- এই মুহূর্তে দে । শ
- ডিসেম্বর ২৮, ২০২৩
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরেও কার্নিভ্যাল নিয়ে হাওড়ায় ধুন্ধুমার। অরূপ বিশ্বাসের সামনেই পুর প্রশাসককে টেনে সরিয়ে দিলেন মনোজ তিওয়ারি
তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘দলীয় কোন্দল’ থামিয়ে হাওড়ার ডুমুরজলায় দ্রুত ‘ক্রিসমাস কার্নিভ্যাল’ চালু করার নির্দেশ দেওয়ার পরেও মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের সামনেই হাওড়ার পুর প্রশাসককে টেনে সরিয়ে দিলেন রাজ্যের আর এক মন্ত্রী মনোজ তিওয়ারি। স্থানীয় স্তরে ঝগড়া, বিবাদ নিয়েও বৃহস্পতিবার দলের কর্মীদের কড়া বার্তা দিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী। তবে তার পরেও ডুমুরজলায় ‘দলীয় কোন্দল’ আবার প্রকাশ্যে এসে পড়ল। মন্ত্রী অরূপের সামনেই হাওড়া পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান সুজয় চক্রবর্তীকে ধাক্কা দেওয়ার অভিযোগ উঠল রাজ্যের ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মনোজ তিওয়ারি এবং তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে। এর পরেই বৈঠকে বসেন অরূপ বিশ্বাস, মনোজ তিওয়ারি এবং সুজয় চক্রবর্তী। বৈঠক শেষে অরূপ বিশ্বাস বলেন, “সব পরিবারেই সমস্যা থাকে। মিটে গিয়েছে। এই প্রথম এখানে কার্নিভ্যাল হচ্ছে। ছোট জায়গা। ঢোকার সময় পায়ে পা লেগে লেগে গিয়েছিল। কোনও ধাক্কাধাক্কি হয়নি।’’ একই কথা জানিয়েছেন মনোজ এবং সুজয়ও। মনোজ আবার অনুপম রায়ের “আমাকে আমার মতো থাকতে দাও”, গানটি গেয়ে শুনিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ পেয়েই ডুমুরজলায় এসেছিলেন রাজ্যের ক্রীড়া মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। তিনি কার্নিভ্যালে ঢোকার সময়েই দেখা যায়, অরূপের উপস্থিতিতে সুজয়কে ধাক্কাধাকি করছেন কয়েক জন। সুজয়কে টেনে সরিয়ে দেন মন্ত্রী মনোজ তিওয়ারি, সংবাদমাধ্যমে মুহূর্তে এই ছবি ছড়িয়ে পরে। এর পরই হাওড়ায় তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্ব নিয়ে প্রশ্ন প্রকট হয়। তবে বৈঠক শেষে যদিও সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। তাঁর কথায়, ‘‘মনোজ, সুজয় হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করুক। প্রত্যেক পরিবারেই সমস্যা থাকে। বসে মিটিয়ে নেওয়া হয়েছে। মেলা নবীন-প্রবীণের মিলনক্ষেত্র।’’ তিনি এও জানান, ডুমুরজলায় কার্নিভ্যাল চলবে। আরও একদিন সময়সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে। অর্থাৎ ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে এই কার্নিভ্যাল। যে বিষয়কে কেন্দ্র করে অশান্তির সূত্রপাত, সেই পার্কিং প্রসঙ্গে অরূপ বিশ্বাস বলেন, ‘‘পার্কিঙের জন্য কোনও টাকা লাগবে না। পার্কিং নিয়ন্ত্রণ করবে পুলিশ।’’
