Advertisement
  • দে । শ
  • নভেম্বর ২০, ২০২৩

দলুয়াখাঁকিতে গ্রেপ্তার ৩, ত্রান পৌঁছোতে আদালতের দারস্থ বিরোধীরা

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
দলুয়াখাঁকিতে গ্রেপ্তার ৩, ত্রান পৌঁছোতে আদালতের দারস্থ বিরোধীরা

গুলি করে খুন তৃণমূল নেতা, পালটা গণপিটুনিতে এক অভিযুক্তের মৃত্যু, এলাকার ১৬টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ। এই ঘটনার  সাতদিন পর জয়নগরের দলুয়াখাঁকি এলাকায় বাড়িতে আগুন ধরানোর ঘটনায় রবিবার রাতে তিনজনকে গ্রেপ্তার করল পুলিশ। এরা সকলেই এলাকায় দুষ্কৃতী বলে পরিচিত। তবে সূত্রের খবর, এরা সকলেই সক্রিয় তৃণমূল কর্মী। সোমবার তাদের বারুইপুর আদালতে পেশ করা হয়। এনিয়ে সমগ্র ঘটনায় ধৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৬। এর আগে তৃণমূল নেতা খুনের ঘটনাতেই তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ।

প্রসঙ্গত, গত সোমবার, ১৩ নভেম্বর ভোরে নমাজ পড়তে যাওয়ার পথে দুষ্কৃতীদের খুন হন দলুয়াখাঁকির তৃণমূল অঞ্চল সভাপতি সইফউদ্দিন লস্কর। এই ঘটনায় উত্তেজনার মাঝেই বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গণপিটুনিতে মৃত্যু হয় অন্যতম অভিযুক্তের। এর পর পালটা এলাকায় অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। পুড়ে ছাই হয়ে যায় ১৫/১৬টি বাড়ি। রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডে দু’দলের মাঝে পড়ে ভিটেহারা হন দলুয়াখাঁকির বহু নিরীহ মানুষ। এই ঘটনায় মোট তিনটি আলাদা মামলা দায়েরের মাধ্যমে তদন্ত শুরু করে জয়নগর থানার পুলিশ।

সইফউদ্দিন খুনের ঘটনায় মাস্টারমাইন্ড সন্দেহে সিপিএম নেতা আনিসুর-সহ মোট তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও, পরবর্তী দুটি ঘটনায় পুলিশের জালে আসেনি কেউ। তবে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে রবিবার রাতে অবশেষে নিজেদের এলাকা থেকেই গ্রেপ্তার হয়েছে তিনজন। জয়নগর থানার পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃতদের নাম আমানুল্লা জমাদার, নজরুল মণ্ডল ও আকবর ঢালি। এরা দুষ্কৃতী বলেই পুলিশের খাতায় পরিচিতি থাকলেও স্থানীয়রা বলছে ধৃত এই তিনজন তৃণমূলের কর্মী। দুষ্কৃতী সন্দেহে ধৃতদের এই জাতীয় কাজের পিছনে আরও বড় কোনও মাথা ছিল কি না, তাদের অন্য কোনও পরিকল্পনা ছিল কি না, ধৃতদের জেরা করে এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে পুলিশ। আদালতে পেশ করে এদের পুলিশ হেফাজতের আবেদন জানানো হয়েছে।

এদিকে তৃণমূল নেতা সইফুদ্দিনের খুনের ঘটনায় খুনি সন্দেহে যাকে গণপিটুনিতে খুন করা হয়েছে যাকে তাঁর বাড়িতে পুলিশ বা প্রশাসনের কেউ আসেনি বলে মৃতের স্ত্রী অভিযোগ করেছেন।

এদিকে যে দলুয়াখাঁকি গ্রামে বিরোধীদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না, সেখানে সোমবার বারুইপুর পূর্বের তৃণমূল বিধায়ক বিভাস সর্দার দলুয়াখাঁকির ঘটনাস্থল থেকে ১ কিলোমিটার দূরে পাড়া বৈঠক করে বলেন, “কাউকে যদি মারা হয় তাহলে কি গ্রামের মানুষ ছেড়ে কথা কইবে? যে ক্রিমিনাল মেরেছে সেই আনিসুর, মুজিবরদের রান্নাঘর, কাঠঘর, গরুর ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। গ্রামের রাজনীতি তো জানেন, কাউকে মারলে কি গ্রামের মানুষ ছেড়ে দেবে?”

এদিকে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, পশ্চিমবঙ্গে শাসকের আইন চলছে আইনের শাসন নয়। দুটি বাইকে করে যে পাঁচজন এলেন তাদের কাউকে পুলিশ ধরেছে? বিরোধীদের এলাকায় ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। ওদিকে তৃণমূল বিধায়ক দলুয়াখাঁকি এলাকায় ঢুকে একটা গণহত্যা, বিরোধীদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনাকে সমর্থন করছেন।”

আইএসএফ বিধায়ক, সুজন চক্রবর্তীর দলুয়াখাঁকিতে ঢুকতে গেলে তাদের পুলিশ আটকে দিয়েছিল। তবে এখন কেন তৃণমূল বিধায়ককে সেখানে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে? বারুইপুর পূর্বের তৃণমূল বিধায়ক কি তাহলে বহিরাগত নয়? শুধু শাসক বিরোধীরাই বহিরাগত? নওশাদ সিদ্দিকী বলেছেন, “একই ঘটনা ঘটানো হয়েছে ভাঙড়ে। সেখানে আমাকে ১৪৪ বলে যখন ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না তখন সেখানে সওকত মোল্লা সেখানে গিয়ে সভা করেছেন। আসলে পুলিশ, আইন, আদালত জনগণের করের টাকায় চলে, তারা যদি এই সব দেখেও কিছু না বলেন তা হলে যা হওয়ার সেটাই হচ্ছে।”

এদিকে সোমবার “আমরা আক্রান্ত” -র পক্ষে অম্বিকেশ মহাপাত্র ও সংগঠনের সদস্যরা দলুয়াখাঁকির ঘর পোড়াদের ট্রেন দিতে গেলে বাধা পায়। পুলিশ তাদের গ্রামে ঢুকতে দেয়নি। তবে সিপিএম-এর তরফে দলুয়াখাঁকি গ্রামে ত্রাণ নিয়ে ঢুকতে বাঁধা পাওয়ার পর সোমবার সিপিএম নেতা সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায় আদালতে অভিযোগ জানিয়ে মামলা করলে আদালত সিপিএম নেতা সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায় সহ পাঁচ জনকে দলুয়াখাঁকি গ্রামে ঢুকে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার অনুমতি দিয়েছে। তবে পুলিশের সঙ্গে তাঁদের যেতে হবে, কোনও রাজনৈতিক উস্কানিমূলক কথা বলা যাবে না।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!