- দে । শ প্রচ্ছদ রচনা
- সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৩
মহিলা সংরক্ষণ বিল সমর্থন করবে কংগ্রেস, লোকসভায় জানালেন সোনিয়া গান্ধি

সংসদে মহিলা সংরক্ষণ বিল নিয়ে আজ সংসদে ফের আলোচনা শুরু হল। কংগ্রেসের তরফে আজ এই ইস্যুতে প্রধান বক্তা হিসেবে নিজের বক্তব্য পেশ করতে ওঠেন লোকসভায় কংগ্রেসের চেয়ারপারসন সোনিয়া গান্ধি। প্রাক্তন কংগ্রেস সভানেত্রী আজ সংসদের নিম্নকক্ষে জানিয়ে দেন, তাঁর দল কংগ্রেস মহিলা সংরক্ষণ বিলকে সমর্থন করবে। এর আগে গতকালই এই বিল প্রসঙ্গে সোনিয়া সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, ‘এটা আমাদেরই বিল।’
বুধবার লোকসভায় সোনিয়া গান্ধি আজ বলেন, “কংগ্রেস এই বিলকে সমর্থন করছে। বিলটি পাস হওয়ায় আমরা খুশি। কিন্তু আমরা এই নিয়ে উদ্বিগ্ন। আমি একটি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে চাই। ভারতীয় মহিলারা গত ১৩ বছর ধরে তাদের রাজনৈতিক দায়িত্বের জন্য অপেক্ষা করছেন। এখন তাদের আরও কয়েক বছর অপেক্ষা করতে বলা হচ্ছে। কত বছর? ভারতীয় মহিলাদের সাথে এই আচরণ কি যৌক্তিক? কংগ্রেস দাবি করেছে যে বিলটি অবিলম্বে কার্যকর করা হোক। সঙ্গে জাতিশুমারিও করা উচিত এবং এসসি, এসটি এবং ওবিসি মহিলাদের সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা উচিত।”
সোনিয়া গান্ধি আরও বলেন, “এটি আমার নিজের জীবনেরও একটি আবেগময় মুহূর্ত। প্রথমবারের মতো, স্থানীয় প্রশাসনের নির্বাচনে মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব নির্ধারণের জন্য সাংবিধান সংশোধনী আমার জীবনসঙ্গী রাজীব গান্ধি এনেছিলেন। এই বিলটি রাজ্যসভায় ৭-ভোটে পরাজিত হয়েছিল। পরে, প্রধানমন্ত্রী পিভি নরসিমহা রাও-এর নেতৃত্বে কংগ্রেস সরকার রাজ্যসভায় এই বিলটি পাস করে। ফলস্বরূপ, স্থানীয় সংস্থাগুলির মাধ্যমে সারা দেশে আমাদের ১৫ লক্ষ নির্বাচিত মহিলা নেত্রী রয়েছে। রাজীব গান্ধির স্বপ্ন আংশিকভাবে সম্পূর্ণ হয়েছিল, এই বিল পাসের মাধ্যমে তা সম্পূর্ণ হবে।”
এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে, মঙ্গলবারই নতুন সংসদে মহিলা সংরক্ষণ বিল পেশ করে কেন্দ্রীয় সরকার। বিরোধীরা দাবি, ২০২৪ সালের ভোটের বৈতরণী পার করতে মহিলা সংরক্ষণের হাওয়া তুলতে চাইছে নরেন্দ্র মোদি সরকার। তাঁদের অভিযোগ, স্রেফ ভোটের লাভ নিজেদের পক্ষে নিতেই ২০২৪ সালের ভোটের আগে তড়িঘড়ি মহিলা সংরক্ষণ বিল আনল নরেন্দ্র মোদি সরকার। আদতে ২০২৪ সালে সেই সংরক্ষণের নিয়ম কার্যকর সম্ভব নয়। বিলের পাঁচ নম্বর ধারা উল্লেখ ধরে আম আদমি পার্টির নেত্রী তথা দিল্লি সরকারের মন্ত্রী অতিশি দাবি করেন, মহিলা সংরক্ষণ বিলের নিয়ম অনুযায়ী পরবর্তী জনগণনা এবং আসন পুনর্বিন্যাসের আগে সংরক্ষণের নিয়ম কার্যকর সম্ভব নয়। অর্থাৎ ২০২৪ সালের নির্বাচনে মহিলারা নতুন এই বিলের আওতায় সংরক্ষণ পাবেন না।
