Advertisement
  • প্রচ্ছদ রচনা
  • ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৩

জম্মু-কাশ্মীরে আসনের পুনর্বিন্যাস। সুপ্রিম কোর্টে খারিজ বিরোধিতার আর্জি। শীর্ষ-রায় সরাসরি উড়িয়ে দিলেন মেহবুবা

ভুস্বর্গে ভোটের নামে প্রহসন কি আদৌ থামবে ? নির্বাচনে জনযোগ কতটা বাড়বে ?

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
জম্মু-কাশ্মীরে  আসনের  পুনর্বিন্যাস।  সুপ্রিম  কোর্টে খারিজ বিরোধিতার  আর্জি। শীর্ষ-রায় সরাসরি উড়িয়ে দিলেন মেহবুবা

জম্মু-কাশ্মীরের নির্বাচন কেন্দ্রের আসন পুনর্বিন্যাস বিষয়ক কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে দ্বারস্থ হয়েছিলেন যাঁরা,তাঁদের আবেদন খারিজ করে দিল শীর্ষ আদালত।

কেন্দ্রশাসিৎ অঞ্চলের নির্বাচন কেন্দ্রের  পুনর্বিন্যাসের পর ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দেয়। বিজেপি ছাড়া  প্রায় সব দলই বিরোধিতা আরম্ভ করে। পিডিপি এবং ন্যশনাল কনফারেন্স সরাসরি দাবি তোলে, বিজেপির নির্বাচনী সম্ভাবনাকে প্রশস্ত করতে আসনের পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। তারপর হাজি আব্দুল গনি ও মহম্মদ আইয়ুব নামের দুই ব্যক্তি কেন্দ্রীয়  সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে    সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। তাঁদের আবেদনে বলা হয়, এই ধরনের পুনর্বিন্যাসের সাংবিধানিক বৈধতা কোথায়? সোমবার সেই আবেদন খতিয়ে দেখে সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতি  এস কে কাউল  ও এ এস ওকা  তাঁদের আবেদন খারিজ করে দেন। বিচারপতি এ এস ওকা বলেছেন, ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারকে  কেন্দ্র করে মামলা চলছে। ওই মামলার নিষ্পত্তি হয়নি। ওই মামলা বিচারাধীন। এ কারণে নতুন মামলা করা যায় না। 

 পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি এক বিবৃতিতে বলেছেন, সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তকে আমল দিতে আমরা রাজি নই। বিরোধীরা আসন পুনর্বিন্যাস কমিশনকে প্রত্যাখান করেছে। পুনর্বিন্যাস আইন, ২০১৯  এখনও সর্বোচ্চ আদালতের বিচারাধীন। কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদার অবলুপ্তি নিয়ে যে মামলা হয়েছে সেটার রায় এখনও ঘোষিত হয়নি। নির্বাচন কেন্দ্রের  পুনর্বিন্যাস নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট কোনো সিদ্ধান্ত জানাতে পারে না। এটা মাননীয় আদালতের এক্তিয়ারের বাইরে। আসন পুনর্বিন্যাস করে কোথাও সংখ্যাগুরুকে সংখ্যালঘু  দেখানো হয়েছে, কোথাও সংখ্যালঘু সংখ্যাগুরুতে পরিণত। এটা বিজেপির রাজনৈতিক কৌশল। এজন্য পুনর্বিন্যাস নিয়ে কোনো ধরণের আলোচনায় পিডিপি যোগ দেবে না।

 

