Advertisement
  • ধা | রা | বা | হি | ক রোব-e-বর্ণ
  • ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৪

ধারাবাহিক: পাহাড়িয়া পথে পথে। পর্ব ১০

জোঁকের পিছন পিছন নুন নিয়ে তাড়া করে করে আমরা সারারাত জেগে বসে রইলাম। সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন একটি দ্বীপের মধ্যে সে এক সাক্ষাৎ মৃত্যুর ভয়াবহ আতঙ্কের রাত... তারপর

ফাল্গুনী দে
ধারাবাহিক: পাহাড়িয়া পথে পথে। পর্ব ১০


ভুবন পাহাড় আর গিরিশৃঙ্গের প্রতি তাঁর দুর্ভেদ্য আকর্ষণ উৎসবমুখর করে তোলে ভূগোলের বিদ্যাযাপন । পেশা আর নেশা যখন একাকার হয়ে ওঠে, তখনই তাঁর অনুভূতিকে অন্যভাবে জাগিয়ে তোলে— ‘শেষের কবিতার’ শোভনলালের পাহাড়ের পথে পথে ঘুরে বেড়ানোর বেহিসেবিয়ানা । গন্তব্য জগতের এক শৃঙ্গ থেকে আরেক শৃঙ্গ 

♦ পর্ব ১০ ♦

গতরাতে এমন তুমুল বৃষ্টির পর সাচেন জঙ্গল ক্যাম্প ধ্বস নেমে দু’ভাগ হয়ে যাওয়া অস্বাভাবিক ছিল না। কিন্তু তার বদলে রাতের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার ফলস্বরূপ দলের মানসিকতা ভাগ হয়ে গেল দীর্ঘ ফাটল বরাবর। আমাদের দলের অবস্থান এখন দুই ভিন্ন মেরুতে। এক মেরুতে আমি একা এবং অন্য মেরুতে দলের বাকি সবাই। সকলের সম্মতি নিয়ে, একপ্রকার ভয় পেয়ে, অভিযান এখানেই শেষ করে ওরা প্রাণপণে নিচে নেমে যেতে ভীষণ ইচ্ছুক। নিচে নেমে যেতে পারলে বেড়াবার জন্য, প্রাণভরে দেখবার জন্য পেলিং রা-ভাংলা যোর্থাং কালিম্পং দার্জিলিং ইত্যাদি নানান জায়গা তাদের জন্য অপেক্ষা করে আছে। সেখানে প্রাণের ঝুঁকি নেই বিপদ নেই, আছে শুধু নির্ভেজাল আনন্দ। মোবাইল পরিষেবার সীমানায় একবার পৌঁছাতে পারলে প্রিয়জনের সঙ্গে যোগাযোগ করে যুদ্ধফেরৎ গলায় খবর দেওয়া যাবে — “আমরা বেঁচে আছি।”
 
কিন্তু ওদের এই সিদ্ধান্তে আমার সম্মতি নেই। পাল্টা যুক্তি শুনতে বা বুঝতে ওরা কেউ আগ্রহী নয়। আমার এযাবৎ পাহাড়ের অভিজ্ঞতা, ভূগোলের জলবায়ু আবহাওয়ার মোটামুটি পড়াশোনা, প্রতিটি ইন্দ্রিয়ের মধ্য দিয়ে আমাকে সংকেত পাঠাচ্ছে — বিপদ যা ছিল কেটে গেছে! এখন শুধু চরৈবেতি চরৈবেতি। সুতরাং আমার যুক্তি নিয়ে জেদের একরোখা দেওয়াল হয়ে আমি দাঁড়িয়ে রইলাম নাছোড়বান্দা। মত পার্থক্যের এই পরিস্থিতিতে দলনেতার এবং অন্যান্যদের মনে হতে পারে আমার আচরণ দলের সংহতি বিরোধী। বাকিদের স্বাস্থ্য এবং মনোবল সম্পর্কে আমি উদাসীন। মনে হতে পারে আত্মবিশ্বাস ভালো আস্পর্ধা ভালো নয়। মনে হতে পারে পাহাড়ে আমার হাঁটার গতি বাকিদের সঙ্গে বেমানান। মনে হতে পারে আমার মতো এক উজবুক সঙ্গে নেওয়া একটি মারাত্মক ভুল। কিন্তু আমি নির্বিকার। কারণ আমি পেলিং বেড়াতে আসিনি। তাই আরও উপরে এগিয়ে আমি যাবই যাব। এমন সুযোগ জীবনে আর দ্বিতীয়বার আসবে না। অতএব বেঁচে যখন আছি এবং মরে যখন যাইনি সামনের চ্যালেঞ্জকে স্বাগত জানাতে ভয় কিসের ? “I must not fear. Fear is the mind-killer. Fear is the little-death that brings total obliteration. I will face my fear. I will permit it to pass over me and through me. And when it has gone past I will turn the inner eye to see its path. Where the fear has gone there will be nothing. Only I will remain.” (Frank Herbert)
 
