- প্রচ্ছদ রচনা
- ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২২
রাষ্ট্রীয় সম্মানে গানের অশেষ রত্নকে বিদায় জানাল বাংলা।

গতকাল সন্ধ্যায় হাসপাতালে শুয়েই জীবনকে বিদায় জানালেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় । আপামোর বাঙালির গীতশ্রী আর সুরের ইন্দ্রধনু । পড়ে রইল তাঁর সত্তর বছরের সঙ্গীত জীবন, তাঁর সুর, আর আবহমান রোমান্টিক গানের সোনালি দিনগুলি ।
বুধবার দুপুরে রবীন্দ্র সদনে শায়িত তাঁর দেহ ফুলভারে ভরে উঠল। রাজনীতি ও সংস্কৃতি অঙ্গন থেকে শুরু করে সব স্তরের মানুষ তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এসে অশ্রুসিক্ত নয়নে দাঁড়িয়ে থাকলেন । মাইকে তখনও ক্রমাগত গাইছেন তিনি, এ শুধু গানের দিন, এ লগন গান শোনাবার—আমি যে জলসাঘরে, একের পর এক হৃদয়-ছোঁওয়া গান, বিরহের গান, আনন্দময় জীবনের গান।
মৃত্যুর খবর পেয়েই শোকসন্তপ্ত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গতকালই বলেছেন, খুব স্যাড, এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না সন্ধ্যাদি নেই। ওঁকে আমি দিদির মতো দেখতাম। একে একে শতাব্দীর সবাই চলে গেলেন। সন্ধ্যাদি ছিলেন ভারতের রত্ন। কোভিড থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন । সোমবার আমি ওঁর অপারেশনের কথা জানতে পারি। ব্লাডপ্রেশার, হার্ট সব ঠিকই ছিল। হঠাৎ কী হয়ে গেল! মহালয়ার দিন ‘জাগো বাংলা’-র অনুষ্ঠানে প্রতি বছর আসতেন । গাইতেন, সেদিন অন্য কাউকে গাইতে দেওয়া হত না। একাই তিনি সবাইকে মুগ্ধ করে দিতেন । মনে হত ওই সন্ধ্যাদি আগের ওই সন্ধ্যাদিই গাইছেন ।
উত্তরবঙ্গ থেকেই মুখ্যমন্ত্রী তাঁর সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন, পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় প্রয়াত গ্রীতশ্রীকে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হবে । আজ উত্তরবঙ্গ থেকে সরাসরি রবীন্দ্রসদনে চলে আসেন মমতা। সেখানে মন্ত্রিসভার বিভিন্ন সদস্য, সাংসদ, বিধায়ক, বিভিন্ন দলের রাজনীতিক এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনের গুণীদের সঙ্গে কথা বললেন।
রবীন্দ্রসদন থেকে কেওড়াতলার উদ্দেশ্যে শোকমিছিল বেরোল। স্তব্ধ মুখ, অশ্রু ভেজা চোখ রাস্তা দিয়ে হাঁটছে শকটবাহী নিথর সন্ধ্যার দেহ এগোচ্ছে । মিছিলের অগ্রভাগে খোদ মুখ্যমন্ত্রী, মন্ত্রী ও সঙ্গীতশিল্পী ইন্দ্রনীল সেন, মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, সাংসদ শান্তনু সেন সহ অনেকেই পায়ে পায়ে শশ্মানের দিকে এগোলেন । রাস্তার দুপাশে ভিড় । কিছুক্ষণ থমকে গেল মধ্য ও দক্ষিণ কলকাতার যান । কেওড়াতলা মহা শশ্মানের সামনে সযত্নে নামানো হল দেহ। গান স্যালুট দিয়ে শেষ সম্মান জানান হবে তাঁকে। কিছুক্ষণ পরেই সবার প্রিয় সন্ধ্যাদি মর্ত্য ছেড়ে রওনা দেবেন অমর্ত্যের পথে ।
রবীন্দ্রসদনে সন্ধ্যায় দেহে মমতার শ্রদ্ধার ফুল ।
যতদিন বাংলা ভাষা থাকবে, বাংলা গান থাকবে ততদিন জেগে রইবেন সন্ধ্যা । আমাদের সুখে, আমাদের দুঃখে । আবহমান বাঙলার তারুণ্যের রোমান্টিকতার সঙ্গী হয়ে। মৃত্যুর দিন কয়েক আগে পদ্মশ্রী খেতাব দিয়ে তাঁকে যেভাবে হেয় করা হল, হাসপাতালে যাওয়ার আগেই তা প্রত্যাখ্যান করে মোক্ষম জবাব দিয়েছিলেন গীতশ্রী । আমাদের স্মৃতি ছুঁয়ে যুগ যুগ ধরে ওই অপমানের উত্তর দেবে তাঁর চিরায়ত গান। তাঁর সুরের ঐশ্বর্য ।
❤ Support Us