- কে | রি | য়া | র-ক্যা | ম্পা | স ধা | রা | বা | হি | ক রোব-e-বর্ণ
- অক্টোবর ৮, ২০২৩
ধারাবাহিক আত্মকথা: আমাদের বিদ্যানিকেতন

আমিত্বহীনতার বৃত্তান্ত
একমাস তিনদিনের মস্কো আর তাসখন্দ সফরের পর, কীভাবে এনইএফ-এর শিক্ষাসঙ্গে, অনুষঙ্গে জোর হাওয়া লাগল, ১৯৯৭ সাল থেকে স্তরে স্তরে গড়ে উঠল একাধিক ক্যাম্পাস আর বিদ্যার বহুমুখী সাত প্রতিষ্ঠান, সে গল্প আর আত্ম সামাজিক প্রচেষ্টার গল্প শোনালেন জাকির। বিশ্বাস আর বাস্তবতার অভূতপূর্ব সেতুবন্ধন।
সম্পাদক
৮ /১০/২০২৩
• পর্ব-১৪ •
কোরান আর হজরত মহম্মদ এর শাশ্বত বাণী আমরা ভুলেত পারি না। ব্যক্তিক প্রত্যাশাকে সামাজিকতায় রূপান্তরিত করে শ্রেষ্ঠ আরব প্রজ্ঞা বলেছিলেন, দুনিয়া জুড়ে ঘুরে বেড়াও। তোমাদের জন্য সর্বত্র ছড়িয়ে আছে দেখা আর শেখার অজস্র নিদর্শন। আমি ওই মহামানবিক উচ্চারণের মর্মার্থ তিলে তিলে অনুভব করি, সুযোগ পেলেই রাজ্যে, রাজ্যের বাইরে ঘুরে বেড়াই। দেখতে দেখতে ঘুরি ছুটতে ছুটতে প্রশিক্ষণ আর শেখার রসদ খুঁজি। কী আশ্চর্য, পেয়েও যাই। এনইএফ যখন নিছক একটি শিশু প্রতিষ্ঠান, তখনই কিছু কিছু স্বপ্ন জড়ো করে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে গেছি, কাউকে কোনো প্রতিষ্ঠানকে অনুকরণ করিনি। নিজের কৌশল আর কর্ম নিজ হাতে এঁকেছি। শুভানুধ্যায়ীরা পাশে দাঁড়িয়েছেন। কেউ কেউ আমার ধারণাকে অসাধ্য ভেবে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছেন।তাঁরা আজ কোথায়, তা জানি না।
সব কাজ সরকার করে দেবে, প্রতিষ্ঠান গড়ে দেবে, এই ধারণা ভুল। ব্যক্তি আর সমাজ হাতে হাত রাখবে। সরকার পাশে দাঁড়ালে ভালো। যদি না দাঁড়ায় প্রাতিষ্ঠানিক স্বচ্ছতা, নিষ্ঠা একদিন প্রশাসনকে নিকটে টেনে আনবে।এনইএফ এ ব্যাপারে দৃষ্টান্ত
আমি কতটা সফল, কতটা ব্যর্থ বলতে চাই না। বলবে সমাজ, জানাবে, ওজন করবে আগামীর মূল্যায়ন। অমরত্বের প্রত্যাশা নেই। অভিপ্রায় একটাই, সমাজকে সঙ্গে নিয়ে এগোবে, সমাজের সুখ-দুঃখের শরিক হয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করব। এদিক থেকে আমাদের সাংগঠনিক কর্ম অবশ্যই একটি সামাজিক ব্যবসা। নোবেলজয়ী অর্থশাস্ত্রী মুহাম্মদ ইউনূস প্রায় দু-দশক জুড়ে সামাজিক ব্যবসার কথা ক্রমাগত বলে যাচ্ছেন। বিশ্বের বহু বিশ্ববিদ্যালয় তাঁর ব্যবহারিক অর্থনীতির সূত্রকে গ্রহন করেছে।জায়গা দিয়েছে পাঠ্যসূচিতে। ড. ইউনূসের নীতি আর আবিষ্কৃত তত্ত্ব-শর্তকে আমরা গুরুত্ব দিই, আবার এর সঙ্গে শিক্ষাপ্রচারের মৌলিক চাহিদাকে সংযোজিত করতে পেছন দিকে, কারো দিকেই তাকাইনি। আমাদের সাংগঠনিক উদ্যোগ, যৌথ চেষ্টা, চেষ্টার চালচিত্র আলাদা।দেখতে থাকি কতদূর এগোলে সমগ্র সমাজ উপকৃত হবে, ব্যক্তির সঞ্চয়ে যোগ দেবে সামাজিক পুঁজি সংগ্রহের ইচ্ছা।