হাওড়া পুরসভার উদ্যোগে ডুমুরজলায় ক্রিসমাস কার্নিভ্যাল শুরু হয় ২২ ডিসেম্বর, কার্নিভ্যালের উদ্বোধন করেছিলেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। ১২ দিন ধরে চলার কথা ছিল এই কার্নিভ্যাল। কিন্তু ‘ক্রিসমাস কার্নিভ্যাল’ শুরু হওয়ার পাঁচ দিনের মাথায় বুধবার সন্ধ্যায় তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। মনোজের ঘনিষ্ঠ একাংশের আপত্তিতেই কার্নিভ্যাল বন্ধ করে দেওয়া হয় বলেই অভিযোগ করে পুরসভা। বিষয়টিতে বৃহস্পতিবার হস্তক্ষেপ করেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। তিনি সাফ জানিয়ে দেন, কয়েক জনের জন্য কার্নিভ্যাল বন্ধ হতে পারে না। যাঁরা গন্ডগোল করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি তিনি কড়া বার্তাও দেন যে, এই ধরনের কাজ কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। বৃহস্পতিবার সকালে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কার্নিভ্যাল কমিটিকে বলেছি, আজই কার্নিভ্যাল চালু করতে। পার্কিং নিয়ে সমস্যা হলে প্রশাসনকে জানানো দরকার ছিল। মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে বলেছি এসে কথা বলতে। দু’জনকে এই ঘটনায় আটক করা হয়েছে।” এর পরেই বৃহস্পতিবার দুপুরে ডুমুরজলায় আসেন অরূপ।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, কার্নিভ্যাল নিয়ে গন্ডগোলের সূত্রপাত পার্কিং নিয়ে। তার পর নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে বুধবার সন্ধ্যা থেকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয় এই কার্নিভ্যাল। মনোজের ঘনিষ্ঠ একাংশের আপত্তিতেই কার্নিভ্যাল বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করে হাওড়া পুরসভা। তাদের দাবি, মন্ত্রীর অনুগামীরা জটলা পাকিয়ে গন্ডগোলের পরিবেশ তৈরি করেছিলেন। যার জেরে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। পাল্টা মনোজ তিওয়ারি দাবি করেন, বেআইনি ভাবে পার্কিং থেকে টাকা তোলা হচ্ছিল বলেই তিনি কার্নিভ্যালে গিয়েছিলেন। বেআইনি পার্কিং নিয়েই তাঁর আপত্তি ছিল, অন্য কিছু নিয়ে নয়।
তবে প্রশ্ন এর পরেও থেকে যাচ্ছে, কারণ ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের সামনে কোন সৌজন্য বোধ থেকে ক্রীড়া দফতরের প্রতিমন্ত্রী মনোজ তিওয়ারি হাওড়ার পুর প্রশাসককে টেনে সরিয়ে দিতে পারলেন? তবে অরূপ বিশ্বাস যে ভাবে পরিস্থিতি সামলে দিয়েছেন, তাতে বোঝা যাচ্ছে মমতা ঘনিষ্ট ও মমতাকে মাতৃ জ্ঞানে সম্মান করা অরূপ বিশ্বাস, ফিরহাদ হাকিমরা দলের শৃঙ্খলার প্রতি এখনও আগের মতোই সমান দায়বদ্ধ। আর সেটা নয় বলেই মনোজ তিওয়ারি তাঁর ঊর্ধতন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের সামনেই অসৌজন্য প্রকাশ করতে পারলেন। প্রসঙ্গত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেগঙ্গার সভা থেকে বৃহস্পতিবারই বলেছেন, “আমি অনেক মার খেয়ে আজ এই জায়গায় পৌঁছেছি। দলকে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির কাজে লাগানো যাবে না।” মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর কথায় এটা বুঝিয়ে দেন , তাঁর একাগ্রতা, শ্রমের ফলেই আজ তৃণমূল রাজ্যের শাসন ক্ষমতায় এসেছে। দেশের মধ্যে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিজেদের পরিচয় প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। তাই সেই দলকে যে ভাবে গোষ্ঠী কোন্দলের মাধ্যমে হেয় করছেন দলেরই কেউ কেউ সেটা কাঙ্খিত নয়।
❤ Support Us