- মা | ঠে-ম | য় | দা | নে
- এপ্রিল ১৫, ২০২৪
হাজির মন্ত্রী কুক স্ট্রেট জয় করে কালনায় ফিরে অভিনন্দনের জোয়ারে ভাসছে সায়নী

মেয়ের ইংলিশ চ্যানেলে নামার খরচ জোগাতে নিজের মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুকেই বন্ধক দিতে হয়েছিল। তাতেও দমেননি কালনা শহরের বারুইপাড়ার বাসিন্দা পেশায় শিক্ষক রাধেশ্যাম দাস। সেই মেয়ে সায়নী দাস এক এক করে পাঁচখানা আন্তর্জাতিক চ্যানেল পেরল। সায়নীর পাখির চোখ সপ্তসিন্ধু জয়। তার অঙ্গ হিসেবে চতুর্থ ‘সিন্ধু’ নিউজিল্যান্ডের কুক স্ট্রেইট চ্যানেল সবে জয় করেছেন কালনার জলপরি সায়নী। সেখান থেকে বারুইপাড়ার বাড়িতে ফিরে অভিনন্দনের জোয়ারে ভাসছেন সায়নী। পাড়া-পড়শি, আত্মীয়স্বজনতো বটেই ভোট প্রচারের ব্যস্ততার মাঝে সায়নীকে অভিনন্দন জানাতে হাজির মন্ত্রী স্বপন দেবনাথও। বললেন, ‘নানারকম প্রতিকূলতা জয় করে কালনার সায়নী আজ শুধু দেশের নয়, এশিয়া মহাদেশের গর্ব। সায়নীর সপ্তসিন্ধু পেরনো স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। সায়নীকে দেখে সাঁতারের প্রতি আগ্রহ বাড়ুক, এটাই চাই।’ সেইসঙ্গে সবরকম সাহায্যেরও প্রতিশ্রুতি দিলেন মন্ত্রী।
সায়নীর বাবা তথা প্রশিক্ষক রাধেশ্যাম দাস ও মা রূপালি দেবীকে নিয়ে কালনার বারুইপাড়ার নিজের বাড়িতে ফেরার খবর ছড়াতেই সায়নীর বাড়ির উঠোনে রথের মেলা। কনকনে ঠাণ্ডা জলে সাঁতার কাটার অভিজ্ঞতা শুনতে চাইছেন সকলেই।
সায়নীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল ২ এপ্রিল সকাল ৮.২২ মিনিটে জলে নামে সায়নী। ২৯.৫ কিমি দীর্ঘ কুক স্ট্রেট চ্যানেল সাঁতরে পার হতে তার সময় লাগে ১১ ঘন্টা ৫১ মিনিট। তিনি বলেন, ‘এই চ্যানেলগুলির জল প্রচন্ড ঠাণ্ডা। সেই জলে সাঁতার কাটাটাই একটি চ্যালেঞ্জ। এছাড়া এখানকার পরিবেশের সঙ্গে অন্য দেশের পরিবেশে গিয়ে সাঁতার কাটা খুবই শ্রমসাধ্য।’ তবু সপ্তসিন্ধু জয়ে অবিচল সায়নী।
৫টি চ্যানেল পেরনো হল। ইংলিশ চ্যানেল, ক্যাটলিনা, মলোকাই, রটনেস্ট আর কুক। তবে রটনেস্ট সপ্তসিন্ধুর অন্তর্ভুক্ত নয়। সায়নীর পরবর্তী লক্ষ্য আয়ারল্যান্ডের নর্থ চ্যানেল। এই চ্যানেলটি জয় করলে এশিয়ার প্রথম মহিলা হিসেবে ৫টি চ্যানেল জয়ের কৃতিত্ব অর্জন করবেন সায়নী। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগস্ট মাসে সেই চ্যানেলে নামবেন তিনি। তার আগে সেখানে যদি ৩ মাস সেই হিম জলে প্র্যাকটিস করা যেত, অনেকটাই সুবিধা হত বলে জানিয়েছেন ‘খেলাশ্রী’ সম্মানে ভূষিত সায়নী। সেই সূত্রেই উঠে এল স্পনসরের প্রসঙ্গ। কারণ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চ্যানেলগুলোতে নামতে গেলে খরচ হয় প্রচুর। ব্যক্তিগত বা সরকারি স্পনসর পেলে সেখানকার আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে কিছুদিন আগে গিয়ে ঘাঁটি গাড়া যায়।
সায়নীর কৃতিত্বের সিংহভাগ দাবিদার হচ্ছেন তার বাবা তথা কোচ রাধেশ্যাম দাস। তিনি বলছিলেন, ক্রিকেট ও ফুটবল ছাড়া অসংখ্য খেলা আমাদের দেশে আছে। সেগুলিতেও প্রতিভার অভাব নেই। এইসব খেলার প্রসার ও খেলোয়াড়দের পাশে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার যদি দাঁড়ায়, তাহলে বিশ্বের ক্রীড়া মানচিত্রে বারবার ভারতের নাম উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। তবে স্থানীয়ভাবে পারিবারিক বন্ধু সুরজিৎ বকসি, সমাজকর্মী সুশীল মিশ্র, কয়েকটি ক্লাব সায়নীর পাশে দাঁড়িয়েছেন। পাশে ছিলেন বিশিষ্ট চিকিৎসক কালনার প্রাক্তন পুরপ্রধান গৌরাঙ্গ গোস্বামী। তিনি প্রয়াত হলে কী হবে, গৌরাঙ্গবাবুর শুভেচ্ছা সবসময় অনুভব করে কালনার জলকন্যে সায়নী ও তার পরিবার।
❤ Support Us