এদিকে সংসদের এই বিশেষ অধিবেশন শুরুর আগে থেকেই বিরোধীরা একত্রে দাবি তুলেছিল যাতে সংসদের এই বিশেষ অধিবেশনে মহিলা সংরক্ষণ বিল পাশ করানো হয়। কংগ্রেসের তরফে দাবি করা হয়েছিল, এই বিল পেশ হলে তারা তা সমর্থন করবেন। এদিকে বিশেষ অধিবেশনের জন্য তালিকাভুক্ত বিলগুলির মধ্যে ছিল না মহিলা সংরক্ষণ বিলের কোনও উল্লেখ। তবে গত সোমবার বিশেষ অধিবেশনের শেষে সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠক বসে। সেখানেই প্রধানমন্ত্রী মোদির নেতৃত্বে সেই বিলটিকে অনুমোদন দেওয়া হয়।
বিল অনুযায়ী, লোকসভা এবং সব রাজ্যের বিধানসভায় মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকবে। এদিকে তফশিলি জাতি বা তফশিলি উপজাতির জন্য সংরক্ষিত আসনগুলির মধ্যেও একতৃতীয়াংশ সংরক্ষিত থাকবে এসসি বা এসটি সম্প্রদায়ের মহিলাদের জন্য। উল্লেখ্য, ২০১০ সালে এই বিলটি রাজ্যসভায় পাশ হয়েছিল। তবে তখন তা আর লোকসভায় পেশ করা হয়নি। এদিকে এই বিলটি আইনে কার্যকর হওয়ার ১৫ বছর পর তা বিলুপ্ত হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
গতকাল বিলটি পেশ হওয়ার পর সংসদে নরেন্দ্র মোদি বলেন, “নতুন সংসদ ভবনের ঐতিহাসিক ভাবে পথ চলা শুরু করল আজ। এই উপলক্ষে সংসদের প্রথম কার্যক্রম হিসেবে নারী শক্তির প্রবেশদ্বার উন্মোচনকারী গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই সরকার। নারী নেতৃত্বাধীন উন্নয়নের আমাদের সংকল্পকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আমাদের সরকার একটি গুরুত্বপূর্ণ সংবিধান সংশোধনী বিল আনছে। লোকসভা এবং রাজ্যসভায় মহিলাদের সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর লক্ষ্যে এই বিলটি তৈরি করা হয়েছে। ‘নারী শক্তি বন্দন অধিনিয়ম’ আমাদের গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করবে।” প্রধানমন্ত্রী এরপর বলেন, “মহিলা সংরক্ষণ বিল নিয়ে বহুদিন ধরেই আলোচনা চলছে। অটল বিহারী বাজপেয়ীর শাসনকালে মহিলা সংরক্ষণ বিল বেশ কয়েকবার উত্থাপন করা হয়েছিল কিন্তু বিলটি পাশ করার জন্য যথেষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল না এবং এর কারণে এই স্বপ্ন অসম্পূর্ণ থেকে যায়। আজ, ঈশ্বর আমাকে এটিকে এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ দিয়েছেন… আমাদের সরকার আজ উভয় কক্ষে মহিলাদের অংশগ্রহণের বিষয়ে একটি নতুন বিল আনছে।”
এদিকে বুধবার সংসদের অধিবেশন শুরুর আগে রণকৌশল ঠিক করতে বৈঠকে বসেছিল “ইন্ডিয়া” মঞ্চের নেতৃত্ব। আজ ৭ ঘণ্টা, অর্থাৎ সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত মহিলা সংরক্ষণ বিল নিয়ে আলোচনা হবে।
❤ Support Us