অথচ আজ ২০ তারিখের এই সাত সকালে টেন্টের বাইরে দাঁড়াতেই আমার মন প্রাণ আত্মা কাব্যময়তায় ভরে উঠলো। রবীন্দ্রনাথের সুরে মন গেয়ে উঠলো — “সেদিন ভোরে দেখি উঠে/বৃষ্টি বাদল গেছে ছুটে,/রোদ উঠেছে ঝিলমিলিয়ে/বাঁশের ডালে ডালে।” এখানে বাঁশ গাছ নেই কিন্তু পাইন গাছের ফাঁকে ফাঁকে আজ এক চমৎকার সকাল। কান পাতলেই নদীর গর্জন উঠে আসছে বহু নীচ থেকে শোনা যায়। গত রাতের ভিজে জামা কাপড় টেন্টের মাথায় এদিক ওদিক মেলে দিয়েছে সবাই একটু উত্তাপের খোঁজে। আমার জেদের মুখে ভালো মানুষের মতো ওরা কিছু বলতে না পেরে এবং অনেক অনেক বিড়ি সিগারেট আহুতি দিয়ে আপাতত নেমে যাওয়ার সিদ্ধান্ত স্থগিত রইলো।
 

 
বেলা প্রায় ন’টা বাজে। এখানে প্রকৃতির ডাক খোলা আকাশের নিচেই দস্তুর। ব্রেকফাস্টের আয়োজন চলছে। একটি খোলা জায়গায় ভাজা হচ্ছে লুচি সঙ্গে আলুর তরকারি। ইয়াক, মিউলগুলো এক জায়গায় অনড় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভিজেছে সারারাত। ওদের দেখলে মায়া হয়! পিঠে কুইন্টাল কুইন্টাল মাল পত্তর নিয়ে যেন আর চলতে পারে না। ওদের দেখলে খুবই কষ্ট হয়!
 
মানসিক লড়াই আপাতত কাটিয়ে ওঠা গেল কিন্তু প্রকৃতির বাধা? রাস্তা আটকে পড়ে থাকা পেল্লাই গাছ বন বিভাগের লোকেরা না কাটলে উপরে ওঠা কিছুতেই সম্ভব নয়। তখন আমার এত জেদ এবং উপরে উঠবার এত জোরাজুরি হাসির খোরাক হয়ে উঠবে। কৌতুহল এবং উৎকণ্ঠা বুকে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বেশ খানিকটা এগিয়ে পরিস্থিতি বুঝবার চেষ্টা করলাম। অনেক দূর চলে এসেছি। দেখি একটি গাছের তলায় জনা পাঁচেক লোক বসে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। চিনতে ভুল হলো না। গত সন্ধ্যায় আবছা আলোয় দেখা সেই লিডার গোছের ছেলেটি। ওর নাম অক্ষয় আরালিকাট্টি। কেরালার ছেলে। লম্বা রোগাটে চেহারা। উসকো খুসকো চুল, এক মুখ দাড়ি। ‘ইন্ডিয়া হাইকস’-এর বর্তমান টিমের ক্যাপ্টেন ও। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার হলেও নেশার টানে কোনও মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির গোলামি না করে হিমালয়ের পথে পথে গাইডের চাকরি তার কাছে ঢের প্রিয়। আলাপ করতেই বোঝা গেল এ চাকরিও এখন তার কাছে একঘেঁয়ে। উচ্চশিক্ষার জন্য সে এখন আমেরিকা যেতে চায়। সম্প্রতি নাগাল্যান্ড থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত চার হাজার কিলোমিটার রাস্তা ১২০ দিনে হেঁটে শেষ করেছে। কথাবার্তার মধ্যেই স্যাটেলাইট ফোনে বার্তা পাঠালো। পরবর্তী অর্থাৎ সোকা ক্যাম্পের সঙ্গে অনবরত যোগাযোগ চলছে। আলোচনা চলছে রুটের বর্তমান পরিস্থিতির সুবিধা অসুবিধা নিয়ে। স্থানীয় গাইডরা কথাবার্তা বলছে বন বিভাগের সঙ্গে। এতগুলো মানুষের জীবনের দায়িত্ব ওর কাঁধে। আমরা ওদের সিদ্ধান্ত অনুসরণ করবো ঠিক করলাম।
 