 ২০১৯ সালে ৫ আগষ্ট সংসদে বিল পাশ করে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার করা  হয়। তখনই কেন্দ্র  সিদ্ধান্ত নেয়, কাশ্মীরকে  দুটো কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাগ করা হবে।  একটি লাদাখ আর অন্যটি জম্মু-কাশ্মীর। গত বছর মে মাসে নির্বাচন কেন্দ্রর সীমানা নির্ধারন কমিশন তার বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়ে দেয়, ৯০ টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ৪৩ টি জম্মুতে আর বাকি ৪৭ টি থাকবে কাশ্মীরে । এর মধ্যে ৯  বিধানসভা তফশিলিদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে । লোকসভা কেন্দ্রের সংখ্যা  ৫। প্রতিটি কেন্দ্রের  অধীনে ১৮ বিধানসভা। কমিশনের ঘোষণার পরেই উপত্যকার ভেতরে ও বাইরে ব্যাপক   বিতর্ক দেখা দেয়। বিরোধীদের অভিযোগ, ভোটে  ফায়দা তুলতে  সাংবিধানিক রীতিনীতির লঙ্ঘন করে কেন্দ্রে আসন পুনর্বিন্যাসের চেষ্টা করছে।

আজ সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিয়েছে তাতে  বিজেপির  সুবিধা বাড়বে। বহুদিন থেকে গেরুয়া শিবির  জম্মু এলাকার ভেতরে ও বাইরে  তাদের ভোটের ভিত্তি বাড়াতে চাইছে। নানা রকম কৌশল নিয়েও  রাজনৈতিক আধিপত্য স্থাপিত  করতে পারেনি। কাশ্মীর উপত্যকায় ভোট কখনো সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ হয় না।  নির্বাচনে কাশ্মীরিদের অংশগ্রহণের শতকরা হারও উল্লেখযোগ্য নয়।  সাধারণের  ধারণা, ভোটের নামে প্রহসন চলে ভোট হয় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার আয়ত্তে। দ্বিতীয়ত, জঙ্গিরা নির্বাচন বানচাল করতে অতিশয়  সক্রিয় হয়ে ওঠে। পাকিস্তানও সীমান্তের ওপার থেকে উস্কানি জুড়ে দেয়। সুষ্ঠু নির্বাচন মানেই  কাশ্মীরে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সাফল্য। এই সাফল্যকে বিফল করতে সন্ত্রাসবাদী বিভিন্ন গোষ্ঠী  যেমন  অতিরিক্ত তৎপরতা দেখায়, তেমনি  ক্ষমতাসীন দল তার যৎসামান্য ভিত  নিয়েও ভোটকে প্রভাবিত করে। এই প্রক্রিয়া স্বাধীনতার পর থেকে অব্যাহত। একমাত্র  জনতা দলের আমলেই সুষ্ঠু ভোট হয়েছিল। নির্বাচনে জনগনের অংশগ্রহণ ছিল স্বতঃস্ফূর্ত। এর আগে কিংবা পরে সব নির্বাচনই নামে ভোট কার্যত  গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ওপর  জবরদস্ত চোট। এই ভুল ট্র্যাডিশনের স্রোত কাশ্মীরে হামেশা বইছে। আসন পুনর্বিন্যাসের পর রক্তাক্ত কাশ্মীর কতটা রেহাই পাবে বলা মুশকিল। জওহরলাল  নেহেরু, লাল বাহাদুর শাস্ত্রী, বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং-এর মতো দূরদর্শী প্রধানমন্ত্রীদের দৃষ্টিপাত স্থায়ী  হয়নি।  রক্তপাতে বার বার ভেসে গেছে চড়াই-উৎরাই উপত্যকা ও তার সংলগ্ন এলাকা। অটলবিহারী বাজপেয়ী চেয়েছিলেন–গণতন্ত্র, মানবতা  আর কাশ্মীরিয়তের  মসৃণ প্রতিষ্ঠা। কবি প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন মহাশূন্যে উড়ে গেছে। তাঁর  সুবুদ্ধির বাণী হয়তো নিভৃতে কাঁদছে। সেদিকে নজর নেই কেন্দ্রীয় শাসকের। বিরোধীরাও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। আমাদের অনুমান, কাশ্মীর তখনই কাশ্মীরিয়তে ফিরে আসবে যখন সুলতান জয়নুল আবেদিনের সাধনার পুনর্নিমাণ ঘটবে। যখন বাজপায়ীর স্বপ্ন ছোঁয়া বাস্তবতার বিন্যাস ও পুনর্বিন্যাসে সূর্য উঠবে হরি পর্বতে। 


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!