Advertisement
  • এই মুহূর্তে দে । শ
  • মে ২, ২০২৪

কর্কটক্রান্তিই শুধু নয়, সূর্যের রক্তলোচনের আছে অন্য কারণও

চন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়
কর্কটক্রান্তিই শুধু নয়, সূর্যের রক্তলোচনের আছে অন্য কারণও

যাচ্ছিলাম রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের দেশে। ব্যক্তিগত কাজে।  নদিয়ার কৃষ্ণনগর। পথে পড়ে ধুবুলিয়া। ধুবুলিয়ায় পা রাখার আগে বাহাদুরপুরের জঙ্গল। সেই জঙ্গলের অবস্থান মোটামুটি জেলার মাঝখানে। এই জঙ্গলের একটা বৈশিষ্ট্য আছে। গাছপালা, জন্তুজানোয়ার নয়। ভূগোলের পাঠ্যবইয়ে যেসব কল্পরেখার কথা লেখা আছে, তার একটি জলঙ্গির পাড়ের এই বাহাদুরপুর জঙ্গলকে ছুঁয়ে গিয়েছে। নাম তার কর্কটক্রান্তি রেখা। এই রেখাটি জঙ্গল ছুঁয়ে অনতিদূরের ১২নং জাতীয় সড়ক পার হয়েছে।

জঙ্গলের ধারে একটা চটা-ফাটা বোর্ড জানান দিচ্ছে এই কর্কটক্রান্তি রেখার অবস্থান। ‘এই রেখাটাই নদে’ জেলার গরমের জ্বালা বাড়াচ্ছে।’ মুখ-মাথা গামছা পেঁচানো ডাব বিক্রেতা আনোয়ার আলির রাগ দেখে মনে হচ্ছিল, কর্কটক্রান্তি রেখাটা যদি কল্পিত না হত, ডাব কাটার হাঁসুয়া দিয়ে রেখাটাকে একেবারে শতকুচি করে দিত। কয়েকদিন ধরেই গোটা দক্ষিণবঙ্গের বুক দিয়ে বয়ে চলা তাপের হল্কা থেকে বাদ যায়নি রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের তালুকও। জেলা অফিস সূত্র জানাল, তাপমাত্রার ঊর্ধ্বগতি তামাম রেকর্ড হটিয়ে ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পেরিয়েছে দিন তিনেক ধরে। ভূগোল জানাচ্ছে, সূর্য উত্তরে এগোলেই সামনে পায় কর্কটক্রান্তি রেখা। আর রেখাটিকে নাগালে পেলেই সূর্যের খর-রশ্মির পতন হয় লম্বভাবে। তাতেই গরম ওঠে তুঙ্গে। মাধ্যমিকে ভূগোলে ৬৪ পাওয়া আনোয়ার তার পাঠ্যবইয়ে ফিরতে ফিরতেই বলছিল, ডাব খেতে বা কিনতে গেলেতো লোকজনকে রাস্তায় বেরতে হবে। আপনাদের মত কয়েকজন কাজের খুব তাগিদ ছাড়াতো বাড়ির বাইরেই পা দিচ্ছে না। ব্যবসায় মন্দা যাওয়ার যত রোষ তাই কর্কটক্রান্তি রেখার উপরই পড়েছে আনোয়ারের।

ভূগোল ঘেঁটে দেখলাম, আমাদের বঙ্গে কর্কটক্রান্তি রেখার প্রবেশদ্বার হল পুরুলিয়া জেলা। সেখান থেকে বাঁকুড়া, বর্ধমান ছুঁয়ে জলঙ্গিকে পাশে রেখে নদিয়া হয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে কল্পিত এই ভৌগোলিক রেখাটি। এই রেখাটি হচ্ছে উত্তর দিকে সূর্যের শেষতম অবস্থান। এই অবস্থান ছুঁয়েই সূর্য দক্ষিণে মোড় নেয়। মকরক্রান্তির দিকে হাঁটা শুরু করে। কিন্তু এই চলাচলই গরমের বেড়ে ওঠা বা ক্ষয় হওয়ার মূল কারণ নয় বলে জানালেন ভূগোলের শিক্ষক শাহ্ শরিফ। শরিফ সাহাবের বিশ্লেষণ, ‘তাপপ্রবাহের উল্লম্ফনে কর্কটক্রান্তি রেখাকে ‘নাটের গুরু’ বলাটা উচিত হবে না। গাছ কাটা, নগরায়ন, লাগামছাড়া শীতাতপ যন্ত্র-সহ নানান দূষিত তাপ নির্গমন আরামযন্ত্রও অনেকটাই দায়ী।’ ভূগোলই জানাচ্ছে, ফি-বছর ২১ জুন সূর্য কর্কটক্রান্তি রেখার মাথার উপরেই অবস্থান করছে। সেই হিসেবে সেদিনই গরম সর্বোচ্চ হওয়ার কথা। এপ্রিলের শেষ আর মে-র শুরুতেই বঙ্গভূমির হাওয়া যেভাবে ভোটের গরমকেও টেক্কা দিচ্ছে, তাতো ভূগোলকে বুড়ো আঙুল দেখানোর শামিল। তবে সূর্য জুনের শেষে যতই কর্কটক্রান্তি রেখার মাথায় চড়ুক না কেন, সেই সময় যে বাদল মেঘের আনাগোনা শুরু হয়ে যায়, সেতো দুধের শিশুও জানে। ফলে সূর্য যতই কর্কটক্রান্তির মাথায় উঠতে থাকে বর্ষাভাসের জলভরা মেঘ সূর্যের তাপকে খানিকটা কব্জা করে ফেলে। দু’চার ফোঁটা বৃষ্টিতে চাষের তেমন জুত না হলেও ঘামাচি মরার পক্ষে আদর্শ। সূর্যের রক্তলোচন আড়াল করে স্বস্তির বাতাস বয় কর্কটক্রান্তির দুই ডানাজুড়ে। তাই পুরুলিয়া-বাঁকুড়াই হোক আর রাজা বিজয়চন্দের বর্ধমান বা কৃষ্ণচন্দ্রের নদিয়া, গরমের তপ্ত প্রবাহের কারণে কর্কটক্রান্তি রেখাকেই দায়ী করলে ভুল হবে। কর্কটক্রান্তি থেকে দূর দূর গ্রাম-শহরওতো এই বিকট গরমে হাঁসফাঁস করছে।


  • Tags:
❤ Support Us
error: Content is protected !!