রাস্তা এগিয়ে চলেছে রাথং-চু নদীকে বাঁহাতে রেখে। নদীর ওপারে সবুজ জঙ্গলের বুক চিরে একটি ক্ষীণকায় জলপ্রপাতের ধারা যেন একটি মেয়ের ঘন চুলের আড়ালে সরু চকচকে কানের দুল জ্বলজ্বল করছে। প্রায় দেড় ঘন্টা হাঁটার পর শেষমেষ সেই বহু চর্চিত পথ অবরোধকারী গাছটির সামনে পৌঁছানো গেল। গাছের আয়তন যা আন্দাজ করেছিলাম তার তুলনায় অন্তত একশো গুন ভারী এবং জমকালো।

 
অবশেষে গাছ কাটা হলো কিন্তু অনেক দেরিতে। রাস্তা আর দূর্গম নয়। দুপুরের খাওয়া দাওয়া সেরে বেলা দেড়টা নাগাদ মালপত্র গুটিয়ে আমরা রওনা দিলাম। বিকল্প আর এক জোড়া জুতোয় পা এখন আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী। রোদ তাপিয়ে জামা কাপড় সামান্য ভিজে যা ছিল গায়েই শুকিয়ে গেল। কিছুক্ষণ হাঁটার পর দেখি রাস্তার ডানদিকে খেলার মাঠের মতো সমতল পরিচ্ছন্ন জায়গা। আমাদের ক্যাম্প এখানে স্থাপন করলে সেদিন রাতের অনেক বিপদ এড়ানো যেত। কেনো যে করেনি ওরাই জানে! পরে গাইডের থেকে জানলাম এখানে জলের কষ্ট। দীর্ঘক্ষণ হাঁটতে হাঁটতে আন্দাজ করলাম দলের সদস্যদের সঙ্গে আমার একটি মানসিক দূরত্ব তৈরি হয়েছে। তারা হাঁটছে সঙ্গে তবু একটু তফাতে। যেন এই বিপদের পথে আমি তাদের জোর করেই টেনে এনেছি ইচ্ছের বিরুদ্ধে।
 
