Advertisement
  • এই মুহূর্তে দে । শ
  • এপ্রিল ১২, ২০২৩

মঙ্গল শোভাযাত্রাকে হুমকি ! পুড়িয়ে দাও মূর্খ চিরকুট

বাড়ছে তারুণ্যের প্রতিস্পর্ধা, বাড়ছে সমবেত অঙ্গীকার

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
মঙ্গল শোভাযাত্রাকে হুমকি ! পুড়িয়ে দাও মূর্খ চিরকুট

গুজব আর হুমকিকে নস্যাৎ করে ঢাকা আর বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরে নববর্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি তুঙ্গে। বুদ্ধিজীবী, ছাত্রজনতা ঐক্যবদ্ধ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা পর্ষদ চত্বরে নানা ভঙ্গির মুখোশ গড়তে ব্যস্ত পড়ুয়ারা। এখানে ওখানে তাঁদের উৎসাহের প্রবল উচ্ছ্বাস আর অঙ্গীকারের ছবি ভেসে উঠছে।

রমজান চলছে। উপবাসের নিয়মের লঙ্ঘন নেই। জেদ আর মনের জোর প্রবলতর হয়ে উঠছে। ৪৮ ঘণ্টা পরেই ভোর থেকে রাস্তায় নামবে বাংলাদেশে নববর্ষ পালনের জনজোয়ার। বিদেশি বহু সমাজবিজ্ঞানী একাধিকবার বলেছেন, বাংলাদেশকে জানতে হলে নববর্ষের ঢাকা আর একুশে ফেব্রুয়ারির মধ্যরাতের সঙ্গী হতে হবে। বিশ্বের সমস্ত লোকায়ত পার্বণের শীর্ষে বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠানের অবস্থান সমাজতত্ত্ব আর লৌকিক চালচিত্রের উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত। এই চালচিত্রকে এবার আরো ছড়িয়ে দেওয়ার দাঢ্য অঙ্গীকার ঘোষণা করেছে বাংলাদেশের তারুণ্য।

বাংলাদেশ ছাড়াও পয়লা বৈশাখের মহাপর্ব সামাজিক উৎসব চেতনাকে বাড়িয়ে দিয়েছে এবার। আসামের বিহু আর পাঞ্জাবের বৈশাখী যেন বহু অঙ্গে , বহু রঙ্গে সেজে উঠছে। যেসব বিভাজক বহুত্ব আর বৈচিত্র্যের সংস্কৃতিকে রুখতে চায় নানা কায়দায়, নানা অছিলায় তাদের বিরুদ্ধে সরাসরি প্রতিষ্পর্ধা জাগিয়ে তুলছে সামাজিক ঐক্য। একথা বাংলাদেশে, পশ্চিমবঙ্গে আরো বেশি সত্য। এই সত্যের মোকাবিলায় কবন্ধ,অন্ধ, মূঢ় ও উগ্ররা মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রাক্কালে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। হুমকি দিচ্ছে।

ঢাকায় এই ধরনের হুমকি নতুন নয়। আশির দশকের গোড়ার দিকে এরশাদের আমলে আলপনা নকশার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল সরকার। বাংলাদেশ আমল দেয়নি। আত্মবিশ্বাস আর জাতীয় শক্তির সমস্ত শানিত শক্তি নিয়ে রাস্তায় বসে আলপনা এঁকেছেন ছাত্র ও শিক্ষকরা। তখন থেকে শুভ নববর্ষ আরো তেজিয়ান হয়ে ওঠে। এক্ষেত্রে নগরজীবন আর লোকজীবনের ঐক্যিক চেহারায় জাতীয় সংকল্প ঘোষণা করে বাংলাদেশ। সে সংকল্পের জমি বেড়েছে, শক্তি বেড়েছে, বেড়েছে তার সমাবেশও। বাংলাদেশে সম্প্রতি মঙ্গল শোভাযাত্রা রুখতে যে হুমকি দিয়েছে অদৃশ্য অপশক্তি, তাকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করছে বাঙালির বৌদ্ধিক আর ভাবাবেগতাড়িত প্রজন্ম। সম্ভবত একারণেই আসন্ন পয়লা বৈশাখের সমারোহের, মিছিলের, সদর্থক মুখোশের নৃত্যের মহিমা বহুবেশি বেড়ে গেল।

শোনা যাচ্ছে, বুধবার সকালে, ঢাকার শাহবাগ থানায় মঙ্গল শোভাযাত্রা বন্ধ করার হুমকির বিরুদ্ধে জিডি করেছেন আয়োজক কমিটির একজন সদস্য। নাম তার আবতাহি রহমান। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খবরটি নিশ্চিত করেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ইদ ও পয়লা বৈশাখকে ঘিরে নাশকতার হুমকি নেই। অনেকেই গুজব ছড়াচ্ছে। সমাজকে সতর্ক থাকতে হবে। সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার। আইন শৃঙ্খলাবাহিনী ও গোয়েন্দাদের।

বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যা বলেছেন, তা অবশ্যই প্রশাসনিক এবং আন্তরিক শুভেচ্ছার সঙ্গে জড়িত। অনেকেই জানেন, জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশের অন্যতম নিহিত শক্তি তার ভাবাবেগ, তার ঘোষিত আর স্বপ্নজারিত অঙ্গীকার। নদীমাতৃক আর কৃষিভিত্তিক বাংলাদেশ রাজনৈতিক সংজ্ঞায়নে, লক্ষ্যের অভিমুখে লোকায়ত পর্বকে যে অশেষ গুরুত্ব দিয়েছে, যা তার কেবল সুপরিকল্পিত, পরিপূর্ণ বাঙালিয়ানা অর্জনেরই নয়, তার বিশ্বমানব হয়ে ওঠার সাধনাকেও নিরন্তর খোরাক জোগাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রেও একথা সমানভাবে সত্য। পয়লা বৈশাখ নিছক একটি পার্বণ নয়, লৌকিক ও নাগরিক সংস্কৃতির যৌথ আর মহামানবিক মহড়া। তার আহারে, বিহারে, তার ধমনীর তরঙ্গে জেগে ওঠে– এসো হে, বৈশাখ। এসো, এসো।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!