Advertisement
  • এই মুহূর্তে বি। দে । শ
  • জানুয়ারি ৩১, ২০২৫

বিতর্কের আড়াল ফাঁস। সুইডেনে খোঁজ মিলল প্ররোচকের দেহ

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
বিতর্কের আড়াল ফাঁস। সুইডেনে খোঁজ মিলল প্ররোচকের দেহ

ইসলামি ধর্মগ্রন্থ পুড়িয়ে প্রবল বিতর্কের মুখে পড়েন সালওয়ান মোমিকা ২৯ জানুয়ারি সুইডেনে একদল আততায়ী তাঁকে হত্যা করে। পুলিশ যথাসম্ভব দ্রুত তৎপর হয়ে ওঠে এবং নিহত অবস্থায় তাঁর দেহ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়।

সুইডেনে ২০২৩ সালে প্রকাশ্যে মুসলিমদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ পুড়িয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা তৈরি করেছিলেন দিয়েছিলেন ইরাকি বংশোদ্ভূত সালওয়ান মোমিকা। তাঁকে গুলি করে খুন করা হয়েছে। স্টকহোম জেলা আদালত বৃহস্পতিবার ধর্ম অবমাননার একটি মামলার রায় ঘোষণা স্থগিত করে দেয়। কারণ, সেই মামলার আসামী ছিলেন সালওয়ান মোমিকা। আদালতে উপস্থিত হওয়ার আগেই নিহত হয়েছেন তিনি।

সুইডেনের সরকারি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, বুধবার গভীর রাতে সোদারতালজের হবসজোয় সালওয়ান যেখানে থাকছিলেন, সেখান থেকেই তাঁর দেহ উদ্ধার করা হয়। তাঁর শরীরে গুলির ক্ষত রয়েছে। সুইডেনের স্টকহোম পুলিশ জানিয়েছে, বুধবার রাতে এক ব্যক্তিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এরপর হত্যাকাণ্ড সন্দেহে তদন্ত শুরু হয়। এতে জড়িত থাকার দায়ে অন্তত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী উলফ ক্রিস্টারসন। তিনি দাবি করেছেন, এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে বিদেশি শক্তির যোগসূত্র আছে। এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেছেন, দেশটির গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তদন্তে নেমেছে, কারণ নিশ্চিতভাবেই কোনো বিদেশি শক্তির জড়িত থাকার সম্ভাবনা আছে বলে মনে করছেন তারা। এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছেন দেশটির ভাইস প্রধানমন্ত্রী এবা বুশ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স -এ তিনি লিখেছেন, এটি আমাদের মুক্ত গণতন্ত্রের জন্য হুমকি।

৩৮ বছর বয়সী মোমিকার হত্যার ঘটনায় আবার পুরনো বিতর্ক ফিরে এসেছে। ২০২৩ সালে সুইডেনের স্টকহোম সেন্ট্রাল মসজিদের সামনে ইসলাম ধর্মের পবিত্র ধর্মগ্রন্থে অগ্নিসংযোগ করেন মোমিকা। সেই ঘটনায় বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ওই ঘটনায় বিশ্বের একাধিক মুসলিম অধ্যুষিত দেশ প্রবল অসন্তোষ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে। এমনকী, তাঁর এই কাণ্ডের জেরে একাধিক দেশে দাঙ্গা ও অশান্তি পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে বলে অভিযোগ। তারপরেও একাধিকবার একই কাজ করে খবরের শিরোনামে আসেন তিনি।
ঘটনার জেরে সুইডেনের আদালতে মামলা হয়। মামলার শুনানি চলাকালীন সালওয়ান দাবি করেন, তাঁর লড়াইয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে ইসলাম ধর্মাবলম্বী বা মুসলমানদের বিরুদ্ধে নয়। তিনি ধর্মগ্রন্থ পুড়িয়ে সুইডেনের মানুষকে গ্রন্থের বার্তাগুলি থেকে আগলে রাখতে চেয়েছেন। সুইডেনের পুলিশ কেন বিতর্কিত বিক্ষোভ প্রদর্শনের অনুমতি দিয়েছিল, সে নিয়েও কম সমালোচনা হয় নি। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছিলেন, যারা পবিত্র ধর্মগ্রন্থের অপমান করবে, তাদের কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হওয়া উচিত। তিনি দাবি করেছিলেন, ‘সুইডেন মুসলিম বিশ্বের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য নেমেছে।’ বিতর্কিত ঘটনার জেরে সুইডেনের অভিবাসন কর্তৃপক্ষ মোমিকাকে দেশ থেকে বিতাড়িত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু, ইরাকে তাঁর প্রাণনাশের আশঙ্কা ছিল। ফলে তাঁকে ‘নিজের দেশ’ -এ পাঠানো হয়নি। পরিবর্তে তাঁকে ২০২৪ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত, নতুন অস্থায়ী আবাসিক পারমিট দেয় সুইডেনের সরকার।

সুইডেনে বসবাসরত সালওয়ান মোমিকা ছিলেন একজন ইরাকি অভিবাসী। ২০০৬ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে গৃহযুদ্ধে ইরাক যখন বিধ্বস্ত এবং আইএস-এর হাতে যখন ক্যাথলিকদের চরম নিপীড়নের শিকার হতে হচ্ছে, সেই সময়েই অ্যাসিরিয়ান প্যাট্রিয়টিক পার্টিতে যোগ দেন সালওয়ান এবং দলের মসুলের সদর কার্যালয়ে নিরাপত্তারক্ষীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সালে মসুলের দখল নেয় আইএসআইএস। সে সময় সন্ত্রাসবাদীদের ঠেকাতে ‘পপুলার মবিলাইজেশন ফোর্স’ (পিএমএফ)-এ যোগ দেন সালওয়ান। পরে ২০১৭ সালে জার্মানি পালিয়ে যান তিনি। ২০১৮-র এপ্রিল মাসে আশ্রয় চেয়ে পৌঁছান সুইডেনে। খ্রিস্টান থেকে নাস্তিক হওয়া মোমিকা নিজেকে একজন ‘উদার নাস্তিক সমালোচক এবং চিন্তাবিদ’ হিসেবে বর্ণনা করতেন। গত বছর আন্তর্জাতিক একটি বার্তা সংস্থাকে মোমিকা বলেছিলেন, তিনি সুইডেন ছেড়ে নরওয়ে চলে গেছেন এবং সেখানে আশ্রয় নেয়ার পরিকল্পনা করছেন।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!