Advertisement
  • কে | রি | য়া | র-ক্যা | ম্পা | স
  • এপ্রিল ৫, ২০২৪

সিস্টার নিবেদিতায় রেনেসাঁ স্মরণে নবজাগরণের অপ্রতিহত আলো

বাহার উদ্দিন
সিস্টার নিবেদিতায় রেনেসাঁ স্মরণে নবজাগরণের অপ্রতিহত আলো

শিক্ষাঙ্গন আর সংস্কৃতির বৃহত্তর আবহকে একই চত্ত্বরে নিয়ে আসবার, ভাববার প্রবণতা তৈরিতে, সিস্টার নিবেদিতা বিশ্ববিদ্যালয়ের (এস এন ইউ) ধারাবাহিকতা সাম্প্রতিক ইতিহাসের উজ্জ্বল, উজ্জ্বলতর দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। বিদ্যার্থী, বিদ্যাদাতা আর সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ ২০১৭ থেকে এ বিষয়ে যতটা সচেতন আর সতর্ক, ইদানিং সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এরকম প্রচেষ্টা সচরাচর নজরে পড়ে না ।

দ্বিতীয় দফায় মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে লন্ডন সফরে গিয়েছিলেন মমতা বন্দোপাধ্যায়। ওই সময় তাঁর সফরসঙ্গী ছিলেন টেকনো ইন্ডিয়ার প্রধান স্থপতি সত্যম রায়চৌধুরী। ভগ্নী নিবেদিতার জন্মভিটে দেখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, কলকাতায় নিবেদিতার স্মৃতিতে আমাদের যথাযোগ্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা দরকার।তখনই সত্যমবাবুকে দায়িত্ব অর্পন করে মমতা বন্দোপাধ্যায়। শুরু হল সত্যমবাবুর নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ম্যারাথন তোড়জোড়। উনিশশতকের নবজাগরণের সার লক্ষ্য নারী শিক্ষা, সামাজিক দায়বদ্ধতা, পঠন-পাঠনের সঙ্গে সংস্কূতির সার্বিক সংযোগ আর মানবপ্রেমের আদর্শিকতা নিয়ে জীবন্ত শিখার মতো, মূত্যুর (১৯১১) ১০৬ বছর পর কর্মভূমিতে জেগে উঠলেন সিস্টার নিবেদিতা। এও তাঁর আরেক পুনর্জন্ম।

নিবেদিতার কর্ম আর হৃদয়ের ধর্মপালনের সহযোগী হয়ে আলোচিত হওয়ার প্রতিস্পর্ধা বাড়ছে, বাংলায়। এখানে এসএনইউ অবশ্যই উজ্জ্বলতম ব্যতিক্রম, সেটা কেবল বাংলায় নয়, বিশ্বসভায়ও ক্রমশ চওড়া হচ্ছে ভগ্নীর ব্যক্তিত্বের লিপিপাঠ এবং উনি ফিরে আসছেন যুক্তি আর ভাবাবেগ ছুঁয়ে আমাদের সবার মননে, অন্বেষার খননেও। যাঁর অন্যতম হতে পারে, হওয়া উচিত, রেঁনেসার প্রত্যুষের প্রত্যাবর্তন। সম্প্রতি অর্টিস্টিক শিশুদের নিয়ে ভিন্নতর অনুষ্ঠান করেছে এসএনইউ। উদ্যোক্তা মনোবিজ্ঞান বিভাগ। এবার, ক্যাম্পাসে ছাত্র শিক্ষকদের দেখা গেল উজ্জীবনের বিস্তূত ভূমিকায়।ব্যবহারিক সমাজতত্ত্বকে (অ্যাপ্লায়েড সোসিওলজি) সামনে রেখে সিস্টার নিবেদিতার পড়ুয়া ও বিদ্যাদাতারা স্মরণ করিয়ে দিলেন রেনেসাঁর মূলতত্ত্ব।

প্রশ্ন করো, নিজের সম্মুখে দাঁড়াও, মতবিনিময়ের পরিসর তৈরি করে খুলে দাও চিন্তার দরজা।যে-দুয়ার খুলে দিয়েছিলেন রাজা রামমোহন, ডিরোজিও, বিদ্যাসাগর, কেশব সেন থেকে ভগ্নী নিবেদিতা পর্যন্ত বহুমাত্রিক বহুচর্চিত মণীষা। নবজাগরণের ওই স্রোত অব্যাহত। অসীম আনন্দে সাগরে, মহাসাগরে মিশতে চায় বাংলার চিত্তের বিত্ত এবং যে নিত্য আমাদের গানে, আমাদের কবিতায়, আমাদের লোকবৃত্তে নৃত্যরত হয়ে থাকে, কখনো সজ্ঞানে, কখনো মগ্ন চৈতণ্যের নিঃশব্দ সাধনায়, তা আজ সিস্টার নিবেদিতার ক্যাম্পাসে প্রদীপ্ত। বাইরেও সে শিখা প্রজ্জ্বলিত।

সুষ্ঠ ও স্বচ্ছ নেতৃত্ব যে কোনো প্রতিষ্ঠানের ইতিবাচক পরিবেশ তৈরির কারিগর। প্রকৃতি তাঁকে দায়বদ্ধ, সমাজ-নিবিষ্ট করে রেখেছে। যেমন বিশ্বভারতীর প্রকৃত রূপকার ছিলেন মহর্ষী দেবেন্দ্রনাথের উত্তরাধিকারী কবিগুরু।তাঁর ছত্রছায়ায় আশ্রম হয়ে উঠল বিশ্ববিদ্যার অনন্য নিকেতন। একইভাবে, সিপাহী বিদ্রোহের পর, হতাশাগ্রস্ত, অতীতমুখী একাংশ ভারতীয়কে ইংরেজি শেখার আহ্বাবান জানিয়ে, আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করে বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন স্যার সৈয়দ আহমেদ। ‘জামিয়া মিলিয়ার’ নির্মাণ ও প্রাচীন আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের পুনর্মূল্যায়ন ডাক দিয়ে দেশ প্রেমিকদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা জাগিয়েছিলেন হাকিম আজমল খান; পরিবেশ ও পরিস্থিতি সে-রকম না হলেও অন্যরকম প্রেক্ষাপট তৈরির ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে এসএনইউ ক্যাম্পাসে, সত্যম রায়চৌধুরীর মর্মে আর সাংগঠনিক আদর্শে।তাঁর সঙ্গে পূর্বগামীদের তুলনা আমাদের লক্ষ্য আর তা করা উচিত নয়। কিন্তু তিনি যে, সম্পূরকের ভূমিকায় অবতীর্ন, নানা রকম ব্যবহারিক তত্ত্বের প্রযোগে অক্লান্ত এবং প্রশ্নহীন, তা না বলাটাও ঘোরতর অন্যায়।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!