Advertisement
  • এই মুহূর্তে দে । শ ভা | ই | রা | ল
  • জুন ২৮, ২০২৩

গোড়ায় গলদ শুধরে বয়স কমছে ইউন সুকের দেশে

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
গোড়ায় গলদ শুধরে বয়স কমছে ইউন সুকের দেশে

সাবালক থেকে নাবালক হওয়ার মুখে দক্ষিণ কোরিয়ার জনগণের একাংশ। শুনতে অবাক লাগলেও এমনই অদ্ভুত ঘটনা ঘটতে চলেছে সিওলে। গণনার এক অদ্ভুত নিয়মে অন্তত ২ থেকে ১ বছর বেড়ে যাচ্ছিল দেশবাসীর বয়স। সম্প্রতি, দেশের প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেয়, পুরনো প্রথা বাতিল করে আন্তর্জাতিক রীতি মেনেই নাগরিকদের বয়স গোনা হবে। বুধবার থেকে তা কার্যকরী হবে। সরকারের এ সিদ্ধান্তে স্বস্তিতে দেশের প্রায় পাচ কোটি মানুষ।

বাতিল হওয়া রীতি অনুযায়ী শিশু মাতৃজঠরে ভ্রণাবস্থায় থাকার সময় থেকেই তার বয়স গণনা করা হত। তাই সে যখন জন্মাচ্ছে, তখনই তাকে ১ বছরের বাচ্চা বলে গণ্য করা হত। আবার দেশের আইন অনুযায়ী যে দিন জন্ম সে দিনকে জন্মদিন হিসেবে না ধরে পরের বছরের জানুয়ারির প্রথম দিনে তা ধরা হয়। এতে আরো এক বছর বেড়ে যেত বয়স। যা বয়স পরিমাপের যে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড আছে তাঁর সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।

নিয়মের এ অদ্ভুত গেরোয় বহুদিন ধরেই নাজেহাল হচ্ছিলেন আম জনতা। কারণ পাস পোর্ট হোক বা প্রশাসনিক নথি সেখানেই আন্তর্জাতিক রীতি মেনে বয়স লেখা থাকে । তাতে যে সমস্যা হয়, তা হল দেশীয় নিয়মে ১৮ বছরের এক প্রাপ্ত বয়স্ক আন্তর্জাতিক রীতিতে ১৭ বা ১৬ বছরের হয়ে যায়। তাই পূর্ণ বয়স্ক হওয়ার যে সুবিধা রয়েছে তা থেকে সে বঞ্চিত হয়। সমস্যায় পড়তেন পেনশন প্রাপকও। কারণ সেখানেও সারা বিশ্বে যে রীতি মেনে বয়স স্থির হয়, পেনশন হোল্ডারদের কার্ডেও তা লেখা থাকে। তাই এই জটিলতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই জনমানসে ক্ষোভ তৈরি হচ্ছিল। বহুবার তারা এ ব্যাপারে সরকারকে জানিয়েছিলেন। কোনো লাভ তাতে হয়নি।

সংবাদ সংস্থা সূত্রে  খবর,  ২০২২ সালে ইউন সুক-ইওল প্রেসিডেন্ট হিসেবে  দায়িত্ব নেওয়ার সমগ্র চিত্র বদল আসে।   তিনি শুরু থেকেই বয়স  গণনার চিরাচরিত  পদ্ধতি পরিবর্তনের জন্য তৎপর হয়ে ওঠেন। এ বিষয়ে  তিনি বলেন, ‘অপ্রচলিত এ গণনা পদ্ধতি দেশে অপ্রয়োজনীয় সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংকট তৈরি করেছে।’ এতে বয়সের ভিত্তিতে  বীমার অর্থপ্রাপ্তি ও বিভিন্ন সরকারি   প্রকল্পে নাগরিকদের সাহায্য পাওয়ার ক্ষেত্রে অসুবিধা  হচ্ছে।  এ বিষয়ে দেশীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান হানকুক রিসার্চ ২০২২ সালের জানুয়ারিতে একটি সমীক্ষা চালায়।  তাতে  দেশের  তিন-চতুর্থাংশ নাগরিকই আইন পরিবর্তনের পক্ষে মত দেন।  সে বছরেই  দেশটির আইনপ্রনেতারা আইন পরিবর্তনের পক্ষে ভোট দেন।

মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থায় বয়স গণনার রীতি  পূর্ব এশিয়ার আনেক দেশেই প্রচলিত ছিল। তবে বেশিরভাগ দেশই সনাতন রীতিতে  বয়স গণনা বাতিল করেছে। এব্যাপারে  জাপান অনেক এগিয়ে । ১৯৫০ সালেই    সনাতন পদ্ধতি ছেড়ে আন্তর্জাতিক গণনা পদ্ধতি  সেদেশে চালু হয়।  উত্তর কোরিয়াও একই পথ অনুসরণ করে ১৯৮০ সালে ।  তবে, নিয়ম বদলালেও  প্রশ্ন  থেকে যাচ্ছেই। দক্ষিণ কোরিয়ায় আইনত সাবালকত্ব প্রাপ্তির বয়স ১৯। মদ বা সিগারেট কিনতে বয়েসের ওই প্রমাণপত্র দেখাতেই হয়।  সাজাদানের ক্ষেত্রেও তা গুরুত্বপূর্ণ। তবে কি দেশি নিয়মে সদ্য সাবালক হওয়া দক্ষিণ কোরীয়রা আজ থেকে ফের নাবালক হয়ে যাবে?  সময় পিছিয়ে যাবে অবসরগ্রহণের বয়স? ভোটদানের অধিকার কি হারাবেন অনেকে?

প্রশাসনের পক্ষ থেকে  অবশ্য   এমন সম্ভাবনাকে খারিজ করে দেওয়া হচ্ছে।   কারণ সে দেশের সরকারি নথিতে তাঁরা আন্তর্জাতিক মাপকাঠিতেই নাগরিকদের বয়স নথিভুক্ত করেন। তাই  পুরোনো গণনা অনুযায়ী কারও ১ বা ২ বছর বয়েস কমে গেলেও, নথিতে  কোনো পরিবর্তনা হবে না। তবে বাস্তব চিত্র কী হতে চলেছে, সেটা বুঝতে বেশ কিছুটা সময় লাগবে।   তাঁর আগে এ নিয়ে  কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!