সৌরেনি আর তার সৌন্দর্যের সই টিংলিং চূড়া
সৌরেনির উঁচু শিখর থেকে এক দিকে কার্শিয়াং আর উত্তরবঙ্গের সমতল দেখা যায়। অন্য প্রান্তে মাথা তুলে থাকে নেপালের শৈলমালা, বিশেষ করে অন্তুদারার পরিচিত চূড়া দেখা যায়।
যেমন যাবার পথ তেমনি চিত্রবৎ জায়গাখানি। শিব বুঝি খোলামনে মেলে ধরেছেন নদী, পাহাড়, বন, রাক্ষুসে পাথর আর চাবাগান।চাপা হেসে লুটোপুটি খাওয়া ধারা। আর অপার নির্জনতা।
শিলিগুড়ি থেকে ২৭ কিমি. দূরে সে এক অভিযানের চড়াই উৎরাই।গাড়িতে শহর থেকে পনের মিনিট গেলে শুকনা বন,ডান দিকে ঘুরে এগোলে টয় ট্রেনের শুকনা রেলস্টেশন।অতি সুন্দর খেলনার নির্মাণ বুঝি!শুরু হয়ে গেল মহানন্দা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, সবুজ ছায়ার সড়ক নিয়ে যায় রংটং স্টেশন,ছোট বাঁকের মুখে সে-ও গুহার সামনে তোরণের মতো দাঁড়িয়ে।
সেখানে প্রায় নাটকীয় চুলকাঁটা-বাঁক নিয়ে ডান দিকে খাড়াপথে উঠে দেখে চলতে হয় চা-সাম্রাজ্যের মগ্ন বিস্তার।বাহন উঠছে তো উঠছেই, চারপাশের সবুজ চূড়া কাছে আসে, মেঘ হাত বাড়ায়।নতুন সব বসতি, জঙ্গল,পাইনের লাইন স্পষ্ট হয়। প্রথমে সিপাহিধুরা বাগানের পান্নাহরিৎ মসৃণতা সদা উর্ধ্বমুখী পথের সর্বত্র খুলে মেলে যেতে থাকে। কোথাও নিঃসঙ্গ কুটির,চায়ের পাতার পেছনে কোথাও কর্মীবসতি।দূরের ঢালে ঝুলে থাকা ঘরের টিনের চাল আলো ঠিকরে ডাকে।আসে নরবুঙ চাবাগান।মনে হয় তা হলে কি চূড়ায় বসে আছেন শিব তার প্রিয় শিবখোলা নিয়ে! গাড়ির কষ্টের গোঙানি বদলে গিয়ে স্তিমিত হাঁপ ছাড়লে টের পাওয়া যায় কখন শুরু হয়ে গেছে উৎরাই।তার একেক অতি-ঢালু অবনমনের মুখে তীব্র বাঁক ভয় ধরায়।এবার আর দুপাশ নয়,সামনের দিগন্ত মোহময় হয়ে ওঠে।
পাহাড়পর্বের ওঠা-নামার এই মাত্র সাত কিমি. পথ সফরের আধা আনন্দ দেয় । মাটির ধরায় ফের নেমে এলে স্বাগত জানায় সুরেলা শিবখোলা ঝোরার উৎসার। ছায়াঘেরা গহন নির্জন জগতে শিউরে তোলা বাতাসের পরশ দেয় শিবমন্দির, যদিও এখন তার আধুনিক চেহারা।ঝর্ণার ঝরার কাজ যে শেষ,শিবমন্দিরকে সাক্ষী রেখে সে মিলে যাবে কিশোরী মহানন্দার সাথে!ছোট সেতুর নিচ দিয়ে পেরোনোর তরটুকু তার সয় না! শিবমন্দির থেকে ডাইনে মহানন্দাকে রেখে দেড় কিমি. পরে আরেক সেতু পেরিয়ে সেই গাঁ, যা শিবখোলা বলে পরিচিত।