- ক | বি | তা রোব-e-বর্ণ
- এপ্রিল ২৮, ২০২৪
গুচ্ছ কবিতা

চিত্রকর্ম: নাসরিন মহামেদি, ১৯৬২
আদিব হোসেন মঞ্জু
ক.
গৃহবন্দী অন্ধকার, দগ্ধ হয়ে জঙ্গলে চেঁচায়।
ভবিষ্যত অন্ধ করে অন্ধতাকে খায়, শুষে নেয়
অতীতের নির্ঘুম শরীর।
আমাদের স্তাবকতা, আমাদের বুড়বক হিম্মত
আড়াআড়ি বেঁচে থাকে জলে, নাগরিক নৃশংস
গলিতে এখন। হায় হুইটম্যান, মহৎ কবিতাগুলি
রেখে গেলে কার জিম্মায়?
ব়্যাবো আর মালারমে ফুরিয়ে গেলেন
আজ বড়ো নিঃসঙ্গ রবীন্দ্র ঠাকুর।
কান্নার নৈঋত আর নিসর্গ নিয়ে
কতদিন ঘুমিয়ে ঘুমিরে তাঁর স্পর্শ এঁকে যাবে !
এসো আরো অন্ধকার খাই
খেয়ে নিই সমস্ত নিকষ
এসো এসো পিকাসো, মাতিস
নরকের কীট হয়ে লাল, নীল, কালো আর সবুজকে
জিবরানের শুঁড় দিয়ে মুড়ে দিই আজ।
ওরহান পামুককে ফারসি শেখাই।
আসুক দুদিন, হৃদয়ে বাজুক শঙ্খ, ওমর খৈয়াম।
খ.
ঘোড়ার সুনীল নেই, সুনীলের ঘোড়াটাও নেই,
জেগে আছে শুধু, রাতভর আস্তাবলে ঘোড়া পরিক্রমা।
তুলির ডগায় লাল, অঙ্কিত অক্ষর।
মাতৃগর্ভে আহোরণ শুরু। মৃত্যুর সহস্র পরে,
অনেক অনেক পরে, কার্নিস,
দাঁড়িয়ে থেকো, কখনো সবুজ ঢেলে,
স্বপ্নরোহী যাযাবর, রেখে যাও দুরন্ত ষাঁঢ়
তোমার তীর্যক আমাদের মুখচ্ছবি লেখে
বলে যায়, অনিশ্চিত রহস্যের অবয়ব
শিল্পের ফানুস।
গ.
জেগে থাকা আগুনের মতো,
আমার দুঃখের মতো অপলক সূর্যপাহাড়।
পাহাড়ের চেরাকোটা বাঘিনী কোথায়?
নদীতটে বালু খেতে গেছে !
ঘ.
গান শোনাবার রহস্য খুঁজে খুঁজে
বিডন-বিশপ থেকে ফিরে আসা-হাওয়া
স্বপ্নের ভেতবে, আরো আরো স্বপ্ন দেখে যাবে।
মৃতুর পরেও আমি স্থাপত্য ফেরি করে যাব।

চিত্রকর্ম: আকবর পদমসি, ১৯৫৩
গোলাম রসুল
হলরেখা
আমার প্রথম পরিচয় জগতের মিথ্যার সঙ্গে
আর এসব লেখা শুধুমাত্র ময়ুরপঙ্খী
আমি কুটিকুটি করেছি স্বরবর্ণ আর ব্যঞ্জনবর্ণ
একটা ছুরিকাঘাত
জগৎ আর দেবতার রৈখিক নৈঃশব্দে
যেন এক অবশ শিশু হলরেখার পাশে শুয়ে রয়েছে
তার পিতা মাতারা ঘুরে বেড়াচ্ছে
এক মা কৃষ্ণরক্ত দিয়ে আহ্বান করছে সূর্যকে
আমরা সন্ধ্যার প্রার্থনায় বসে আছি
আমাদের প্রার্থনা হয়ে উঠবে একটা পাগলা পতঙ্গ
জাল বিস্তার করবে
ঝুঁকে থাকবে
অনুমতি দেবে আমাদের মাথাগুলো নবায়ন করতে
কিছু রক্তাক্ত ফোঁটা
একটা এনডরয়েড ফোন
আঙুল গুনে গুনে এগিয়ে যাব
যখন আমরা একটি মাঠে স্বর্গকে নগরায়ন করব তখন চাঁদ হয়ে উঠবে নরকের সমতুল্য
যেন কালরাতে আমি মস্তক হাতে নিয়ে নরকের স্বপ্ন দেখছি
আর যখন আমি স্বপ্ন থেকে বেরিয়ে আসছিলাম
হাত থেকে মস্তকটা পড়ে গেল স্বপ্নের মধ্যে
ছায়ার মধ্যে গোঙাচ্ছে ছায়া
যেমন দেখতে হয় রাত্রির বিকৃত মুখ
লেজ মোটা করে শুয়ে আছে আকাশ
যেন রাগি একটা জানোয়ার প্রবেশ করছে
দিনের গন্ধ পচছে একটি পাত্রে
নক্ষত্রের তাঁবু গুলোর সারল্য
পৃথিবীর হিত বিপরীতে আমি কোনদিন কারুর জন্মানোর কান্না নিয়ে কথা বলব না
তুমি চোখ দিয়ে জড়ো করো ভয়বিহবল দিগন্তগুলো
পুনরায় ফিরিয়ে নিয়ে এসো কবরের মতো দেখতে মহাশূন্যকে
তুমি দেখবে একটি হলরেখার মধ্যে কীভাবে ভরে রয়েছে পিপীলিকারা

চিত্রকর্ম: চিত্তপ্রসাদ ভট্টাচার্য, কাগজে লিনোকাট,১৯৬৮
সৈকত সুন্দর সরকার
কথামৃত
মাটিতে বৃষ্টি নামলে
হলুদ নদীটিও নিরাপত্তা খোঁজে।
বৃষ্টির ছিটেফোঁটা আল্পনা
আঁকে নদীটির বুকে ।
জানি তার বলা নেই,
একলা চলে যেতে পারে অকৃতদার।
ধ্যানের গভীরে ডুব দিলে
অবশ হয়ে পড়ে শরীর।
শরীর এক মৃত আবর্জনা,
সশরীরে নেমে আসে নদী,
তখন ছড়িয়ে ছিটিয়ে
থাকে ক্ষোভ বিক্ষোভ,
বাতাসে বারুদ রং।
নদী গতিপথ পরিবর্তন
করতে করতে গেঁথে নেয়
কথামৃতের শেষ পংক্তিটুকু।
প্রেমিক
আজ যাকে তোমার সঙ্গে
দেখলাম,সেকি তোমার প্রেমিক?
সেই ছেলেটা?
কোন ছেলেটা,
সেই বখাটে ?
তাকে কি কেউ মনে রাখে?
কী ছিল ওর —
ঘর – কন্না , চাক- চিক্কো—
কিছুই তো নেই।
ভালো যে বন্ধু হবে
তেমনও তো নয়।যোগ্যতা কী?
ডিগ্রি–ফিগ্রি একদমই কম।
শুধু নাভিশ্বাস আর নাভিশ্বাস হরদম।
তার সঙ্গেই ঘর বাঁধব—
আসবে সময় করে।
যে তাড়নায় ঘর সাজালে,
সেকি জ্বলবে চিতার পরে?
❤ Support Us