Advertisement
  • এই মুহূর্তে দে । শ
  • জুন ৩, ২০২৪

কেষ্টর অনুপস্থিতি, কতটা প্রভাব শাসকের ভোট বাক্সে ! শুরু রাজনৈতিক চর্চা

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
কেষ্টর অনুপস্থিতি, কতটা প্রভাব শাসকের ভোট বাক্সে ! শুরু রাজনৈতিক চর্চা

লড়াইটা লাগিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জি। সেই লড়াইয়ে জিততে বাড়তি পরিশ্রম করেছিলেন মঙ্গলকোট, কেতুগ্রাম আর আউশগ্রামের তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। এই তিন বিধানসভার ভৌগোলিক  অবস্থান হল তিনটি বিধানসভা এলাকাই পূর্ব বর্ধমান জেলায় অবস্থিত। কিন্তু নির্বাচন ক্ষেত্রের নিরিখে তিনটি বিধানসভা হল বোলপুর লোকসভার অধীন। এই লোকসভার বাকি ৪ বিধানসভা বীরভূম জেলায় পড়ে। মঙ্গলকোটের নতুনহাট লালডাঙার মাঠে নির্বাচনী সভা করতে এসে অভিষেক বলে যান, বীরভূমকে হারাতে হবে। বীরভূমের ৪ বিধানসভার তুলনায় বর্ধমানের ৩ বিধানসভায় ভোট বেশি পেতে হবে। মঙ্গলকোটের তৃণমূল বিধায়ক তথা পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান অপূর্ব চৌধুরি বললেন, ‘২০১৯-র লোকসভা ভোটে আমাদের জেলার ৩ বিধানসভায় তৃণমূলের লিড ছিল প্রায় ৭০ হাজার। অভিষেক ব্যানার্জি সেই লিডটা দ্বিগুণ করতে বলেছেন। সেই লক্ষ্যেই আমরা প্রচার, জনসংযোগে বাড়তি জোর দিয়েছি। তার ফল পাব।’

বর্ধমানের এই ৩ বিধানসভা এলাকায় তৃণমূলের আর একটা লড়াইও চোখে পড়েছে। যদিও সেটা প্রকাশ্যে আসেনি। তা হল, এই ৩ বিধানসভার সংগঠন দেখতেন বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল ওরফে কেষ্ট। অনুব্রত এখন জেলে। তাঁর অনুপস্থিতিতে ভোটবাক্সে তৃণমূলের সমর্থন কতটা বাড়ল না কমল, সেই চর্চাও চলছে রাজনৈতিক মহলে। বাম জমানার মঙ্গলকোট আর কেতুগ্রাম ছিল সন্ত্রাসের সমার্থক। খুন-জখম, মারামারি, রক্তপাত ছিল নিত্যকার ঘটনা। এমনকী মানস ভুঁইয়ার নেতৃত্বে বিধানসভার একটি উচ্চ প্রতিনিধিদল ‘সন্ত্রাস কবলিত মঙ্গলকোটে’ এলে শারীরিক নিগ্রহের অভিযোগ ওঠে এলাকার সিপিএম নেতৃত্ব ও তাদের দলবলের বিরুদ্ধে। পরিস্থিতির বদল হয়  ২০১১-র পর। মমতা ব্যানার্জি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর শান্তি ফেরে মঙ্গলকোট-কেতুগ্রামে। সন্ত্রাসকে হারিয়ে জিততে থাকে উন্নয়ন। একসময়ে যে দুই বিধানসভায় লাল পতাকা ছাড়া অন্য কোনও রাজনৈতিক দলের কর্মসূচির ‘হুকুম ছিল না’, সেখানে ধীরে ধীরে ডানা ছড়ায় ঘাস-ফুল। এমনকী বামেদের তিন নম্বরে ফেলে দুই নম্বরে উঠে আসে বিজেপি। নির্বাচনী ফলের খাতায় চোখ বুলোলেই এই তথ্য স্পষ্ট। ২০১৯-র লোকসভা ভোটে মঙ্গলকোট বিধানসভায় তৃণমূল ৫১ শতাংশ, বিজেপি ৩৭ শতাংশ  ও সিপিএম ৬ শতাংশ ভোট পায়। ২০২১-র বিধানসভা ভোটে তৃণমূল ৪৯.৫ শতাংশ, বিজেপি ৩৯.২ শতাংশ ও সিপিএম ৭.৭ শতাংশ ভোট পায়। ২০১৯-র লোকসভা ভোটে কেতুগ্রাম বিধানসভায় তৃণমূল ৫০.০৮ শতাংশ, বিজেপি ৩৬.৬৭ শতাংশ ও সিপিএম ৬.৮৪ শতাংশ ভোট পায়। ২০২১-র বিধানসভা ভোটে তৃণমূল পায় ৪৬.৫৫ শতাংশ, বিজেপি ৪০.৬৬ শতাংশ ও সিপিএম ৯.৩৪ শতাংশ ভোট পায়। আউশগ্রাম বিধানসভার ভোট চিত্রটা হল, ২০১৯-র লোকসভা ভোটে তৃণমূলের ঝুলিতে ৪৬.৩৪ শতাংশ, বিজেপি ৩৯.১২ ও বামেরা ৮.৯৩ শতাংশ ভোট পড়ে। ২০২১-র বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল পায় ৪৬.২৫ শতাংশ, বিজেপি ৪০.৮১ ও সিপিএম ৯.৪ শতাংশ ভোট পায়। পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূলের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চ্যাটার্জির কথায়, ‘এই তথ্য পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট তিনটি বিধানসভাতেই বামেরা তাদের রাজনৈতিক জমি বিজেপিকে ছেড়ে নিজের নাক কেটে তৃণমূলের যাত্রাভঙ্গের চক্রান্ত করেছে। সেই চক্রান্ত যে ফলপ্রসূ হয়নি, ভোটের হারেই পরিষ্কার। গত পঞ্চায়েত ভোটেও তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্ক অটুট ছিল।’

