নিয়মের বাইরেও প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ববোধ অবধারিত। নিঃখরচে, অর্দ্ধ খরচে পঠনরত ছাত্রের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। এসব কথা বলবার কথা নয়। তবু বলতে হচ্ছে, সামাজিক দাত্বিবোধকে ঘিরেই আমাদের প্রতিষ্ঠানের উত্থান,  আমাদের উত্তরনের শিকড়ও এখানে নিহিত।
 
কীভাবে, কোন্ প্রয়োজনের শূন্যতা কাটিরে উঠতে কয়েক দশক আগে আমাদের শুরুর শুরু, প্রায় শূন্য থেকে আমাদের আরম্ভ, তার আংশিক, নিঃশর্ত গল্প কাহিনি বলেছি, এবার পুরোটা যথাসম্ভব বলতে হবে, জানাতে হবে চিত্রায়িত পূর্ণ ছবির স্বপ্ন ছোঁওয়া ভবিষ্যতের গল্পবাস্তবের মানচিত্র।
 

♦—♦♦—♦♦—♦♦—♦

 
লেখক: উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রথম বেসরকারি কলেজ গোষ্ঠী এন.ই.এফ-এর চেয়ারম্যান। গুয়াহাটির বাসিন্দা
 
আগের পর্ব পড়ুন: পর্ব ১২

ধারাবাহিক আত্মকথা : আমাদের বিদ্যানিকেতন


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!