- দে । শ স | ফ | র | না | মা
- মে ১৮, ২০২৪
দেশের সফর মানচিত্রে এবার বৌদ্ধগুরু পদ্মসম্ভবের ‘পবিত্র ভূমি’

সিকিম। নামটা মনে করলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে হিমালয়ে ঘেরা এক উপত্যকা। গাছ গাছালিতে ভরা, শান্ত সমাহিত এক স্থান। পতপত করে উড়তে থাকা বৌদ্ধমঠের পতাকা, মাঝে মাঝে গুঞ্জরিত হওয়া ‘বুদ্ধং শরং গচ্ছামি, সঙ্ঘং শরনং গচ্ছামি’, মাঝে মাঝে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা বৌদ্ধ মনাস্ট্রি। সত্যজিৎ রায় ‘গ্যাংটকে গণ্ডগোলে’ ব্যাখ্যা করেছিলেন ‘ভূত তাড়ানোর নিশান’ বলে। এই ভূমি দূষণ থেকে বহুদূরে , ভারতবর্ষের উত্তর পূর্বের এক ছোট্ট রাজ্য। ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে সিকিম মানে লাছেং, লাচুং, নামচে, জিরো পয়েন্ট অর্থাৎ ভারত তিব্বত সীমান্ত, ভারত চিন যুদ্ধে শহীদ সেনা অফিসার হরভজন সিংহের ‘রহস্যময়’ বাবা মন্দির ,অর্কিড আর অবশ্যই দমবন্ধ করা সৌন্দর্যের প্রতীক ‘গুরুদংমার হ্রদ।’
এইবার এই তালিকায় সংযুক্ত হল আরেকটি নাম, ‘সাং লা ফু চো’ হ্রদ। নামটা এতদিন স্বল্পশ্রুত ছিল পর্যটকদের কাছে। স্থানীয় তিব্বতি বজ্রযান বৌদ্ধ ধর্মে বিশ্বাসী মানুষেরা ডংক্যা রেঞ্জের অন্তর্গত সাং লা ফু চো পর্বতে অবস্থিত এই হ্রদকে মূলত পুজো করতেন। প্রবেশ অবাধ ছিলনা মোটেই। কিন্তু পথের দুর্গমতার কারণে এখানে পৌঁছানো খুব সহজ কাজও ছিলনা। অথচ জিরো পয়েন্ট থেকে এর দুরত্ব মাত্র ৫ কিলোমিটার। সম্প্রতি এই হ্রদটিই সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করল সেই রাজ্যের সরকার। সমতল থেকে প্রায় ১৬,৬৭০ ফুট উঁচুতে, এই লেকে নিয়মিত যাওয়ার মতো সুযোগ সুবিধার অভাব ছিল। এখন অবশ্য সেখানে ছোট চার চাকার গাড়িকে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
উদ্বোধনের আগে লাচুং সামতেন চোলিং বৌদ্ধ গুম্ফার সন্ন্যাসীরা এক বিশেষ প্রার্থনাসভার আয়োজন করেন। সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন স্থানীয় মানুষ থেকে হোটেল ব্যবসায়ী , গাড়ি চালক প্রমুখেরা। এক সময় এই অঞ্চলে এসেছিলেন বৌদ্ধ গুরু পদ্মসম্ভব । তিব্বতের আশেপাশের ‘পবিত্র ভূমি’ সন্ধান করতে করতে খুঁজে পেয়েছিলেন এই সিকিমের পবিত্র মাটিকে। ফলে এখানকার ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষ পর্যটকদের জন্য রেখেছেন বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা। এখানে যেকোনো ধরণের প্লাস্টিক ব্যবহার করা নিষেধ। হ্রদের আশপাশ পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব পর্যটকদেরই। সেক্ষেত্রে কোন রকম আবর্জনা ফেলা যাবেনা লেকের আশেপাশে।
ভারতের পর্যটন মানচিত্রে সিকিম একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে এই কথা আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখেনা। এই নতুন উন্মুক্ত হ্রদটি তার নৈসর্গিক সৌন্দর্য দিয়ে ভ্রমণ পিপাসু মানুষকে বশীভূত করতে পারবে । তবে সিকিম সরকার পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে বিশেষ সতর্ক। অতএব পর্যটকদের ও স্থানীয় প্রশাসনের যৌথ প্রয়াসে সিকিম ভ্রমণ খুব উপভোগ্য হবে, তা আশা করাই যায়।
❤ Support Us