- দে । শ
- এপ্রিল ২৭, ২০২৪
কেরি সাহেবের কর্মভূমিতে শ্বশুর বনাম প্রাক্তন জামাই। দয়ের ব্যবধান বাড়াতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ কল্যান। দিপ্সিতার হাসিতে বক্রচিহ্ন ডোমজুড়ে

দেশের উত্তর থেকে দক্ষিণ,পূর্ব থেকে পশ্চিম সব অঞ্চল ভোটের আবহে জমজমাট। তীব্র গরমের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নির্বাচনী উত্তাপ। হুগলি নদীর পূর্বপাড়ের শহর, একসময়ের ওলন্দাজ কলোনি শ্রীরামপুর কেন্দ্রও পিছিয়ে নেই । নদীর পাশে গড়ে উঠেছিল একের পর এক চটকল। শিল্পাঞ্চল হিসাবে পরিচিতি। বাজারে পাটের বিকল্প এসে যেতেই তালা ঝুলতে শুরু করল একের পর এক কারখানায় । এখন আর সে গরিমা তাদের নেই।হিন্দমোটরের “হিন্দুস্থান মোটর লিমিটেড”এ তালা ঝুলতেই শেষ আশাটাও নষ্ট। সামান্য কিছু চটকল, চাষ আবাদ আর ঐতিহ্য এই নিয়েই দাঁড়িয়ে “শ্রীরামপুর লোকসভা কেন্দ্র”।
স্বাধীনতার পর থেকে বামপন্থীদের একচেটিয়া প্রভাব থাকলেও নতুন সহস্রাব্দের সূচনায় বাংলায় নতুন শক্তি হিসেবে তৃণমূল কংগ্রেস উঠে আসায় তাদের শক্তি ও গুরুত্ব দুই হ্রাস পায়। আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরপর তিনবার সাংসদ হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন।মূলত হুগলি জেলার পাঁচটি ও হাওড়ার ২টি বিধানসভা নিয়ে তৈরি হয়েছে এই লোকসভা কেন্দ্র,যথা- শ্রীরামপুর, চাপদানি, উত্তরপাড়া, চণ্ডীতলা,জাঙ্গিপাড়া, ডোমজুড় (হাওড়া),জগৎবল্লভপুর (হাওড়া)। এই কেন্দ্রেই মাহেশ ও ফুরফুরা শরিফ দুটি অন্যতম তীর্থক্ষেত্র রয়েছে।মোট ভোটার সংখ্যা ১৪০২২৫৯। ।মুসলিম ভোট প্রায় ৩০ শতাংশ। চণ্ডিতলা বিধানসভার সামান্য অংশ এবং জাঙ্গিপাড়া বিধানসভার পুরোটাই সংখ্যালঘু অধ্যুষিত।ফলে ধরেই নেওয়া যায়, এই কেন্দ্রে সংখ্যালঘু ভোট অন্যতম বড় ফ্যাক্টর হতে পারে।
চতুর্থবারের জন্য সাংসদ হওয়ার লড়াইয়ে নেমেছেন কল্যাণবাবু, যিনি বেশ বিতর্কিত চরিত্র, ঠোঁটকাটা বাচনভঙ্গির জন্য । বাম প্রার্থী জহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রী দিপ্সিতা ধর, যিনি প্রাক্তন মন্ত্রী প্রয়াত পদ্মনিধি ধরের নাতনি। বিজেপি প্রার্থী কবীরশংকর বসু, কল্যাণবাবুরই প্রাক্তন জামাই ।আইএসএফ প্রার্থী দিলেও প্রচারেও নেই । রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে , শ্রীরামপুর কেন্দ্রে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বাম প্রার্থী দিপ্সিতা ধর বনাম তৃণমূলের পোড়খাওয়া আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যেই। এই দুই প্রার্থীই এগিয়ে। কারণ বিজেপি বা আইএসএফের প্রার্থীরা কেউই এলাকায় খুব একটা পরিচিত মুখ নন।জয়ের ব্যাপারে সম্পূর্ণ আশাবাদী কল্যাণ বন্দোপাধ্যায়। দেড় লক্ষের বেশি ভোটে জিতবেন তিনি,এই কথাই জানিয়েছেন। কল্যাণবাবু ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ৬৩৭৭০৭ ভোট পেয়েছিলেন, ৯৮৫৩৬ এর বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী দেবজিত সরকারকে( প্রাপ্ত ভোট ৫৩৯১৭১ ) বাম প্রার্থী দীপ্সিতা বলেছেন, ‘যাঁদের বিরুদ্ধে লড়াই তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন না। সাধারণ মানুষের ভোট দেওয়ার অধিকার কেড়ে নেন। ভোটারদের বলব, নিজের ভোটটা নিজে দিন। তারপর তো জয় পরাজয়।’ দিপ্সিতা বলেছেন ,তাঁর বাবা শ্রমিক ছিলেন। ট্রেড ইউনিয়ন করতেন। শ্রমিক আর তাদের পরিবারের কষ্ট তিনি বোঝেন। সাংসদ নির্বাচিত হলে সংসদে গিয়ে তাদের জন্য লড়াই করবেন। বামেদের বেশি ভাবাচ্ছে ডোমজুর বিধানসভা কেন্দ্র, যেখানে গত লোকসভা নির্বাচনে সবচেয়ে কম ভোট পেয়েছিলেন বাম প্রার্থী তীর্থঙ্কর রায়।সব মিলিয়ে ভোট রঙ্গে মেতে উঠেছে উইলিয়াম কেরির কর্মভূমি এই শহর।
শেষ হাসি কে হাসবে? বলবে গণরায়। ৪ জুন। গরমে হাঁসফাঁস করছে মানুষ। উত্তরবঙ্গের ৬ আসনে ভোট হয়ে গেল। জনমত প্রয়োগের হার আগের তুলনায় কম। কারণ কী? অদম্য গরম, না ভোটরের ইচ্ছেডানা আগ্রহহীন, প্রত্যাশাহীন। কান পাতলেই রব এসে ধাক্কা দেয়, লঙ্কায় যে যায়, সে একদিন রাবণ হয়ে ওঠে। প্রবাদ বাক্যটির বিচরণ বাড়ছে। ক্ষমতার দম্ভের দিকে আঙুল তুলছেন নবীন প্রবীন ভোটাররা।
❤ Support Us