- দে । শ
- মে ১৮, ২০২৩
পাটনার রায়ে হস্তক্ষেপ নয়, জানিয়ে দিল শীর্ষ আদালত।জাতসুমারি নিয়ে এবার কী পদক্ষেপ নীতিশ সরকারের

বিহারে জাতভিত্তিক জনগণনা চালু করার আর্জি বৃহস্পতিবার খারিজ করল সুপ্রিম কোর্ট। জাতভিত্তিক জনগণনা মুলতুবি রাখার জন্য পটনা হাই কোর্টের দেওয়া নির্দেশের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে বিহার সরকারের তরফে শীর্ষ আদালতে যে আবেদন জানানো হয়েছিল, বৃহস্পতিবার দেশের শীর্ষ আদালত সেই আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অভয় এস ওকা এবং রাজেশ বিন্দালের বেঞ্চ তাঁদের পর্যবেক্ষণে প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘কারা তথ্য সংগ্রহ করছে? সমীক্ষা হোক বা সুমারি, আমরা আগে প্রক্রিয়াটি পর্যালোচনা করে দেখব।’’
গত ৪ মে পটনা হাই কোর্ট, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের সরকারকে জাতভিত্তিক জনগণনা কর্মসূচি স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছিল। স্থগিতাদেশ জারি করে হাই কোর্ট তার পর্যবেক্ষণে বলেছিল, ‘‘এমন জাতভিত্তিক জনগণনার অধিকার শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় সরকারের রয়েছে।’’ পটনা হাই কোর্টের ওই রায়ের পর নীতিশ বলেছিলেন, ‘‘জাতভিত্তিক জনগণনার কাজ হলে পিছিয়ে পড়া শ্রেণিগুলির সুবিধা হত।’’ সেই সঙ্গে পটনা হাই কোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদনের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন নীতিশ কুমার ।
গত নভেম্বরে আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা মানুষদের জন্য সরকারি চাকরি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১০ শতাংশ আসন সংরক্ষণের জন্য সুপ্রিম কোর্ট সিলমোহর দেওয়ার পরেই দেশ জুড়ে জাতভিত্তিক জনগণনার দাবি তুলেছিলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার। এর পরই বিহারে দ্রুত জেডি (ইউ)-আরজেডি-কংগ্রেস-বামেদের ‘মহাগঠবন্ধন’ সরকার কাজ শুরু করে জাতভিত্তিক জনগণনার। তাদের এই কর্মসূচির পক্ষে আওয়াজ তুলে, জাতীয় স্তরে জাতিভিত্তিক জনগণনার দাবি তুলে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দেন সর্ব ভারতীয় কং সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। কর্ণাটক নির্বাচনের আগে, সে রাজ্যে প্রচারে গিয়ে রাহুল গান্ধিও এই দাবিতে সরব হন। এবিষয়ে কেন্দ্রের উদাসীনতা নিয়ে নরেন্দ্র মোদির সমালোচনাও করেন তিনি। বস্তুত, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের আগেই গত ৬ জুন নীতিশ কুমারের সরকার জাতভিত্তিক জনগণনার বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল। কিন্তু পটনা হাই কোর্টের রায়ে তা থমকে যায়।
এর পর বিহার সরকারের সেই পদক্ষেপকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মামলা দায়ের হয়েছিল পটনা হাই কোর্টে। আবেদনকারী পক্ষের দাবি ছিল, নীতিশ কুমার সরকারের এই পদক্ষেপ “বৈষম্যমূলক এবং অসাংবিধানিক”। এই পদক্ষেপ সংবিধানের মৌলিক অধিকার এবং ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদে বর্ণিত সমতা ও সাম্যের অধিকারের পরিপন্থী বলেও অভিযোগ করেন আবেদনকারীদের। বিহারে জাতভিত্তিক জনগণনার প্রথম পর্ব ৭ থেকে ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত হয়েছিল। ১৫ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া দ্বিতীয় পর্ব ১৫ মে পর্যন্ত চলার কথা ছিল৷ কিন্তু তার আগেই এই জাতভিত্তিক জনগণনায় স্থগিতাদেশ দেয় পটনা হাই কোর্ট।
সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশের পরে লোকসভা ভোটের আগে অনগ্রসর (ওবিসি) ভোটের লক্ষ্যে জেডি (ইউ) সভাপতি নীতিশ কুমার এবং তাঁর সহযোগী আরজেডির নেতা তথা উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব জাতভিত্তিক জনগণনার দাবিতে আরও চড়া স্বরে সরব হবেন বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত। আসলে জাতভিত্তিক জনসুমারি হলেই ওবিসিদের আসল সংখ্যা প্রকাশিত হয়ে যাবে।তাদের জন্য এখন ২৭ শতাংশ আসন সংরক্ষিত আছে। কিন্তু সেই সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৫০ শতাংশের কাছাকাছি বলে মনে করা হচ্ছে। জাতভিত্তিক জনগণনাতেও যদি এই পরিসংখ্যান উঠে আসে তাহলে স্বাভাবিক ভাবেই ওবিসিদের জন্য আরও বেশি সংরক্ষণের দাবি উঠবে। এই পরিস্থিতিতে সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও চাকরিতে অসংরক্ষিত (জেনারেল) আসন আরও কমার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে মেধার উপর আঘাত আসবে বলে মত জাতভিত্তিক জনসুমারি বিরোধীদের। তবে বিহার সরকার বলছে,জাতি-ভিত্তিক তথ্য সংগ্রহ সংবিধানের ১৫ এবং ১৬ অনুচ্ছেদের অধীনে একটি সাংবিধানিক আদেশ। তাই এটা করতে বাধা কোথায়?
❤ Support Us