বৃষ্টির আর ছিটে ফোঁটা মাত্র নেই। মেঘমুক্ত পরিষ্কার আকাশ। আজকের গন্তব্য ভাকিম পেরিয়ে সোকা ক্যাম্প। উচ্চতা ৯৭০০ ফুট। আনুমানিক দূরত্ব পাঁচ কিলোমিটার। অর্থাৎ পথ যথেষ্ট খাড়া। উপরন্তু পথের যা ফুটি ফাটা অবস্থা সশরীরে সোকা পৌঁছাতে পারলে এ যাত্রা ধন্য! ডালপালা মড়মড়িয়ে ভেঙ্গে, গাছ উল্টে পড়ে, মাটি ধ্বসে গিয়ে, কাদায় খিচুড়ি পাকিয়ে, রাস্তায় বড় বড় বোল্ডার গড়িয়ে —যেন এক প্রেতপুরী! অদূরে একদল ইয়াকের গলায় বাঁধা ঘন্টার আওয়াজ শোনা যায়। রাস্তা এগিয়ে চলেছে রাথং-চু নদীকে বাঁহাতে রেখে। নদীর ওপারে সবুজ জঙ্গলের বুক চিরে একটি ক্ষীণকায় জলপ্রপাতের ধারা যেন একটি মেয়ের ঘন চুলের আড়ালে সরু চকচকে কানের দুল জ্বলজ্বল করছে। প্রায় দেড় ঘন্টা হাঁটার পর শেষমেষ সেই বহু চর্চিত পথ অবরোধকারী গাছটির সামনে পৌঁছানো গেল। সপ্তর্ষি করজোড়ে প্রণাম করলে। গাছের আয়তন যা আন্দাজ করেছিলাম তার তুলনায় অন্তত একশো গুন ভারী এবং জমকালো। পথ বলে আর অবশিষ্ট কিছু নেই! নানান ছোট বড় ধ্বস পেরিয়ে এগিয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব। যেন মনে হচ্ছে পৃথিবী উল্টে গিয়ে ভূপৃষ্ঠের তলদেশ উঠে এসেছে উপরে। পাহাড়ে বোল্ডার টপকে টপকে হেঁটে চলা যে কি ভয়ানক পরিশ্রমসাধ্য সে একমাত্র ভুক্তভোগী জানেন।
 

 
অনেক উপর থেকে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখি বাকি সদস্যরা দল বেঁধে সিগারেট খাচ্ছে। একটু জিরিয়ে নিতে পথের ধারে একটি পাথরের উপর কোনক্রমে বসলাম। জায়গাটি বেশ নিরিবিলি এবং মনোরম। মনে হল এই জঙ্গলের মধ্যে আমি ভীষণ একা। আশেপাশে কেউ কোথাও নেই। তবু এক অদৃশ্য চোখ যেন আমাকে অনুসরণ করছে। বিরাট উঁচু উঁচু পাইনের জঙ্গল ছাড়িয়ে যত উপরে উঠছি ছোট হয়ে আসছে গাছের উচ্চতা। মাথার উপর ফাঁকা হয়ে আসা ডালপালার বিস্তার ছাড়িয়ে দেখা যায় আরও উপরে নীল আকাশ। একটি ঢাউস বাজপাখি ডানা মেলে চিৎকার করতে করতে উড়ে যাচ্ছে এক আকাশ থেকে অন্য আকাশের পথে। আমার একাকিত্বের চারপাশে বিস্তর ফুটে উঠেছে প্রয়োজনের চেয়ে একটু বেশি সবুজ ফার্ন গাছের জঙ্গল।
 

কাদায় জুতো আটকে গেলে খুঁজে নিতে হয় অন্ধকার হাতড়ে। দূরে উপরে একটি টিমটিমে আশার আলো দেখতে পেয়ে প্রাণ চঞ্চল হয়ে উঠলো। পাথরে হাঁটু ফুটিয়ে, ডালপালার চড় থাপ্পড় খেয়ে, কাঁটার প্রেম সহ্য করে হাতড়ে হাতড়ে যখন সোকা ক্যাম্পে পৌঁছালাম ঘড়ির কাঁটায় রাত আটটা, উষ্ণতা হিমাঙ্কের কাছাকাছি