অল্প কিছু ঘর,তাদের অনেকে হোম-স্টে করে রেখেছে।গাড়িতে নদী পেরোলে শিবখোলা অ্যাডভেঞ্চার ক্যাম্প।বর্ষায় অগম্য।কাঠের সাঁকো করা হয়, বান এলে তা-ও উড়ে যায়।তখন অতিথিশালা,তাঁবু,রসুইঘর ফেলে পাঠ চোাতে হয়।পরের মরসুম পর্যন্ত মহানন্দা নিজেকে আপন করে পায়।পথ ছেড়ে বাঁয়ে মেঠো গড়ানে জমি ধরে মহানন্দার সমতল, জল চলেছে পাথর ঠেলে। বারণ থাকলেও কিছু নাছোড় দল বনভোজনে মাতে।থাকে কখনো গান আর স্নান।পাথর ফেলে স্রোতকে কায়দা করে নিরাপদ মাত্রায় আনা হয়েছে। অন্য সময় গলা সাধে নদী।বাঁয়ে খাড়া উঠে গেলে চা ও সবজি চাষ। অনেক ঊঁচু তার নাক।জলতলে নানা জায়গায় বিশাল সব শিলা কালচে ধূসর ছবি এঁকেছে অবচেতনের।পার ধরে পদযাত্রায় বুনো ফুল,পাখির গানের সাথে বাতাসের উল্লাস টের পাওয়া যায়। বালি জুড়ে অসংখ্য নুড়ি, নিজের রূপ দেখাতে স্বচ্ছ প্রবাহের গর্ভ থেকেও তাদের বেরাদররা মুখ তুলে ডাকে।ক্রমে প্রকৃতির অন্দরমহলে সভ্যতার শেকল খুলে যায়,মন মুক্ত হতে থাকে।উঁচুতে মহানন্দা অভয়ারণ্যের শিখরশ্রেণী দারুণ টানে। পঁচিশ কিমি. দূরে লাটপাঞ্চার, আরো তিন গেলে অহলদারা দর্শনচূড়া।
শিবখোলা পৌঁছলে শিলিগুড়ির অত কাছের কোন জায়গা বলে মনে হয় না।যেন অন্তবিহীন দূরত্ব পেরিয়ে একান্ত রেহাই পাবার পরিসর মিলে গেছে।নেটে ঠিকানা দেখে ব্যবস্থা করে ক্যাম্প বা তাঁবুতে থাকো, দিনের ছোট সফরে গিয়ে চুপ করে বসে দর্শন করো বা পা মেলে এগোতে থাকো,আনন্দ আছে সবেতেই।সকালে পাখির মেলা, দুপুরে বনভোজনের ছোঁয়াচে ঊৎসাহ, বিকেলে জলের গলা তুলে শ্রবনপার্বন, আর রাতে থাকলে নিকষ কৃষ্ণ পটে মানসদর্শন, অনায়াস দর্শনচিন্তা মগ্ন করে রাখে।প্রকৃতি বুঝি অমন দুর্ধর্ষ একটিমাত্র পথই রেখেছে এই সহজ-সাধনমার্গে যাবার।
তাই ফেরার পথ এক হলেও একেবারে অন্য রকম অনুভূতি নিয়ে ফিরতে হয়।তৃপ্ত হৃদয়ের পাওনা যে অনন্য!
সৌরেনির উঁচু শিখর থেকে এক দিকে কার্শিয়াং আর উত্তরবঙ্গের সমতল দেখা যায়। অন্য প্রান্তে মাথা তুলে থাকে নেপালের শৈলমালা, বিশেষ করে অন্তুদারার পরিচিত চূড়া দেখা যায়।
মিরিক নামটি এসেছে লেপচা ভাষার “মির-ইওক” শব্দ থেকে, যার অর্থ আগুনে পুড়ে যাওয়া জায়গা।
15:34
মন দ্বিখন্ডিত হলে কি তবে স্কিৎজোফ্রেনিয়া ?