Advertisement
  • স | ফ | র | না | মা
  • আগস্ট ১২, ২০১৯

সুখের ছড়ানো পাখা

অমিত মুখোপাধ্যায়
সুখের ছড়ানো পাখা

সত্যি সুখের সংজ্ঞা বুঝি সযতনে নতুন করে সাজিয়ে নিতে হয় এখানে! নেপালিতে বলে সুকে পোখরি, মানে শুকোতে চলা ঝিল, কে জানে হয়ত আগে বড় জলভাণ্ডার ছিল, নিঃশেষে নিজেকে বিলিয়ে দীনহীন-বিনয়ে অবলোকনের নিভৃত আয়োজন সেরে রেখেছে।তাই দার্জিলিঙ থেকে ঘুম, চাতাইধুরা, মাঝধুরা হয়ে আছে ঋষি রোডে সতেরো কিমি দূরের এই মাঝারি মানের পাহাড়ি জনপদে আর সেই জলাশয় নেই।চা বাগান আছে :ওপরে তুমসঙ, মিম, নিচে চামঙ,পুবঙ।পথে লেপচা জগতের ওপাশে হরিয়াল ঘুমপাহাড়ের ঠাসা নিসর্গ আছে।

আছে পাইন,ম্যাগনোলিয়া,হেমলক,অর্কিড,রডোডেনড্রন আর সিলভার ফার-এর সম্ভার।গেদেন তাশি চৈলিঙ ও তিব্বতি মঠ, শিবমন্দির।কাছে সীমানা বস্তি(২ কিমি) ছাড়িয়ে ঋষি রোড ধরে আরও গেলে পশুপতিনগর বাজার ও নজরচৌকি।পরে পূর্ব নেপালের মেচি অঞ্চলের ইলাম জেলা,ধানকুটি,ধরান,সাগরমাথা। অন্য দিকে দূরে মিম-নাগরি রেন্জ, সিঙ্গালিলা রিজ বেয়ে সান্দাকফু, ফালুট, নিচে রঙভঙ নদী মন্দির,গোপালধারা চা, গোলপাহাড় দৃশ্যকেন্দ্রের অপূর্ব ঢাল, ওকেটি চা, থুর্বো চা ও কারখানা পেরিয়ে মিরিক।সুখিয়া পোখরি জনপদ থেকে চার মিনিট পা-পথে গুরাশে বন-রিসর্ট সুন্দর,তবু বাজার-মোড় দেখে বেজার হলে স্রেফ হেঁটে সাত কিমি বনপথে বাঁয়ে  নিচে মায়ু নদী দেখে মান ভাঙিয়ে মানেভঞ্জন যেতে পারেন।

যদি জাদু না জানে পাহাড়-উপত্যকার তাবৎ কচি-কলাপাতা,শ্যাওলা,ঘাস,পান্না,ঘনসমুদ্র রঙের কেশর-দোলানো, মখমলি টেরি-বাগানো শ্যামল-ছাতামেলা ছুঁচোমুখোরা, জেদ ধরে তা হলে কেমন করে দু কিমি চড়াইপথে জোর করে জোড়পোখরিতে নিয়ে যায়, যা কিনা এ জায়গার রত্নমুকুট ! বিরল সেই মায়াময় পথ-গুহা প্রবেশে দৃপ্ত সবুজ সেনাদলের ছাতার সরুমাথার নকশিকাঁথা গাঁথা থাকে। কল্কে-ধাঁচের জলতল, আরেক চৌকোপানা পুকুর মিলে জোড়পোখরির যুগল-কেন্দ্র।কুয়াশা-স্নানের পরে চারপাশের ছত্রীসেনা  পালা করে জোড়া-আয়নায়  উঁকি মেরে সোঁদা-চুল সামলে নেয়।সেই বাঁধানো পাহাড়মাথার চত্বরে স্বর্গচূড়া সাজানো : সর্পিল পথ,রেলিঙ-খাড়াই বেয়ে বনময় খাদ,সেতু, সিঁড়ি, ছাউনিঘর, ফুলবাগান, নিরালাবাস,দোকান,পার্ক,শিবমন্দির,খামারবাড়ি,বসত।নিচে গহন বনপথে সাদা বৌদ্ধ পতাকার সার হাতছানি দেয়।

জোড়পোখরি যাবার রোমান্টিক খাড়াপথে প্রথমে অস্পষ্ট বিষন্নতার কুয়াশা ঝোলে,মগ্ন পর্দা ঢেকে রাখে।তারপর অহংকারী সরলতরুর মাঝে ঢুকে পড়ে স্বপ্নমাখা জটিল মেঘ নিজে।শেষে মেঘদূতেরা বলশালী বৃক্ষে আটকা পড়ে যেতে খোদ বাস্তবের ধারণা বদলে কোন অবচেতনের ধূসর অলীক দেশ মনে হতে থাকে।ঘোর কাটিয়ে উঠতে আশ্চর্য  নির্জন সমতল, বুঝি নিতান্ত অনিচ্ছায় ছেড়ে গেছে অধিবাসীরা।তীব্র বাতাস টানা আদরে মহার্ঘ পাতায় বিলি কেটে চলে।কুশীলবহীন নাটক হারানো চিত্রনাট্যের খোঁজে শীর্ষসাধনার মহড়া দেয়।কখন কয়েক দানা মেঘজলের প্রসাদ খসে পড়ে।মন ভার,মুখ আঁধার,আবছা চারধার।মাঝদুপুরে এমন সাঁঝ,এমন চারুকাজ দেখে এক ধবল-গাই ঘাসকাজ বকেয়া রেখে লগ্নভ্রষ্ট লাবণ্যের কাছে নত হয়।মেঘমস্তানি উপেক্ষা করে দুই তরুণ শৈশব ফিরিয়ে আনে পুঁতির মালা পাকিয়ে ফুটবল বানিয়ে।উপকরণের অভাব কোন যুগেই খেলার বাধা নয়।বেঞ্চে বসা দর্শকদের মতো আমাদের মনেও আনন্দের ছোঁয়াচ।এখানে মন ভালো করা বিকেল মানে মেঘ মজেছে, ভিজে হাওয়া বুক হাল্কা করে।মুক্তির স্বাদ মালিশ করে দেয়।এ এক সুখের পুকুর,পুকুরচুরির মতোই দেশকালহীন চাঁদবদনীকে পেয়েছি।বিদায়, সুখের টঙশিখর !


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!