Advertisement
  • খাস-কলম প্রচ্ছদ রচনা
  • মে ১৬, ২০২৩

কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী পদের দৌড়ে কি এগিয়ে সিদ্দারামাইয়া ?

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী পদের দৌড়ে কি এগিয়ে সিদ্দারামাইয়া ?

আজ মঙ্গলবার ঠিক হয়ে যাবে কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী পদে কে বসছেন। বিপুল জনাদেশ নিয়ে কংগ্রেস কর্নাটকে বিজেপিকে পরাজিত করে ক্ষমতায় এসেছে। তবে মুখ্যমন্ত্রীর আসন সিদ্দারামাইয়া না ডিকে শিবকুমার কে পেতে চলেছেন তা নিয়ে কিছুটা হলেও কংগ্রেস হাইকমান্ড চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন। কারণ এই পদের দাবিদার দু’জনই। তবে পরিস্থিতি বলছে কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী পদের দৌড়ে এগিয়ে সিদ্দারামাইয়া। তাই বলা যায় বৃহস্পতিবার কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে চলেছেন সিদ্দারামাইয়া।

তবে সিদ্দারামাইয়ার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার সম্বভবনা কেন বেশি তার কিছু অন্যতম কারণ আছে। সিদ্দারামাইয়া ১৩ মে  ২০১৩ থেকে ১৭ মে ২০১৮ পর্যন্ত কর্ণাটকে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন। তার আগে তিনি ১৯৯৬-এর ১৬ মে থাকে ১৯৯৯-এর ২২ জুলাই পর্যন্ত জনতা দলের হয়ে কর্ণাটকের উপমুখ্যমন্ত্রী ছিলেন।  ২৮ মে ২০০৪ থেকে ৫ অগাস্ট ২০০৫ সময়কালে জনতা দল সেকুলারের হয়ে কর্ণাটকের উপমুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন। কর্ণাটকের উন্নয়নমুখী ও স্থায়ী সরকার গঠনের জন্য তাঁর এই অভিজ্ঞতা কংগ্রেস অবশ্যই কাজে লাগবে। তাছাড়া তিনি কর্ণাটকে একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের নেতা। স্বচ্ছ ভাবমূর্তি, সরকার চালানোর অভিজ্ঞতাই তাঁকে কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে ডিকে শিবকুমারের থেকে এগিয়ে রেখেছে। কাজেই তাঁর কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী হওয়া এখন সময়ের অপেক্ষা বললে ভুল হবে না।

২০২৩-এর কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনে উন্নয়নকে হাতিয়ার করে দলকে নির্বাচনে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়ার উপযোগী করে তুলেছেন কর্ণাটক প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি ডিকে শিবকুমার। তবে রাজ্য শাসনের প্রায়োগিক অভিজ্ঞতায় তিনি সিদ্দারামাইয়ার চাইতে অনেক পিছিয়ে। দল পরিচালনা করা এবং রাজ্য শাসন করা দু’টো ভিন্ন ধরণের কাজ। এই দুই কাজের মধ্যে দল পরিচালনায় তিনি পারদর্শিতা দেখতে পারলেও রাজ্য শাসনে তিনি যে অভিজ্ঞ সেই নজর তাঁর রাজনৈতিক জীবনের ইতিহাসে নেই। তবে কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী পদে এই দুই আলাদা ক্ষেত্রে যোগ্য নেতার একজনকে বঞ্চিত হতেই হবে। এই কঠিন সিদ্ধান্তই মঙ্গলবার নিতে চলেছেন এআইসিসি সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে।

