- দে । শ
- আগস্ট ২৬, ২০২৩
প্রিগোজিনের মৃত্যু ঘিরে ধোঁয়াশা । আবারও কি ফিরে আসবেন ওয়াগনার প্রধান ?
প্রিগোজিন-এর মৃত্যু নিয়ে এবার জল্পনা এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে মনে করা হচ্ছে এবার কি মৃত প্রিগোজিন ফিরে আসতে চলেছেন? রাশিয়ার ভাড়াটে বাহিনী সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ওয়াগনারের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিন গত বুধবার মস্কো থেকে সেন্ট পিটার্সবার্গে যাওয়ার পথে বিমান বিপর্যয়ে মারা গেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। রাশিয়া এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রিগোজিন-এর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেনি।
প্রিগোজিন যে বিমানে যাচ্ছিলেন তাতে কি মদের বাক্সে বোমা রাখা ছিল? এস-৩০০ ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা দিয়ে প্রিগোজিন-এর বিমান কি ধ্বংস করা হয়েছে? প্রিগোজিন নিজেই কি তাঁর মৃত্যুর ভুয়া খবর ছড়াচ্ছেন? প্রিগোজিন-এর বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু নিয়ে এমনই নানা প্রশ্ন যখন রহস্য সৃষ্টি করছে তখন আবার নতুন রহস্যের জন্ম দিয়ে প্রশ্ন উঠছে, “এবার কি মৃত প্রিগোজিন ফিরে আসছেন?” ।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে দুই মাস আগে প্রিগোজিনের নেতৃত্বে স্বল্পস্থায়ী ব্যর্থ অভুত্থান বেশ বিচলিত করে তুলেছিল। এমনকি গত বৃহস্পতিবার এক টেলিভিশন ভাষণে সেই পুতিন আবার ভাগনার প্রধানের ‘মুত্যুতে’ তাঁর পরিবারের প্রতি শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন। পুতিন বলেছিলেন, “ভাগনার প্রধান একজন মেধাবি মানুষ ছিলেন, তবে তিনি কিছু ভুল করেছেন।”
ইতিহাস বলছে, প্রিগোজিনের মৃত্যুর খবর বিশ্বাস করতে গেলে আরও ভাবতে হবে। প্রশ্ন হচ্ছে কেন এই ভাবনা? এই প্রসঙ্গে অতীতের একটি ঘটনার দিকে তাকালে প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে। কারণ, উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে প্রিগোজিন ‘নিহত’ হয়েছেন, এমন খবর এবারই প্রথম রটেছে তা নয়। ২০১৯ সালে আরেকবার সংবাদের শিরোনামে এসেছিল যে, আফ্রিকার দেশ কঙ্গোতে সামরিক বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ভাগনার প্রধান প্রিগোজিন নিহত হয়েছেন। ওই সময় তাঁর সঙ্গে বিমানে আরও আটজন আরোহী ছিলেন। সেই সময় মাত্র তিন দিনের মধ্যে তিনি আবার সুস্থ ও “জীবিত” অবস্থায় ফিরে এসেছিলেন।
তাই প্রিগোজিনের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, দুর্ঘটনা কবলিত বিমানের মালিক তিনি, সেটা ঠিক। তবে ওয়াগনার প্রধান সাধারণত নিজের সেই বিমানে না চড়ে অন্য বিমানে বেশি চড়েন।
এদিকে এই প্রসঙ্গে লন্ডনভিত্তিক চিন্তক প্রতিষ্ঠান চাথাম হাউসের কির গাইলস সতর্ক করে বলেছেন, বিধ্বস্ত বিমানের আরোহির তালিকায় একজনের নাম ইয়েভগেনি প্রিগোজিন থাকলেও তিনিই যে আসল ওয়াগনার প্রধান, সেটি নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। কারণ, একটা কথা প্রচলিত আছে, তাঁর সফর নিয়ে অন্যদের মধ্যে, বিশেষ করে শত্রুদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করতে সহকর্মীদের কেউ কেউ নিজের নাম পরিবর্তন করে ইয়েভগেনি প্রিগোজিন সেজে বিমানে ভ্রমণ করেন।
তবে এই বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে ব্যাপক জল্পনাকল্পনা ছড়িয়ে পড়েছে, যে অঞ্চলে ওয়াগনারের মালিকানাধীন বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে, সেই অঞ্চলে ফ্লাইট রাডারে আরেকটি বিমান ধরা পড়েছে, যা আঁকাবাঁকাভাবে আকাশে উড়ছিল।
ফ্লাইট ডেটার উল্লেখ করে অসমর্থিত একটি সূত্র বলছে, ওয়াগনারের বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার পরপরই দ্বিতীয় বিমানটি মস্কোয় ফিরে আসে।
যদিও রুশ কর্তৃপক্ষ বলেছে, বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ১০ আরোহীর মধ্যে ওয়াগনার প্রধানও ছিলেন। কিন্তু নিহত ব্যক্তিদের নাম-পরিচয়ের বিষয়ে এখনও আনুষ্ঠানিক ভাবে কোনও তথ্য নিশ্চিত করে জানায়নি তারা রুশ প্রশাসন।
ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রক শুক্রবার বলেছে, বিধ্বস্ত বিমানে ওয়াগনার প্রধান যে ছিলেন, এখনও সেই বিষয়ে এমন কোনও সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক পাশাপাশি বলছে, ‘খুব সম্ভবত’ প্রিগোজিন মারা গেছেন।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক এই প্রসঙ্গে বলেছেন, গোয়েন্দা তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, প্রিগোজিন ‘খুব সম্ভবত’ বিমানটিতে ছিলেন।
ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা ঘটনার তথ্য বিশ্লেষণ করে জানিয়েছে, বিস্ফোরণের কারণে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে এবং এই বিস্ফোরণ কেউ না কেউ অবশ্যই ঘটিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমের প্রশাসন প্রাথমিক তথ্য যাচাই করে বলেছেন, তাঁদের দৃঢ় বিশ্বাস, ‘খুব সম্ভবত’ বিমানে বিস্ফোরণের মূল লক্ষ্য ছিলেন ইয়েভগেনি প্রিগোজিন। আর এই বিস্ফোরণের সঙ্গে পুতিনের ‘সমালোচকদের চুপ করিয়ে দেওয়ার দীর্ঘদিনের ইতিহাসের’ সঙ্গে বেশ মিল পাওয়া যাচ্ছে। তবে এসবের পরেও প্রশ্ন উঠছে, এবারও কি মৃত প্রিগোজিন ফিরে আসবেন?
❤ Support Us







