- এই মুহূর্তে দে । শ
- মে ২৬, ২০২৩
নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে এবার “কালীঘাটের কাকু”কে ইডি-র তলব

তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফতরের প্রাক্তন কর্মী সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে “কালীঘাটের কাকু”কে নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি । প্রসঙ্গত একে আগেই একটি বেসরকারি টেলিভিশিন চ্যানেলে সাক্ষাৎকারে “কালীঘাটের কাকু” বলেছিলেন, “আমার সাহেবের কেশাগ্র কেউ স্পর্শ করতে পারবে না। তাঁকে ফোনেই পাবে না।”, এই সাক্ষাৎকারে “কালীঘাটের কাকু” জানান তাঁর সাহেব হলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে গত শনিবার ৯ ঘণ্টা ৪০ মিনিট সিবিআই-র জেরা শেষে নিজাম প্যালেসের বাইরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এলে তাঁকে এই সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রকে তিনি চেনেন কি না সেই প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “আমি চিনি না।” এর পর ওই শনিবার রাতেই সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র বা “কালীঘাটের কাকুকে” অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে চেনেন না বলেছেন বলায় সুজয়কৃষ্ণ রাগত ভাবে বলেন, “এই নিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যা বলার আমি বলে নেব।”
প্রসঙ্গত গত শনিবার দীর্ঘ সময় ধরে বেহালায় “কালীঘাটের কাকুর” -র একাধিক ঠিকানায় তল্লাশি অভিযান চালিয়েছিল কেন্দ্রীয় সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি। সে দিন কয়েক দফা জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছিল তাঁকে। এ বার সেই সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’কে আরও একবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করল ইডি। ইডি সূত্রের খবর, আগামী মঙ্গলবার অর্থাৎ ৩০ মে, সংস্থার দফতরে তাঁকে ডেকে পাঠানো হয়েছে “কালীঘাটের কাকু”কে।
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফতরের প্রাক্তন কর্মী সুজয়কৃষ্ণের পাশাপাশি গত শনিবার তৃণমূলের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সদস্য জ্ঞানানন্দ সামন্তের বিবিরহাটের বাড়িতেও তল্লাশি চালিয়েছিল ইডি। তাঁকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়েছে। সেই সঙ্গে রাহুল বেরা নামে এক সিভিক ভলান্টিয়ারকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়েছে বলে ইডি সূত্রের খবর। গত শনিবার বেহালার ফফিরপাড়া রোডে তল্লাশি অভিযানের সময় সুজয়ের মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করেছে তদন্তকারী সংস্থা। ইডি সূত্রের খবর, সেই মোবাইল থেকে উদ্ধার হওয়া কিছু ‘তথ্য’ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পরে তাঁকে।
নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত কুন্তল ঘোষের মুখেই “কালীঘাটের কাকু”র কথা প্রথম প্রকাশ্যে আসে। তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, “কালীঘাটের কাকু”র আসল নাম সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। সেই সুজয়কৃষ্ণকে এর আগে দু’বার তলব করেছিল সিবিআই। প্রথম বার হাজিরা দিলেও পরের বার তিনি নিজে হাজিরা দেননি। দীর্ঘদিন সিবিআই হাজিরায় তিনি না আসায় তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাও নেয়নি সিবিআই। সেই সময় হাজিরায় না এসে পরিবর্তে তাঁর আইনজীবীকে দিয়ে নথিপত্র পাঠিয়ে দেন “কালীঘাটের কাকু”। তিনি সে সময় জানান, তাঁর কাছে কিছু নথি চাওয়া হয়েছিল। সেগুলি আইনজীবীকে দিয়ে তিনি পাঠিয়ে দিয়েছেন। তিনি নিজেই জানান, তাঁর স্ত্রী ও মেয়ের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের নথি আইনজীবীর মাধ্যমে পাঠিয়ে দিয়েছেন।
নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত তাপস মণ্ডল সিবিআইয়ের কাছে দাবি করেছিলেন, অযোগ্য প্রার্থীদের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার সময় কুন্তল নাকি আশ্বাস দিয়ে বলতেন, ‘‘কালীঘাটের কাকুর সঙ্গে কথা হয়ে গিয়েছে। চিন্তার কোনও কারণ নেই।’’ ইডি সূত্রে খবর, পরে গোপাল দলপতি এবং তাপসকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, কুন্তলের ওই কালীঘাটের ‘কাকু’ রাজ্যের এক প্রভাবশালী শীর্ষ নেতার সংস্থার চিফ সিইও। তার পর থেকেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার ‘আতশকাচের তলায়’ সুজয়।
যদিও কুন্তল পরবর্তী সময়ে দাবি করেছেন, তিনি ওই ‘কাকু’কে চেনেন না। কুন্তল এ-ও দাবি করেন, যে সুজয়কে নিয়ে চর্চা চলছে, তিনি ‘কালীঘাটের কাকু’ নন।কাকু তবে বাবার ভাই, এই বলেও এই নিয়ে হেঁয়ালি করেছেন কুন্তল। তাপস এবং কুন্তলের “কালীঘাটের কাকু”কে নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্যের কারণে রহস্য আরও জটিল হয়। সুজয়কৃষ্ণ নিজে সংবাদমাধ্যমের সামনে জানিয়েছিলেন, তাঁকে কেন ‘কালীঘাটের কাকু’ বলা হচ্ছে, তা তাঁর কাছে স্পষ্ট নয়। নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে তাঁর কাছে কোনও টাকা জমা পড়েনি বলেও দাবি করেন সুজয়। তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমার কর্মস্থল নিউ আলিপুর। ‘কালীঘাটের কাকু’ কথাটা কোথা থেকে এল, আমার পক্ষে তো সেটা বলা সম্ভব নয়। যাঁরা এটা বলছেন, তাঁরাই এর ব্যাখ্যা দিতে পারবেন।’’ পাশাপাশি তিনি দাবি করেছিলেন, “চাকরি দেওয়ার কোনও ক্ষমতা থাকলে আমি আমি আমার দাদার মেয়েকেই তো চাকরি দিতে পারতাম।”
❤ Support Us