- দে । শ
- মে ১৮, ২০২৩
রাজ্যের মত এখনও অজানা, এরই মধ্যে ঐতিহ্যশালী সেন্ট জেভিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু হল মোদির শিক্ষানীতি

কেন্দ্রীয় সরকারের জাতীয় শিক্ষানীতির ভালো-মন্দ যাচাই করতে যখন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শিক্ষা দপ্তর একটি কমিটি গঠন করেছে। ইঙ্গিতে এই শিক্ষানীতি না মানার পক্ষে সওয়াল করে কেন্দ্রের এই জাতীয় শিক্ষানীতিকে “তুঘলকি” শিক্ষানীতি বলে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু সমালোচনা করেছেন। রাজ্য সরকারের সঙ্গে এই বিষয়ে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের প্রতিবাদের সুরও যখন মিলে যাচ্ছে। ঠিক এমনই সময় কলকাতা তথা দেশের মধ্যে অন্যতম ঐতিহ্যশালী সেন্ট জেভিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয় ২০২৩-‘২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকেই কেন্দ্রীয় জাতীয় শিক্ষানীতি বা নরেন্দ্র মোদির শিক্ষানীতি মেনে চার বছরের স্নাতক স্তরের পাঠক্রম চালু হচ্ছে। এর ফলে রাজ্যের বিরোধিতার মধ্যেই কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্সে মান্যতা পেয়ে গেল “মোদির শিক্ষানীতি”। চার বছরের এই স্নাতক স্তরের পাঠক্রমে তিন বছর পড়ার পর ২ বছর এমএ ডিগ্রির জন্য পড়া যাবে। আবার চার বছরের স্নাতক স্তরে পড়ার পর এক বছরের এমএ ডিগ্রি পড়ারও সংস্থান থাকবে। আবার কেউ চাইলে চার বছরের অনার্স ডিগ্রি অর্জনের পর সরাসরি পিএইচডি করতে পারবেন। এই পাঠ্যক্রম সংক্রান্ত বিস্তারিত নির্দেশিকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে তুলে দিয়েছে সেন্ট জেভিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
প্রসঙ্গত গত মার্চ মাসেই জাতীয় শিক্ষানীতি নিয়ে র প্রসঙ্গে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু চুপ ছিলেন। তখন কোনও কোনও মহলে এমনও বলছিল, ব্রাত্যর এই নীরবতা রাজ্যের সম্মতির নামান্তর নয় তো? তবে প্রশ্নের ভ্রান্তি কাটিয়ে সেই সময়ই শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়ে দেন, ‘‘চার বছরের স্নাতকস্তরের পাঠক্রম বিষয়ে উপাচার্যদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হবে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে এই নিয়ম কী ভাবে কার্যকর করা যেতে পারে, তা নিয়ে সেই কমিটি তাদের অবস্থান জানিয়ে দেবে। তার পরে এই বিষয় নিয়ে কথা বলব।’’
এর পরেই রাজ্যে ছয় সদস্যের ওই কমিটি তৈরি হয়। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাসকে এই ছয় সদস্যের কমিটির প্রধান পদে বসানো হয়। তিনি ছাড়াও ওই কমিটিতে আছেন বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দেবনারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ওমপ্রকাশ মিশ্র, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নির্মাল্যনারায়ণ চক্রবর্তী, রাজ্যের উচ্চশিক্ষা কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান কৌশিকী দাশগুপ্ত এবং কাউন্সিলের যুগ্ম সম্পাদক (শিক্ষা) মৌমিতা ভট্টাচার্য। ঠিক হয়েছিল, চার সপ্তাহ পর ওই বিশেষজ্ঞ কমিটি তাদের মতামত জানিয়ে উচ্চশিক্ষা দফতরকে রিপোর্ট পাঠাবে। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতেই জাতীয় শিক্ষানীতি নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ রাজ্য নেবে। তবে ওই রিপোর্ট নির্দিষ্ট সময় অতিক্রম করার পরও উচ্চশিক্ষা দফতরে পেশ করা হয়েছে বলে সরকারিস্তরে কোনও খবর নেই।
এদিকে এই কমিটির রিপোর্ট পাওয়া ও তা নিয়ে রাজ্য সরকারের কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণার আগেই কেন্দ্রীয় জাতীয় শিক্ষানীতি কার্যকর করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করল সেন্ট জেভিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয়।
কেন্দ্রীয় জাতীয় শিক্ষানীতির ভালোমন্দ যাচাই করে কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে কি ভাবে তা কার্যকর করা যায় তার রূপরেখা তৈরি জন্য এই বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটির রিপোর্ট রাজ্যের হাতে পৌঁছবার আগে রাজ্যে অবস্থিত সেন্ট জেভিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয় কি পারে কেন্দ্রীয় শিক্ষানীতি অনুযায়ী স্নাতকস্তরে পাঠক্রম চালু করতে? এই নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
এই বিষয়ে জানার জন্য রাজ্যের তরফে গঠিত কমিটির প্রধান ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
যদিও গত পঁচিশে বৈশাখ কলকাতায় এসে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দাবি করেছিলেন, “রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জাতীয় শিক্ষানীতি তৈরি করেছেন।” এবার “রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আদর্শে অনুপ্রাণিত শিক্ষানীতি”, মেনেই কি স্নাতক স্তরে পাঠক্রম চালু করার পথে পা বাড়াল ঐতিহ্যশালী সেন্ট জেভিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয়?
❤ Support Us