- দে । শ
- নভেম্বর ৮, ২০২৩
বাঁকুড়ায় বিজেপি কর্মীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার, শুভেন্দুর অভিযোগের তীর তৃণমূলের দিকে
বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাটি থানার নিধিরামপুর গ্রামে এক বিজেপি কর্মীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার ঘিরে জোর উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। বুধবার সকালে বাড়ির কাছেই নিধিরামপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে একটি বটগাছের ডালে নাইলন দড়িতে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় শুভদীপ মিশ্র নামে ওই বিজেপি কর্মীকে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। ওই খবর ছড়িয়ে পড়তেই প্রকৃত তদন্তের দাবিতে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন বিজেপি ও স্থানীয় বাসিন্দারা।
TMC goons have murdered Subhadeep Mishra and hung his body from a tree with his hands tied.
Subhadeep Mishra of Bankura District was a @BJP4Bengal Candidate who contested the 2023 Panchayat Elections from the Nidhirampur 257 No. Booth; at Lotiyaboni Anchal of Gangajalghati Block… pic.twitter.com/DT09YXpJec
— Suvendu Adhikari • শুভেন্দু অধিকারী (@SuvenduWB) November 8, 2023
এদিকে এই ঘটনায় রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে শুভদীপ মিশ্রর মৃত্যুর জন্য তৃণমিলকে দায়ী করে লিখেছেন, “তৃণমূলের গুন্ডারা শুভদীপ মিশ্রকে খুন করে হাত বেঁধে গাছে ঝুলিয়ে দিয়েছে। শুভদীপ মিশ্র ছিলেন বাঁকুড়া জেলার গঙ্গাজলঘাটি ব্লকের লোটিয়াবনি আঁচলের নিধিরামপুর ২৫৭ নম্বর বুথ থেকে ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থী; এই এলাকাটি সালতোরা বিধানসভা কেন্দ্রর অন্তর্গত। শুভদীপ মিশ্রকে হত্যা করা হয়েছে কারণ তাঁর ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা তৃণমূলের চোর ও গুন্ডারা হজম করতে পারছিল না, আর তিনি তৃণমূলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব থাকার জন্য তৃণমূলের সমস্যা হচ্ছিল।”
এই ঘটনা প্রসঙ্গে তৃণমূল নেতা নিমাই মাজি বলেন, ‘‘ঘটনা আত্মহত্যা কি না তা তো তদন্তেই বোঝা যাবে। পারিবারিক কারণেই এই ঘটনা বলে আমার ধারণা। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই।’’
এই মৃত্যুর ঘটনায় বাঁকুড়া জেলার পুলিশ সুপারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শুভেন্দু অধিকারী। তিনি তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে এই প্রসঙ্গে লিখেছেন, “বাঁকুড়া জেলা পুলিশকে এই ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করতে হবে। গত মাসে এসপি দ্বারা জারি করা একটি আদেশ এখানে সংযুক্ত করা হয়েছে। মনে হচ্ছে তিনি তার পদের সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে সরাসরি নিয়ন্ত্রণ লাভ করতে চেয়েছিলেন। এই আদেশটি রাজনৈতিক প্রকৃতির বলে মনে হচ্ছে এবং এই নির্দেশটি প্রশাসনিক নয়। জেলা পুলিশ আসলে ইউনিফর্ম পরা তৃণমূল ক্যাডার ছাড়া আর কিছুই নয়। তাদের একমাত্র কাজ হল যতদিন সম্ভব তৃণমূল দলের অস্তিত্ব বজায় রাখা নিশ্চিত করা।
আমি এই ঘটনায় সিবিআই তদন্তের দাবি করছি কারণ পুলিশ তাদের রাজনৈতিক প্রভুদের খুশি করার জন্য ক্ষমতাসীন তৃণমূল দলের সাথে জড়িত অপরাধীদের প্রমাণ নষ্ট করবে এবং তাদের রক্ষা করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবে।”
বুধবার সকালে ঘটনাস্থলে গঙ্গাজলঘাটি থানার পুলিশ গেলে তাদের ঘিরে বিক্ষোভে শুরু করেন এলাকাবাসী। পুলিশ কুকুর এনে তদন্তের দাবি জানানো হয়। এ ভাবে প্রায় পাঁচ ঘন্টা ধরে দেহ আটকে রেখে চলে বিক্ষোভ। তার পর ময়নাতদন্তের জন্য পুলিশ দেহ নিতে গিলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপির প্রার্থী হয়েছিলেন শুভদীপ ওরফে দীপু। এলাকায় তাঁর যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। অন্যের বিপদ আপদে সবার আগে গ্রামবাসীরা তাঁকে পাশে পেতেন। কিন্তু দিন সাতেক আগে হঠাৎই উধাও হয়ে যান দীপু। অভিযোগ ওঠে, ওই বিজেপি কর্মীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল প্রতিবেশী এক গৃহবধূর। এই নিয়ে নাকি অশান্তি শুরু হয়। ওই গৃহবধূর শ্বশুরবাড়ি এবং বাপের বাড়ির তরফে দীপুকে খুনের হুমকি দেওয়া হচ্ছিলও বলেও অভিযোগ এবং এ জন্যই সাত দিন আগে দীপু বাড়ি ছাড়েন।
মৃত বিজেপি কর্মীর পরিবারের বক্তব্য, মঙ্গলবার দীপু বাড়িতে ফেরেন। কিন্তু বুধবার ভোরে বাড়ির অদূরে প্রাথমিক বিদ্যালয় চত্বরে থাকা একটি বটগাছের ডালে তাঁর ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান এলাকাবাসী। ওই যুবককে প্রতিবেশী মহিলার আত্মীয়েরাই খুন করেছেন, এমন অভিযোগ করেছেন গ্রামবাসীরা। দোষীদের প্রত্যেককে গ্রেফতার করতে হবে, এই দাবি তুলে বিক্ষোভ শুরু করেন গ্রামের মানুষ। ভাঙচুর করা হয় প্রতিবেশী ওই মহিলার বাড়িও। ওই মহিলা-সহ তাঁর পরিবারের তিন জনকে পুলিশ আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে গ্রামবাসীরা প্রথমে বাধা দেন। খবর পাওয়ার পরই ঘটনাস্থলে পৌঁছন শালতোড়ার বিজেপি বিধায়ক চন্দনা বাউরি এবং তৃণমূলের গঙ্গাজলঘাটি-২ নম্বর সাংগঠনিক ব্লকের সভাপতি নিমাই মাজি। চান্দনা বাউরি বলেন, ‘‘পরিবারের দাবি, দীপুকে খুন করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনার তদন্তে ঢিলেমি করছে। এতেই পরিষ্কার যে এই ঘটনার পিছনে রাজনৈতিক কারণ থাকলেও থাকতে পারে।’’ পরে মৃতের গলা থেকে ফাঁস খুলে দেহ গাড়িতে চাপিয়ে পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতেই শালতোড়ার বিধায়ক পুলিশের গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েন। বিক্ষোভে শামিল হন স্থানীয় বাসিন্দারা। পুলিশ জোর করে বিধায়ককে সরিয়ে নেয়। চন্দনা বাউড়ির অভিযোগ, ‘‘পুলিশ ঘটনা ধামাচাপা দিতে চাইছে। আমি তদন্তের দাবি জানালে আমাকেও হেনস্থা করেছে পুলিশ। রাজ্যে গণতন্ত্র বলে কিছু নেই। আমরা তদন্তের দাবি থেকে নড়ছি না।”
❤ Support Us