তাসখন্দ আর মস্কো সফরে ওখানকার সরকারি অনুশাসনের শিথিলতা আমাকে আকৃষ্ট করে। ভাবতে থাকি, সব কাজ সরকার করে দেবে, প্রতিষ্ঠান গড়ে দেবে, ব্যাপক সাহায্য করবে, এই ধারণা ভুল। ব্যক্তি আর সমাজ হাতে হাত রাখবে। সরকার পাশে দাঁড়ালে ভালো। যদি না দাঁড়ায় প্রাতিষ্ঠানিক স্বচ্ছতা, নিষ্ঠা একদিন প্রশাসনকে নিকটে টেনে আনবে।এনইএফ এ ব্যাপারে দৃষ্টান্ত। যাঁরাই নির্বাচিত হয়ে সরকার গড়েছেন, তারা মতাদর্শের উর্ধ্বে আরোহন করে সহমর্মিতা ও সহযোগিতার সড়ক বেছে নিয়েছেন। সমাজও আমাদের ইচ্ছাকে অশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে, প্রাতিষ্ঠানিক উত্তরণে গর্বিত বোধ করছে। এই সাফল্য আমার একার নয়, অবশ্যই সমাজের বহুস্তরীয়, বহু আঙ্গিক নেতৃত্বের। আমি বিনম্র। সবার কাছে কৃতজ্ঞ।
সমগ্র যখন ঐক্য গড়ে তোলে, তখন ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠীজাত কর্মকান্ড তীব্র, তীর্যক, আর অঙ্গীকার নিষ্ঠ হয়ে বৃহৎকে স্পর্শ করতে চায়। আমরাও এনইএফকে ঘিরে এরকম হয়ে উঠবার প্রচেষ্টায় নিরত। বিচ্ছিন্নতা, আত্মকেন্দ্রিকতাকে বিলকুল আমাল দিই না। সূর্যোদয় আর অস্তাচলের তফাৎ বুঝি না, কাজ করে যাও, শৃঙ্খলা মেনে, যুক্তি আর ভাবাবেগের আবেদনকে মান্যতা দিয়ে। এরকম ভাবি বলেই যে কোনো সফরের অভিজ্ঞতাকে স্থানান্তরিত করে নিজেদের আয়ত্তের অধীনে বিবেকের বিদ্যার সহজিয়া মূর্তিরূপ গড়ে তুলি। বলতে দ্বিধা নেই, আমাদের মনে হয় এই পথে অন্তরা, এরকম পথের ধারে, দূরে, অদূরে গড়ে উঠেছে সবকটা বিদ্যানিকেতন। দরজা উন্মুক্ত। সামনে পেছনে, সবুজের, ভবিষ্যতের অযূত ইঙ্গিত।
কীভাবে, এ আদর্শে উদ্বুদ্ধ, প্রাণিত হয়ে উঠলাম, আগে তার খানিকটা বিবরণ পেশ করেছি, এবার বিশদভাবে বলা জরুরি। কোন কোন প্রতিরোধের মোকাবিলা করতে করতে এইইএফ কলেজ, এনইএফ আইন বিদ্যালয়, কলেজ অফ ফার্মাসিউটিকাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ, কলেজ অফ হেলথ সায়েন্স, ইন্সটিউট অফ নার্সিং, ইকরা একাডেমি নির্মাণ সম্ভব হল; এসব নির্মাণের সঙ্গীরা কতটা উৎসাহি করেছেন—সবই বলা দরকার। নিজেকে যথা সম্ভব আড়ালে রেখে ভবিষ্যতের বাস্তবের রূপ রেখাও বলতে চাই। এখানেও আমি নৈর্ব্যক্তিক এবং স্বপ্নময়। আবেগ আর যুক্তির একজন সাধারণ কর্মকার।
♦—•—♦♦—•—♦♦—•—♦
লেখক: উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রথম বেসরকারি কলেজ গোষ্ঠী এন.ই.এফ-এর চেয়ারম্যান। গুয়াহাটির বাসিন্দা
আগের পর্ব পড়ুন: পর্ব ১৩
❤ Support Us