এদিকে সোমবার তিনি দিল্লি না গেলেও আজ মঙ্গলবার দিল্লি পৌঁছবেন ডিকে শিবকুমার। সোমবার সিদ্দারামাইয়া ও ডিকে শিবকুমার এই দুই নেতাকে দিল্লিতে ডেকে পাঠানো হলেও শিবকুমার সোমবার দিল্লি যাননি। সোমবার শিবকুমারের দিল্লি না যাওয়ার পিছনে কারণ ছিল ওইদিন  ছিল শিবকুমারের জন্মদিন। সিদ্দারামাইয়ার সঙ্গে তাই তিনি দিল্লি যেতে পারেননি। আর ফলে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা শুরু হয়েছিল, তাহলে কি মুখ্যমন্ত্রীত্বের দৌড়ে পিছিয়ে গেলেন ডিকে শিবকুমার? তবে সোমবার বিকেলে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি ডিকে শিবকুমার এই জল্পনা আরও উস্কে তিনি বলেন, “আমার নেতৃত্বেই কর্নাটকে কংগ্রেস জিতেছে। আমাদের দলের ১৩৫ জন বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁরাই আমার শক্তি।’’ ওই সাংবাদিক সম্মেলন থেকে  তিনি বলেন, ‘‘সিদ্দারামাইজিকে আমার শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।’’ এই ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বুঝিয়ে রেখেছেন, মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারের দাবি থেকে তিনি সরছেন না। সোমবার সন্ধ্যায় মল্লিকার্জুন খাড়গের  সঙ্গে তাঁর বাসভবনে দেখা করেন শিবকুমারের ভাই। মঙ্গলবার শিবকুমারের দিল্লি যাওয়ার কথা তিনি জানান।

কংগ্রেস কর্ণাটকে এবারের বিধানসভা নির্বাচনে একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের ১৫ জনকে প্রার্থী করেছিল। তার মধ্যে ৯জন জিতেছেন। এদের মধ্যে দু’জন এই বিশেষ সম্প্রদায়ের কংগ্রেস প্রার্থী দ্বিতীয়বারের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। এই বিশেষ সম্প্রদায়ের ১৩ শতাংশ ভোট রয়েছে কর্ণাটকে। কংগ্রেস নির্বাচনী ইস্তেহারে এই বিশেষ সম্প্রদায়ের চার শতাংশ কোটা পুনরুদ্ধারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তবে পূর্ববর্তী বিজেপি সরকার কর্ণাটকের বিধানসভা নির্বাচনের আগেই এই বিশেষ সম্প্রদায়ের ৪ শতাংশ  সংরক্ষণ বাতিল করে দেয়। এই বিশেষ সম্প্রদায়ের জয়ী কংগ্রেস বিধায়কদের কংগ্রেসের কাছে দাবি, মন্ত্রিসভায় তাঁদের অন্তত ৫ জন বিধায়ককে জায়গা দিতে হবে। এদের সন্তুষ্ট করতে কংগ্রেস যে তৎপর হবে সেটা নিশ্চিত করে বলা যায়। কারণ লিঙ্গায়ত ও ব্রাহ্মণদের ভোট কংগ্রেস এবারের কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনে পায়নি। যে সমস্ত অঞ্চলে কংগ্রেস জিতেছে সেই জয়ের ফলই সেটা বুঝিয়ে দিয়েছে। তাই বলা যায় কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস মূলত  বিশেষ ও পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের ভোটই পেয়েছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, হিজাব নিয়ে বিতর্ক এবং কেন্দ্রীয় সরকার একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের সংগঠন পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া বা পিএফআই -এর উপর পাঁচ বছরের নিষেধাজ্ঞা জারি করার পর কর্ণাটক রাজ্যের এটাই ছিল প্রথম বিধানসভা নির্বাচন। তাই বলা যায় ধর্মীয় সমীকরণকে কর্ণাটকের বিধানসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদি খুব ভালো ভাবে কাজে লাগাতে পারেননি, যদিও তিনি প্রচারে গিয়ে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক প্রচার চালিয়েছেন। এই অবস্থায় কংগ্রেস ১৩৫ আসন নিয়ে কর্নাটকে সরকার গড়ার জনাদেশ পেয়েছে। তাই এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রীর পদে কে বসতে চলেছেন সেই কাজ নিয়ে জটিলতা না বাড়িয়ে, সময় নষ্ট না করে, দ্রুত কর্নাটকে  মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থীর নাম ঘোষণা করতে হবে কংগ্রেসকে। নাহলে বিজেপি আবার দল ভাঙানোর খেলা খেলে বেরিয়ে যেতে যে পারে, সেই সম্ভাবনাও যে নেই তা নয়। এই সব দিক বিচার করে যা বোঝা যাচ্ছে তাতে বৃহস্পতিবার কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী পদে যে সিদ্দারামাইয়া শপথ নিতে চলেছেন সেটা বলাই যায়।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!