- এই মুহূর্তে বৈষয়িক
- মার্চ ৭, ২০২৫
ধারাভিতে আদানির প্রকল্পে স্থগিতাদেশের আর্জি খারিজ সুপ্রিম কোর্ট

সুপ্রিম কোর্ট আদানি গ্রুপের পুনর্নির্মাণ প্রকল্প স্থগিত করবার আবেদন খারিজ করেছে। তবে প্রকল্পের অর্থপ্রদান একটি নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পরিচালনা করতে নির্দেশ শীর্ষ আদালতের।
শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট আদানি গ্রুপ কর্তৃক পরিচালিত মুম্বাইয়ের এশিয়ার বৃহত্তম বস্তি ধারাভির পুনর্নির্মাণের প্রকল্পটি স্থগিত করবার আবেদন খারিজ করেছে। ২০২২ সালে বিজেপি-শিন্ডেসেনা জোটের সরকার এশিয়ার বৃহত্তম বস্তি ধারাভির পুনর্গঠন প্রকল্পের পুরনো বরাত বাতিল করেছিল। নতুন দরপত্রের ভিত্তিতে উন্নয়ন প্রকল্পের ভার দেওয়া হয় আদানি গোষ্ঠীকে। ৫০৭০ কোটি টাকার নতুন দরপত্র দিয়ে বরাত জিতেছিল গৌতম আদানির সংস্থা আদানি প্রপার্টিজ়। সেই সঙ্গে ২০১৮ সালের বরাত বাতিলকে কেন্দ্র করে বিতর্কের সূত্রপাত হয়। সেই বরাত পেয়েছিল চেয়ে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির সংস্থা সেকলিঙ্ক টেকনোলজিস কর্পোরেশন। ২০২৪ সালের বোম্বে হাইকোর্টের আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে শীর্ষ আদালতে আবেদন করা হয়। সে সময় দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিললেন বিরোধীরাও। অবশ্য অনিয়মের সব অভিযোগ উড়িয়ে মহারাষ্ট্রে বিজেপি জোটের সরকার দাবি করেছিল, করোনার পরে অর্থনীতির পরিস্থিতি বদলের জন্যই এই সিদ্ধান্ত।
প্রকল্পের কাজ ইতিমধ্যেই অনেকদূর এগিয়ে গেছে, আদানি গ্রুপের তরফ থেকে এ কথা জানানোর পর প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ স্থগিতাদেশের আবেদন নাকজ করে দেয়। তবে প্রকল্পের অর্থপ্রদান একটি নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পরিচালনা করতে নির্দেশ দিয়েশে শীর্ষ আদালত। এছাড়াও নথিপত্র সব সঠিকভাবে বজায় রাখতে বলা হয়েছে। শুনানিতে, আদানি গ্রুপের পক্ষে অভিজ্ঞ আইনজীবি মুকুল রোহাতগি বলেন, ‘কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে, শত শত শ্রমিক ইতিমধ্যেই সেখানে কাজ শুরু করেছেন। সাইটে অবস্থিত একটি ভারতীয় রেলওয়ের কোয়ার্টার ভেঙে ফেলার কাজ চলছে ।’ সেকলিংকের পক্ষের আইনজীবি সি আর্যমা সুন্দরম বলেন, তাঁদের কোম্পানি দরকার পড়লে আগামী দিনে নিজেদের দরপত্র আরও ২০ শতাংশ বাড়াতে রাজি আছে। মূল ৭,২০০ কোটি টাকার দর ২০ শতাংশ বাড়িয়ে ৮,৬৪০ কোটি টাকা করতে তাঁরা প্রস্তুত। বেঞ্চ এরপর সংশোধিত প্রস্তাবের ব্যাখ্যা দিয়ে একটি হলফনামা দাখিল করতে বলেছে। একই সঙ্গে এই নিয়ে মহারাষ্ট্র সরকার ও আদানি গোষ্ঠীকে নোটিস দেওয়া হয়েছে, যাতে আগামী ২৫-মের মধ্যে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেন তাঁরা।
২০২২ সালের নভেম্বরে, ‘আদানি প্রপার্টিজ’ মধ্য মুম্বাইয়ের প্রায় ২৫৯ হেক্টর বস্তি এলাকার পুনর্নির্মাণের দরপত্র জিতে নেয়। ৫,০৬৯ কোটি টাকা দরপত্র দেওয়ার পর আদানি গ্রুপকে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। রেলওয়েকে ২,৮০০ কোটি টাকা দেওয়ার পর, দরের মোট পরিমাণ দাঁড়ায় ৭,৮৬৯ কোটি টাকা। ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪-এ, বোম্বে হাইকোর্টে ধারাভি পুনর্নবীকরণ প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে আবেদন করে সেকলিঙ্ক টেকনোলজিস কর্পোরেশন। বম্বে কোর্ট সে আবেদন খারিজ করে দেয়। শুনানিতে বলা হয় টেন্ডারের সমস্ত শর্ত মেনে ও প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সর্বোচ্চ মূল্য দিয়ে আদানি গ্রুপ এই প্রকল্পের দায়িত্ব পেয়েছে। আদানি প্রপার্টিজের এই প্রাপ্তির পক্ষে দাঁড়ানো মহারাষ্ট্র রাজ্য আবাসন বিভাগের ১৩ জুলাই, ২০২৩ সালের সরকারি রেজোলিউশন আর গত বছরের ১৭ জুলাই জারি করা পরবর্তী কার্যাদেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিল এসটিসি।
মহারাষ্ট্রের অন্যতম পরিচিত ও সুবিশাল জায়গা ধারাভি বস্তির পুনর্নিমানের কাজ বিগত ১৫ বছরে বারবার ধাক্কা খেয়েছে। সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে প্রকল্পের গতিমুখও বদলেছে। গত এক দশকে অন্তত ৪ বার এ নিয়ে টেন্ডার ডেকেছে মহারাষ্ট্র সরকার। শেষ পর্যন্ত সে কাজের ভার গ্রহণ করে গৌতম আদানির গোষ্ঠী। এবার প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও, উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে আশঙ্কায় স্থানীয়রা। বাসিন্দাদের একাংশের ধারণা এর ফলে ধারাভির নিজস্বতা ধ্বংস হয়ে যাবে। ভারতে বেড়াতে আসা বিদেশিরা আর তাঁদের বসতিতে আসবেন না। অর্থনৈতিক ও সামাজিক স্তরে ক্ষতিগ্রস্থ হবেন তাঁরা।
❤ Support Us