Advertisement
  • দে । শ
  • এপ্রিল ১১, ২০২৩

জাতীয় দলের মর্যাদাচ্যুত ঘাসফুল। তালিকায় সিপিআই ও এনসিপি। আইনি পথে মোকাবিলার সিদ্ধান্ত তৃণমূলের

দুই রাজ্যে সরকার চালিয়ে জাতীয় স্বীকৃতি আপের। ঝাড়ূ শিবিরে খুশির হাওয়া

আরম্ভ ওয়েব ডেস্ক
জাতীয় দলের মর্যাদাচ্যুত ঘাসফুল। তালিকায় সিপিআই ও এনসিপি। আইনি পথে মোকাবিলার সিদ্ধান্ত তৃণমূলের

জাতীয় দলের মর্যাদা হারাল তৃণমূল।সোমবার নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে শর্তপূরণ না করায় তৃণমূলের জাতীয় দলের তকমা আর থাকছে না। কমিশনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার কথা ভাবছেন ঘাসফুল শিবিরিরের নেতারা। তবে, জাতীয় রাজনৈতিক দলের স্বীকৃতি আর না থাকায় আপাতত বেশ কিছু সুবিধা থেকে বঞ্চিত হল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল।

নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, জাতীয় দল হতে গেলে তিনটি শর্তের মধ্যে অন্তত একটি পূরণ করতে হয়। এক, লোকসভায় কমপক্ষে চারটি রাজ্য থেকে ৬ শতাংশ ভোট পেতে হবে। দুই, ৩টি রাজ্য থেকে অন্তত ১১ আসন (মোট আসনের ২ শতাংশ) জিততে হবে এবং আগের জেতা আসনের অন্তত চারটি পুনরায় জিততে হবে। তিন, অন্তত চারটি রাজ্যে ‘রাজ্য দলের’ তকমা পেতে হবে।

২০১৬ সালের ২ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশন তৃণমূল কংগ্রেসকে জাতীয় দলের মর্যাদা দিয়েছিল। সে সময় পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, অরুণাচল ও মণিপুরে রাজ্য পর্যায়ের দল রূপে স্বীকৃত ছিল তৃণমূল। কিন্তু বাংলায় বারংবার দলের নির্বাচনী ফলাফল ভালো হলেও অন্য রাজ্যে তা এখন আর নেই। উনিশের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে ৪৩.২৮ শতাংশ ভোট পেয়েছিল তৃণমূল। কিন্তু অরুনাচল ও মণিপুরে প্রার্থীই দেয়নি। ২০১৭ মণিপুরে ও ২০১৮ সালে ত্রিপুরায় বিধানসভা নির্বাচনে পেয়েছিল যথাক্রমে মাত্র ১.৪১ শতাংশ ও ০.৩০ শতাংশ ভোট। ২০১৯ সালে অরুনাচল প্রদেশের লোকসভায় নির্বাচনে প্রার্থীই দেয়নি তৃণমূল।আবার ত্রিপুরায় প্রার্থী দিলেও ০.৪০ শতাংশ ভোট পেয়েছিল মাত্র। ২০২২ সালে মণিপুরে নির্বাচনে প্রার্থীই দেয়নি। ভোটের লড়াইয়ে একটি রাজ্য ছাড়া অন্য রাজ্যে ধারাবাহিক ভরাডুবি দেখেই নির্বাচন কমিশন তৃণমূলের জাতীয় দলের তকমা প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

জাতীয় দলের তকমা না থাকায় বেশ কিছু সুবিধা আর তৃণমূল পাবে না। যেমন-

১। জাতীয় দলের মর্যাদা যাদের রয়েছে সেই দলের নির্বাচনী প্রতীক দেশের কোথাও কোনও দল ব্যবহার করতে পারে না। তবে তৃণমূলের যে হেতু দু’টি রাজ্যে (পশ্চিমবঙ্গ এবং মেঘালয়) প্রাদেশিক দলের মর্যাদা   এখনও  রয়েছে তাই সেই সুবিধা আপাতত রইল ।  কিন্তু  দু রাজ্যের বাইরে তৃণমূলকে নিজেদের প্রতীকে আর লড়তে পারবে না।

