- ন | ন্দ | ন | চ | ত্ব | র
- জুন ৭, ২০২২
ঠাকুরবাড়ির প্রাঙ্গনে, স্মরণে অনিঃশেষের কবি।গানে, কবিতায়, আবৃত্তিতে, নৃত্যালেখ্যে আলোকিত জোড়াসাঁকো।

শহুরে উচ্চ ও মধ্যবিত্তের জীবনবৃত্তে রবীন্দ্রনাথের উপস্থিতি সারা বছর জুড়ে আমরা অনুভব করি। ২৫ বৈশাখ এলে কবির অনুভূতির তীক্ষ্ণতায় মেতে ওঠার অভ্যাস কখনও ম্লান হয় না। মাস-দুমাস ধরে সাড়ম্বর আয়োজন চলতে থাকে । এবছর কবির জন্মজয়ন্তীর আয়তন অনেকটাই বেড়ে গেছে। এ ব্যাপারে গত দুবছরের শূন্যতা পূর্ণ করতে দুই-বাংলা প্রায় একাট্টা।এক্ষেত্রে জোড়াসাঁকের ঐতিহ্যবাহী রবীন্দ্র ভারতী সোসাইটির ভাবাবেগ অন্যরকম। অনিঃশেষের কবিকে নতুন করে খুঁজে পেতে চাইলেন সোসাইটির কর্মকর্তারা। ২২ থেকে ২৯ মে, টানা আট দিন নানারকম অনুষ্ঠানে স্মরণ করলেন কবিগুরুর ১৬১ তম জন্মোৎসব। সোসাইটির নিজস্ব প্রেক্ষাগৃহ, রথীন্দ্রমঞ্চে। পাশাপাশি ২৪ মে, পালিত হয় কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তীও। এই উদযাপনও যেমন বৈচিত্রে ভরপুর, তেমনি নান্দনিকতায় পরিপূর্ণ।
রবীন্দ্র স্মরণের প্রতিটি সন্ধ্যায় বিশেষ আকর্ষণ ছিল বক্তৃতা, সম্মেলক গান, সমবেত আবৃত্তি, একক আবৃত্তি, একক সঙ্গীত পরিবেশন, নৃত্যালেখ্য, মঞ্চনাটক আর দর্শক আসনে বসে থাকা শহররে বিদগ্ধজনেরা ।২২মে, অনুষ্ঠানের সূচনা করেন সোশাইটির সভাপতি, বিচারপতি, চিত্ততোষ মুখোপাধ্যায়। বাংলার চিরায়ত গৌরব, স্যার আশুতোষ মুখ্যাপাধ্যায়ের যোগ্য উত্তরপুরুষ।প্রতিদিন বিশিষ্ট অতিথি সমাবেশকে আলোকিত করে তোলেন, লেখক-উপাচার্য শিবাজী প্রতিম বসু, চন্দননগর পুরসংস্থার মেয়র রাম চক্রবর্ত্তী, বন্ধন ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান চন্দ্রশেখর ঘোষ, রবীন্দ্র ভারতী সোসাইটির নির্বাহী সভাপতি সুজিত কুমার বসু, কর্মপরিচালন সমিতির সদস্যা অমিতা দত্ত, রবীন্দ্রবিশেষজ্ঞ সত্যকাম বাগচী, বাংলাদেশের নজরুল বিশেষজ্ঞ শামসুল হুদা, কলকাতার উপ-মহানাগরিক অতীন ঘোষ, আন্তর্জাতিক খ্যাতির চিকিৎসক ডাঃ সুকুমার মুখোপাধ্যায়, ডাঃ জি পি সরকার, বিচারপতি সৌমিত্র পাল, কেসি দাশের প্রাণপুরুষ ধীমান দাশ, বিধায়ক-সম্পাদক বিবেক গুপ্তা, স্থানীয় পৌরপিতা রাজেশ সিনহা, প্রাক্তন বিধায়ক দীনেশ বাজাজ প্রমুখ। প্রতিদিনের অনুষ্ঠানের শুরুতে ঋদ্ধ ভাষণ দিয়ে রবীন্দ্রনাথের প্রাসঙ্গিকতা আর তাঁর কালোত্তীর্ণ প্রতিভার বিশেষ বিশেষ দিক স্মরণ করিয়ে দেন সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়—-যিনি কেবল সফল পেশাদার নন, নানা গুণের আধার এবং সংস্কৃতিক বহুত্ব রক্ষার অতন্দ্র প্রহরী । তিনি এবং তাঁর সহযোগীদের নিষ্ঠা আর পরিশ্রমে রবীন্দ্রজয়ন্তীর বহুমাত্রিকতা এবার যেন বহুগুণে এবং আয়তনে অনেকটা বেড়ে গেল।

