- এই মুহূর্তে দে । শ
- মে ১৬, ২০২৩
পরেশ কন্যাকে সরিয়ে ববিতার নিয়োগেও ছিল ভুল। আদালতের নির্দেশে সেই চাকরি পেলেন অনামিকা রায়

শিলিগুড়ির ববিতা সরকারের আবেদনের ভিত্তিতেই রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পরেশ অধিকারীর মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারীর চাকরি। মঙ্গলবার কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে চাকরি হারাতে হল সেই ববিতা সরকারের। মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে ববিতা সরকারের চাকরি বাতিল করার নির্দেশ দিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর নির্দেশে বলেছেন, ববিতার চাকরি পাবেন অনামিকা রায়। স্কুল সার্ভিস কমিশনকে বা এসএসসি অনামিকাকে চাকরির সুপারিশপত্র দিতে হবে বলেও জানিয়ে দিয়েছেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ, অনামিকাকে বাড়ির কাছে কোনও স্কুলে চাকরির সুপারিশ দিতে হবে। তিন সপ্তাহের মধ্যে এই নির্দেশ কার্যকর করার নির্দেশও এদিন দিয়েছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
এসএসসির মেধাতালিকায় অনেক পিছনে নাম থাকার পরেও অঙ্কিতা অধিকারীর নাম প্রথমে নিয়ে আসায় তিনি চাকরি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছিলেন ববিতা সরকার। এর পর অঙ্কিতাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে তাঁর জায়গায় উপযুক্ত প্রার্থী হিসাবে ববিতা সরকারকে সেই চাকরি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। অঙ্কিতা অধিকারী যতদিন এই চাকরি করেছেন সেই চাকরির বেতনের পুরো টাকা ববিতাকে অঙ্কিতার দিয়ে দিতে হবে বলেও আদালত নির্দেশ দেয়। কিন্তু চাকরি পাওয়ার ৬ মাসের মধ্যেই প্রশ্নের মুখে পড়ে ববিতা সরকারের নিয়োগ প্রক্রিয়া।
শিলিগুড়ির ববিতা সরকারের চাকরি পাওয়ার পরই তাঁর চাকরি বাতিলের দাবিতে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন শিলিগুড়ির আর এক এসএসসি পরীক্ষার্থী অনামিকা রায়। তাঁর অভিযোগ ছিল, স্কুল সার্ভিস কমিশন বা এসএসসি-এর কাছে আবেদন করার সময় ববিতার স্নাতকস্তরের শতকরা প্রাপ্ত নম্বর বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে। যার ফলে তাঁর ‘অ্যাকাডেমিক স্কোর’ বেড়ে গিয়েছে। সেখান থেকেই তৈরি হয়েছে যাবতীয় জটিলতা। ববিতার আবেদনপত্র অনুযায়ী, স্নাতক স্তরে ৮০০ নম্বরের মধ্যে ৪৪০ নম্বর পেয়েছিলেন ববিতা। অর্থাৎ, শতকরা হিসাবে ৫৫ শতাংশ। অথচ, স্নাতক স্তরের প্রাপ্ত নম্বরের শতকরা হিসাব ৬০ শতাংশ বা তার বেশি উল্লেখ করা হয়েছে আবেদনপত্রে। অর্থাৎ, ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে । আর তার ফলেই ববিতার ‘অ্যাকাডেমিক স্কোর’ গণনা করতে ভুল হয়েছে। নিয়োগের দাবিতে আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকা চাকরিপ্রার্থীদের একাংশের দাবি ছিল, এই অভিযোগ যদি সত্যি হয়, সে ক্ষেত্রে ববিতার ‘অ্যাকাডেমিক স্কোর’ ৩৩-এর বদলে কমে ৩১ হবে। সাফল্যের ক্রমিক তালিকায় অনেকটাই পিছিয়ে পড়বেন ববিতা।
অনামিকার দাবি, ববিতা এই সাফল্যের ক্রমিক তালিকায় পিছিয়ে গেলে যোগ্য প্রার্থী হিসাবে ২০ জনের তালিকার ২০ নম্বরে উঠে আসবে তাঁর নাম। ফলে চাকরিটা তাঁরই পাওয়ার কথা। এই নিয়েই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন অনামিকা।
এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে আদালতেই এই রায় শোনার পর চিৎকার করে কেঁদে ওঠেন ববিতা সরকার। ক্রন্দনরত অবস্থায় তিনি বলেন, ‘‘আমি ভুলটা জানতাম না। আমার চাকরি চলে যাচ্ছে। কিন্তু টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য আমায় একটু সময় দেওয়া হোক। এখন আমি ১১ লক্ষ ফেরত দিতে পারব। একটা সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি কিনেছি। বাকি টাকা ফেরত দিতে একটু সময় লাগবে। তিন মাস সময় দেওয়া হোক আমাকে।’’
মঙ্গলবার বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছেন, আগামী ৬ জুনের মধ্যে ববিতাকে ১৫ লক্ষ ৯২ হাজার ৮৪৩ টাকা হাই কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে জমা দিতে হবে। হাই কোর্টের রেজিস্ট্রার সেই টাকা নতুন চাকরি প্রাপক অনামিকা রায়ের হাতে তুলে দেবেন। তবে এত দিনে চাকরির জন্য যে বেতন পেয়েছেন ববিতা, সেই টাকা তাঁকে ফেরত দিতে হবে না। অঙ্কিতার চাকরি যাওয়ার পর তাঁর টাকা বিভিন্ন কিস্তিতে ববিতাকে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সেই নির্দেশ মতো যে টাকা পেয়েছিলেন ববিতা, সেই টাকা ফেরত দিতে মঙ্গলবার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সেই টাকা আদালতে ফেরত দেওয়ার জন্যই সময় সময় চেয়ে আদালতে আবেদন করলেন ববিতা সরকার।
❤ Support Us