২। জাতীয় দলের প্রার্থীরা ভোটে দাঁড়ানোর সময় মনোনয়নে এক জন প্রস্তাবক লাগে। সেই সুবিধা তৃণমূল পশ্চিমবঙ্গ ও  মেঘালয় ছাড়া আর কোথাও পাবে না।

৩। ভোটের সময়ে জাতীয় দলের গোটা দেশেই ভোটার লিস্টের দু’টি কপি বিনামূল্যে দেয় নির্বাচন কমিশন। সেই সুবিধাও শুধু পশ্চিমবঙ্গ ও মেঘালয়ে পাবে তৃণমূল।

৪। রাজধানী দিল্লিতে জাতীয় দল জমি বা বাড়ি পায় দলীয় দফতর বানানোর জন্য। সেই সুবিধা আর থাকবে না তৃণমূলের।

৫। যে কোনও নির্বাচনের সময়ে জাতীয় দল ৪০ জন তারকা প্রচারক রাখতে পারে। গত ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনের সময়েও তৃণমূল সেই সুবিধা পেয়েছিল। কিন্তু তা আর মিলবে না। এখন সর্বোচ্চ ২০ জন তারকা প্রচারক রাখা যাবে।

৬। কোনও রাজ্যে নির্বাচনে প্রচার করতে বাংলা থেকে তৃণমূল নেতারা গেলে ৪০ জনের খরচ দলের হত। কিন্তু এখন আর সেটা থাকবে না। ২০ জনের বেশি কেউ প্রচার করতে গেলে তাঁর যাতায়াত-সহ অন্যান্য খরচ সংশ্লিষ্ট প্রার্থী নির্বাচনী খরচের সঙ্গে যুক্ত হবে।

৭। জাতীয় দলের ভোট প্রচারের জন্য সরকারি টিভি ও রেডিয়োতে বিনা খরচে সময় দেওয়া হয় নির্বাচনের সময়। সেই সুবিধাও হারাতে হবে তৃণমূলকে।

বস্তুত তৃণমূল ছাড়াও এনসিপি ও সিপিআইও জাতীয় দলের তকমা হারিয়েছে। তৃণমূল আইনি পদক্ষেপের কথা জানালেও বাকীরা আপাতত নিরুত্তর।  এ বিষয়ে বলা প্রয়োজন  লোকসভায় শূন্য আসন থাকা সত্ত্বেও  জাতীয় দলের মর্যাদা লাভ করেছে আপ। দিল্লি ও পাঞ্জাবে সরকার  চালাচ্ছে। তাছাড়া আরো দুটি রাজ্যে রাজ্য দলের মর্যাদা রয়েছে। তাই প্রত্যাশামতোই জাতীয় দলের মর্যাদা পেল কেজরির দল।

নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে বিজেপির নেতারা। দলের সর্বভারতীয় সভাপতি ও সাংসদ দিলীপ ঘোষ কটাক্ষের সুরে  বলেছেন, নতুন তৃণমূলের কথা শুনেছিলাম। তা করতে গিয়ে ভারতবর্ষ থেকেই গুটিয়ে গেল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। গোয়া, ত্রিপুরা, মেঘালয়, অসম, তার আগে মনিপুর, অনেক রাজ্যেই গিয়ে অনেক কিছু করার চেষ্টা করেছিলেন, জলের মতন টাকা খরচ করেছে। কিন্তু কিছুই হল  না। শেষ পর্যন্ত আবার বাংলার দল হয়েই ফিরে এল। এবার তাঁদের শুধু পশ্চিমবঙ্গের দল হয়েই থাকতে হবে।


  • Tags:
❤ Support Us
Advertisement
2024 Lakshman Seth
Advertisement
2024 Lakshman Seth
Advertisement
error: Content is protected !!