Advertisement
  • স | হ | জ | পা | ঠ
  • মে ৩১, ২০২২

মশারির চাপে পড়ে মশার আচরণে পরিবর্তন, বলছেন বিজ্ঞানীরা

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
মশারির চাপে পড়ে মশার আচরণে পরিবর্তন, বলছেন বিজ্ঞানীরা

ভারত-বাংলাদেশ সহ এশিয়ার বহু দেশে, আফ্রিকায় প্রতি বছর বহু মানুষ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়। বর্ষায় যত্রতত্র জমে থাকা জলে মশাদের বংশবিস্তারে সাহায্য করে। ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া আটতাকে প্রশাসন তৎপর । স্বাস্থকেন্দ্র সহ পাড়ায় পাড়ায় পোস্টার, মশারির ব্যবহার, মশা মারার স্প্রে, জল জমতে না দেওয়া ইত্যাদি ব্যবস্থার মাধ্যমে মশা মুক্ত অভিযান চলে । তবুও মশার কামড় খেতেই হয় । নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে ম্যালেরিয়ার জীবাণু বহনকারী মশা লোকজনকে যতো কামড় দিয়ে থাকে তার ৩০ শতাংশই ঘটে দিনের বেলায় এবং ঘরের ভেতরে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন এই তথ্যের কারণে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে প্রচলিত ব্যবস্থাগুলোর বিষয়ে নতুন করে ভাবনা চিন্তার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।বর্তমান কর্মসূচিতে রাতের বেলায় মশার কামড়ানোর ওপরেই জোর দেওয়া হয় যে কারণে রাতের বেলায় কীটনাশক মেশানো মশারি টানিয়ে ঘুমানোর কথা বলা হয়।

মশার কামড় থেকে বাঁচতে নিরাপদ আশ্রয়ে বালকটি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে ২০২০ সালে সারা বিশ্বে ২৪ কোটি দশ লাখ মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে এবং মৃত্যু হয়েছে সোয়া ছয় লাখেরও বেশি মানুষের, যার বেশিরভাগই ঘটেছে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে। এতোদিন ধারণা করা হতো যে মশা সাধারণ রাতের বেলায় কামড়ায়। তবে সম্প্রতি সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকের রাজধানী বাঙ্গুইতে এবিষয়ে একটি গবেষণা চালান বিজ্ঞানীরা, তাতেই উঠে আসে নতুন তথ্য। দিনেরবেলায় ও মশার কামড় থেকে ডেঙ্গি হওয়া সম্ভব ।

এক বছরেরও বেশি সময় ধরে শহরের চারটি স্থান থেকে এই গবেষণার জন্য স্বেচ্ছাসেবীরা মশা সংগ্রহ করেন। যখনই কোনো মশা তাদের গায়ের ওপর বসেছে, কামড়ানো শুরু করার আগেই তাদেরকে ধরে কাঁচের খাঁচার ভেতরে রেখে দেওয়া হয়।মশা সংগ্রহ করতে যাঁরা কাজ করেছেন তাঁদের ম্যালেরিয়া-প্রতিরোধী ওষুধ দেওয়ার পাশাপাশি আর্থিক সাহায্য করা হয়েছে।এই গবেষণার জন্য আটটি ভিন্ন প্রজাতির প্রায় আট হাজারের মতো মশা সংগ্রহ করা হয় যেগুলো ম্যালেরিয়ার জীবাণু বহন করছিল।

গবেষকরা বলছেন, মশার কামড়ানোর বেশিরভাগই ঘটে সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত। তবে তাঁরা এটা দেখে বিস্মিত হয়েছেন যে এর ৩০ শতাংশ ঘটে দিনের বেলাতেই এবং ঘরে, স্কুল-কলেজ আর অফিস আদালতের ভেতরে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন মশার আচরণ অনুযায়ী মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি সাজাতে হবে।

মশার এই আচরণে পরিবর্তন কারণ কী?
বাংলাদেশের কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার, যিনি দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে মশা নিয়ে গবেষণা করছেন, তিনি বলেছেন নানা চাপের কারণে একটি মশার আচরণে পরিবর্তন ঘটে থাকে।আমরা জানি ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা সকালে ও সন্ধ্যায় কামড়িয়ে থাকে। কিন্তু সম্প্রতি আমার এক গবেষণায় দেখেছি এডিস মশা এখন রাতেও কামড়ায়। এর অর্থ তার আচরণে পরিবর্তন ঘটেছে । তাই এই পরিবর্তনের কথা মাথায় রেখে মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি সাজাতে হবে।

বিজ্ঞানী কবিরুল বাশার বলেন, এনোফিলিস বাইমাইর আচরণে এতোদিন দেখা গেছে যে এটি বনভূমির আশেপাশে পাহাড়ি অঞ্চলে বেশি থাকে এবং এটি ঘরের বাইরে কামড়াতে পছন্দ করে। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে এই মশাটির আচরণে পরিবর্তন ঘটছে। এখন এটি ঘরে প্রবেশ করেও কামড় বসাচ্ছে।

পরিবেশগত কিছু পরিবর্তন ঘটছে । বনভূমি উজাড় হয়ে যাওয়ার কারণে এই মশাটিরও আচরণগত কিছু পরিবর্তন ঘটছে।
অন্যদিকে এনোফিলিস মিনিমাস প্রজাতি যেটি বন জঙ্গলে যেসব বাড়িঘর আছে তার কাছাকাছি থাকতো। আর সন্ধ্যে বেলায় বাড়িতে প্রবেশ করে কামড় বসাত । কিন্তু ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য সমস্ত বাসাতে কীটনাশকযুক্ত মশারি সরবরাহ করা হয়েছে। এর ফলে মশাটি চাপের মুখে পড়েছে এবং পরিণতিতে এটি তার চারিত্রিক কিছু পরিবর্তন ঘটিয়েছে।’

জমে থাকা জলে এইভাবেই বংশবিস্তার ঘটায় মশা ।

গবেষণায় দেখা গেছে মশারি দেওয়ার পরেও কিছু কিছু জায়গায় ম্যালেরিয়া হচ্ছে। এর কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে গবেষকরা দেখেন যে মশারির চাপের কারণে মশাটি তাদের আচরণের পরিবর্তন ঘটিয়ে ঘরের বাইরেও কামড়াতে শুরু করেছে।বিজ্ঞানীরা বলছেন, এনোফিলিস ভেগাস প্রজাতি দিনের বেলায় ঘরের ভেতরে বিশ্রাম নিতে পছন্দ করে। তাই এটি দিনের বেলাতেও ঘরের ভেতরে কামড়াতে পারে।

মশা কখন কামড়ায় তার এই আচরণের ওপর ভিত্তি করেই মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি তৈরি করা হয়।ম্যালেরিয়ার জীবাণুবাহী এনোফিলিস মশার কোনো প্রজাতি যদি রাতের বেলায় কামড়ায় তাহলে লোকজনকে মশারি ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়।ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা দিনের বেলায় সকালে ও সন্ধ্যায় কামড়ায়। তাই ডেঙ্গু থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এই সময়টাতে মশার কামড় থেকে রক্ষা করার কথা বলা হয়। সেধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হলে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।

তিনি বলে, এখন যেহেতু মশার আচরণে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে সেকারণে মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিকেও সেভাবে সাজাতে হবে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, মশা যেহেতু দিনের বেলাতেও কামড়ায় সেকারণে ম্যালেরিয়া-বিরোধী কর্মসূচিকে এখন ঘরের বাইরে স্কুল, অফিস আদালত ও দোকানপাটেও বিস্তৃত করতে হবে।


❤ Support Us
error: Content is protected !!