- দে । শ প্রচ্ছদ রচনা
- জুন ৮, ২০২৪
পরিসংখ্যানের করুণ চিত্র, সাম্প্রদায়িক বহুত্বে শূণ্য এনডিএ জোটের সাংসদ তালিকা

২০২৪ লোকসভা নির্বাচন জয়ের পর, প্রথম এনডিএ জোট বৈঠকে, নিজের বক্তৃতায় দেশের বহুত্ব আর বৈচিত্রের কথা বললেও কার্যক্ষেত্রে তার প্রতিফলন নেই। সেটা আবারও স্পষ্ট হল বিজেপি ও জোট শরিকদের জয়ী সাংসদদের নাম তালিকায়।
দেশের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনে জয়ী এনডিএ সাংসদদের তালিকায় হিন্দু ব্যতীত একজনও ভিন্নধর্মীবিলম্বী নেই। হিন্দুত্বকে ইস্যু করেই নির্বাচনে জয়ের লক্ষ্য স্থির করেছিল বিজেপি। এনিয়ে নির্বাচন চলাকালীন একাধিকবার বিরোধীদের নিশানা হয়েছে পদ্ম শিবির। জনরায়েও তার প্রতিফলন পরেছে। সংসদে সংখ্যা গরিষ্ঠতা পায়নি বিজেপি। এমনকী ভোটের আগে তড়িঘড়ি করে অর্ধ সমাপ্ত রাম মন্দির উদ্বোধন করেও লাভ তুলতে পারেনি তারা । মুখ থুবড়ে পড়েছে অযোধ্যায়। আসন কমেছে উত্তরপ্রদেশে।
নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পর দেখা গেল, শুধু বিজেপি নয়, তার জোট শরিকদের তালিকাতেও একজনও মুসলিম, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ, শিখ সম্প্রদায়ভূক্ত জয়ী সাংসদ নেই। লোকসভা নির্বাচনের পর উঠে আসা পরিসংখ্যান বলছে, এনডিএ জোটের প্রার্থী তালিকায় এবার গুরুত্ব পেয়েছিল ব্রাক্ষণ্যবাদ । প্রায় ১৪.৯ শতাংশ উচ্চবর্গের হিন্দুদের টিকিট দিয়েছিল তারা। তার মধ্যে ১৪.৭ শতাংশ জয়ী হয়েছেন । রাজপুত এবং অন্যান্যদের মিলিয়ে প্রায় ৩৩.২ শতাংশ সাংসদ উচ্চবর্ণের। অনগ্রসর শ্রেণীর ( মারাঠা, জাঠ, লিঙ্গায়েত, পাতিদার, রেড্ডি, ভোক্কালিঙ্গা) থেকে সংসদ হয়েছেন ৪১.৯ শতাংশ। তফশিলি জাতি ও উপজাতির সাংসদ ২৪.১ শতাংশ।
দেশের বিরোধী জোটে জয়ী সাংসদদের মধ্যে উচ্চবর্ণের মানুষ ১২.৪ শতাংশ। অনগ্রসর শ্রেণীর প্রতিনিধিত্ব ৪২.৬ শতাংশ । তফশিলি জাতি ও উপজাতির সম্মিলিত উপস্থিতি ৯.৯ শতাংশ। মুসলিম জনপ্রতিনিধি ৭.৯ শতাংশ। খ্রিষ্টান ৩.৫, শিখ ৫ এবং অন্যান্য ১ শতাংশ।
নির্বাচনে বিজেপি হিন্দু ব্যতীত অন্য ধর্মাবিলম্বীদের জনপ্রতিনিধি হিসেবে সুযোগ না দিলেও তাদের শরিক দল গুলি থেকে মোট ০.৯ শতাংশ মুসলিম এবং ০.২ শতাংশ খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের প্রার্থী করেছিল। শিখ ছিলেন ০.২ এবং বৌদ্ধ সম্প্রদায় ভুক্ত প্রার্থী ছিলেন ০.৪ শতাংশ। কিন্তু কেউই জিততে পারেননি।
এপ্রসঙ্গে তামিলনাড়ুর কংগ্রেস সাংসদ মানিকাম ঠাকুর নিজের এক্স হ্যান্ডেলে একটি টুইট করেছেন । সেখানে তথ্য ও পরিসংখ্যান দিয়ে তিনি লিখেছেন, নবনির্বাচিত এনডিও জোটের সাংসদদের তালিকায় হিন্দু ব্যতীত একজনও ভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের প্রতিনিধিত্ব নেই, যা বহুত্ববাদী গণতন্ত্রের জন্য লজ্জার। প্রকৃত গণতন্ত্রে জনপ্রতিনিধিত্বে ধর্মীয় বৈচিত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ‘আঙ্কেলজি’ তা হতে দিতে চান না।
Not a single Muslim, Christian, Sikh, or Buddhist MP among the newly elected NDA MPs in the Lok Sabha.
Diversity and representation are crucial for a true democracy.
Uncleji won’t allow an inclusive India. Imagine the impact. #InclusiveIndia #LokSabhaElections pic.twitter.com/ixcdsXRXgf— Manickam Tagore .B🇮🇳மாணிக்கம் தாகூர்.ப (@manickamtagore) June 7, 2024
সম্প্রদায়গত বহুত্বহীন এনডিএ জোটের এই করুণ চিত্র প্রকাশ্যে আসতেই দেশ জুড়ে উঠেছে সমালোচনার ঝড়। বিজেপি জোট শরিকদের প্রার্থী তালিকায় সাম্প্রদায়িক বহুত্ব থাকলেও একজনও জয়ী হননি। এজন্য বিজেপির উগ্র হিন্দুত্বের রাজনৈতিক তাসকেই দায়ী করছেন বিরোধীরা। নির্বাচন চলাকালীন নরেন্দ্র মোদির মুখেও ভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ ভাষণের বিরোধিতা করে সরব হয়েছিলেন বাংলার মখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় থেকে শুরু করে বহু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। সেপ্রসঙ্গে মোদি প্রকাশও জনসভায় বলেছিলেন, উগ্র হিন্দুত্বের উপাসক নন তিনি, সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ তিনি করেন না। কেউ তা প্রমান করলে তিনি রাজনীতি থেকে অবসর নেবেন। গতকাল সংসদ সভাকক্ষেও ‘বহুত্বের মতামত’ এর কথা বলেছেন তিনি। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেশের ছবি যে বদলাচ্ছে না, তার প্রমাণই দিল হাত শিবিরের সাংসদ কতৃক প্রদেয় পরিসংখ্যান।
❤ Support Us