- প্রচ্ছদ রচনা বি। দে । শ
- ডিসেম্বর ৯, ২০২৪
সিরিয়ায় ৫৩ বছরের আসাদ–সাম্রাজ্যের পতন, দেশ ছেড়ে মস্কোতে আশ্রয় ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশারের
দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে গৃহযুদ্ধ সামাল দিলেও অবশেষে পতন ঘটল বাশার আল–আসাদের। মাত্র ১২ দিনেই পরিসমাপ্তি তাঁর ২৪ বছরের শাসনকালের। একই সঙ্গে অবসান ঘটল সিরিয়ায় ৫৩ বছরের আসাদ–সাম্রাজ্যের। দেশ ছেড়ে পালিয়ে সপরিবার রাশিয়ার মস্কোতে আশ্রয় নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বাশার আল–আসাদ।
বেকারত্ব, দুর্নীতি, মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে ২০১১ সালের মার্চে বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন সিরিয়ার জনগন। বিদ্রোহীদের দমন করতে কড়া পদক্ষেপ নেয় আসাদ–সরকার। সুন্নি মুসলমানদের ওপর প্রবল অত্যাচার চালায় আসাদ–বাহিনী। শুরু হয় রক্তাক্ত গৃহযুদ্ধ। গৃহযুদ্ধের শুরুতে ২০১১ সালে আসাদ সরকারের সবচেয়ে বড় সহযোগী ছিল রাশিয়া এবং ইরান। রাশিয়ার বিমান এবং হিজবুল্লাহর সেনাবহরের সাহায্যে বিদ্রোহী গোষ্ঠীদের পিছু হটাতে সাফল্য পেয়েছিল সরকার। ওই বছরের নভেম্বরেই শান্তি আলোচনার জন্য আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলি আসাদ সরকারের ওপর চাপ দিতে থাকে। রাষ্ট্রপুঞ্জের উদ্যোগে সংঘর্ষ–বিরতি চুক্তি সাক্ষরিত হলেও গৃহযুদ্ধ বন্ধ হয়নি। দীর্ঘদিন ধরেই সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছিল বিদ্রোহীরা। অন্যদিকে, আসাদ সরকারকে সমর্থন জানাচ্ছিল দুই মিত্রদেশ রাশিয়া ও ইরান।
রাশিয়া ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে ব্যস্ত থাকায়, আর ইজরায়েল নিয়ে ইরান ব্যস্ত থাকায় সিরিয়ার ওপর তেমন নজর দিতে পারছিল না। সেই সুযোগে সিরিয়ায় বিদ্রোহীরা আসাদ সরকারকে উৎখাত করার জন্য প্রবলভাবে ঝাঁফিয়ে পড়ে। একের পর এক শহর দখল করার দিকে এগিয়ে যায়। ২৭ নভেম্বর বিদ্রোহরা বাশার আল–আসাদের সরকারি বাহিনীর কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ শহর আলেপ্পোর নিয়ন্ত্রণ নেয়। পরে হামা শহরও দখল করে বিদ্রোহী যোদ্ধারা। এরপর অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে একের পর এক শহর নিয়ন্ত্রণে নিতে থাকে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল–শাম। এর মধ্যে ছিল হোমসসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শহর।
অন্যান্য শহর দখল করার পর দামাস্কাসের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে বিদ্রোহীরা। অবশেষে রবিবার সকালে দামাস্কাসে প্রবেশ করে। বিদ্রোহীদের আসতে দেখেই আসাদের সেনারা তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দেয়। এরপরই বিদ্রোহীরা শহরের ভেতরে প্রবেশ করে দামাস্কাসের দখল নেয়। একই সঙ্গে ২৪ বছরের আসাদ সরকারের পতন ঘটে। বিদ্রোহীরা দামাস্কাসের দখল নেওয়ার পরপরই আসাদের সেনাবাহিনী তাদের সঙ্গে যোগ দেয়। সাধারন মানুষ রাস্তায় নেমে এসে উৎসবে মেতে ওঠেন।
দামাস্কাস পতনের মধ্য দিয়ে সিরিয়ায় আসাদ পরিবারের ৫৩ বছরের শাসনের অবসান হয়েছে। সিরিয়ার রাজধানী দামাস্কাস এখন বাশারবিরোধীদের নিয়ন্ত্রণে। শহরের এক মসজিদে দেওয়া ভাষণে বিদ্রোহীদের নেতা আবু মহম্মদ আল–জোলানি বলেন, ‘এই বিজয় সিরিয়ার সব মানুষের।’ এর আগে এক বিবৃতিতে জোলানি বলেন, ক্ষমতা হস্তান্তরের আগে পর্যন্ত অন্তর্বর্তী দায়িত্বে থাকবেন ক্ষমতাচ্যুত সরকারের প্রধানমন্ত্রী মহম্মদ আল–জালালি।
🇸🇾‼️🚨 VICTORY SPEECH: The speech by Al Jolani from the Great Umayyad Mosque in the capital, Damascus. pic.twitter.com/XL35jvqK6x
— Lord Bebo (@MyLordBebo) December 8, 2024
এদিকে, দামাস্কাস শহর বিদ্রোহীরা দখল করার সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তিগত বিমানে সপরিবার পালিয়ে যায় ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল–আসাদ। প্রাথমিকভাবে বাশারের গন্তব্যস্থান নিয়ে নিয়ে ধোঁয়াশা শুরু হয়। দামাস্কাস থেকে বাসারের বিমান প্রথমে সিরিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলের দিকে উড়ে যায়। সেখান থেকে পরে আবার উল্টোপথে যায়। তিনি কোন দেশে গেছেন, তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। রুশ বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মস্কোয় আশ্রয় নিয়েছেন বাশার। সেখানে তাঁদের রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। সিরিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য আজ সোমবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে রুদ্ধদ্বার বৈঠক আয়োজনের অনুরোধ জানিয়েছে রাশিয়া।
❤ Support Us