- Uncategorized
- মার্চ ৩১, ২০২৪
ভোটের হাওয়া: পদ্মবনে ঘাসফুলের আক্রমণ, কাস্তেতে শান সুকৃতির। টি২০ মেজাজে স্বমূর্তিতে দিলীপ

জিতেও লাভ হল না। বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী বদলাল বিজেপি। শুধু বিজেপি? প্রার্থী বদলেছে তৃণমূল, সিপিএমও। তাই কৃষি-শিল্পে জড়ামড়ি এই লোকসভা ক্ষেত্রে যুযুধান ৩ প্রধান রাজনৈতিক দলেই এবার প্রার্থী নতুন মুখ। বিজেপি বিদায়ী সাংসদ এস আলুওয়ালিয়াকে সরিয়ে এই কেন্দ্রে প্রার্থী করেছে বিজেপির ‘দুর্মুখ নেতা’ হিসেবে চর্চিত মেদিনীপুরের বিদায়ী সাংসদ দিলীপ ঘোষকে। নতুন মাঠে নেমেই একেবারে টি-২০-র ঢংয়ে ইনিংস খেলতে শুরু করেছেন দিলীপ। কখনও মুখ্যমন্ত্রীর পিতৃপরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তোলা, কখনও মহিলাদের অসম্মান, কখনও বিরোধী দলের বিরুদ্ধে লাগামছাড়া তোপ, কখনও আবার কেন্দ্র বদল করায় নিজের দলকেই ঠেস, দিলীপ রয়ে গেছেন দিলীপেই। ২০১৯-র লোকসভা ভোটে এই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী মমতাজ সঙ্ঘমিতা হেরে যান মাত্র ২,৪৩৯ ভোটে। এবার ২০১৪-র দলের জেতা সাংসদ মমতাজকেও টিকিট দেয়নি তৃণমূল। এখানে তৃণমূল প্রার্থী বিজেপি ঘরানারই প্রোডাক্ট তিরাশির বিশ্বকাপ জয়ী ক্রিকেট দলের সদস্য আরেক ‘বিহারীবাবু’ কীর্তি আজাদ। বিহার থেকে পদ্মফুলে লড়ে সাংসদ ও বিধায়ক হওয়া কীর্তি দল বদলে তৃণমূলে ঠাঁই নিয়েছেন। বর্ধমান-দুর্গাপুরকে নিজের ‘কর্মভূমি’ ঘোষণা করে ‘কলির মহিষাসুর দিলীপ ঘোষকে বধ’ করতে গোটা লোকসভাজুড়ে ঠা ঠা রোদ উপেক্ষা করে চক্কর দিচ্ছেন। গত লোকসভায় এখানে সিপিএম প্রার্থী ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আভাস রায়চৌধুরি। এবার কাস্তে প্রতীকে লড়ছেন দীর্ঘদিন ধরে অধ্যাপনা ও অধ্যক্ষের দায়িত্ব সামলানো বর্ধমানের বাসিন্দা সুকৃতি ঘোষাল। তিন নতুন মুখ প্রার্থীকে ঘিরে বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা এলাকার প্রচার ক্রমেই জমজমাট হয়ে উঠছে।
এই লোকসভার অধীনে যে ৭ বিধানসভা রয়েছে, তার মধ্যে ৪টি পূর্ব বর্ধমান জেলায়, ৩টি পশ্চিম বর্ধমানে। পূর্ব বর্ধমান জেলার মধ্যে রয়েছে বর্ধমান উত্তর, বর্ধমান দক্ষিণ, ভাতার ও মন্তেশ্বর বিধানসভা। আর পশ্চিম বর্ধমান জেলায় রয়েছে গলসি, দুর্গাপুর পূর্ব ও পশ্চিম বিধানসভা। গত লোকসভা নির্বাচনে ভোট প্রাপ্তির হিসেব হচ্ছে, বিজেপির ঝুলিতে ৫,৯৮,৩৭৬ (৪২ শতাংশ) ভোট, তৃণমূল পায় ৫,৯৫,৯৩৭ (সাড়ে ৪১ শতাংশ) ভোট, সিপিএমের প্রাপ্তি ১,৬১,৩২৯ (১১ শতাংশ) ভোট। এছাড়া কংগ্রেস ৩৮,৫১৬টি (৩ শতাংশের কাছাকাছি) ভোট, নির্দল ২০,৩০৯টি (দেড় শতাংশ) ভোট পায়। নোটায় ১৮,৫৪০টি (প্রায় দেড় শতাংশ) ভোট পড়ে। ২০২১-র বিধানসভা ভোটে দুর্গাপুর পূর্ব (জেতেন বিজেপি প্রার্থী লক্ষ্মণ ঘড়ই) ছাড়া বাকি ৬ বিধানসভাতেই বিপুল ভোটে জেতেন তৃণমূল প্রার্থীরা। লোকসভা এলাকার সর্বত্র তৃণমূলের জয়ের ধারা অব্যাহত থাকে গত পঞ্চায়েত ভোটেও।
এই হিসেবটি সামনে রাখলে এবারের ভোটে ঘাস-ফুলই ফোটার কথা। এই পূর্বাভাসকে বিজেপি নেতারা নস্যাৎ করছেন, গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির বিজয়ের ঘটনার দৃষ্টান্ত টেনে। তাঁদের ব্যাখ্যা, গত লোকসভা ভোটে তৃণমূলের প্রার্থী ছিলেন বিদায়ী সাংসদ মমতাজ সঙ্ঘমিতা। তিনিই জিতবেন, এমন ভবিষ্যদ্বাণীই বাতাসে ভাসছিল। ভোট ঘোষণার মাত্র কয়েকদিন আগে এসে এখানকার জামাই আলুওয়ালিয়া (দুর্গাপুর শ্বশুরবাড়ি) বাজিমাত করেছিলেন। আর এবারতো পোড় খাওয়া নেতা দিলীপ ঘোষ। যিনি আরএসএসের প্রচারক হিসেবে দীর্ঘদিন অখণ্ড বর্ধমান জেলায় কাজ করে গিয়েছেন। গোটা লোকসভায় বারবার মাথা চাড়া দিয়েছে বিজেপির গোষ্ঠীকোন্দল। আলোচিত হয়েছে সংসদে আলুওয়ালিয়ার নীরব ভূমিকা। আলুওয়ালিয়ার খোঁজ চেয়ে দলের একাংশই পোস্টার সেঁটেছে। প্রার্থী বদলে এই কেন্দ্র ধরে রাখার স্বপ্ন বুনছে বিজেপি।
আর ‘বহিরাগত’ হলেও সাংগঠনিক শক্তি আর রাজ্য সরকারের নানান প্রকল্পে ভর করে এবার এই লোকসভার ‘গদি ওল্টানোর’ খোয়াব দেখছেন ১৯৮৩তে বিশ্বত্রাস ওয়েস্ট ইন্ডিজ বধের শরিক তৃণমূল প্রার্থী কীর্তি আজাদ। আর এককালের ‘লেনিনগ্রাদ’ বর্ধমান-দুর্গাপুরের লাল ঐতিহ্য ফেরাতে উদয়াস্ত সিপিএম প্রার্থী সুকৃতি ঘোষাল তৃণমূল না বিজেপি কার বিজয় রথের চাকা কাদায় ফেলবেন, সেই চর্চায় মশগুল বর্ধমানের রাজনৈতিক মহল। লোকসভার শিল্প এলাকাতে যেমন কৃষিক্ষেত্রজুড়েও তেমনি বাতাস জুড়ে শুধু হতশ্বাসের ছবি। ছবি বদলাক। কারখানার চিমনিগুলোর ধোঁয়া আবার আকাশের বুকে খুশির তিলক আঁকুক। সেইসঙ্গে এই লোকসভার ভোটাররা চান ক্ষেতখামারে সবুজ বিপ্লবের ভরা কটাল। আগামী ৫ বছর সেই প্রত্যাশা পূরণের ব্যাটন কার হাতে থাকবে, সেই হিসাব-কিতাবেই ব্যস্ত কৃষি-শিল্পের যুগলবন্দিতে গড়া বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা।
❤ Support Us