তৃণমূলের অন্দরের খবর, লোকসভায় জেতা নিশ্চিত জেনে দলের নেতা-কর্মীরা যাতে গা-ছাড়া মনোভাব না দেখান, সেজন্যই প্রতি বুথে লিড বাড়ানোর লক্ষ্য বেঁধে দেওয়া হয়। অনুব্রতর অনুপস্থিতিতে তৃণমূলের সংগঠনের ভিত খানিকটা আলগা হলেও পঞ্চায়েত ভোটের মুখে সেই ক্ষতি অনেকটাই পুষিয়ে গিয়েছে। ভাল ফল করেছে দল। আউশগ্রামের মোট ভোটারের ৩২ শতাংশ তফসিলি সম্প্রদায়ভুক্ত। তার মধ্যে ২২ শতাংশ জনজাতি ভোটার। লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ভাতা বৃদ্ধি-সহ তফসিলিদের জন্য রাজ্য সরকারের গুচ্ছ প্রকল্প ও পরিষেবা তৃণমূলের পালে বাড়তি হাওয়া লাগবে বলে বিশ্বাস আউশগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক অভেদানন্দ থান্দারের। সংশ্লিষ্ট বোলপুর লোকসভার  তৃণমূল প্রার্থী বিদায়ী সাংসদ অসিত মাল বলছিলেন, ‘কেষ্টদার অভাব সবসময়েই অনুভব করি। তবে আমাদের সুবিধে হল মাথার উপর মমতা ব্যানার্জি রয়েছেন। তাঁর উন্নয়নের জোয়ারও পৌঁছে গিয়েছে পূর্ব বর্ধমানের এই ৩ বিধানসভায়। সিপিএমের সন্ত্রাসকে পিছনে ফেলে তৃণমূলের জমানায় এখন সবখানে উন্নয়ন আর শান্তির নিশান। তাই জয় শুধু নিশ্চিতই নয়, ব্যবধানও বাড়বে।’ বোলপুরের পদ্মপ্রার্থী পিয়া সাহাও জেতার ব্যাপারে ‘নিশ্চিত’। বললেন, ‘এই ভোট মোদিজির নামে ভোট। সন্ত্রাসের প্রতিবাদে ভোট। এবার বোলপুরে পদ্ম ফুটবে।’ আরেক প্রার্থী সিপিএমের শ্যামলী প্রধানও ‘জয়ের গন্ধ’ পাচ্ছেন। তিনি বললেন, ‘হুমকি, চোখরাঙানি উপেক্ষা করে তিন বিধানসভার মানুষ পথে নেমেছেন। আমাদের বিভিন্ন কর্মসূচিতে ভাল ভিড় হচ্ছে।’
কেষ্টহীন তিন বিধানসভায় কার জয়ের বাঁশি কেমন বাজে, সেদিকেই তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!