- দে । শ বৈষয়িক
- মার্চ ১১, ২০২৩
দেশ জুড়ে আলু পেঁয়াজের দাম নিম্নমুখী।দেনার দায়ে বাড়ছে কৃষক আত্মহত্যা।ঋণের বলি মহারাষ্ট্রে ৮, বাংলায় ১
ঘোর বিপাকে কৃষকরা। আলু, পেঁয়াজের অতিরিক্ত উৎপাদনে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে দাম আলু, পেঁয়াজের দাম নিম্নগামী। জটিল পরিস্থিতি মহারাষ্ট্র, পঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ-সহ দেশের নানা রাজ্যে। অতিরিক্ত ফলন হওয়ায় কৃষকরা ফসল পুড়িয়েও দিচ্ছেন অথবা রাস্তায় ফেলে দিচ্ছেন।
সূত্রের খবর, মহারাষ্ট্রে কৃষকরা প্রতি কেজি পেঁয়াজ মাত্র এক টাকায় বেচে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। একই করুণ পরিস্থিতির শিকার অন্য কয়েকটি রাজ্যের পেঁয়াজ ও আলুচাষিরা। প্রসঙ্গত, খরিফ মরশুমে যে পেঁয়াজ উৎপন্ন হয়, সেগুলি আকারে রবি মরশুমে উৎপন্ন পেঁয়াজের চেয়ে ছোট। রবি মরশুমে উৎপন্ন পেঁয়াজ ৬ মাস পর্যন্ত নষ্ট হয় না। যদিও খরিফ মরশুমে উৎপন্ন পেঁয়াজ সাত থেকে আটদিনের মধ্যে বিক্রি না করলে নষ্ট হয়ে যাবে।
মহারাষ্ট্রে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা অজিত পাওয়ার। বিধানসভায় পাওয়ারের অভিযোগ, কৃষকদের সমস্যার সমাধানে উদাসীন রাজ্য সরকার। এর জেরে দিশাহারা কৃষকদের মধ্যে প্রতিদিন আটজন করে আত্মঘাতী হচ্ছেন।
একইভাবে বাংলাতেও আলু-পেঁয়াজ চাষিরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত। পশ্চিম মেদিনীপুরের ভগবানবাটি গ্রামে ৩০ বছরের এক আলুচাষি আত্মহত্যা করেছেন। মৃতের নাম তাপস রুইদাস। অন্যদিকে অতিরিক্ত ফলন হওয়ায় হিমঘরে আলু রাখার জন্যে আলুর বন্ড দেওয়াকে কেন্দ্র করে শুক্রবার কোচবিহারে আলুচাষিদের সঙ্গে পুলিশের খন্ডযুদ্ধ হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ।কূষক-পুলিশ সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আলুচাষি জখম হয়েছেন। জলপাইগুড়িতেও গতকাল আলুর বন্ড বিলি নিয়ে উত্তেজনা ছড়ায়। কৃষকদের অভিযোগ, হিমঘরে ফসল মজুত করার জন্য রাজ্য জুড়ে আলুর বন্ড কেনা নিয়ে চলছে ব্যাপক কালোবাজারি।
বিধানসভা চললেও রাজ্য সরকারের তরফে বিষয়টি নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। উপরন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলা কৃষিতে সফল বলে দাবি করেছেন। পাশাপাশি লাভজনক শস্য চাষের জন্য সওয়াল তুলেছেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান।
গতবছর ভারতীয় পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি আলু ১০ টাকায় বিক্রি করেছেন। এবছর দাম তলানিতে ঠেকে দাঁড়িয়েছে প্রতি কেজি চার টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত আলুচাষিরা জানিয়েছেন, প্রতি এক কেজি আলু উৎপাদনের জন্যে ব্যয় সাত থেকে আট টাকা। যেহেতু ক্ষতি অবশ্যম্ভাবী, সেকারণে আলু-পেঁয়াজ চাষিরা ফসল বাজারে পাঠাচ্ছেন না।
আলু-পেঁয়াজের অতিরিক্ত ফলন সম্পর্কে কৃষিবিদদের একাংশের মত, উত্তর-পশ্চিম ভারতে গত ফেব্রুয়ারিতে তাপমাত্রা অস্বাভাবিক বাড়াতে এই পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। ফসল পেকে গিয়েছে নির্ধারিত সময়ের আগেই। একই কারণে উত্তর ভারতেও ফুলকপির চাষ করে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাথায় হাত পড়েছে।
২০২০ সালে কেন্দ্রীয় সরকার কৃষি আইন কার্যকর করতে চাওয়ায় কৃষকরা দেশজুড়ে কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে নামেন। কৃষকদের আন্দোলনের জেরে কেন্দ্রীয় সরকার ২০২১ সালেই তিন কৃষি আইন প্রত্যাহার করে নেয়। এব্যাপারে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি অর্থনীতির অধ্যাপক রাকেশ সিং কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ নিয়ে বলেছেন, সেই আইন কার্যকর হলে বাজারে ক্রেতার সংখ্যাবৃদ্ধি হত। আলু-পেঁয়াজের দাম এতটা পড়ত না। রফতানিকারক থেকে শুরু করে হোটেল অ্যাসোসিয়েশনগুলি আলুপেঁয়াজ কিনে নিত।
অর্থনীতি বিশেষজ্ঞদের একাংশের অভিমত, কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে হিমঘরগুলির পরিকাঠামো শক্তিশালী করা দরকার। ফল ও সবজির প্রক্রিয়াকরণ উদ্দ্যোগকে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।সরকারি উদাসীনতা এক্ষেত্রে স্পষ্ট। মহারাষ্ট্র, পাঞ্জাব, বাংলার রাজনীতিকদের অভিমত, বিপুল ক্ষতি সামাল দিতে আলু, টম্যাটো এবং গম পাকিস্তান সহ প্রতিবেশি দেশে রফতানি করা যেতে পারে। কারণ প্রতিবেশি দেশে তীব্রতর হয়েছে খাদ্য সঙ্কট, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মূল্যবূদ্ধি। পাকিস্তানে এখন প্রতি কুইন্ট্যাল গমের দাম ৪ হাজার ২০০ টাকা। এছাড়া প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ৪০০ টাকা এবং প্রতি কেজি আলুর দাম ৫০০ টাকা। একইভাবে শ্রীলঙ্কাতেও আলু, পেঁয়াজের দাম আকাশ ছোঁয়া।
❤ Support Us