 
এই পথের চতুর্থ লোহার ব্রিজের সামনে এসে দাঁড়ালাম। এখানেই রাথং-চু নদীর সঙ্গে পূর্ব দিক থেকে এসে মিলিত হয়েছে প্রেক-চু নদী। ব্রিজের নিচ দিয়ে সে বয়ে যাচ্ছে আপন বেগে পাগল পারা স্রোতে। পথের ধারে ফুটে আছে নানান অজানা অচেনা অদ্ভুত দর্শন পাহাড়ি ফুল যাদের সঙ্গে আগে কোথাও আলাপ হয়নি। আমার সবিশেষ আগ্রহে তাদের না আছে অহংকার না আছে ভ্রুক্ষেপ। অতীন’দা এবং রথীন’দা প্রায় কাছাকাছি এসে পড়েছে। পুনরায় ক্যামেরা ঝলকে উঠল হাসিমুখে। ভাকিমের পথে বাকি রাস্তা কিন্তু বেশ খাড়াই। পথ চলতে বেশ দম লাগে। পথের বাঁকে একদল গাইড মালবাহকদের সঙ্গে বসে পড়লাম একই আসনে। ওরা নিজেদের মধ্যে ঠাট্টা তামাশায় মশগুল। গলা শুকিয়ে কাঠ। ব্যাগ নামিয়ে বেশ খানিকটা জল খেলাম। এখানে ওক গাছের গায়ে লেপটে থাকা পরজীবী গাছগুলি অহেতুক হলুদ পাতার আয়োজনে গড়ে তুলেছে বিভ্রান্তি অথচ বৈচিত্র্য। বেলা পাঁচটা নাগাদ দলের প্রায় সব সদস্যই যখন এক জায়গায় উপস্থিত, মনের আকাশে গুমোট মেঘ সম্পূর্ণ কেটে গেছে তখন। প্রাথমিক অস্বস্তি কাটিয়ে হাসি ঠাট্টা তামাশার রোল উঠলো আকাশ ছাড়িয়ে।
 
খাড়াই পথে ভাকিম পৌঁছাতে সন্ধ্যে নেমে এলো। উপরি আয়োজনে হাড় কাঁপানো কনকনে ঠান্ডা। আর এক মুহূর্ত বসবার অবকাশ নেই। অন্ধকার গিলে খেতে আসছে। হাতড়ে চলা অন্ধকার পথে জ্বলে উঠেছে হেড টর্চের নিভু নিভু আলো। গাইডের সাবধান বানী উড়ে এলো– “বিপদসংকুল এই পথে বন্য জন্তু-জানোয়ারের আক্রমণ অস্বাভাবিক নয়।” শোনার পর থেকে আমরা প্রায় মুখে কুলুপ এঁটে চলেছি অজানার পথে। কাদায় জুতো আটকে গেলে খুঁজে নিতে হয় অন্ধকার হাতড়ে। দূরে উপরে একটি টিমটিমে আশার আলো দেখতে পেয়ে আমাদের প্রাণ চঞ্চল হয়ে উঠলো। পাথরে হাঁটু ফুটিয়ে, ডালপালার চড় থাপ্পড় খেয়ে, কাঁটার প্রেম সহ্য করে হাতড়ে হাতড়ে যখন সোকা ক্যাম্পে পৌঁছালাম ঘড়ির কাঁটায় রাত আটটা, উষ্ণতা হিমাঙ্কের কাছাকাছি। এখানে কাঠের তৈরি বাড়িতে ঢালাও ডরমিটারি ব্যবস্থায় অথবা টেন্টে থাকবার দু’রকম সুযোগ আছে। আমাদের থাকার ব্যবস্থা হলো টেন্টে এবং খাওয়া দাওয়া ডরমিটারি কিচেনে। আকাশে ভাসমান সাদা মেঘের বৈচিত্রে এবং পূর্ণিমার হিরন্ময় আলোয় ভেসে যাচ্ছে চরাচর। মুক্তির এই অনাবিল আনন্দের কাছে ভয় দুঃখ অভিমান সব তুচ্ছ। ‘ডর কে আগে জিত হ্যায়’ এই প্রবাদকে সত্যি করে আমরা সবাই কাঁধে কাঁধ রেখে যে ছবি তুললাম সেটি বাঁধিয়ে রাখার মতো ঐতিহাসিক। আমাদের ছবির ব্যাকগ্রাউন্ডে জ্যোৎস্নার আলোয় কাঞ্চনজঙ্ঘার বরফ গলে গলে পড়ছে যেন রুপোলি বন্যার আবহ সংগীত।
 

ক্রমশ…

আগের পর্ব পড়ুন:

ধারাবাহিক: পাহাড়িয়া পথে পথে। পর্ব ৯


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!