নৃত্যগুরু বন্দনা সেন ও সুচন্দ্রা ব্যানার্জি মিত্রে-র ‘শ্রীমদ্ভাগবত গীতা ও গীতাঞ্জলি’ নৃত্যালেখ্য যে মুগ্ধতা ছড়িয়ে দেয় তা অভূপূর্ব ।
আট দিনের আনুষ্ঠানিক আলো এলাকার ঘিঞ্জি অন্ধকারকে দূরে সরিয়ে আমাদের নিকটে নিয়ে এল জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির ঐতিহ্য আর গুরুগম্ভীর সংস্কৃতির বিস্তারকে। এই যেমন, নৃত্যগুরু বন্দনা সেন ও সুচন্দ্রা ব্যানার্জি মিত্রে-র ‘শ্রীমদ্ভাগবত গীতা ও গীতাঞ্জলি’ নৃত্যালেখ্য যে মুগ্ধতা ছড়িয়ে দেয়, তা বহুদিন দর্শকের মনে থাকবে। বিভিন্ন দিনের অনুষ্ঠানে একক সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন—গৌতম মিত্র, রাজেশ্বর ভট্টাচার্য্য, লোপামুদ্রা মিত্র, শিঞ্জিনী আচার্য্য মজুমদার, অগ্নিভ বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজশ্রী ভট্টাচার্য্য, সুস্মিতা গোস্বামী, শম্পা কুণ্ডু, সোনালী কাজী, সৈকত মিত্র, শৌণক চট্টোপাধ্যায়, চন্দ্রাবলী রুদ্র দত্ত, দীপাবলী দত্ত, অনুশীলা বসু, দেবমাল্য চট্টোপাধ্যায়, এরিনা মুখোপাধ্যায়, সুমন পান্থী, অলোক রায়চৌধুরী, স্বপন সোম, দেবারতি সোম, মনোজ, মনীষা মূরলী নায়ার, রীনাদোলন বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্রীতমা রায়, জয়ন্তী সরেন, পিয়া গুহ রায়, মালবিকা বোস, পার্থজিত সেনগুপ্ত, সৌমি বসু সহ বহু গুণী শিল্পী। আবৃত্তি করেন ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়, মধুমিতা বসু, ঈশিতা দাস অধিকারী, মেধা বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রবীর ব্রহ্মচারী, স্বপ্না দে, কাজল সুর, ইন্দিরা ব্যানার্জি, দোলনচাঁপা সরকার, শ্রাবন্তী সাহা, মিতা ঘোষ, সলিল সরকার, সাবিনা ইয়াসমিন, শতানীক ভট্টাচার্য, অমল পাহাড়ী, বাসবী চৌধুরী, শম্পা বটব্যাল, বর্ণালী সরকার, রূপা মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। ২৯ মে, শেষ সন্ধ্যায় রবীন্দ্র ভারতী সোসাইটির নাট্যকলাকুশলী অভিনীত মঞ্চনাটক ‘মানভঞ্জন’ -য়, রবীন্দ্র মননের রোমান্টিকতা আর হাস্যরসিকতাকে নতুন করে সামনে নিয়ে এল শ্যামলী বসু রূপায়িত
নাট্যরূপ। নাট্য নির্দেশনায় প্রসেনজিত ঘোষ ও দেবাশীষ সেনগুপ্তের দক্ষতা প্রমাণ করল তাঁরা থেমে যাওয়ার পাত্র নন, দৃষ্টি তাঁদের সামনে আরো সামনে।
❤ Support Us