- এই মুহূর্তে বি। দে । শ
- জুন ১৮, ২০২৪
২৪ বছর পর পুতুনের দু দিনের উত্তর কোরিয়া সফর, ত্রিমুখী সম্পর্ক বলীয়ানেই নজর। দক্ষিণ চিন সাগরে, চতুর্দেশীয় নৌমহড়ায় চিনপন্থী শক্তি জোটকে পাল্টা চাপ বাইডেন প্রশাসনের
রুশ রাষ্ট্রপতি পুতিনের উত্তর কোরিয়া সফর ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে নতুন মাত্রা যোগ করতে চলেছে । যুদ্ধ সহায়তার জন্য উত্তর কোরিয়ার একনায়ক কিম জংকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। পিয়ংইয়ঙ্গে এই সংক্রান্ত একটি বৈঠকে যোগ দিতে দু দিনের সফরে উত্তর কোরিয়া পৌঁছলেন পুতিন। ২০০০ সালের পর আজই প্রথম সেখানে যাচ্ছেন রুশ রাষ্ট্রপ্রধান।
উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি (কেসিএনএ) প্রকাশিত একটি নিবন্ধে পুতিন লিখেছেন, ইউক্রেনের সঙ্গে সম্মুখ সমরে উত্তর কোরিয়া যেভাবে সমর্থন জানিয়েছে, আমরা তার প্রশংসা করি।
যদিও উত্তর কোরিয়া বৈশ্বিক রাজনীতির স্রোতে গা ভাসায়নি। নিজস্ব রাজনৈতিক মনোভাব, যুদ্ধ , অস্ত্রসংক্রান্ত কার্যাবলীতে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞাকেও পাত্তা দেয়নি কিম জং প্রশাসন। মার্কিন বিরোধিতায় চিরকালই তারা রাশিয়ার অন্যতম সমর্থক। বিশেষত জি -৭ সম্মেলনে আমেরিকার সরাসরি ইউক্রেনকে সমর্থন জানানোর বিষয়টিকে ভালো চোখে দেখেনি রাশিয়া। কিম জং উনের দেশ রাশিয়াকে অস্ত্র সহয়তা করছে, পরিবর্তে রাশিয়া উন্নত স্যাটেলাইট সাপোর্ট যোগাচ্ছে উত্তর কোরিয়াকে। এবং এই পুরো বোঝাপড়াটাই ঘটছে জাতিসংঘকে অন্ধকারে রেখে। দীর্ঘদিন ধরেই এনিয়ে উষ্মা প্রকাশ করছে দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন। যদিও এনিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি উত্তর কোরিয়ার প্রশাসন । বাইডেন প্রশাসনের দাবি, যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইউক্রেনে কোরিয়ান ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যবহারের প্রমান পাওয়া গেছে ।
গতবছর রুশ উত্তর কোরিয়া দ্বিপাক্ষিক সমঝোতাকে বলীয়ান করতে বৈঠকে বসেছিলেন পুতিন এবং কিম। উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানকে সেই মুলাকাতে একটি অরাস সেনেট লিমোজিন উপহার দিয়েছিলেন পুতিন। চিনের পাশাপপাশি উত্তর কোরিয়াকে নিজেদের পক্ষে টানতেই পুতিনের এই কূট কৌশল বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, রুশ ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে বহির্দেশীয় শক্তিতে নিজেদের সপক্ষে রাখতে, জাতিসংঙ্ঘের কোরিয়ায় বিলাস দ্রব্য প্ররণের নিষেধাজ্ঞাকেও গুরুত্ব দিচ্ছে না মস্কো।বেইজিং, পিয়ংইয়ং এর সঙ্গে মস্কো, এই ত্রিশক্তি জোটকে জোরদার করতেই পুতিনের এই সাম্প্রতিক সফর বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা ।
পুতিনের সাম্প্রতিক উত্তর কোরিয়া সফর নিয়ে ইতিমধ্যেই নিজেদের অস্বস্তি প্রকাশ করেছে ওয়াশিংটন। মার্কিন ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র জন কিরবি জানিয়েছেন, মস্কো ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে ‘মধুর’ সম্পর্ক যথেষ্ট উদ্বেগজনক। সংবাদমধ্যমে তিনি বলেছেন, রাশিয়া উত্তর কোরিয়ার ব্যালিস্টিক মিশাইল এখনও যুদ্ধে ব্যবহার করে চলেছে। যদিও তার বহুল প্রভাব পড়েছে এমন দাবি করেননি কিরবি। তবুও রুশ আর উত্তর কোরিয়ার এই কার্যকলাপ মার্কিন র্যাডারে রয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
অন্যদিকে দক্ষিণ চিন সাগরে আমেরিকা, কানডা, জাপান এবং ফিলিপিন্স গত দুদুন ধরে সেনা মহড়া শুরু করেছে । চতুর্দেশীয় রণতরীর মহড়াকে ভালো চোখে দেখছে না চিন ।
দক্ষিণ চিন সাগরে লাল ফৌজের একাধিপত্যের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই ফিলিপিন্স, তাইওয়ান, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ব্রুনেইয়ের প্রশাসকরা ক্ষুব্ধ । এরমধ্যে দক্ষিণ চিন সাগরে ভূরাজনৈতিক দিক থেকে, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দ্বীপ সেকেন্ড থমাস শোলে । চিনা প্রেসিডেন্ট সি জিন পিং প্রশাসন এটা নিজেদের আয়ত্তে রাখতে চায়, দেশের নিরাপত্তার প্রশ্নে সেখানে লাল ফৌজের খবরদারি মেনে নিতে নারাজ ফিলিপিন্স । এনিয়ে গত দুদশক দর্যেই দুই দেশের মধ্যে ঠান্ডা লড়াই অব্যহত । অন্যদিকে দক্ষিণ চিন সাগর আন্তর্জাতিক পণ্য পরিবহনের এক গুরুত্বপূর্ণ করিডর । সেখানে চিনা অধিপত্যকে এবার সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানাল চতুর্দেশীয় নৌমহড়া, ফলে বাড়বে নোনা জলের উত্তাপ । একদিকে রাশিয়া, চিন এবং উত্তর কোরিয়া যখন ক্রমশ নিজেদের কূটনৈতিক জোটকে বাড়াচ্ছে, সেখানে জাপানের সহায়তায়, চিনা খবরদারিতে ক্ষুব্ধ দ্বীপগুলোকে নিয়ে পাল্টা চাপ তৈরির পরিকল্পণা করছে ওয়াশিংটন বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা ।
❤ Support Us